সান্ত্বনা

সান্ত্বনা

গরুর গাড়ি চন্দনপুর গাঁয়ের কাছে আসতেই ননীবালা বললে—দ্যাখ খোকা, আমরা এসে গিইচি।

—আমি দেখচি মা, ঘুমুই নি।

—এখান থেকেই গাঁ আরম্ভ হয়েচে—ঐ যে জেলেপাড়া—

—বামুনপাড়া কদ্দূরে মা?

—একটু আগে।

ননীবালা বিষম উত্তেজিত হয়ে উঠেচে। একটা অজ্ঞাত আবেগ বুকের মধ্যে ঠেলে উঠচে তার। তার মনে পড়ল প্রায় ত্রিশ বছর আগে সে এই গাঁয়ে নতুন-বৌ হয়ে প্রবেশ করেছিল। তখন সে ছিল তার সঙ্গে, যেমন সুরেশ আজ তার সঙ্গে রয়েচে—সেই মুখ, সেই চোখ, বয়সও প্রায় কাছাকাছি···

যখন তারা পাড়ার মধ্যে এসে ঢুকল তখন সকাল হয়েছে, কাক ডাকচে কা-কা করে। সুরেশ গাড়ি থেকে নেমে গাঁয়ের ধুলো নিয়ে কপালে ঠেকাল, তারপর মাকে জিগ্যেস করলে—কদ্দিন আগে তুমি গাঁ ছেড়ে গিয়েছিলে?

—তোর যত বয়স—ঠিক তত বছর আগে।

—একুশ বছর আগে?

—হ্যাঁ। ওনার ইস্কুলের চাকরি যাবার পরেই আমরা গাঁ ছেড়ে চলে যাই।

—বাবা দুঃখ পান নি?

—তা আর পায় নি। শেষের দিকে প্রায়ই বলত—গাঁয়ে ফিরে যেতে পারলে আমি বোধ হয় আর কটা দিন বেশি বাঁচতুম। গাঁয়ের মেয়েরা বসে বসে এই সময় নিশ্চয় বসন্তের রোদ পোহাচ্চে আর কুল শুকোচ্চে, বাঁশঝাড়ে বাঁশঝাড়ে কোকিল পাপিয়া ডাকচে—উঃ, কোন রকমে যদি গাঁয়ে ফেরা যেত···। শহরের ছোট্ট ঐটুকু বাড়িতে গরমে একেবারে অস্থির হয়ে পড়ত।

—আমি যদি তখন বড় হতুম, মা, তা হলে বাবাকে নিশ্চয়ই গাঁয়ে নিয়ে আসতুম।


সুরেশ একহারা গড়নের শক্তসমর্থ ছোকরা। সে ফুটবল খেলে, দেশ স্বাধীন হবার পরে রাইফেল ক্লাবে বন্দুক ছোড়া শিখচে। রেলের চাকরিতে অ্যাপ্রেণ্টিস হয়ে ঢুকেচে, এ বছরে সেটা শেষ হলে ভাল চাকরি পাবে। এরই মধ্যে রেলওয়ে কলোনীর ওপরওলা অনেক অফিসারের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়েচে ভাল ফুটবল খেলতে পারার জন্যে। কাজকর্মেও তার খুব মন, এ ছাড়া অঙ্কের টিউশনি করে প্রতি মাসে সত্তর-আশি টাকা রোজগার করে।

দশ বছর আগে ননীবালার স্বামী মারা গিয়েচে। সুরেশ তখনই স্কুলে পড়ত। যে কষ্টের মধ্য দিয়ে তাদের দিন কেটেচে—সে স্বপ্নেও ভাবে নি যে, ও আঘাত তারা কোন দিন সামলে উঠতে পারবে। কিন্তু রেলের কলোনীর সকলেই যথেষ্ট সাহায্য করেচে। তারাই একটা বাসা ঠিক করে দিয়েছিল, কারণ রেলের কোয়ার্টার ছেড়ে দিতে হল। রেলওয়ে ইনস্টিটিউটের সেক্রেটারী রায়বাহাদুর হরিচরণ বসু নিজে এসে তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে যেতেন। ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টীরা সুরেশের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দিলেন এবং এই অনাথ পরিবারকে অনশনের হাত থেকেও বাঁচিয়ে রাখলেন।

