অন্নদামঙ্গল/শিবের ধ্যানভঙ্গ ও কামভস্ম

শিবের ধ্যানভঙ্গে কামভস্ম।

শিবের সম্বন্ধ করিয়া নির্ব্বন্ধ আইলা নারদ মুনি।
কমললোচন আদি দেবগণ পরম আনন্দ শুনি॥
সকলে মিলিয়া শিব কাছে গিয়া বিস্তর করিলা স্তব।
নাহি ভাঙ্গে ধ্যান দেখি চিন্তাবান হইলা বিধি কেশব॥
মন্ত্রণা করিয়া মদনে ডাকিয়া সুরপতি দিলা পান।
সম্মোহন বাণ করিয়া সন্ধান শিবের ভাঙ্গহ ধ্যান॥
ইন্দ্রের আজ্ঞায় রতিপতি ধায় পুষ্পশরাসন হাতে।
সমুখে সামন্ত ধাইল বসন্ত কোকিল ভ্রমর সাতে॥
মলয়পবন বহে ঘন ঘন শীতল সুগন্ধ মন্দ।
তরুলতাগণ ফুলে সুশোভন জগতে লাগিল ধন্দ॥
যত দেবগণ হৈলা অদর্শন হরের ক্রোধের ভয়।
পূর্ব্ব নিযোজন নিকট মরণ মদন সমুখে রয়॥
আকর্ণ পূরিয়া সন্ধান করিয়া সম্মোহন বাণ লয়ে।
ভূমে হাঁটু পাড়ি দিল বাণ ছাড়ি অনলে পতঙ্গ হয়ে॥
কিবা করে ধ্যান কিবা করে জ্ঞান যে করে কামের শর।
সিহরিল অঙ্গ ধ্যান হৈল ভঙ্গ নয়ন মিলিলা হর॥
কামশরে ত্রস্ত নারী লাগি ব্যস্ত নেহালেন চারি পাশে।
সমুখে মদন হাতে শরাসন মুচকি মুচকি হাসে॥

দেখি পুষ্পশরে ক্রোধ হৈল হরে অটল অচল টলে।
ললাটলোচন হৈতে হুতাশন ধক ধক ধক জ্বলে॥
মদন পলায় পিছে অগ্নি ধায় ত্রিভুবন পরকাশি।
চৌদিকে বেড়িয়া মদনে পুড়িয়া করিল ভস্মের রাশি॥
মরিল মদন তবু পঞ্চানন মোহিত তাহার বাণে।
বিকল হইয়া নারী তপাসিয়া ফিরেন সকল স্থানে॥
কামে মত্ত হর দেখিয়া অপ্সর কিন্নরী দেবি সকল।
যায় পলাইয়া পশ্চাতে তাড়িয়া ফিরেন শিব চঞ্চল॥
মনে মনে হাসি হেন কালে আসি নারদ হৈলা সমুখ।
নারদে দেখিয়া সলজ্জ হইয়া হর হৈলা হেটমুখ॥
খুড়া খুড়া কয়ে দণ্ডবত হয়ে কহিছে নারদ হাসি।
দক্ষ গৃহ ছাড়ি হেমন্তের বাড়ি জনমিলা সতী আসি॥
বিবাহ করিয়া তাঁহারে লইয়া আনন্দে কর বিহার।
শুনি শিব কন ওরে বাছাধন ঘটক হও তাহার॥
মুনি কহে দ্রুত সকলি প্রস্তুত বর হয়ে কবে যাবা।
কহেন শঙ্কর বিলম্ব না কর আজি চল মোর বাবা॥
শুনি মুনি কয় এমন কি হয় সর্ব্ব দেব গণে কহ।
প্রায় হয়ে বুড়া ভুলিয়াছ খুড়া দিন দুই স্থির রহ॥
শান্ত হৈলা হর যতেক অমর এলা যথা পশুপতি।
কামের মরণ করিয়া শ্রবণ কান্দিয়া আইলা রতি॥
কৃষ্ণচন্দ্র রায় রাজা ইন্দ্রপ্রায় অশেষ গুণ সাগর।
তাঁর অভিমত রচিলা ভারত কবি রায় গুণাকর॥