হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা (১৯৫১)/চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়/১৮
১৮
রাগ গউড়া
কৃষ্ণবজ্রপাদানাম্। তিণি ভুঅণ মই বাহিঅ হেলেঁ।
হাঁউ সুতেলি মহাসুহ লীড়েঁ॥ ধ্রু॥
কইসণি হালো ডোম্বী তোহোরি ভাভরিআলী।
অন্তে কুলিণজণ মাঝেঁ কাবালী॥ ধ্রু॥
তঁইলো ডোম্বী সঅল বিটলিউ।
কাজণ কারণ সসহর টালিউ॥ ধ্রু॥
কেহে কেহো তোহোরে বিরুআ বোলই।
বিদুজণ লোঅ তোরেঁ কণ্ঠ ন মেলঈ॥ ধ্রু॥
কাহ্নে গাইতু কামচণ্ডালী।
ডোম্বি তআগলি নাহি চ্ছিণালী॥ ধ্রু॥
তমেবার্থ[ং] পরমার্থায় সংবৃতিসত্যার্থাবগমে কৃষ্ণাচার্য্যপাদাঃ[১] ডোম্বীসন্ধ্যয়া প্রতিপাদয়ন্তি(তি)—তিণীত্যাদি। ময়া কৃষ্ণাচার্য্যেণ বজ্রবনিতাভিষ্ব(স)ঙ্গাৎ ত্রিভুবনং কায়বাক্চিত্তং। তস্য ষষ্ট্যুত্তরশতপ্রকৃতিদোষোঽবহেলয়া বাধিতঃ। অতএবাহং সুপ্তঃ। লীলেমিতি ক্রীড়য়া যোগনিদ্রাং গতঃ। নৈরাত্মধর্ম্মাবগমাৎ।
ধ্রুবপদেনাপরিশুদ্ধাবধূতিকামুপগময়তি—
কইসণীত্যাদি। ভর্ভরিআলিকা অসদারোপেণ ভো ডোম্বিনি পরিশু[২৮ক]দ্ধাবধূতিকা কিং কৃতং ত্বয়া। কৌ শরীরে লীনং যৎপ্রভাস্বরং যদজ্ঞানরসেনান্তে বাহ্যে কৃতং। কং সংবৃত্তিবো[ধি]চিত্তং পালয়তীতি কৃত্বা কাপালিকশ্চিত্তবজ্র-আধানং কৃতমিতি।
বিশিষ্য পদান্তরেণ তামেবোপরাগয়তি—
তঁই লো ইত্যাদি। তয়া ডোম্বিন্যাঽপরিশুদ্ধাবধূতিকয়া দেবাসুরমনুষ্যাদিত্রৈধাতুকং সকলং মিথ্যাজ্ঞানেন টালিতমিতি নাশিতম্। যত এব শশহরং সংবৃত্তিবোধিচিত্তং প্রভাস্বরহেতুভূতং। অসম্প্রদায়যোগিন্যা টালিতমিতি বিনষ্টীকৃতং।
তথাচ চর্য্যাপাদাঃ—
খালত পড়িলেঁ কাপুর নাশয়ে ইত্যাদি।
তৃতীয়পদেন ডোম্বী[ম্বি]স্বরূপমাহ—
কেহো ইত্যাদি। যেঽপি স্বরূপানভিজ্ঞা[ঃ] সহজানন্দপরিশুদ্ধিতয়া ত্বাং ডোম্বী[ং] ন জানন্তি। তেঽপি কর্ম্মবসিতাং প্রাপ্য সংসারদুঃখানুভবাত্তব বিরুদ্ধং বদন্তি। যে তে প্রাদেশিকা যোগীন্দ্রাঃ সম্যক্বজ্রাজসংযোগ[া]ক্ষরসুখতয়া ত্বাং প্রজানন্তি। তেঽপি কণ্ঠে সম্ভোগচক্রে অহর্ন্নিশন্ন[২] পরিত্যজন্তী[তি] [২৯]।
তথা চাগমঃ—
কক্কোলপ্রিয়বোলমেলকতয়াঽনন্দস্ফুরৎকুন্দরাঃ
সদ্যঃ শোধিতশালিলালিতকরা[ঃ] কালিঞ্জরাশ্চক্রিণঃ॥
ভ্রশ্যদ্দিব্যসরোজপাত্রমদনব্যালুপ্তদন্তচ্ছদাঃ
প্রেতাবাসনিবাসনিত্যরসিকাঃ কেচিৎ ক্বচিৎ যোগিনঃ॥