আজ মনে হচ্চে অকূল সমুদ্রে সে কূলের আভাস দেখতে পাচ্ছে। সকলেই বলচে যে দেশ স্বাধীন হয়েচে, তখন এবার সব দুঃখকষ্ট ঘুচল, ছেলেরা ভাল ভাল কাজ পাবে আর তাড়াতাড়ি উন্নতি হবে—সামান্য কটা টাকার জন্যে আর জীবন পাত করতে হবে না। স্বাধীন পৃথিবীতে আর কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না—অনেক বড় বড় কাজ হবে— চারিদিকেই সভা-সমিতি ও বক্তৃতার ধুম পড়ে গেচে। কয়েক দিন আগেও সকলে মহাত্মা গান্ধীর প্রতিকৃতি ফুলের মালায় সাজিয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েচে। সেদিন তাঁর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী ছিল। মহাত্মা গান্ধীর খুব প্রিয় একটা গান, বোধ হয় ‘রামধুন’ সেটা সুরেশ খুব ভাল গায়—

রঘুপতি রাঘব রাজা রাম
পতিত পাবন সীতারাম···


* * *

রোদ উঠেচে। সামনের পাকা বাড়িটা থেকে একজন লোক বেরিয়ে এসে রাস্তায় মাঝখানে দাঁড়িয়ে তাদের গরুর গাড়ির দিকে চেয়ে ছিল। ননীবালা ফিসফিস করে বললেন: সুরেশ, ঐ বোধ হয় তোর বিনোদ কাকা—ওঁর খুড়তুতো ভাই—হ্যাঁ, ঠিক তাই। তোর নাম বল গে যা, আর পা ছুঁয়ে প্রণাম করবি, ভুলিস নে যেন। আমাদের আসবার কথা উনি জানেন।

পরিচয়ের পালা চুকতে বেশ কিছুক্ষণ লাগল। বিনোদ কাকা ননীবালাকে বাড়িতে নিয়ে গেলেন।

বহু বছর পরে কোনও বধুর গ্রামে ফেরা একটা মস্ত ঘটনা। গ্রামের সমস্ত গিন্নী-বান্নী, বৌ-ঝির দল তাকে দেখতে এল। অভয় পরামানিকের বউ বললে—বৌমা ভাল ছিলে তোমরা? তোমার খোকা কোথায়? কত বড়টি হয়েচে দেখি! দাঁড়াও আগে তোমাকে পেন্নাম করি। প্রণাম সেরে সে বসল।

নাপিত-বৌকে দেখে ননীবালা অবাক হয়ে গেল—সঙ্গে সঙ্গে একটা দুঃখের অনুভূতিও তার হল। অভয়ের বউ তার থেকে অন্ততঃ কুড়ি বছরের বড়—প্রায় তার মায়ের বয়সী। তার চুল পেকে গেচে, তবে অবস্থাপন্ন ঘরের বৌ হওয়ার জন্য তার বয়স তত বেশী দেখায় না। কিন্তু অভয়ের বৌ এখনও সিঁদুর পরে, অভয় এখনও বেঁচে আছে। অবশ্য এতে এমন অবাক হবার কিছু নেইও—যতই হোক সত্তরের বেশী বয়স হবে না, কিন্তু···

ননীবালা এই ‘কিন্তু’র উত্তর খুঁজে পেল না। তার আর কি মৃত্যুর বয়স হয়েছিল! ননীবালা পর দিনে দেখতে পেল যে শুধু অভয়ের বউ নয়, তার থেকেও বেশি বয়সের স্ত্রীলোকেরা এখনও পাকা চুলে সিঁদুর পরচে। তবে কেবল সে-ই কেন তাকে এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে চলে গেল? গাঁয়ের মেয়েরা তাকে দেখতে এলে এই প্রশ্নই তার মনে থেকে-থেকে বাজতে লাগল।

ননীবালার শ্বশুরবাড়ি বিনোদ কাকার বাড়ির দক্ষিণে। একুশ বছরের অবহেলার চিহ্ন বাড়িটার সর্বদেহে প্রকট হয়ে রয়েছে, উঠোন ঘাস আর কাঁটা ঝোপে ভরে গিয়েছে, দেয়াল ফুঁড়ে একটা বন-ডুমুরের গাছ উঠেছিল—এখন তাতে ফল ধরেচে, কাঁটা লতায় আচ্ছন্ন জানলার পাল্লা প্রায় ঢাকা পড়েচে।

সুরেশ বলতে লাগল—মা, চল—আমরা নিজেদের বাড়িতে যাই। নিজের গাঁয়ে এসে অন্যের বাড়িতে থেকে লাভ কি? আগাছা পরিষ্কার করাতেই তিন দিন লেগে গেল। তারপরে একদিন ননীবালা বাড়িটি দেখতে গেল। এক সারিতে তিনটি ঘর, দু-দিকে বারান্দা, উঠোনের ওপারে রান্নাঘর ও ভাঁড়ার। কত দিন পরে সে এই ভিটেতে আবার পা ফেললে··· দীর্ঘ একুশ বছর—আর তার মধ্যে কত কি ঘটে গিয়েচে।

