অন্নদামঙ্গল/রতি বিলাপ
রতিবিলাপ।
পতিশোকে রতি কাঁদে বিনাইয়া নানা ছাঁদে
ভাসে চক্ষু জলের তঙ্গে।
কপালে কঙ্কণ মারে রুধির বহিছে ধারে
কাম অঙ্গ ভস্ম লেপে অঙ্গে॥
আলু থালু কেশ বাস ঘন ঘন বহে শ্বাস
সংসার পূরিল হাহাকার।
কোথা গেলা প্রাণনাথ আমারে করহ সাথ
তোমা বিনা সকলি আঁধার॥
তুমি কাম আমি রতি আমি নারী তুমি পতি
দুই অঙ্গ একই পরাণ।
প্রথমে যে প্রীতি ছিল শেষে তাহা না রহিল
পিরীতির এ নহে বিধান॥
যথা যথা যেতে প্রভু মোরে না ছাড়িতে কভু
এবে কেন আগে ছাড়ি গেলা।
মিছা প্রেম বাড়াইয়া ভাল গেলা ছাড়াইয়া
এখন বুঝিনু মিছা খেলা॥
না দেখিব সে বদন না হেরিব সে নয়ন
না শুনিব সে মধুর বাণী।
আগে মরিবেন স্বামী পশ্চাতে মরিব আমি
এত দিন ইহা নাহি জানি॥
আহা আহা হরি হরি উহু উহু মরি মরি
হায় হায় গোসাঁই গোসাঁই।
হৃদয়েতে দিতে স্থান করিতে কতেক মান
এখন দেখিতে আর নাই॥
শিব শিব শিব নাম সবে বলে শিবধাম
বামদেব আমার কপালে।
যার দৃষ্টে মৃত্যু হরে তার দৃষ্টে প্রভু মরে
এমন না দেখি কোন কালে॥
শিবের কপালে রয়ে প্রভুরে আহুতি লয়ে
না জানি বাড়িল কিবা গুণ।
একের কপালে রহে আরের কপাল দহে
আগুনের কপালে আগুন॥
অনলে শরীর ঢালি তথাপি রহিল গালি
মদন মরিলে মৈল রতি।
এ দুঃখে হইতে পার উপায় না দেখি আর
মরিলেহ নাহি অব্যাহতি॥
অরে নিদারুণ প্রাণ কোন পথে পতি যান
আগে যারে পথ দেখাইয়া।
চরণ রাজীবরাজে মনঃশিলা পাছে বাজে
হৃদে ধরি লহ রে বহিয়া॥
অরে রে মলয়বাত তোরে হৌক বজ্রাঘাত
মরে যারে ভ্রমরা কোকিল।
বসন্ত অল্পায়ু হও বন্ধু হৈয়া বন্ধু নও
প্রভু বধি সবে পলাইল॥
কোথা গেলা সুররাজ মোর মুণ্ডে হানি বাজ
সিদ্ধ কৈলা আপনার কর্ম্ম।
অগ্নি কুণ্ড দেহ জ্বালি আমি তাহে দেহ ঢালি
অন্তকালে কর এই ধর্ম্ম॥
বিরহ সন্তাপ যত অনলে কি তাপ তত
কত তাপ তপনের তাপে।
ভারত বুঝায়ে কয় কাঁদিলে কি আর হয়
এই ফল বিরহির শাপে॥