সভ্যতার পাণ্ডা/প্রথম দৃশ্য
(পৃ. ১-৪)
সভ্যতা। (গীত)—
আমার মুখে হাসি চোখে ফাঁশি ভূবনমোহিনী।
মাদকতা প্রবঞ্চন। চিরসঙ্গিনী॥
অনাচার আমার কণ্ঠহার,
দাসী হ’য়ে চরণ সেবা করে ব্যভিচার,
আমি মধুমাখা কথা কয়ে আগে ভোলাই কামিনী ৷
হৃদাসনে সযতনে পুজি অহঙ্কার,
সে যে প্রাণপতি আমার,
আমার হৃদয় রতন, যতনের ধন, জোর করি ত তার,
আমি তার গরবে গরবিনী আদরে আদরিণী॥
পুরাতন বর্ষের প্রবেশ।
সভ্যতা। গুডমর্ণিং ওল্ড ইয়ার! নিউ ইয়ার কে হবে কিছু ঠিক করলে?
পু-বর্ষ। আজ্ঞে আপনি দেখে শুনে নিন্, মনের মত তো কারুকে ঠেকে না, মহাত্মা নব্বই সাল, একানববই, বিরানব্বই, তিরানব্বই সাল যে সকল বঙ্গের উন্নতি সাধন করে গিয়েছেন তার ত আর তুলনাই হয় না। বিধবা-বিবাহ, স্ত্রী-স্বাধীনতা, বাল্য-বিবাহ রহিত, কন্সেণ্ট-অ্যাক্ট প্রভৃতি মহা মহা কীর্ত্তি স্থাপন করে গিয়েছেন; আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করে রোদ্, বৃষ্টি, হিম সয়ে, সে সকল কীর্ত্তি যে বজায় রাখতে পেরেছি, আজও যে আপনার নামে কলঙ্ক অর্পণ করিনি, এইতেই আপনাকে ধন্যবাদ দি। কাজে আন্তে পারি বা না পারি, হিদুর ডাইভোর্স অ্যাক্ট সম্বন্ধে কথা উত্থাপন করেছি।
সভ্যতা। না তুমি খুব উপযুক্ত! খুব উপযুক্ত!
পু বর্ষ। এখন আমার দারুণ চিন্তা হয়েছে কে যে পঁচানব্বই সালত্ব গ্রহণ করবে, তা কিছু ঠিক কর্ত্তে পারচ্ছিনে, দেখ্ছি সব ছেলেমানুষ, এ হিন্দু ডাইভোর্স অ্যাক্ট যে চলিত করতে পারবে এমন ত আমার ঠেকে না।
সভ্যতা। দ্যাখ তুমি ভেব না, এই তুমিও তো ছেলেমানুষ ছিলে তোমায় আমার সম্মান কে শেখালে! আমারি তো সহচরীরা, প্রবঞ্চনা, মাদকতা, অনাচার, ব্যভিচার, এরাইতো তোমায় শিখিয়ে পড়িয়ে মানুষ করেছে? ওরির ভেতর একটা সেয়ানা সট্ট ছোঁড়া দেখে নাও।
পু-বর্ষ। একটা ছোঁড়া নিতান্ত মন্দ নয়, সে যা যা ক’র্বে বল্ছে যদি পারে, ছোঁড়াটা নাম রেখে যাবে, কিন্তু তার কথায় বিশ্বাস হচ্ছে না। সে সব ফটোগ্রাফ্ এনেছে চমৎকার চমৎকার, বল্ছে সে এই সব পারবে।
সভ্যতা। তুমি এ সব অবিশ্বাস ক’র না। তোমার পূর্ব্ব পূর্ব্ব মহাত্মারা কি কাজ না করে গেছেন, আর তুমিইবা কি না কর্লে? একি কেউ সম্ভব ভেবেছিল, হিঁদুতে মুরগী খাবে? বামুন খৃষ্টান হবে? কূলের বধু মেম সেজে হাওয়া খাবে, পূজায় সাহেবের খানা হবে, বাপ ব্যাটায় গার্ডণ পার্টি করবে, বেশ্যার সঙ্গে স্ত্রীর আলাপ করে দেবে, বাপ মাকে পৃথক করবে? তুমি তো সব জান, তোমায় আর কি বলবো! আর ধর না, তুমিই যখন ফটোগ্রাফ দেখিয়েছিলে, তিরানব্বই সাল কি না বলেছিল? যে “ও ছেলে মানুষ পেরে উঠ্বে না। তুমি হিন্দু ডাইভোর্স অ্যাক্ট কল্পনা করলে, আর যার বাড়া নাই, রামায়ণ মহাভারতকে অশ্লীল প্রমাণ করলে।
পু-বর্ষ। তা পারে ভাল। দেখুন ঐ আসছে, আমি বু্ড় হয়েছি, শীতে আর দাঁড়াতে পারচ্ছিনে, এই কটাদিন কাজ কর্ছি, পয়লা থেকে আমায় ছুটী দেবেন।
সভ্যতা। অবিশ্যি! কালগর্ভে তোমার জন্য যশের মন্দির হয়েছে, পেন্সেন্ নিয়ে সেখানে গে বিরাম ক’রো। তবে যদি কখন কোন নূতন বৎসরে তোমার কীর্ত্তির কোন নজীর দরকার হয়, তা এক্ এক্বার এ’সে সাক্ষী দিয়ে যেও।
পু-বর্ষ। তা আমার সাক্ষী দিতে আস্তে হবে না, রাজবাড়ি থেকে কুটীর পর্য্যন্ত আমার নজীর পড়ে আছে, আমার শীল মোহর করা। তা অনুমতি হয় তো আসি।
সভ্যতা। দ্যাখ, এই কৃষ্টমাস আসছে, এই কীর্ত্তি রেখে যাবার দিন, এ সময় আলিস্যি ক'রনা।
পু বর্ষ। হা, তা কি হয়!
সভ্যতা। গুড্ ডে।
[পুরাতন বর্ষের প্রস্থান।
(নূতন বর্ষের প্রবেশ।)
নব-বর্ষ। গুডমর্ণিং লেডি!
সভ্যতা। তুমি কি নুতন সাল হবার প্রার্থনা কর?
নব-বর্ষ। ইয়েস, ধ্রুবং, নিশ্চয়, জরুর। আমার এই চারখানা ফটোগ্রাফ্ দেখুন। এমনি কাজ ক’রে যশের মন্দিরে গে শোব ইচ্ছে ক’রেছি। এর সজীব ছবি আমার আছে, দেখতে চান্ দেখ্বেন আসুন।
সভ্যতা। এ সব তুমি পারবে?
নব-বর্ষ। আজ্ঞে হাঁ। না পারি, কাজ দেবেন না। চুরানব্বই আমায় বিশ্বাস করছেন না, আচ্ছা উনি দেখুন, ওঁর চক্ষের উপর দেখাই। আমি নাম চাইনি, এই কৃষমাসেতে ওঁর কদ্দুর মুখ উজ্জ্বল করি।
সভ্যতা। আচ্ছা তুমি কাজ আরম্ভ কর। এক একটা কাজ করে, আমায় খবর দিও, আমি দেখে নেবো। যাও কাজে যাও।
নব-বর্ষ। যে আজ্ঞেঁ।
[সভ্যতা ও নব বর্ষের প্রস্থান