সুরেশ বলে—এ বাড়িতে বাস করার কথা আমার একদম মনে নেই মা।

দূর বোকা—ননীবালা বকে তাকে—তুই তখন সবে ন মাসের, সেই সময়ে আমরা এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাই।

—আমরা এখন এখানে কিছুদিন থাকব মা, জায়গাটা খুব ভাল লাগচে।

—সেই জন্যেই তো এসেচি খোকা, তারপর এখন মা-মঙ্গলচণ্ডীর ইচ্ছে।


ননীবালা সমস্তক্ষণ ধুলো ঝাড়া, পরিষ্কার করা ইত্যাদিতে ব্যস্ত রইল। একুশ বছরে ধুলোর স্তর পুরু হয়ে জমে রয়েছে! কিন্তু তার কেবলই মনে পড়চে তার স্বপ্নময় যৌবনের আনন্দোজ্জ্বল দিনরাত্রিগুলির কথা—‘সে’ তখন নবযুবক আর ননীবালা চৌদ্দ বছরের বালিকা মাত্র।

সুমুখেই সেই কুলুঙ্গিটা—‘সে’ একবার কিছু মিষ্টি এনে ওখানে লুকিয়ে রেখে তাকে কি বোকাটাই না বানিয়েছিল। কী একটা পেটেণ্ট ওষুধের লেবেল আঁটা পিজবোর্ডের বাক্সের মধ্যে লুকিয়ে রেখে তাকে জিগ্যেস করেছিল—‘বল ত ওটার মধ্যে কি আছে!’ ননীবালা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে জবাব দিয়েছিল—‘তোমার সব জিনিসের খবর আমি রাখি বুঝি? কোনও বিদেশী ওষুধ-টোষুধ হবে আর কি?’

—বাজি রাখবে?

—ও সব আমি বুঝি নে। বাক্সে কি আছে তাই বল?

—রসগোল্লা।

—যাও যাও। রসগোল্লা না হাতি।

—তোমার দিব্যি, এই দেখ! কটা তুমি খেতে পার?

তারপরে তারা দু-জনে সেই মিষ্টি নিয়ে কি কাড়াকাড়ি লাগিয়েছিল··· ত্রিশ বছর আগে—অথচ মনে হয় যেন গতকালের কথা। এই ঘরবাড়ি ‘তার’ স্মৃতিতে পরিপূর্ণ। প্রতিটি ঘর ও বারান্দা, গৃহের প্রতি কোণ, কাঠের চৌকি, রান্নাঘরে কাঠের পিঁড়ি, প্রতিটি ক্ষুদ্র বস্তু তার বধূজীবনের প্রথম দিকের স্মৃতিতে ওতপ্রোত হয়ে আছে। তার তরুণ স্বামী এ ঘর থেকে ও ঘরে ঘুরে বেড়াত, আর সে লজ্জারুণ চঞ্চল-হৃদয়া নববধূর মত তার অলক্ত-রঞ্জিত ব্যস্ত পায়ে পাশে ঘুরত নানান কাজে।


ননীবালার মনে হতে লাগল যেন এখনই পাশের ঘরে গেলেই সে তার স্বামীকে কাঠের তক্তপোশে বসে আছে দেখতে পাবে। আবার ও ঘরে গেলে মনে হয় তার স্বামী এ ঘরে আছে। বিগত দিনের মত এখনও যেন তার স্বামীর সঙ্গে লুকোচুরির খেলা চলেচে···।

একদিন একগোছা নতুন ধানের শীষ নিয়ে এসে ওকে বলেছিলো—এগুলো মা-লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে তুলে রেখে দাও, এই প্রথম নতুন ধান উঠেচে। শাঁখ বাজাও, আমার বাড়ির তুমিই হলে গৃহ-লক্ষ্মী—শাঁক বাজিয়ে বরণ করে তোল!


দ্বিপ্রহরের প্রখর তাপে নিমের অলস মধুগন্ধের সঙ্গে অজস্র পুরোনো স্মৃতি ভেসে আসচে, ননীবালা একদৃষ্টে বাঁশঝাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে, তার মন অতীতের আবেগজড়িত মুহূর্তের স্মৃতিমন্থনে ডুবে। এমনি কোন কোন মুহূর্তে সুরেশ ডেকে বলে—‘মা এক গ্লাস জল দেবে?’ সে চমকে ওঠে, বিক্ষিপ্ত কল্পনা টুটে যায়, পাছে সুরেশের কাছে তার মনোভাব ধরা পড়ে যায় এই ভেবে লজ্জিত হয়ে ওঠে।

সুরেশকে জল এনে দিয়ে সে তালির কাজে ব্যস্ত হয়ে ওঠে, অথবা বঁটি নিয়ে তেঁতুলের গাদা কুটতে বসে। তারপর আবার তার মন পুরোনো দিনের মধ্যে ফিরে যায়। একদিন সে উঠোনে একগাদা তেঁতুল নিয়ে এমনিভাবে কুটতে বসেছিল···

‘সে’ পা টিপে টিপে এসে পেছন থেকে ফিসফিস করে বলেছিল—‘এসব বাজে কাজ রেখে দাও দিকি নি, লেবুর পাতা লঙ্কা আর নুন দিয়ে তেঁতুল মাখো বরং।’

‘স্-স্ চুপ, মা শুনতে পাবেন। ও সব হবে না যাও—কাঁচা তেঁতুল খেয়ে জ্বর বাধাতে চাও বুঝি?’

