সুলোচনা কাব্য/উপসংহার

শ্রীমাধব ভট্টাচার্য্য
(পৃ. --)

উপসংহার।

 মুরসিদাবাদনিবাসী জগৎশেঠ নামে অভিহিত অভি প্রসিদ্ধ ব্যক্তি এই জগদ্দুর্লভ শ্রেষ্ঠি ভিন্ন অন্য কেহই নহেন। ইনিই পরিশেষে দিল্লীশ্বরের কোষাধ্যক্ষ মান্য গণ্য ও এত বিখ্যাত হইয়া গিয়াছেন। ইঁহার নাম ইতিহাসে উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। যে সময়ে নবাব সিরাজদ্দৌলাকে পদচ্যুত করিবার জন্য চক্রান্ত হইয়াছিল, তৎকালে এই জগদ্দুর্লভই তন্মধ্যে প্রধানরূপে পরিগণিত হন; বাস্তবিক পরের অনিষ্ট চেষ্টায় ইনি বিশেষ পটু ছিলেন।

 পুরাকালের রাজধানী মুরসিদাবাদের সন্নিকর্ষে এই উল্লিখিত নসীপুর, এই নগর অদ্যাপি বর্ত্তমান আছে; এবং সেখানকার রাজবংশ সূর্য্যবংশ বলিয়া পরিচয় দিয়া থাকে, যিনি এই গ্রন্থে বসন্ত বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছেন, অধুনা তাঁহারই বংশের রাজত্ব চলিতেছে, ইঁহাদের রাজত্ব বহুকাল পর্য্যন্ত স্থির ভাবেই অবস্থিতি করিতেছিল। পরে ইংরেজরাজ্যের অন্তর্গত হইয়া ক্রমশঃ হীনাবস্থা হইয়া আসিতেছে। ইংরাজ অধিকারে যদি রাজত্বের অনেক হ্রাস হইয়াছে তথাপি আচার ব্যবহার দর্শন করিলে পূর্ব্বকালের সমৃদ্ধিসম্পন্ন রাজবংশ বলিয়া প্রতিপন্ন হয়। এতকাল অতীত হইল তথাপি ইঁহার নিতান্ত নিঃস্ব হন নাই বলিয়া সাতিশয় সম্পত্তিশালী নরাধিপ বংশ বলিয়া প্রতীতি জন্মে।

 নসীপুরে গমন করিলে, এখনও সেই ভূপতিত ভগ্নাবশিষ্ট রাজপুরীর নির্ম্মাণ কৌশল, শিল্পচাতুর্য্য ও শোভা, নগরের সুশৃঙ্খলা এবং পারিপাট্য, রাজবাটীর কার্য্যপ্রণালী ও নিয়মিত ব্যয় দেখিলে আশ্চর্য্য বোধ হয়। অপরাপর যে সকল ঘটনার কথা লেখা হইয়াছে, তৎসমুদায় প্রকৃত ঘটনা বলিয়া অনুসন্ধানে জানা গিয়াছে; কেবল নামের অনৈক্য মাত্র। বাস্তব ঘটনা এত চমৎকারিণী যে তাহাও অনেক সময়ে অসম্ভব অনুভূত হয়।

সমাপ্ত।