সেই সব শহীদেরা/মহম্মদ সিং আজাদের বিচার

মহম্মদ সিং আজাদের বিচার

The King V. Udham Singh কেসের চার্জশীট দাখিল হয় পয়লা এপ্রিল ১৯৪০। লন্ডনের ওল্ড বেইলি সেন্ট্রাল ক্রিমিনাল কোর্টে আসামীর বিচার শুরু হয় ৪ জুন। আসামী নিজের ডিফেন্সে একটি কথাও বলেনি। ১৩ মার্চ মাইকেল। ও ডায়ারকে ক্যাক্সটন হলে যখন গুলি করে হত্যা করেন উধম সিং সেদিনও একইরকম শান্ত ছিলেন তিনি। পুলিশ ও অন্য সাক্ষীরা জানিয়েছে উচ্চপদস্থ এই রাজপুরুষকে হত্যার অনেক সুযাগে তিনি অনেকবার হলের ভেতর পেয়েছেন কিন্তু গুলিটা সেই সময়েই করেছেন যখন হল পরিপূর্ণ। অর্থাৎ আসামী পালানারে কোনও চেষ্টাই করেনি। সে যেন চাইছিল সকলে দেখুক ও জানুক কাকে, কে হত্যা করছে! বাঘা বাঘা সরকারী কর্তা ও অভিজাত গন্যমান্যরা উপস্থিত ছিলেন অকুস্থলে। পুলিশ ২৪ জন সাক্ষী জোগাড় করে। বিচারক অ্যাটকিনসনের আদালতে সরকার পক্ষের আইনজীবি জি.বি. ম্যাকলুর এবং আসামী পক্ষের হয়ে দাঁড়ান তিনজন, সেন্ট জনস হাচিনসন, আর, ই.সিটন এবং ডি.কে, কৃষ্ণমেনন (পরবর্তীতে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী)

 চার্জশীটে বলা হয়েছিল Accused was originally charged in the name of Mohammed Singh Azad, any may continued to claim that as his name. Letters found on him show that his passport is in the name of Udham Singh. When the accused was first charged, a good deal of was directed to the prefix Mohamed, and let to considerable misapprehension as to the accused's religion and race. This prefix suggests that the accused is a Mohammedan, but he would appear to be a renegade Sikh.

 কৃষ্ণ মেনন আসামীকে দুটি প্রশ্ন করেন, দুটিই ভারতে ব্রিটিশ শাসন সংক এবং সিং দৃঢ়তার সাথে দুটি প্রশ্নের উত্তর দেন। বিচার পরের দিনের ত মুলতুবি হয়।

 দ্বিতীয় দিনের শুরুতে প্রসিকিউশন একটি নাতিদীর্ঘ বক্তব্য পেশ করলে তাদের মতে আসামী উধম সিং একজন ঠান্ডা মাথার খুনী। ইতিপূর্বে তার বন্ধ সে একথা স্বীকারও করেছে। ডিকেন্স কউন্সিলের আলািেচত ভারতে ব্রিটিশ শাসনের স্বরূপ, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই মামলা অর্থহীন ও অপ্রাসঙ্গিক। এরপরে সাক্ষ্যদান ও ক্রস এক্সামিনেশন চলতে থাকে। হত্যার অব্যবহিত পরে উধম সিং মেট্রোপলিটন পুলিশ ইন্সপেক্টর মিঃ সায়োইনের কাছে যে জবানবন্দী দেন তা পাঠ করা হয়।

 বিচারের শেষ দিন উধম সিং কিছু বক্তব্য রাখার আর্জি জানান। ব্রিক্সটন। জেল কাস্টডিতে দীর্ঘদিন অনশন ও জোর করে খাওয়াবার চেষ্টায় তিনি দুর্বল ও অসুস্থ ছিলেন কিন্তু মানসিক দৃঢ়তা ফুটে বেরোচ্ছিল তাঁর চেহারা থেকে।।

 জাস্টিস অ্যাটকিনসন অভিযুক্তকে জানান যে আদালতে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ ইত্যাদি নিয়ে আগ্রহী নয়। এই কেস ও অভিযাগে সংক্রান্ত কিছু বক্তব্য। থাকলে আসামী পেশ করতে পারে। এক্ষণে সরকারী উকিল ম্যাকলুর বলেন যে। আসামীর বক্তব্য বাইরে প্রকাশ করা যাবে না এবং এমার্জেন্সী পওয়ার অ্যাক্ট সেকশন-৬ অনুসারে তা প্রেস বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা নিষিদ্ধ। জজ এবার উধম সিং কে জানান, যে বিষয়টি সর্বসমক্ষে প্রকাশিতই হবে না তা কোর্টরুমে বলে কোনো লাভ আছে কি?