—‘আহা-হা তুমি নিজে যেন খাবে না—আমি একলা সবটা খাব বলিচি না কি? মা এখন অগাধে ঘুমোচ্চেন। লক্ষ্মীটি তাড়াতাড়ি কর। আচ্ছা, সত্যি করে বল তো, তেঁতুলের আচার খাবার কথায় তোমার জিভে জল আসচে কি না?’ শেষ পর্যন্ত তাই হল, ননীবালা রান্নাঘরের দিকে গেল। তার স্বামী বললে—দাঁড়াও, আমি এখনি লেবুর পাতা নিয়ে আসচি। তেঁতুলগুলো ভাল করে ধুয়ে নাও, নইলে খেতে খারাপ লাগবে।’

—‘আচ্ছা, আচ্ছা, সবজান্তা মশাই’, ননীবালা রাগের ভান করে বলে—‘তেঁতুল ধুলে নষ্ট হয়ে যায়, মাকে জিগ্যেস করে দেখো।’

দু-জনে মিলে সব তেঁতুল খেয়ে ফেললে। পরদিন তার স্বামীর গলাব্যথা আর সর্দি হল। ননীবালা তর্জনী তুলে শাসনের সুরে বললে—‘আর তেঁতুল খাবে? তখনি বলি নি আমি? শুনলে না আমার কথা! আমার মত লোকের কথা শুনবেই বা কেন?’

—‘মাকে বলো না যেন।’

—‘একশো বার বলবো। তবে তোমার শিক্ষা হবে।’

তার পরে ভেংচি কেটে বললে—‘লেবুর পাতা লঙ্কা দিয়ে আর একটু তেঁতুল খাবে?’


ননীবালার দু-চোখ অশ্রুপূর্ণ হয়ে উঠল। আঁচল দিয়ে সে তাড়াতাড়ি মুছে ফেললে—ছেলে যেন দেখতে না পায়। আজ যদি তার ‘সে’ বেঁচে থাকত! অসম্ভব কিছু নয়—কারণ, এখনও তার খুব বেশি বয়স হত না। আজকের দিনটা তা হলে কী আশ্চর্য সুন্দরই না হয়ে উঠত—তার খোকা এখন পূর্ণবয়স্ক হয়ে উঠেচে, সকলেই বলে সে খুব ভাল ছেলে, মঙ্গলচণ্ডীর কৃপায় রেলের ভাল চাকরি পাবে শীগগিরই। তার স্বামী এখন ঘরে বসে পরিপূর্ণ বিশ্রাম উপভোগ করতে পারতো, কোনও কিছুর জন্য কেউ আর তাকে বিব্রত করতো না, ছেলের আয়ের উপর নির্ভর করে নিশ্চিন্তে দিন কেট যেত···আজকের এই গুমোটে ঘরে বসে-বসে তাহলে সে কেবলই গল্প করতে পারত। সুরেশের বউ কাজকর্ম করতো, তাদের জন্য তেঁতুল মেখে নিয়ে আসতো। কিন্তু আজ পৃথিবীতে ননীবালা একা—তার স্বামী তাকে ছেড়ে আগেই চলে গেচে।

ননীবালার সম্মুখে এখনও পড়ে রয়েচে সুদীর্ঘ অস্পষ্ট পথ; কতদিন তাকে এভাবে চলতে হবে তা কেউ জানে না··· কিন্তু, না না, তার সুরেশ আছে। ভগবান তাকে বাঁচিয়ে রাখুন। ননীবালা তাকে বিয়ে দিয়ে ঘর-সংসার গুছিয়ে দিয়ে যাবে। এখনও সে ছেলেমানুষ, ঘরকন্নার কিছুই বোঝে না। তার ছেলেকে দেখাশুনো করার দায়িত্ব তারই।

হঠাৎ সুরেশ এসে বললে—মা লেবুব পাতা আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে একটু তেঁতুল মেখে দেবে?

