হরিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনের পরে সুভাষচন্দ্র বসুর বক্তৃতা
বন্ধুগণ, আমাদের জাতীয় মহাসভার একান্ন অধিবেশন এখন শেষ হতে চলেছে। আমার পক্ষে এটা বড়ই আনন্দের বিষয় যে এবারকার কার্য্যাবলী এমন নির্বিঘ্নে সুসম্পন্ন হয়েছে। আমি যখন হরিপুরায় রওনা হই, তখন অনেকের মনে এরকম আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, যে হয়ত হরিপুরায় গত সুরাট কংগ্রেসের পুনরাভিনয় হতে পারে। কিন্তু, এটা আমাদের পক্ষে বড়ই সুখের কথা যে ভগবানের আশীর্ব্বাদে সে সমস্ত আশঙ্কা মলিন প্রতিপন্ন হয়েছে। বন্ধুগণ, আরেকটা কথা ভেবে আমার মনে আজ আনন্দ দেখা দিচ্ছে। এখানকার অভ্যর্থনা সমিতি, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল মহাশয়ের পরিচালনায় যেভাবে কাজ করেছেন এবং যেভাবে আমাদের জন্য সমস্তই ব্যবস্থার সুবন্দোবস্ত করেছেন, এটা আমাদের পক্ষে বড়ই আনন্দের বিষয়। তাই, তাদের নিকট আমি আমাদের অন্তরের কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। একাদিব্যতীত, এখানকার স্বেচ্ছাসেবক ও স্বেচ্ছাসেবিকারা যেভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের সেবা করেছেন, তাতে আমরা তাদের কাছেও কৃতজ্ঞ। সর্ব্বোপরি, এটা আমাদের পক্ষে পরম আনন্দের এবং গৌরবের বিষয়, যে মহাত্মা গান্ধী এখানে সশরীরে উপস্থিত থেকে তার আশীর্ব্বাদ ও প্রেরণা আমাদের দিয়েছেন। বিজ্ঞান আমাদের কাজে সহায়তা প্রদান করেছে এবং আমি আশা করি যে ভবিষ্যতে আমরা আমাদের প্রচার কার্য্যে ফিল্ম এবং রেডিওর সাহায্য আরও বেশি নেব। সর্ব্বশেষে, আমি আপনাদের কাছে আমার অন্তরের নিবেদন জানাতে চাই, সে নিবেদন হচ্ছে এই, যে আমাদের জাতির ব্রত এখন উদ্যাপন হয়নি, আমরা এখনও পরাধীন। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, যে স্বাধীনতার পথে আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। কিন্তু, তথাপি দুঃখের সঙ্গে এবং লজ্জার সঙ্গে স্বীকার করতেই হবে, যে এখনও ভারতবর্ষে পূর্ণ স্বরাজ স্থাপিত হয় নাই। আগামী কয়েক মাস এবং কয়েক বৎসরের ঘটনার উপরে যে আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ অনেকটা নির্ভর করবে। তাই আসুন, আমরা বদ্ধ পরিকর হয়ে কাজে লেগে যাই। আমাদের পরস্পরের মধ্যে সমস্ত বিবাদ বিসম্বাদ আমরা পরিত্যাগ করি। আমরা সকলে এক প্রাণ হয়ে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করি এবং স্বাধীনতা লাভের জন্য অগ্রণী হয়ে আমরা সামনেই চলি। বন্ধুগণ, আমরা সকলে দাস হয়ে জন্মেছি। আসুন, আমরা সংকল্প করি, যে আমরা মরবার পূর্ব্বে স্বাধীন হব। বন্দে মাতরম্।