সুকান্ত সমগ্র/ঘুম নেই/সব্যসাচী
সব্যসাচী
অভুক্ত শ্বাপদচক্ষু নিঃস্পন্দ আঁধারে।
জ্বলে রাত্রিদিন।
হে বন্ধু, পশ্চাতে ফেলি অন্ধ হিমগিরি
অনন্ত বার্ধক্য তব ফেলুক নিঃশ্বাস;
রক্তলিপ্ত যৌবনের অন্তিম পিপাসা
নির্ভর গর্জনে আজ অরণ্য ধোয়ায়
উঠক প্রজ্বলি’।
সপ্তরথী শোনে নাকো পৃথিবীর শৈশবক্রন্দন,
দেখে নাই নির্বাকের অশ্রুহীন জ্বালা।
দ্বিধাহীন চণ্ডালের নির্লিপ্ত আদেশে
আদিম র চাহে
ধরণীর বস্ত্র কেড়ে নিতে।
উল্লাসে লেলিহজিহব লুব্ধ হায়েনারা-
তবু কেন কঠিন ইস্পাত?
জরাগ্রস্ত সভ্যতার হৃৎপিণ্ড জর্জর,
সুপিপাসা চক্ষু মেলে
মরণের উপসর্গ যেন।
স্বপ্নলব্ধ উদ্যমের অদৃশ্য জোয়ারে
সংঘবদ্ধ বাল্মীকির দল!
নেমে এসো-হে ফাল্গুনী,
বৈশাখের খরতপ্ত তেজে
ক্লান্ত দুবাহু তব লৌহময় হোক
বয়ে যাক শোণিতের মন্দাকিনী শ্রোত;
মুমুর্ষ পৃথিবী উষ্ণ, নিত্য তৃষাতুরা,
নির্বাপিত আগ্নেয় পর্বত
ফিরে চায় অনর্গল বিলুপ্ত আতপ।
আজ কেন সুবর্ণ শৃঙ্খলে
বাধা তব রিক্ত বজ্রপাণি,
তুষারের তলে সুপ্ত অবসন্ন প্রাণ?
তুমি শুধু নহ সব্যসাচী,
বিস্মৃতির অন্ধকার পারে
ধূসর গৈরিক নিত্য প্রান্তহীন বেলাভূমি 'পরে
আত্মভোলা, তুমি ধনঞ্জয়।