ননীবালা চমকে উঠল। নির্বাক হয়ে সে চেয়ে রইল তার ছেলের মুখের দিকে, তার পরেই তার উদগত অশ্রু রোধ করার জন্য অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। অবিকল তার বাবার মত কথা বলতে সুরেশ শিখল কোথা থেকে? একই স্বর, একই সুরে কথা বলা···

গ্রামে ফিরে আসার পর থেকে সে অবিরত তার স্বামীর পদধ্বনি শুনচে; অন্যমনস্ক হয়ে পড়চে, সমস্ত কিছুই যেন তার কাছে অর্থহীন শূন্য খোলা বলে মনে হচ্ছিল।

* * *

একদিন গ্রামের হরিদাস চক্রবর্তী এসে গাঁয়ের সমস্ত মেয়েদের সত্যনারায়ণের পাঁচালী শুনবার ও প্রসাদ পাবার নিমন্ত্রণ করলেন। তাঁর পাকা বাড়ির বারান্দায় পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। নিমন্ত্রিতা স্ত্রীলোকদের জন্য মাদুর বিছিয়ে দেওয়া হল, পুরুষেরা বাইরের চত্বরে বসল। পূর্ণচন্দ্রের আলোতে নারকেল গাছের ছায়া পড়েছে সেখানে। সদ্য তোলা যুঁই ফুলের সুগন্ধে সমস্ত বারান্দা আমোদিত হয়ে উঠেচে।

হরিদাসের স্ত্রী এগিয়ে এসে ননীবালাকে অভ্যর্থনা করলেন—এসো বোন। এসো এসো অনেকদিন পরে এখানে এলে—সেই অনস্ত চতুর্দশীর সময় আরেকবার এসেছিলে, মনে আছে?

ননীবালা বললে—খুব মনে আছে।

—তোমার বিয়ের বোধহয় এক বছর কি দু-বছর পরে।

—প্রায় দু-বছর।

—তোমার মুখ অনেক বদলে গেছে!

—মুখের কথা বলচ, দিদি—আর মুখ দিয়ে হবেই বা কি! সে সব তো অনেক আগেই চুকে গিয়েচে।

—সত্যি, ও কথা ভাবলে আমার ভারি কষ্ট হয় বোন, তার বয়সও তো বেশি হয় নি—আমার থেকে অনেক ছোট। চলে যাবার বয়স তার হয় নি। কিন্তু বরাত তো কারো কথা মেনে চলে না, কি আর করবে বল—

ননীবালার দু-চোখ জলে ভরে গেল। চোখের জলে যাতে মুখ ভেসে না যায় এজন্যে সে অশ্রু সংবরণের চেষ্টা করতে লাগল। এদের সামনে তার অশ্রু-বর্ষণ লজ্জাকর, তার বেদনা এরা বুঝবে না, কারণ এ ধরনের তিক্ত-মধুর অভিজ্ঞতা তাদের নেই, বিষয় ভোগে, আহারে-বিলাসে মগ্ন এরা—তার যে অভিজ্ঞতা তা এদের ধারণায় আসে না, এরা মনে করবে সে তার দুর্ভাগ্যকে এদের সামনে বেশী করে দেখাচ্চে।

প্রতিবেশী কানাই গাঙ্গুলীর পুত্রবধূ এসে তার পাশে বসল, তারা দু-জনে আলাপ করতে লাগল। তার বিয়ে বেশী দিন হয় নি—সবে ন-মাসের একটি মেয়ে কোলে। তার বাপের বাড়ি শান্তিপুরের কাছে হবিবপুরে, কথাবার্তায় বেশ একটু শহুরে টান আছে। সে বললে ক-দিন ধরেই ভাবচি, যাই কাকীমার সঙ্গে গিয়ে একটু দেখা করে আসি।

—সত্যি? আমার কথা কে বললে?

—সকলের কাছেই শুনচি। আমার শাশুড়ী বলেছিলেন যে গাঁয়ে এ পর্যন্ত আপনার মত বৌ একটাও আসে নি। আপনার সঙ্গে দেখা করতে বললেন। ভাল কথা—কাকীমা, আপনার নাম কি?

—ননীবালা। তোমার?

—প্রীতিলতা।

—সুন্দর নাম। খুকির নাম কি রেখেছ?

—এখনও নাম রাখা হয় নি—সবাই টুনু বলে ডাকে। আপনাদের ওখানে বেড়াতে গেলে কিন্তু আপনার নাতনীর জন্য একটা নাম ঠিক করে দিতে হবে।

—নিশ্চয়ই। কালই এসো না। তুমি গান জান?

—বিশেষ কিছু নয়। আমি বরং আপনার গান শুনবো। সবাই বলে আপনি খুব ভাল গান করতে পারেন।

—আমি? আমার কি আর গান গাইবার দিন আছে মা?

