হারামণি/ভূমিকা
(পৃ. ভূমিকা)
ভূমিকা
আল্লাহ্ তা’য়ালার অসীম অনুগ্রহে আমার সুদীর্ঘ ছয় বৎসরের পরিশ্রম ও যত্নের ফল আমার স্বদেশবাসীর ও আমার মাতৃভাষাভাষী ব্যক্তিবর্গের সম্মুখে সসঙ্কোচে স্থাপন করিতেছি। আমরা অতি আগ্রহ সহকারে বাঙলার পল্লী হইতে যে গানগুলি সংগ্রহ করিয়াছি তাহার সাহিত্যিক মূল্য বিচার করা আমাদের পক্ষে সম্ভবপর নহে! কেন না নিজের জিনিষের প্রতি মমত্ত্ববোধে লোক ন্যায় বিচার করিতে পারে না। কিন্তু তবু এই স্থানে একটী কথা উল্লেখ করা বোধ হয় অসঙ্গত হইবে না যে এই গানগুলির সন্ধানে ঘুরিতে ঘুরিতে ইহাদের সম্বন্ধে অনেক তথ্য জানিতে পারিয়াছি যাহা বাহিরের পাঠক বা দর্শকের অনভ্যস্ত চক্ষে সহজে সহসা ধরা পড়িবে না।
প্রথমে কৌতুহলের বশবর্ত্তী হইয়া এই গানগুলি সংগ্রহ করিতে সুরু করি। কলেজে অধ্যয়নকালে ইংরেজী সাহিত্যের ইতিহাসে Percy's Reliques এর খুব প্রশংসাবাদ দেখিতে পাই, এবং রাজশাহী কলেজের পরলোকগত অধ্যক্ষ শ্রীযুক্ত কুমুদিনীকান্ত বন্দোপাধ্যায়, এম-এ, আই-ই-এস মহোদয় একদিন প্রকাশ্য সাহিত্যসভায় আমার প্রচেষ্টার যৎপরোনাস্তি আন্তরিক সাধুবাদ করেন। ইহার ফলে আমার হৃদয়ে বাঙলার পল্লীগান সংগ্রহ করিবার বাসনা দৃঢ়রূপে বদ্ধমূল হইয়া যায়।
কর্ত্তব্য সম্পাদনের অবসরকালে যে সময়টুকু আমরা পাইতাম তখনই উহা পল্লীগান সংগ্রহের জন্য ব্যয় করিতাম। এক কথায় পল্লীগান সংগ্রহ আমার ভয়ানক রোগের মত দাঁড়াইয়া যায়।
সাধারণতঃ বৈরাগী ও মুসলমান নিরক্ষর চাষীদের নিকট নিকট হইতে এই গানগুলি সংগৃহীত হইয়াছে। রাজশাহী, ফরিদপুর, নদীয়া, পাবনা, ময়মনসিংহ প্রভৃতি জিলা হইতে এই গানগুলি পাওয়া গিয়াছে।
এই সংগ্রহে লালন ফকিরের অনেকগুলি গান রহিয়াছে। লালনের বাড়ী নদীয়া জিলায়। তাঁহার অসংখ্য শিষ্য। তাঁহার শিষ্যেরা সূফী দরবেশের মত চক্রাকারে বৈঠকে বসে। তৎপরে তাহারা গান সুরু করে।
গানের নানা প্রকার ধারা আছে। সাধারণতঃ চক্রাকারে ভজন গান করে। ভজন গান গাহিতে গাহিতে তাহারা তন্ময় হইয়া যায়। এই গানগুলিকে সাধারণতঃ দেহতত্ত্ব বা শব্দ গান বলে। কোথাও কোথাও এই গানকে মারেফাত গান কহে। এই সকল গানে অনেক সূফী পারিভাষিক শব্দ দৃষ্ট হয়। কোন কোন গানে আবার সূফী ও হিন্দু পারিভাষিক শব্দও পাওয়া যায়। এই সংমিশ্রণ দেখিয়া মনে হয় এককালে উত্তর ভারতের মত আমাদের বাঙালা দেশে কবীর, দাদুর জন্ম হইয়াছিল। এই ধারাটীর সাক্ষাৎ আমরা কোথাও পাই না। উহা হারাইয়া গিয়াছে বা অন্তঃসলিলা ফন্তুরমত লোকসঙ্গীতে লুকায়িত রহিয়াছে। লোকসঙ্গীতের মূল্য এই স্থানে অতীব উচ্চে। আমাদের মধ্যে কে এই ছিন্ন যোগ-সূত্রের যোগাযোগ স্থাপনে অগ্রসর হইবেন?
