অন্নদামঙ্গল/অন্নপূর্ণাবন্দনা

অন্নপূর্ণাবন্দনা।

অন্নপূর্ণা মহামায়া দেহ মোরে পদছায়া
কোটি কোটি করি এ প্রণাম।
আসরে আসিয়া উর নায়কের,আশা পূর
শুন আপনার গুণগ্রাম॥
কৃপাবলোকন কর ভক্তের দুরিত হর
দারিদ্র্য দুর্গতি কর চূর্ণ।

তুমি দেবী পরাৎপরা সুখদাত্রী দুঃখহরা
অন্নপূর্ণা অন্নে কর পূর্ণ॥
রক্তসরসিজোপরি বসি পদ্মাসন করি
পদতলে নব রবি দেখা।
রক্তজবাপ্রভাহর অতিমনোহরতর
ধ্বজ বজ্রাঙ্কু ঊদ্ধরেখা॥
কিবা সুবলিত উরু কদলীকাণ্ডের গুরু
নিরুপম নিতম্বে কিঙ্কিণী।
শোভে নিরুপম বাস দশ দিশ পরকাশ
ত্রিভুবনমোহন কারিণী॥
কটি অতি ক্ষীণতর নাভি সুধাসরোবর
উচ্চ কুচ সুধার কলশ।
কণ্ঠ কম্বুরাজ রাজে নানা অলঙ্কার সাজে
প্রকাশে ভুবন চতুর্দ্দশ॥
কিবা মনোহরকর মৃণালের গর্ব্ব হর
অঙ্গুলী চম্পকচারুদল।
কণিরাজফণমণি কঙ্কণের কণকণি
নানা অলঙ্কার ঝলমল॥
বাম করতলে ধরি কারণ অমৃত ভরি
পানপত্র রতননির্ম্মিত।
রত্ন হাতা ডানি হাতে সঘৃত পলান্ন তাতে
কিবা দুই ভুজ সুললিত॥
চর্ব্ব্য চুষ্য লেহ্য পেয় নানা রস অপ্রমেয়
বিবিধ বিলাসে পরশিয়া।

ভঞ্জাইয়া কৃত্তিবাস মধুর মধুর হাস
মহেশের নাচন দেখিয়া॥
দেবতা অসুর রক্ষ অপ্সর কিন্নর যক্ষ
সবে ভোগ করে নানা রস।
গন্ধর্ব্ব ভুজঙ্গ নর সিদ্ধ সাধ্য বিদ্যাধর
নব গ্রহ দিকপাল দশ॥
জিনি কোটি শশধর কিবা মুখ মনোহর
মণিময় মুকুট মাথায়।
ললিত কবরী ভার তাহে মালতীর হার
ভ্রমর ভ্রমরী কল গায়॥
বিধি বিষ্ণু ত্রিলোচন আদি দেব ঋষিগণ
চৌদিকে বেড়িয়া করে গান।
আগম পুরাণ বেদ না জানে তোমার ভেদ
তুমি দেবী পুরুষপ্রধান॥
ঘটে কর অধিনষ্ঠান শুন নিজ গুণ গান
নায়কের পূর্ণ কর আশ।
রাজার মঙ্গল কর রাজ্যের আপদ হর
গায়কের কণ্ঠে কর বাস॥
স্বপনে রজনীশেষে বসিয়া শিয়ারদেশে
কহিলা মঙ্গল রচিবারে।
সেই আজ্ঞা শিরে বহি নূতন মঙ্গল কহি
পূর্ণ কর চাহিয়া আমারে॥
বিস্তর অন্নদাকল্পে কত গুণ কব অল্পে
নিজ গুণে হবে বরদায়।

নূতন মঙ্গল আশে ভারত সরস ভাষে
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আজ্ঞায়॥