—কিন্তু না···এ তো চলবে না। এত সহজেই চোখে জল আসচে যে ননীবালা প্রায় উদ্‌ভ্রান্ত হয়ে উঠেচে। তার ছেলেও এখন বয়স্ক হয়ে উঠেচে। তা ছাড়া এক গাঁ লোকের সামনে অভিমানী মেয়ের মত অশ্রুপাত করা তার ভাল দেখায় না।

প্রীতিলতা দেখতে সুন্দর—বছর আঠারো বয়সের হবে। ননীবালা নিজেকে সামলে নিয়ে বললে—এসো কিন্তু ঠিক। সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকবো—এই মনে করেই তো গাঁয়ে এসেচি। তোমার পথ চেয়ে থাকবো।

গোলমালটা হঠাৎ বেড়ে উঠলো। কথকতা বোধ হয় এইবার শুরু হবে। এমনি সময়ে ননীবালার বয়সী আরেকটি মেয়ে এসে তার হাত ধরলে।

—বৌদি, আমাকে তোমার মনে আছে ভাই?

—ননীবালার বেশ স্পষ্ট মনে আছে—এই গাঁয়েরই উপেন ভট্‌চাষের মেয়ে কনক। প্রথম যখন ননীবালা স্বামীর ঘর করতে এলো—তখন রায়চৌধুরীদের সুবাসিনী আর এই কনক তাদের দরজা বন্ধ ঘরের সামনে এসে অর্ধেক রাত পর্যন্ত আড়ি পেতেচে। দু-জনের ধৈর্যও ছিল অসাধারণ! একদিন—কিন্তু না এখন সে ভুলে যাওয়াই ভাল—সে সব পাগল করা সুবাসস্নিগ্ধ দিন চলে গিয়েছে কবে—বিস্মৃতিতে ডুবে গিয়েচে। এত চেষ্টা করে সে যা প্রাণপণে ভুলে থাকতে চাইছে, এই বুদ্ধিহীনা স্ত্রীলোকের দল সেই বিষয়েই বারেবারে কথা তুলে তার স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলচে। অথচ ওরা এই সহজ সত্যটা বুঝচে না। অজস্র পুষ্পের সুরভিতে সুবাসিত সুদূর অতীতের দিন-রাত্রিগুলি কনকের উপস্থিতির সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা—সে তার সামনে না এলেই তো ভাল করত।

ননীবালা চেষ্টা করে মুখে হাসি টেনে আনলে, তারপর বললে—মনে আছে বৈকি, ভাই। তারপর, কেমন আছ?

—এই একরকম। মনে আছে—একবার উঁকি মারবার জন্য দাদা আমার মুখে কেমন চকখড়ির গুঁড়ো মাখিয়ে দিয়েছিলেন?

এ ছাড়া কথা বলবার আর কি কোনও বিষয় নেই? ননীবালা চুপ করে থাকল। কনকও অপ্রতিভ হয়ে থেমে গেল। ইতিমধ্যে ভিড় বেড়ে উঠেচে। উঠোনে পাতার উপর প্রসাদ সাজানো হয়েছে। ননীবালারা তার পাশে গিয়ে বসল। পাঁচালী শুরু হল।

এই সময়ে একটি বৃদ্ধ লোক এক হাতে একটি ঘটি ও অন্য হাতে একটি লাঠি নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে এসে উপস্থিত হলেন। এসেই জিগ্যেস করলেন—পাঁচালী শেষ হয়ে গেছে!

হরিদাস চক্রবর্তীর ছেলে বললে—এখনও হয় নি—কাকা, আসুন না বসবেন আসুন।

—না; এখানে মেয়েদের মধ্যে আর বসবো না। আর কতক্ষণ চলবে?

—আজ্ঞে, এই এক্ষুনি শেষ হবে।

—আমাকে ফিরে গিয়ে আবার রান্না করতে হবে। বেশি দেরি হবে না তো?

ননীবালা তার পাশের একজনকে জিগ্যেস করলে—ইনি কে!

—চাটুয্যে মশায়। ছেলেরা কলকাতায় ভাল ভাল চাকরি করে। বাপকে দেখে না।

—বউ নেই বুঝি?

—আছে বৈকি! তিনি কলকাতায় ছেলেদের সঙ্গে থাকেন।

—তা হলে চাটুয্যে মশায় ওখানে গিয়ে থাকেন না কেন?

—সে ভাই জানি নে। কেউ জানে না। কতকাল ধরে দেখচি বুড়ো একাই এখানে আছে। তবে কি জান—পরের খবর রাখি কখন, বলে নিজেই মরতে সময় পাই নে।

অনেক রাতে পাঁচালী শেষ হল। ননীবালা ছেলের সঙ্গে বাড়ি ফিরে আসচে—দেখলে বুড়ো খোঁড়াতে খোঁড়াতে আগে আগে চলেচে। তারা সামনে আসতেই তিনি জিগ্যেস করলেন—কে যায়? চিনতে পারলুম না তো?