কবি শশাঙ্কমোহন বলিতেন, “আমি লক্ষ্য কবিয়া দেখিয়াছি হিন্দু ফকির ও মুসলমান ফকিরের মধ্যে অন্তরঙ্গ মধুর সম্বন্ধ বর্ত্তমান আছে।” সত্যই পাগলে পাগলে মিলন ঘটে।
এই সকল গানেও তাহার সাক্ষ্য পাওয়া যায়। কোথাও বিরোধের ভাব ফুটিয়া উঠে নাই। এগুলি যেন অন্ধকার রাত্রের রজনীগন্ধার ন্যায় রাজনৈতিক পতন ও অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়া আপনার অমল সৌন্দর্য্য বহিয়া লইয়া চলিয়াছে। উহাতে এতটুকু কলুষ লাগে নাই।
উত্তর ভারতের কবীর ও দাদু প্রভৃতি সাধুর হিন্দী রচনাগুলির মধ্যে যে প্রকার উদারতা ও অন্তরিকতার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় এই গানগুলির মধ্যে তাহার অভাব নাই।
ভজনগান গীতি কবিতা, গীতি কবিতা জাতীয় গান আবার নানা প্রকার। বাউল ও ফকিরেরা যখন নতুন দুই দল এক স্থানে সমাগত হয় তখন তাহারা নিজেদের দলের গুরুকে বড় প্রমাণ করিবার জন্য গানের উপরে পরস্পর পরস্পরের প্রতি দুর্ব্বোধ্য প্রশ্ন ও হিঁয়ালীচ্ছলে আক্রমণ করে। যাহারা ঐ গানের জওয়াব দিতে পারে তাহাদের সঙ্গে আবার গানের পাল্লা হয়। উত্তরোত্তর ঐ গানের পাল্লা বেশী হইতে থাকে। এমনও শুনা যায় যে সারারাত্রি শুধু উত্তর প্রত্যুত্তরের গান করিতে শেষ হইয়া যায়। আমাদের নিকট যে সকল গান দুর্ব্বোধ্য, উহার জোড়া গান একসঙ্গে শুনিতে পাইলে তদ্রুপ হইত না। প্রত্যেক হিঁয়ালী গানের জোড়া আছে।
গীতি কবিতা জাতীয় অন্য গান আছে তাহার সহিত তত্ত্বের কোন সম্পর্ক নাই। এই গান সাধারণতঃ ধুয়া, বারোমাসী, জারী, শারী প্রভৃতি নামে অভিহিত। ধুয়া গানের আবার প্রকার ভেদ আছে, রসের ধূয়া, চাপান ধূয়া প্রভৃতি। জারীগান সাধারণতঃ কারবলায় নিহত শহিদকে লইয়া রচিত। এই গান অত্যন্ত করুণ। এই গান শ্রবণ করিলে অশ্র সম্বরণ করা অসম্ভব। জারী পার্সী শব্দ অর্থ ক্রন্দন করা। শারীগানে অশ্লীলতা রহিয়াছে। বিদ্যাসুন্দরের মধ্যে যে রুচিবিকারের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়, ধর্ম্মমঙ্গলে যে সামাজিক ধারার পরিচয় পাই জারীগানের মধ্যে তাহার শেষ রেশ রহিয়াছে। জারীগান নৌকা বাইচের সময় গীত হয়।
জাগগানও গীতি কবিতা পর্য্যায়ের। জাগগান সাধারণতঃ রাজসাহী, ফরিদপুর, পাবনা প্রভৃতি জেলায় পৌষমাসে গীত হয়। জাগ গানের অনুরূপ গান ঢাকা, নোয়াখালী প্রচলিত আছে বলিয়া শুনিয়াছি। ঐ সকল জেলায় ভ্রমণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভবপর হইয়া উঠে নাই।
ভাসান গান এখন উঠিয়া যাইতেছে। বহুদিন হইল কোথাও এই প্রকার গান কোন পল্লীতে শুনি নাই। যে সকল ভাসান গান বাঙালার পল্লীতে প্রচলিত রহিয়াছে তাহা সংগ্রহ করিলে প্রাচীন মনসামঙ্গলের গানের সঙ্গে তুলনামূলক অধ্যয়নের সুবিধা হইত।