চতুর্থপদেন যোগিন্যা[৩]নুশংসামাহ—কাহ্নে গাই ইত্যাদি। ঈদৃশী কর্ম্মস্থসাধনোপায়চণ্ডালী কৃষ্ণাচার্য্যৈঃ পরং গীয়তে নান্যৈঃ। ডোম্বীব্যতিরেকাৎ নান্যা চ্ছিন্ননাসিকা নাগরিকা বা বিদ্যতে। যস্মাৎ সত্ত্বভেদং প্রাপ্য ভেদাধিষ্ঠানং বিধত্তে।
তথাচ জ্ঞানসম্বোধৌ—
চিত্তমেব মহাবীজং ভবনির্ব্বাণয়োরপি।
সংবৃতৌ সংবৃতিং[৪] যাতি নির্ব্বাণে নিঃস্বভাবতাম্॥ ১৮॥
১৮
রাগ গউড়া
কৃষ্ণবজ্রপাদানাম্— তিণি ভুঅণ মই বাহিঅ হেলেঁ।
হাঁউ সুতেলি মহাসুহলীলেঁ॥ ধ্রু॥
কইসণি হালো ডোম্বী তোহোরি ভাভরিআলী।
অন্তে কুলিণজণ মাঝেঁ কাবালী॥ ধ্রু॥
তঁই লো ডোম্বী সঅল বিটালিউ।
কাজণ কারণ সসহর টালিউ॥ ধ্রু॥
কেহো কেহো তোহোরে বিরুআ বোলই।
বিদুজণ লোঅ তোরেঁ কণ্ঠ ন মেলই॥ ধ্রু॥
কাহ্নে গাই তু কামচণ্ডালী।
ডোম্বী ত আগলি নাহি চ্ছিণালী॥ ধ্রু॥
(বজ্রবনিতার অভিষ্বঙ্গবশতঃ) তিন ভুবন (কায়, বাক্, চিত্ত) আমাকর্ত্তৃক অবহেলাক্রমে বাধিত হইয়াছে। (অতএব) আমি মহাসুখলীলায় (যোগনিদ্রায়) সুপ্ত হইয়াছি। হালো ডোম্বি! (পরিশুদ্ধাবধূতিকে!) এ তোমার কি রকম চালাকি? (অসৎ আরোপের দ্বারা তুমি এ কি করিয়াছ?) কুলীন ব্যক্তিকে বাহিরে এবং কাপালিককে [গৃহ]-মধ্যে [স্থান দিয়াছ?] (কু অর্থাৎ শরীরে লীন যে প্রভাস্বর জ্যোতিঃস্বরূপ, তাহাকে অজ্ঞানরস পান করাইয়া বাহ্যে স্থাপিত করিয়াছ এবং ক অর্থাৎ সংবৃত্তিবোধিচিত্তকে যে পালন করে, সেই কাপালিককে বজ্রচিত্তে স্থান দিয়াছ।) লো ডোম্বি! তুমি (অপরিশুদ্ধাবধূতিকারূপে দেব, অসুর ও মনুষ্যাদি ত্রৈধাতুক) সকলকে (মিথ্যাজ্ঞানে নিমজ্জিত করিয়া) বিনাশ করিয়াছ। (আবার অসম্প্রদায়যোগিনীরূপে জগৎরূপ) কার্য্যের কারণ [কল্পনা করিয়া, অন্যান্য যোগীদের] (সংবৃত্তিবোধিচিত্তরূপ) শশধরকে বিনাশ করিয়াছ। (স্বরূপে অনভিজ্ঞ) কেহ কেহ (তোমাকে না জানার জন্য কর্ম্মবশতা প্রাপ্ত হইয়া সংসারদুঃখানুভববশতঃ) তোমাকে বিরূপ (বিরুদ্ধ কথা) বলে। [কিন্তু] (যাঁহারা তোমাকে অক্ষরসুখরূপে জানেন, সেই) বিদ্বজ্জন লোকেরা তোমাকে (সম্ভোগচক্ররূপ) কণ্ঠ হইতে (কখনও) ত্যাগ করেন না। কৃষ্ণাচার্য্য গান করিতেছেন,—হে ডোম্বি! তুমি কর্ম্মচণ্ডালী (কর্ম্মস্থ সাধনসকলের উপায়রূপিণী চণ্ডালিনী), তোমা অপেক্ষা অগ্রবর্ত্তিনী ছিনালী (ছিন্ননাসিকা) আর কেহ নাই, (যেহেতু সত্ত্বভেদ প্রাপ্ত হইয়া, ভিন্ন ভিন্ন সত্ত্বরূপে তুমিই অধিষ্ঠিত রহিয়াছ)।