সুরেশ পরিচয় দিল। বৃদ্ধ চাটুয্যে মশায় খুব খুশী। ঘুরেশকে আশীর্বাদ করে ননীবালাকে বললেন—তোমাকে সেই বিয়ের বৌ-ভাতের সময় একবার মাত্র দেখেচি বৌমা। একা আছি—মাঝে মাঝে আমার ওখানে বেড়াতে যেও। কালই বরং এসো।


ননীবালা পরদিনই সেখানে গেল। পুরোনো বাড়ি, সামনে বারান্দা, একটা ডুমুর গাছ, লেবু গাছ, পেঁপে গাছে ফল ধরেচে।

বৃদ্ধ বললেন—কি দেখছ, বৌমা? আমি নিজের হাতে সমস্ত গাছ পুঁতেচি। সবাইপুরের বিশ্বেসদের কাছ থেকে ন-বছর আগে বীজ এনেছিলুম। তখন সবাই এখানে—

—সবাই কারা, কাকা?

—তোমার খুড়ীমারা, বৌমা

—আপনার রান্না করে কে?

—কেন, আমি নিজে? আমি পাকা রাঁধুনী, বুঝলে? এই তো এখন খানকতক পরোটা ভাজব মনে করচি।

—কাকীমা এখানে থাকেন না?

—না মা, সে বড় ছেলের কাছে কলকাতায় থাকে।

—ক-ছেলে আপনার?

—তিন জন। আমি গর্ব করচি নে, কিন্তু তারা সকলেই ভাল কাজ করে। শ্যামবাজারে তেতলা বাড়িতে থাকে, ঘরে-ঘরে ইলেকট্রিক ফ্যান। বড় ছেলের আবার মোটর গাড়ি আছে—সবাই তাকে মানে-গণে—সাপ্লাই আপিসের চাটুয্যে সাহেবের নাম করলেই সবাই চিনবে, তার চেহারাটা অব্দি সাহেবদের মতন। আমার বড় ছেলে বলে বাড়িয়ে বলচি নে।

বৃদ্ধের চোখ দুটো গৌরবে দীপ্ত হয়ে ওঠে। আপন মনেই বলেন—যখন তার জন্ম হল, তখন দেখতে এই একেবারে এতটুকু—ফুলপুরের পাঁচু ঠাকুরের দোর ধরে তার মা তাকে বাঁচায়। যখন ছ-বছরের একবার বিছে কামড়াতে একেবারে নীল হয়ে গেল—অনেক কষ্টে বাঁচানো হয়—অনেক ঝামেলার মধ্যে দিয়ে বড় করে তুলতে হয়েচে—তবেই না সে আজ ‘বড়সাহেব’ নৃপেন হয়েচে।··· তুমি, এদিকে এসে বোস বৌমা, আমি ততক্ষণ পরোটাগুলো ভাজি।

একটা মাটির ভাঁড় থেকে তিনি আধ ছটাকের মত ঘি বের করে নিলেন। পাত্রটা দেখিয়ে বললেন—এ হল দালদা, বেশ ভাল জিনিস কি করে পাই, বল?··· ঘিয়ের সের ন-টাকা।

—কেন, আপনার ছেলে কিছু পাঠায় না?

বৃদ্ধ বললেন—কে নৃপেন? তার নিজের খরচা কত! আয়ও যেমন—ব্যয়ও তো তেমনি। আমি তাকে বিরক্ত করতেও চাই নে। আমার নিজের প্রায় তিন বিঘে ধানী জমি আছে, নিজের হাতে শাক-সবজি ফলাই। পুজোতে নৃপেন আমাকে একটা দামী কাপড় পাঠিয়েছিল—তুলে রেখেচি। মাঝে মাঝে দেখি আর বলি তাহলে সে পাঠিয়েচে ধুতিটা,···আমারই বড় ছেলে দিয়েচে। ছোট ছেলে কলকাতায় থাকতো—এখন কানপুরে আছে, সেখান থেকে পুজোয় একজোড়া চটি পাঠিয়েচে।

ননীবালা বেলুন নিয়ে পরোটা বেলে দিচ্ছিলো।

—সরুন কাকা, আপনি পারবেন না। আমি ভেজে দিই।

—না, মা আমি নিজেই ভাজতে পারবো।

ননীবালা জোর দিয়ে বললে—আপনি সরে বসুন দিকি।

পরোটা তৈরী করা শেষ হলে সে দুধ গরম করে দিলে, পিঁড়ি পেতে বৃদ্ধকে বসবার জন্য আসন করে দিলে। তার পরে বসিয়ে তাঁকে খাওয়ালে। বৃদ্ধের মুখ দেখলেই স্পষ্ট মনে হয় যে তিনি বহু বছর এ ধরনের আদর যত্ন থেকে বঞ্চিত।

—পরোটা খুব ভাল হয়েছে। মেয়েরা না তৈরি করলে খেয়ে তৃপ্তি হয় না। মেয়েদের হাতের রান্নার স্বাদ আলাদা। বৌমা, ভগবান তোমাকে আশীর্বাদ করুন, বহুদিন পরে আজ ভাল খেলাম।

—আপনার ছেলের বৌদের এখেনে আনেন না কেন?

