সুকুমার সমগ্র রচনাবলী (প্রথম খণ্ড)/আবোল তাবোল/বুঝিয়ে বলা
(পৃ. ৪১-৪২)
বুঝিয়ে বলা
ও শ্যামাদাস! আয় তো দেখি, বোস তো দেখি এখেনে,
সেই কথাটা বুঝিয়ে দেব পাঁচ মিনিটে, দেখে নে।
জ্বর হয়েছে? মিথ্যে কথা! ও-সব তোদের চালাকি—
এই যে বাবা চেঁচাচ্ছিলে, শুনতে পাই নি? কালা কি?
মামার ব্যামো? বদ্যি ডাকবি? ডাকিস নাহয় বিকেলে;
নাহয় আমি বাৎলে দেব বাঁচবে মামা কি খেলে!
আজকে তোকে সেই কথাটা বোঝাবই বোঝাব—
না বুঝবি তো মগজে তোর গজাল মেরে গোঁজাব।
কোন্ কথাটা? তাও ভুলেছিস্? ছেড়ে দিছিস্ হাওয়াতে?
কি বল্ছিলেম পরশু রাতে বিষ্টু বোসের দাওয়াতে?
ভুলিস নি তো বেশ করেছিস্, আবার শুনলে ক্ষেতি কি?
বড় যে তুই পালিয়ে বেড়াস্, মাড়াস্ নে যে এদিক্ই!
বলছি দাঁড়া, ব্যস্ত কেন? বোস্ তাহলে নিচুতেই-
আজকালের এই ছোকরাগুলোর তর্ সয় না কিছুতেই।
আবার দেখ! বসলি কেন? বইগুলো আন্ নামিয়ে—
তুই থাক্তে মুটের বোঝা বইতে যাব আমি এ?
সাবধানেতে আন্, ধরছি দাঁড়া— সেই আমাকেই ঘামালি,
এই খেয়েছে! কোন্ আক্কেলে শব্দকোষটা নামালি?
ঢের হয়েছে! আয় দেখি তুই বোস্ তো দেখি এদিকে—
ওরে গোপাল গোটাকয়েক পান দিতে বল্ খেঁদিকে।—
বলছিলেম কি, বস্তুপিণ্ড সূক্ষ্ম হতে স্থূলেতে,
অর্থাৎ কিনা লাগ্ছে ঠেলা পঞ্চভূতের মূলেতে—
গোড়ায় তবে দেখতে হবে কোত্থেকে আর কি ক’রে,
রস জমে এই প্রপঞ্চময় বিশ্বতরুর শিকড়ে।
অর্থাৎ কিনা, এই মনে কর্ রোদ পড়েছে ঘাসেতে,
এই মনে কর্, চাঁদের আলো পড়লো তারি পাশেতে—
আবার দেখ! এরই মধ্যে হাই তোলবার মানে কি?
আকাশপানে তাকাস্ খালি, যাচ্ছে কথা কানে কি?
কি বল্লি তুই? এ-সব শুধু আবোল তাবোল বকুনি?
বুঝতে হলে মগজ লাগে, ব’লেছিলাম তখুনি।
মগজভরা গোবর তোদের হচ্ছে ঘুঁটে শুকিয়ে,
যায় কি দেওয়া কোন কথা তার ভিতরে ঢুকিয়ে?—
ও শ্যামাদাস! উঠলি কেন? কেবল যে চাস্ পালাতে!
না শুনবি তো মিথ্যে সবাই আসিস্ কেন জ্বালাতে?
তত্ত্বকথা যায় না কানে যত মরি চেঁচিয়ে—
ইচ্ছে করে ডান্পিটেদের কান ম’লে দি পেঁচিয়ে।