সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/পতাকা-উত্তোলন
পতাকা-উত্তোলন
হের হের সবে মহা গৌরবে
পতাকা-উত্তোলন,
এ পতাকা তলে এসো দলে দলে
কিশোর-কিশোরীগণ।
গৈরিক-শ্বেত-হরিতে রঙীন,
মাঝেতে অশোক-চক্রের চিন্,
মহাভারতের প্রতীক স্বাধীন—
এ পতাকা অনুখন;
এ পতাকা তলে এসো দলে দলে
কিশোর-কিশোরীগণ।
গৈরিক রং ‘ত্যাগ-সংযম’
করিতেছে ইঙ্গিত,
শুভ্র বর্ণে ‘শান্তি-সত্য’,
সকলের যাতে হিত।
সবুজ বর্ণ হের বারবার—
‘নিষ্ঠা-সাহস’ করিছে প্রচার,
অশোক-চক্র গতি দুর্বার
দুর্গতি-বিনাশন;
এ পতাকা তলে এসো দলে দলে
কিশোর-কিশোরীগণ।
এই সে পতাকা—যারে একদিন
বর্বর, শয়তান—
দলেছিল পায়ে, আগুনে পোড়ায়ে
করেছিল অপমান।
এই সে পতাকা, মূরতি যাহার
সহিতে না পারি’ শাসকেরা আর
আইনের ফাঁদে টুঁ’টি টিপিবার
করেছিল আয়োজন;
এ পতাকা তলে এসো দলে দলে
কিশোর-কিশোরীগণ।
এই তিনরঙা পতাকার মাঝে
লুকানো যে ইতিহাস,
ছড়ানো যে-সব গৌরব-গাথা,
জড়ানো যে বিশ্বাস,
তুলনা তাহার মিলিবে কোথায়?
কত আঁখিজল ও-রঙে শুকায়,
কত রক্তের ঢেউ বয়ে যায়,
কে করে তা বর্ণন?
এ পতাকা তলে এসো দলে দলে
কিশোর-কিশোরীগণ!
এ পতাকা ধ’রে সহে কত ক্লেশ
ভারতের সন্তান,
কত নরনারী বরিল মরণ
রাখিতে ইহার মান।
ধ্বংস হয়েছে কত পরিবার,
স্ফুরণ হ’ল না কত প্রতিভার,
মর্যাদা দিতে এই পতাকার
করিল মৃত্যুপণ;
এ পতাকা তলে এসো দলে দলে
কিশোর-কিশোরীগণ।
বিদেশী শাসক দুরে অপগত,
শোষণের হ’ল শেষ,
সিংহের সাথে সংগ্রাম ক’রে
মোরা ফিরে পেনু দেশ।
জয় নেতাজীর, মহাত্মাজীর,
জয় জয় যত দেশ-কর্মীর,
মৃত্যু বরিল যত যত বীর,
গাহ জয় আজীবন;
এ পতাকা তলে এসে দলে দলে
কিশোর-কিশোরীগণ।
এই পতাকার তলে আমাদের
মলিনতা ঘুচে যাক্,
এ তিন-রঙের মহিমার জ্যোতি
অন্তরে জেগে থাক্।
সত্য-ন্যায়ের হব সৈনিক,
হব সংযমী, হব নির্ভীক,
শান্তির বাণী ঘোষি’ চারিদিক্
করিব আন্দোলন;
এ পতাকা তলে এসে দলে দলে
কিশোর-কিশোরীগণ।
এসো করি পণ, ভাই-বোেনগণ,
রাখিব ইহার মান—
এই পতাকার মর্যাদা দিতে
করিব জীবন দান।
এদেশ হইবে সবার প্রধান,
গুণে মানে আর জ্ঞানে গরীয়ান,
দেশে দেশে এই মুক্তি-নিশান
পাবে অভিনন্দন।
এ পতাকা তলে এসো দলে দলে
কিশোর-কিশোরীগণ॥