অন্নদামঙ্গল/শিব বিবাহের সম্বন্ধ

শিববিবাহের সম্বন্ধ।

এরূপে নারদ মুনি বীণা বাজাইয়া।
উত্তরিলা হিমালয়ে নাচিয়া গাইয়া॥
দেখেন বাহিরে গৌরী খেলিছেন রঙ্গে।
চৌষট্টি যোগিনী কুমারীর বেশ সঙ্গে॥

মৃত্তিকার হর গৌরী পুত্তলি গড়িয়া।
সহচরীগণ মেলি দিতেছেন বিয়া॥
দেখি নারদের মনে হৈল চমৎকার।
এ কি কৈলা মহামায়া মায়া অবতার॥
দণ্ডবৎ হয়ে মুনি করিলা প্রণাম।
আজি বুঝিলাম সিদ্ধ হৈল হরি নাম॥
অভীষ্ট হউক সিদ্ধ বর দিয়া মনে।
নারদে কহিলা দেবী গর্ব্বিত ভর্ৎসনে॥
শুন বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ ঠাকুর মহাশয়।
আমারে প্রণাম কর উপযুক্ত নয়॥
অল্পায়ু করিবে বুঝি ভাবিয়াছ মনে।
দেখিয়া এমন কর্ম্ম করিলা কেমনে॥
মুনি বলে এ ভয় দেখাও তুমি কারে।
তোমার কৃপায় ভয় না করি তোমারে॥
আমারে বুঝিলা বৃদ্ধ বালিকা আপনি।
ভাবি দেখ তুমি মোর বাপের জননী॥
নাতি জ্ঞানে বুড়া বলি হাসিছ আমারে।
পাকা দাড়ি বুড়া বর ঘটাব তোমারে॥
আনিব এমন বর বায়ে লড়ে দাঁত।
ঘটক তাহার আমি জানিবা পশ্চাত॥
বিবাহের নামে দেবী ছলে লজ্জা পেয়ে।
কহি গিয়া মায়ে বলি ঘরে গেলা ধেয়ে॥
আল্যা করি কোলে বসি ছেঁদে ধরি গলে।
ওমা ওমা বলি উমা কথা কন ছলে॥

সখী মেলি খেলিনু বাহির বাড়ি গিয়া।
ধূলা ঘরে দিতেছিনু পুতুলের বিয়া॥
কোথা হৈতে বুড়া এক ডোকরা বামণ।
প্রণাম করিল মোরে একি অলক্ষণ॥
নিষেধ করিনু তারে প্রণাম করিতে।
কত কথা কহে বুড়া না পারি কহিতে॥
দুটা লাউ বান্ধা কান্ধে কাঠ এক খান।
বাজাইয়া নাচিয়া নাচিয়া করে গান॥
ভাবে বুঝি সে বামণ বড় কন্দলিয়া।
দেখিবে যদ্যপি চল বাপারে লইয়া॥
শুনিয়া মেনকা মনে জানিলা নারদ।
সম্ভ্রমে বাহিরে আসি বন্দিলেন পদ॥
হিমালয় শুনিয়া আইলা দ্রুত হয়ে।
সিংহাসনে বসাইলা পদধূলি লয়ে॥
নারদ কহেন শুন শুন হিমালয়।
কি কহিব অসীম তোমার ভাগ্যোদয়॥
এই যে তোমার উমা কন্যা বল যাঁরে।
অখিল ভুবন মাতা জানিতে কে পারে॥
বিবাহ কাহারে দিবা ভাবিয়াছ কিরা।
শিব পতি ইঁহার ইঁহার নাম শিবা॥
হিমালয় বলে কি এমন ভাগ্য হবে।
ভবানী হবেন উমা পার পাব ভবে॥
নারদ কহিছে ভাগ্য হয়েছে তখনি।
জনক জননী ভাবে জন্মিলা যখনি॥

হিমালয় মেনকা যদ্যপি দিলা সায়।
লগ্নপত্র করিয়া নারদ মুনি যায়॥
আজ্ঞা দিলা কৃষ্ণচন্দ্র ধরণী ঈশ্বর।
রচিলা ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর॥