ভাসানের অনুরূপ গান রঙ্গপুর জেলায় প্রচলিত আছে, উহা বিরা গান নামে কথিত, খাজা খেজেরকে অবলম্বন করিয়া রচিত।
কবিগান এককালে বাঙলার খুব প্রিয় ছিল। হিন্দু মুসলমান গ্রামবাসী একত্র একভাবে উহার রস উপভোগ করিত। এখন আর সে ভাব নাই। কবিগান আমরা সংগ্রহ করি নাই, উহা সংগ্রহ করা বড়ই কষ্টসাধ্য ও শ্রমসাপেক্ষ। কেহ ইহা সংগ্রহে আত্মনিয়োগ করিলে যশঃ পাইবেন নিঃসন্দেহ এবং বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাসের এক অনাবিষ্কৃত দিক আলোতে উজ্জল করিতে পারিবেন। জনৈক গ্রন্থকার কবিগানের বিষয় আলোচনা করিয়াছেন কিন্তু উহা অত্যন্ত অসম্পূর্ণ ও সঙ্কীর্ণ।
কবিগান কোন সময় উৎপত্তিলাভ করিয়াছে তাহা সঠিক নির্ণয় করা দুষ্কর। তবে আমাদের মনে হয় ইহা মুসলমান কবিদের মুশা’য়ারার অনুকরণে সৃষ্ট। মুশায়ারায় পারশ্য কবিদের প্রত্যুৎপন্নমতিত্বপূর্ণ রচনার পরীক্ষা হয়। সংকীর্ত্তনের অধিক প্রচলনের জন্য কবিগান ও অন্যান্য পল্লীগান উত্তরকালে কোনঠেসা হইয়া পড়ে।
রামায়ণ এক সময়ে পল্লীগান পর্য্যায়ের সাহিত্য ছিল। কালক্রমে উহা সাহিত্য পদবী লাভ করিয়াছে। ডাক্তার শ্রীযুক্ত দীনেশচন্দ্র সেন মহাশয় তাঁহার গ্রন্থে এই রামায়ণ আখ্যায়িকার ইতিবৃত্ত বর্ণণা করিয়াছেন। রাজসাহী জেলার চলনবিল অঞ্চলে এখনও পদ্যপুরাণ গীত হয় বলিয়া শুনিয়াছি। রঙ্গপুর জেলায় জঙ্গনামা প্রভৃতি কিতাব এখনও গীত হয়। আসামে এখনও রামায়ণ বাউল পর্য্যায়ের ভিক্ষুকগণ গাহিয়া থাকে এবং ডিব্রুগড় অঞ্চলে ঐ গান শুনিয়া চমৎকৃত হইয়াছিলাম।
আমাদের প্রাচীন বাঙলা কাব্য সাহিত্যের অধিকাংশ গ্রন্থগুলিই যে গীত হইত এবং আমার যতদূর মনে হয় যে ঐ সকল গ্রন্থ পল্লীগান পর্য্যায়ের। শ্রীযুক্ত দীনেশচন্দ্র সেন মহাশয় বলেন বিদ্যাসুন্দরের মাল-মসলা ভারতচন্দ্র পল্লীগাথা বা গল্প হইতে সংগ্রহ করিয়াছিলেন।
আমাদের বাঙলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্চ্চাচর্য্য বিনিশ্চয় পল্লীগান কি না তদ্বিষয়ে কিছুমাত্র বলিতে যাওয়া আমার পক্ষে ধৃষ্টতা কিন্তু বাউলের লক্ষণ বলিতে যাইয়া ডক্টর শ্রীব্রজেন্দ্রনাথ শীল মহাশয় আমাদিগকে বলিয়াছিলেন চর্য্যাভাব বাউলের অন্যতম লক্ষণ। চর্য্যাচর্য্য বিনিশ্চয়ের পর গোপীনাথের গান, ময়নাবতীর গান, প্রভৃতি অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। এমন কি বাঙলা সাহিত্যের যে বিরাট সৌধ গড়িয়া উঠিতেছে তাহার সুদৃঢ় ভিত্তিভূমি। সার গ্রীয়ারসনের কল্যাণে এই ময়নামতীর গান দেশবিদেশে আদৃত হইয়াছে এবং বাঙালীরা উহার যথার্থ মূল্য নিরুপণে সমর্থ হইয়াছেন।
