অন্নদামঙ্গল/পীঠমালা
পীঠমালা।
ভবসংসার ভিতরে। ভব অবানী বিহরে॥
ভূতময় দেহ নবদ্বার গেহ নরনারীকলেবরে॥
গুণাতীত হয়ে নানাগুণ লয়ে দোহে নানা খেলা করে॥
উত্তম অধম স্থাবর জঙ্গম সব জীবের অন্তরে॥
চেতনাচেতনে মিলি দুই জনে দেহিদেহরূপে চরে॥
অভেদ হইয়া ভেদ প্রকাশিয়া এ কি করে চরাচরে॥
পাইয়াছে টের কি করে এ ফের কবি রায় গুণাকরে॥
হিঙ্গুলায় ব্রহ্মরন্ধ্র ফেলিলা কেশব।
দেবতা কোট্টরী ভীমলোচন ভৈরব॥ ১॥
শর্করারে তিন চক্ষু ত্রিগুণ ভৈরব।
মহিষমর্দ্দিনী দেবী ক্রোধীশ ভৈরব॥ ২॥
সুগন্ধায় নাসিকা পড়িল চক্রহতা।
ত্র্যম্বক ভৈরব তাহে সুনন্দা দেবতা॥ ৩॥
জ্বালামুখে জিহ্বা তাহে অগ্নি অনুভব।
দেবীর অম্বিকা নাম উন্মত্ত ভৈরব॥ ৪॥
ভৈরবপর্ব্বতে ওষ্ঠ পড়ে চক্রঘায়।
নম্রকর্ণ ভৈরব অবন্তী দেবী তায়॥ ৫॥
প্রভাসে অধর দেবী চন্দ্রভাগা তাহে।
বক্রতুণ্ড ভৈরব প্রত্যক্ষরূপ যাহে॥ ৬॥
জনস্থানে চিবুক পড়িল অভিরাম।
বিকৃতাক্ষ ভৈরব ভ্রামরী দেবীনাম॥ ৭॥
গোদাবরীতীরে পড়ে বাম গণ্ডখানি।
বিশ্বেশ ভৈরব বিশ্বমাতৃকা ভবানী॥ ৮॥
গণ্ডকীতে ডানি গণ্ড পড়ে চক্রঘায়।
চক্রপাণি ভৈরব গণ্ডকী চণ্ডী তায়॥ ৯॥
ঊর্দ্ধ দন্তপাঁতির অনলে হৈল ধাম।
সংক্রূর ভৈরব দেবী নারায়ণী নাম॥ ১০॥
পঞ্চসাগরেতে পড়ে অধোদন্ত সার।
মহারুদ্র ভৈরব বারাহী দেবী তার॥ ১১॥
করতোয়া তটে পড়ে বামকর্ণ তাঁর।
বামেশ ভৈরব দেবী অপর্ণা তাঁহার॥ ১২॥
শ্রীপর্ব্বতে ডানি কর্ণ ফেলিলেন হরি।
ভৈরব সুন্দরানন্দ দেবতা সুন্দরী॥ ১৩॥
কেশজালনাম স্থানে পড়ে তাঁর কেশ।
উমা নামে দেবী তাহে ভৈরব ভূতেশ॥ ১৪॥
কিরীটকোণায় পড়ে কিরীট সুরূপ।
ভুবনেশী দেবতা ভৈরব সিদ্ধরূপ॥ ১৫॥
শ্রীহট্টে পড়িল গ্রীবা মহালক্ষ্মী দেবী।
সর্ব্বানন্দ ভৈরব বৈভব যাহা সেবি॥ ১৬॥
কশ্মীরেতে কণ্ঠ দেবী মহামায়া তায়।
ত্রিসন্ধ্যঈশ্বর নাম ভৈরব তথায়॥ ১৭॥
রত্নাবলী স্থানে ডানি স্কন্ধ অভিরাম।
কুমার ভৈরব তাহে দেবী শিবা নাম॥ ১৮॥
মিথিলায় বাম স্কন্ধ দেবী মহাদেবী।
মহোদর ভৈরব সর্ব্বার্থ যাঁরে সেবি॥ ১৯॥
চট্টগ্রামে ডানি হস্ত অর্দ্ধ অনুভব।
ভবানী দেবতা চন্দ্রশেখর ভৈরব॥ ২০॥