—তা হয় না। এই নির্জন ছন্নছাড়া জায়গায় তাদের কি থাকতে বলতে পারি? তারা সুখী হবে না। আমি নিজে গরীব হলেও—ছেলেদের বড় করে তুলেচি। তারা সব ভাল ভাল খায়-দায়। ভাল পরে। তাদের বিয়েও দিয়েছি তেমনি ঘরে। বড় ছেলের শ্বশুর মতিহারীর সিভিল সার্জেন, মেজ বৌমার বাবা নেই, তবে তার কাকা খিদিরপুরে বড় কণ্ট্রাকটর। রায়চৌধুরী কোম্পানির নাম শুনেচ? ছোট ছেলের শ্বশুর বাঁকুড়ার হাকিম। বড় বৌমা ম্যাট্রিক পাস। ছোট বৌমা বি-এ অব্দি পড়েচে—পরীক্ষা আর দেয় নি। সে মেমসাহেবদের মত ইংরিজি বলতে পারে—কয়েকবার শুনেচি আমি। বৃদ্ধ একটু থেমে আবার বলতে লাগলেন—বৌমা, তুমি না দেখলে এসব বিশ্বাস করবে না, ভাববে বুড়ো আচ্ছা গল্প ফেঁদেচে।

—তারা এখেনে একদম আসে না?

—একবার পুজোর সময় আমার বড় নাতির অন্নপ্রাশন দিতে বড় ছেলে এসেছিল। খুব ধুমধাম হয়। সে বিশ বছর আগের কথা। সেই নাতি এখন মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়চে। দুই মেয়ে ইস্কুলে পড়ে, একজন ম্যাট্রিক দিয়েচে। একবার তারা মোটরে বেড়াতে এসেছিল। মাত্র কয়েক ঘণ্টা ছিল। অনেকদিন দেখি নি বলে দেখতে চেয়েছিলাম—ছোট ছেলে তাই তার বউকে নিয়ে এসেছিল। ছোট বৌমা শুধু চা আর ডাবের জল খেলে—বললে গাঁয়ের জল খেলে নাকি ম্যালেরিয়া হয়। খুব শিক্ষিতা মেয়ে কিনা। রাত্তিরে তারা থাকলে না—বললে মশারি নেই, থাকা চলবে না। আমি নিজে একটা ছেঁড়া মশারিতে শুই, সারা রাত মশা কামড়ায়। চোখেও ভাল দেখি নে যে সেলাই করব।

ননীবালা বললে—কাকা মশারিটা আমাকে দিন, সেলাই করে কাল নিয়ে আসব।

—বেঁচে থাক, মা। মশারির দাম এত বেড়ে গেচে যে আমি আর কিনে উঠতে পারচি নে। আচ্ছা, একটু গুড় আনতে পার—খাবার বড্ড শখ হয়েচে। খেজুর গুড় দিয়ে পরোটা খেতে খুব ভাল লাগে। বৃদ্ধের খাওয়া শেষ হল—হুঁকোটা নিয়ে টানতে লাগলেন। ননীবালা বিদায় নিয়ে চলে গেল। তার মনটা আশ্চর্য ভাবে হাল্কা হয়ে গিয়েচে।


বাড়ি এসে সুরেশকে খেতে দিল। খেয়ে উঠে সে বললে—মা চাঁদের আলোতে এসে একটু বোস না, ভারি সুন্দর জোছ্‌না উঠেচে।

—ননীবালা সহসা প্রশ্ন করল—‘ওকে’ তোর মনে আছে খোকা?

—খুব। মনে আছে রোজ সকালবেলা উঠিয়ে নামতা মুখস্ত করাতেন···বলতে বলতে তার গলার স্বর ভারি হয়ে এল।

—এই ভাল হয়েছে, এই ভাল!—ননীবালা মনে মনে বললে। তুমি নেই বলেই আমার ছেলে তোমার মনে করে রেখেচে—সারাজীবন ধরে তোমার স্মৃতি তার কাছে পবিত্র হয়ে থাকবে।— মানুষ বদলায়—কে জানে, হয়তো বেঁচে থাকলে বুড়ো চাটুয্যে মশায়ের মত তোমাকেও দুঃখে পড়তে হত···তার চেয়ে তুমি সহমানে চলে গেচ সেটাই ভাল হয়েচে···।