বাঙলার অন্যতম সম্পদ ডাক ও খনার বচন গ্রাম্যগান পর্য্যায়ের জিনিষ না হইলেও উহা যে ছড়া জাতীয় তদ্বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকিতে পারে না। এই সকল হইতে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে চাই যে আমাদের বাঙলা সাহিত্যের ভিত্তিভূমি পল্লীগান ও ছড়ার উপর প্রতিষ্ঠিত।
উত্তর ভারতের কাজরী জাতীয় গান আমাদের দেশে বোধ হয় নাই। তবে মেয়ের বিবাহাদির সময় গান গাহিয়া থাকে। ঐ ধরণের কতকগুলি গান এই গ্রন্থে প্রকাশিত করিয়াছি। কাজরী গান গাহিয়া হিন্দুস্থানের মেয়েরা যে অনাবিল আনন্দ পাইয়া থাকে আমাদের দেশের মেয়েরাও তাঁহাদের মেয়েলীগান গাহিয়া তদপেক্ষা কম আনন্দ পান বলিয়া মনে হয় না। এই গ্রাম্য মেয়েলী গান হিন্দুদের মধ্যে এক প্রকার প্রচলন নাই বলিলেই চলে। নিরক্ষর মুসলমান চাষী গৃহস্থের ঘরে এখনও বিবাহের সময় এই গান মাঝে মাঝে শ্রুত হয়। তবে দিন দিন এই প্রচলন রহিত হইয়া যাইতেছে। রঙ্গপুর জেলায় বিবাহের সময় নিরক্ষর মুসলমান চাষী গৃহস্থদের মধ্যে প্রচলিত গান বড়ই কৌতুহলোদ্দীপক। মেয়েরা দলবদ্ধ হইয়া গান করিতে করিতে ফুরুল ডুবায়। উহা বড়ই আনন্দজনক।
পাবনা, ফরিদপুর প্রভৃতি জেলায় ইঁটাকুমারের পূজা হয়। ইহা সাধারণত: অশিক্ষিত ও অনুন্নত হিন্দুদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। পৌষ মাসে বালক ও বালিকারা এই পূজাকরিয়া থাকে। শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের লোকসাহিত্যে এই জাতীয় কতগুলি গান দেখিতে পাওয়া যায়।
কৈবর্ত্ত, জালিক প্রভৃতি নিম্ন শ্রেণীর হিন্দুদের মধ্যে পাট ঠাকুরের পূজার রীতি আছে। উহার সঙ্গে গান গীত হয়। জাগ গানে যেমন ছেলেরা দলবদ্ধ হইয়া গান করে এই পাট ঠাকুরের গানও তদ্রুপ দৃষ্ট হয়। এই গানে নৃত্যের প্রচলন আছে। উহা সাদাসিদে নাচ। মালদহের গম্ভীরা গান আমরা শুনি নাই, উহাতে নাচ আছে কিনা জানি না।
ইংরাজদের Folk dance জাতীয় জিনিষ আমাদের বাঙলা দেশে আছে বলিয়া আমার মনে হয়, কিন্তু ঐ বিষয়ে আলোচনা করিবার সুযোগ আমরা পাই নাই। Folk dance এবং Folk-song অচ্ছেদ্যভাবে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত।
গাজীর গানে আসল গায়েন নৃত্য করে, কোথাও কোথাও দেখা যায়। বাউলদের গানের সঙ্গে নৃত্য প্রচলিত আছে। ধুয়া, বারোমাস্যা প্রভৃতি গানের সঙ্গে নৃত্যের কোন যোগ নাই। শারী গানের সঙ্গে অঙ্গ চালনা হয়, তবে নৃত্য পর্য্যায়ের নহে।
ময়মনসিংহের ঘাটু গানে গায়েন বালক নৃত্য করে বলিয়া শুনিয়াছি। আমরা কোন ঘাটু গান সংগ্রহ করিতে পারি নাই। ময়মনসিংহে যে গাথাজাতীয় গান গীত হয় উহা গাজীর গানের অনুরূপ। আমরা নিজেরা ময়মনসিংহের গান শুনিতে পারি নাই কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের গাথা সংগ্রাহক বন্ধুবর কবি জসিমুদ্দিন সাহেবের সৌজন্যে প্রাপ্ত এবং আমার অভিন্ন হৃদয় জরীন কলম ঐ গান গাহিবার পদ্ধতি সম্বন্ধে একখানি অতীব মূল্যবান চিত্র প্রকাশিত করিয়াছেন। বিভিন্ন দেশের গান গাহিবার রীতির তুলনামূলক অধ্যয়নের জন্য অত্যন্ত মুল্যবান।