আর অর্দ্ধ ডানি হস্ত মানসরোবরে।
দেবী দাক্ষায়ণী হর ভৈরব বিহরে॥ ২১॥
উজানীতে কফোণি মঙ্গলচণ্ডী দেবী।
ভৈরব কপিলাম্বর শুভ যারে সেবি॥ ২২॥
মণিবেদে মণিবন্ধ পড়িল তাঁহার।
স্থাণু নামে ভৈরব সাবিত্রী দেবী তাঁর॥ ২৩॥
প্রয়াগেতে দুহাতের অঙ্গুলী সরস।
তাহাতে ভৈরব দশ মহাবিদ্যা দশ॥ ২৪ ইং ৩৩॥
বাহুলায় বাম বাহু ফেলিলা কেশর।
বাহুলা চণ্ডিকা তাহে ভীরুক ভৈরব॥ ৩৪॥
মণিবন্ধে বাম মণিবন্ধ অভিরাম।
সর্ব্বানন্দ ভৈরব গায়ত্রী দেবী নাম॥ ৩৫॥
জালন্ধরে তাঁহার পড়িল এক স্তন।
ত্রিপূরমালিনী দেবী ভৈরব ভীষণ॥ ৩৬॥
আর স্তন পড়ে তাঁর রামগিরি স্থানে।
শিবানী দেবতা চণ্ড ভৈরব সেখানে॥ ৩৭॥
বৈদ্যনাথে হৃদয় ভৈরব বৈদ্যনাথ।
দেবী তাহে জয়দুর্গা সর্ব্ব সিদ্ধি সাথ॥ ৩৮॥
উৎকলে পড়িল নাভি মোক্ষ যাহা সেবি।
জয় নামে ভৈরব বিজয়া নামে দেবী॥ ৩৯॥
কাঞ্চীদেশে পড়িল কাঁকালি অভিরাম।
দেবগর্ভা দেবতা ভৈরব রুরু নাম॥ ৪০॥
নিতম্বের অর্দ্ধ কালমাধবে তাহার।
অসিতাঙ্গ ভৈরব দেবতা কালী তাঁর॥ ৪১॥
নিতম্বের আর অর্দ্ধ পড়ে নর্ম্মদায়।
ভদ্রসেন ভৈরব শোণাক্ষী দেবী তায়॥ ৪২॥
মহামুদ্রা কামরূপে রজোযোগ যায়।
রাবানন্দ ভৈরব কামাখ্যা দেবী তায়॥ ৪৩॥
নেপালে দক্ষিণ জঙ্ঘা কপালী ভৈরব।
দেবী তায় মহামায়া সদা মহোৎসব॥ ৪৪॥
জয়ন্তায় বাম জঙ্ঘা ফেলিলা কেশব।
জয়ন্তী দেবতা ক্রমদীশ্বর ভৈরব॥ ৪৫॥
দক্ষিণ চরণ খানি পড়ে ত্রিপুরায়।
নল নামে ভৈরব ত্রিপুরা দেবী তায়॥ ৪৬॥
ক্ষীরগ্রামে ডানি পার অঙ্গুষ্ঠ বৈভব।
যুগাদ্য দেবতা ক্ষীরখণ্ডক ভৈরব॥ ৪৭॥
কালীঘাটে চারিটি অঙ্গলী ডানি পার।
নকুলেশ ভৈরব কালিকা দেবী তার॥ ৪৮॥
কুরুক্ষেত্রে ডানি পার গুল্ফ অনুভব।
বিমলা তাহাতে দেবী সম্বর্ত্ত ভৈরব॥ ৪৯॥
বিভাসেতে বাম গুল্ফ ফেলিলা কেশব।
ভীমরূপা দেবী তাহে কপালী ভৈরব॥ ৫০॥
তিরোতায় পড়ে বাম পদ মনোহর।
অমরী দেবতা তাহে ভৈরব অমর॥ ৫১॥
শূন্য শির দেখি শিব হৈলা চিন্তাবান।
হিমালয় পর্ব্বতে বসিলা করি ধ্যান॥
কৃষ্ণচন্দ্র আজ্ঞায় ভারতচন্দ্র গায়।
হরি হরি বল সবে পালা হৈল সায়॥
ইতি শুক্রবারের প্রথম নিশাপালা।