 পরোয়া করলেন না বিপ্লবী উধম। তাঁর অবিচলতা লক্ষ্য করে জজ অগত্যা অনুমতি দিলেন। পকেট থেকে একতাড়া কাগজ বের করে পড়তে থাকেন। তিনি। তাঁর বক্তব্য ছিল সহজ ও সরল। শাস্তি, মৃত্যুদন্ড বা তার অপরাধের কথা বিন্দুমাত্র প্রতিফলিত হল না সেখানে। তাঁর কাজ ও উদ্দেশ্য ছিল নির্দিষ্ট। এবং তাতে বিন্দুমাত্র অনুতাপ নেই। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে নোংরা কুকুরের সাথে তুলনা করে সিং বলে চললেন ‘এমন একটা দিন আসবে যখন ভারত থেকে। ব্রিটিশ শক্তি পালাতে পথ পাবেনা। তিনি জানান সাধারণ ইংরেজ জনসাধারণের ওপর তার বিন্দুমাত্র ক্ষোভ নেই । ইংল্যান্ডে তাঁর সাহেব বন্ধুর সংখ্যা হয়ত স্বদেশের তুলনায় বেশিই। এদেশের শ্রমিক, কর্মচারী মানুষকে আসামী বন্ধুই মনে করেন। তাঁর একমাত্র শত্রু হল পররাজ্যগ্রাসী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। জজ এবার অধৈর্য হয়ে পড়েন। তিনি জানান উধম সিং এর বক্তব্য শুনতে আদালত আগ্রহী নয়। সিং হেসে জানান কারণ আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন, আমার বক্তব্য এখনও শেষ হয়নি।

 জুরীরা যখন তাকে মৃত্যুদন্ড দিলেন তখনও একই রকম শান্ত ছিলেন সিং। ডানহাত উপরে তুলে তিনবার ইনকিলাব জিন্দাবাদ বললেন মৃত্যুপথযাত্রী। বিপ্লবী।

 ১৩ মার্চ ক্যাক্সটন হলে, ১৪ মার্চ বা স্ট্রীট পুলিশ স্টেশনে এবং আদালতে যে বক্তব্য রেখেছিলেন অকুতাভের বিপ্লবী তা প্রকাশ হল পত্রপত্রিকায়, সেন্সরশিপ থাকা সত্ত্বেও। ১৩ জুলাই পেন্টাভিল কারাগারে ফাঁসি হয়ে গেল উধম সিং অথবা মহম্মদ সিং আজাদের। আজকে যারা দেশপ্রেমের পাঠ শেখায় তাদের পূর্বজরা অর্থাৎ পাঞ্জাব হিন্দু সভা জালিয়নওয়ালাবাগ গণহত্যার সম্পূর্ণ বিপরীত প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল। যখন। গাটো দেশ ঘৃণায়, ক্রোধে ফেটে পড়ছে তখন তারা নিন্দা তো করেইনি উল্টে বলেছিল ‘ঈশ্বরের অসীম কৃপায় আর্যজাতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যা সূদূর। অতীতে ভাগ হয়ে গেছিল তা আবার এক হতে পেরেছে। এক জাতি অপরটিকে রাজনৈতিক পথনির্দেশ ও সুরক্ষা প্রদান করছে। যে সাম্রাজ্যের সূর্য কখানো অস্ত যায় না তার প্রজা হিসাবে আমরা গর্বিত এবং এই প্রাপ্তির কৃতজ্ঞতা প্রদান করতে সর্বদাই সচেষ্ট।

 উধম সিং ওরফে মহম্মদ সিং আজাদ শুধু একটি নাম নয়, গোটা দেশের প্রতিনিধি যারা জাতি, ধর্ম, বর্ণ সমস্ত তুচ্ছ করে কাঁধে কাধ মিলিয়ে লড়েছিলেন। প্রবল পরাক্রান্ত সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের স্বদেশী দালালদের বিরুদ্ধে।