উপহার।


ভুলে গেছি, কবে তুমি ছেলেবেলা একদিন
মরমের কাছে এয়েছিলে,
স্নেহময়, ছায়াময়, সন্ধ্যায় আঁখি মেলি
একবার শুধু চেয়েছিলে,
স্তরে স্তরেএ হৃদয় হয়ে গেল অনাবৃত,
হৃদয়ের দিশি দিশি হয়ে গেল উঘাটিত,
একে একে শত শত ফুটিতে লাগিল তারা,
তারকা-অরণ্য মাঝে নয়ন হইল হারা!
বুঝি গো সন্ধ্যার কাছে, শিখেছে সন্ধ্যার মায়া
ওই আঁখি দুটি,—
চাহিলে হৃদয় পানে মরমেতে পড়ে ছায়া,
তারা উঠে কুটি!
আগে কে জানিত বল কত কি লুকান’ ছিল
হৃদয়-নিভৃতে,
তোমার নয়ন দিয়া আমার নিজের হিয়া
পাই দেখিতে।

কখনো গাওনি তুমি, কেবল নীরবে রহি
শিখায়েছ গান,
স্বপ্নময় শাস্তিময় পূরবী রাগিণী তানে,
বাঁধিয়াছ প্রাণ।
আকাশের পানে চাই—সেই সুরে গান গাই
একেলা বসিয়া!
একে একে সুর গুলি, অনন্তে হারায়ে যায়
আঁধারে পশিয়া!


বল দেখি কত দিন আসনি এ শূন্য প্রাণে,
বল দেখি কত দিন চাওনি হৃদয় পানে,—
বল দেখি কত দিন শোননি এ মোর গান,
তবে সখি গান-গাওয়া হল বুঝি অবসান!


বল মেরে বল দেখি, এ আমার গান গুলি
কেন আর ভাল নাহি লাগে,
প্রাণের রাগিণী শুনি নয়নে জাগেনা আভা
কেন সখি কিসের বিরাগে?
যে রাগ শিখায়েছিলে সে কি আমি গেছি ভুলে?
তার সাথে মিলিছে না সুর?

তাই কি আসনা প্রাণে,  তাই কি শােন না গান,
তাই সখি, রয়েছ কি দূর!
ভাল সখি, আবার শিখাও-,
আর বার মুখপানে চাও,
একবার ফেল অশ্রুজল,
একবার শােন গান গুলি,
তা হলে পুরাণ’ সুর  আবার পড়িবে মনে,
আর কভু যাইব না ভূলি!

সেই পুরাতন চোখে  মাঝে মাঝে চেয়ে সখি
উজলিয়া স্মৃতির মন্দির,
এই পুরাতন প্রাণে  মাঝে মাঝে এসে সখি
শূন্য আছে প্রাণের কুটীর।
নহিলে আধার মেঘ রাশি
হৃদয়ের আলোক নিভাবে,
একে একে ভূলে যাব সুর,
গান গাওয়া সাঙ্গ হয়ে যাবে।