সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/শিরশিয়া ঝিল

শিরশিয়া ঝিল

অভিযানকারী যায় না সেথায়,
ভ্রমণকারীরা যায় না;
‘শিরশিয়া ঝিল’ করে ঝিলমিল,
ঝকঝকে যেন আয়না।
আয়নাই বটে, কাচ সম জল,—
আজো দেখে তারে চিনবো—
সারাদিন তা’তে টল‍্টল্ করে।
প্রকৃতির প্রতিবিম্ব।
উড়ন্ত পাখী ছায়া ফেলে যায়,
মুখ দেখে মেঘ হর্ষে,

‘শিরশিয়া ঝিল’ শিশি করে
দুরন্ত বায়ু স্পর্শে।
চারিপাশে তার বুনোফুল হাসে
মসৃণ তৃণগুচ্ছে,
তাল-নারিকেল শোভা দেখে তার
মস্তক তুলি উচ্চে।

বিহারের এক নিভৃত প্রদেশে,
নির্জন বন-প্রান্তে,
আমরা ক্ষুদ্র কিশোরের দল।
কতদিন দিবসান্তে
পার হয়ে নদী পাহাড়ী উশ্রী
মাঠ হয়ে অতিক্রান্ত
উচুনীচু কত উপল-বহুল
পথ চলে অবিশ্রান্ত
হাজির হতাম ‘শিরশিয়া ঝিলে’
সবে মিলে মহানন্দে।
মুখরিত হ’ত নিরালা কুঞ্জ
পাখীদের কাছন্দে।
সেই সুরে মোরা মিলাতাম সুর,
করিতাম কত অঙ্গ,
তৃণের সবুজ জাজিমের 'পরে।
এলায়ে দিতাম অঙ্গ।
অন্ত-ভানুর দীপ্ত আলোকে
ঝলকি উঠিত চিত্ত,
সেই আলো মেখে ‘শিরশিয়া ঝিল
পুলকে করিত নৃত্য।

বিহারের এক শুষ্ক প্রদেশ,
বন্ধুর চারিধার সে,
বাংলার ছবি দেখিতাম মোরা
‘শিরশিয়া ঝিল’ পার্শ্বে।
বাংলারই মত সরস-শ্যামল
কোমল-নধর-কান্তি
বিহার-প্রবাসী বাঙালী কিশোরে
কত-না দিয়েছে শান্তি।
তাহার স্মরণে সুখ জাগে মনে,
গুণ গাহি তার পদ্যে,
‘শিরশিয়া ঝিল’ করে ঝিলমিল
আজিও মনের মধ্যে॥