ময়মনসিংহের গাথা জাতীয় গানের প্রাচীনত্ব সম্বন্ধে কোন কথা না বলিয়াও এই কথা নির্ভয়ে বলা চলে যে উহার মধ্যে যে রসের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় তাহা আমাদের অত্যুন্নত নাগরিক সাহিত্যের নীচে নহে। ময়মনসিংহের গাথা জাতীয় গানে সামাজিক, ধার্ম্ম্যির নানাবিধ রীতি আচার অনুষ্ঠানের নিখুত ছবি পাওয়া যায়। গাথা জাতীয় গানে অধিক লোকের প্রয়োজন। এই জন্য ইহা সমধিক প্রচার লাভ করিতে পারে নাই। প্রত্যুত গীতি কবিতা জাতীয় গানে বেশী লোক লাগে না। ভাদ্রের ভরা গাঙ্গে মাঝি নৌকার হাল ধরিয়া আপনার মনে যেমন “মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে, আমি আর বাইতে পারলাম না” গাহিতে পারে আবার বাউল ঘরের কোনেও উহা অনয়াসে গাহিতে পারে। উহার আনুষঙ্গিক কোন বাদ্যযন্ত্রের বিশেষ প্রয়োজন করে না। বাদ্য যন্ত্র হ’লেও চলে না হলেও চলে। কিন্তু গাথা জাতীয় গানে বাদ্য যন্ত্রের বিশেষ প্রয়োজন।
আমার হাতের কাছে কোন বহি নাই, সুদূর মফঃস্বলে পড়িয়া রহিয়াছে। পৃথিবীর অন্যান্য জাতির পল্লীগান সম্বন্ধে তুলনামূলক আলোচনা করিবার একান্ত ইচ্ছা ছিল। এবারে তাহা ঘটিয়া উঠিল না বারান্তরে পারিত চেষ্টা করিয়া দেখিব।
আমার অন্তরঙ্গ বন্ধুগণ এই গানগুলি সংগ্রহে নানা উপায়ে সাহায্য করিয়াছেন। আমি তাঁহাদের নিকট ঋণী ও কৃতজ্ঞ। শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় এই সংগ্রহের জন্য দু’কথা লিখিয়া দিয়াছেন এবং শিল্পী শ্রীযুক্ত অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সি-আই-ই মহোদয় এই গ্রন্থের প্রচ্ছপটের জন্য একখানি ছবি ও প্রচ্ছদ লিপি অঙ্কিত করিয়া দিয়াছেন। এই সূত্রে তাঁহাদের সঙ্গে সঙ্গে আমার একান্ত শুভানুধ্যায়ী ও অন্তরঙ্গ ‘পীর-ই-মগাঁ’ শ্রীযুক্ত সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়কেও আমার সশ্রদ্ধ ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাইতেছি।[১]
শাহাজাদপুর
|
|
মুহম্মদ মন্সুর উদ্দীন |
দ্রষ্টব্য
যদি কেহ অনুগ্রহ পূর্ব্বক এই গ্রন্থের উন্নতিবিধানার্থ কোন প্রকার ইঙ্গিত বা সাহায্য প্রদান করিতে ইচ্ছা করেন বা পল্লীগান সংগ্রহ করিয়া পাঠাইতে চাহেন তবে নিম্নলিখিত ঠিকানায় পাঠাইলে বাধিত হইব।
মুহম্মদ মন্সুর উদ্দীন
ডাকঘর, খলিলপুর, (পাবনা)।
- ↑ দক্ষিণ কলিকাতা উনবিংশ সাহিত্য সম্মিলনীতে পঠিত। ঈষৎ পরিবর্ত্তিতরূপে মুদ্রিত।