অন্নদামঙ্গল/সতীর দক্ষালয়ে গমনোদ্যোগ

সতীর দক্ষালয়ে গমনোদ্যোগ।

কালীরূপে কত শত পরাৎপরা গো॥
অন্নদা ভুবনা বলা মাতঙ্গী কমলা
দুর্গা উমা কাত্যায়নী বাণী সুরবরা গো॥
সুন্দরী ভৈরবী তারা জগতের সারা
উন্মুখী বগলা ভীমা ধূমা ভীতিহরা গো॥
রাধানাথের দুঃখভরা নাশ গো সত্বরা
কালের কামিনী-কালী করুণাসাগরা গো॥
নিবেদন শুনহ ঠাকুর পঞ্চানন।
যজ্ঞ দেখিবারে যাব বাপার ভবন॥
শঙ্কর কহেন বটে বাপ ঘরে যাবে।
নিমন্ত্রণ বিনা গিয়া অপমান পাবে॥
যজ্ঞ করিয়াছে দক্ষ শুন তার মর্ম্ম।
আমারে না দিবে ভাগ এই তার কর্ম্ম॥
সতী কন মহাপ্রভু হেন না কহিবা।
বাপ ঘরে কন্যা যেতে নিমন্ত্রণ কিবা॥
যত কন সতী শিব না দেন আদেশ।
ক্রোধে সতী হৈলা কালী ভয়ঙ্কর বেশ॥
মুক্তকেশী মহামেঘবরণা দন্তুরা।
শবারূঢ়া করকাঞ্চী শবকর্ণপূরা॥

গলিতরুধিরধারা মুণ্ডমালা গলে।
গলিতরুধির মুণ্ড বামকরতলে॥
আর বাম করেতে কৃপাণ খরশাণ।
দুই ভুজে দক্ষিণে অভয় বর দান॥
লোল জিহ্বা রক্তধারা মুখের দুপাশে।
ত্রিনয়ন অর্দ্ধচন্দ্র ললাটে বিলাসে॥  ১॥
দেখি ভয়ে মহাদেব ফিরাইলা মুখ।
তারা রূপ ধরি সতী হইলা সম্মুখ॥
নীলবর্ণা লোলজিহ্বা করালবদনা।
সর্পবান্ধা ঊর্দ্ধ এক জটা বিভূষণা॥
অর্দ্ধচন্দ্র পাঁচ খানি শোভিত কপাল।
ত্রিনয়ন লম্বোদর পুরা বাঘছাল॥
নীলপদ্ম খড়্‌গ কাতি সমুণ্ড খর্পর।
চারি হাতে শোভে আরোহণ শিবোপর॥  ২॥
দেখি ভয়ে পলাইতে চান পশুপতি।
রাজরাজেশ্বরী হয়ে দেখা দিলা সতী॥
রক্তবর্ণা ত্রিনয়না ভালে সুধাকর।
চারি হাতে শোভে পাশাঙ্কুশ ধনুঃশর॥
বিধি বিষ্ণু ঈশ্বর মহেশ রুদ্র পঞ্চ।
পঞ্চপ্রেতনিরমিত বসিবার মঞ্চ॥  ৩॥
দেখিয়া শঙ্কর ভয়ে মুখ ফিরাইলা।
হইয়া ভুবনেশ্বরী সতী দেখা দিলা॥
রক্তবর্ণা সুভূষণা আসন অম্বুজ।
পাশাঙ্কুশ বরাভয়ে শোভে চারি ভুজ॥

ত্রিনয়ন অর্দ্ধচন্দ্র ললাটে উজ্জ্বল।
মণিময় নানা অলঙ্কার ঝলমল॥  ৪॥
দেখি ভয়ে মহাদেব গেলা এক ভিতে।
ভৈরবী হইয়া সতী লাগিলা হাসিতে॥
রক্তবর্ণ চতুর্ভুজা কমলআসনা।
মুণ্ডমালা গলে নানা ভূষণভূষণা॥
অক্ষমালা পুখী বরাভয় চারি কর।
ত্রিনয়ন অর্দ্ধচন্দ্র ললাট উপর॥  ৫॥
দেখি ভয়ে বিশ্বনাথ হইলা কম্পিত।
ছিন্নমস্তা হৈলা সতী অতি বিপরীত॥
বিকসিত পুণ্ডরীক কর্ণিকার মাজে।
তিন গুণে ত্রিকোণ মণ্ডল ভাল সাজে॥
বিপরীত রতে রত রতিকামোপরি।
কোকনদবরণা দ্বিভূজা দিগম্বরী॥
নাগযজ্ঞোপবীত মুণ্ডাস্থিমালা গলে।
খড়্গে কাটি নিজ মুণ্ড ধরি করতলে॥
কণ্ঠ হৈতে রুধির উঠিছে তিন ধার।
এক ধারা নিজ মুখে করেন আহার॥
দুই দিকে দুই সখী ডাকিনী বর্ণিনী।
দুই ধারা পিয়ে তারা শবআরোহিণী॥
চন্দ্র সূর্য্য অনল শোভিত ত্রিনয়ন।
অর্দ্ধচন্দ্র কপালফলকে সুশোভন॥  ৬॥
দেখি ভয়ে ত্রিলোচন মুদিলা লোচন।
ধূমাবতী হয়ে সতী দিলা দরশন॥

অতি বৃদ্ধা বিধবা বাতাসে দোলে স্তন।
কাকধ্বজরথারূঢ়া ধূমের বরণ॥
বিস্তাররদনা কৃশা ক্ষুধায় আকুলা।
এক হস্ত কম্পমান আর হস্তে কুলা॥  ৭॥
ধূমাবতী দেখি ভীম সভয় হইলা।
হইয়া বগলামুখী সতী দেখা দিলা॥
রত্নগৃহে রত্নসিংহাসন মধ্য স্থিতা।
পীতবর্ণা পীতবস্ত্রাভরণভূষিতা॥
এক হস্তে এক অসুরের জিহ্বা ধরি।
আর হস্তে মুদ্গর ধরিয়া ঊর্দ্ধ করি॥
চন্দ্র সূর্য্য অনল উজ্জ্বল ত্রিনয়ন।
ললাট মণ্ডলে চন্দ্রখণ্ড সুশোভন॥  ৮॥
দেখি ভয়ে ভোলানাথ যান পলাইয়া।
পথ আগুলিলা সতী মাতঙ্গী হইয়া॥
রত্নপদ্মাসনা শ্যামা রক্ত বস্ত্র পরি।
চতুর্ভুজা খড়্গ চর্ম্ম পাশাঙ্কুশ ধরি॥
ত্রিলোচনা অর্দ্ধচন্দ্র কপালফলকে।
চমকিত বিশ্ব বিশ্বনাথের চমকে॥  ৯॥
মহাভয়ে মহাদেব হৈলা কম্পমান।
মহালক্ষ্মী রূপে সতী কৈলা অধিষ্ঠান॥
সুবর্ণ সুবর্ণ বর্ণ আসন অম্বুজ।
দুই পদ্ম বরাভয়ে শোভে চারি ভুজ॥
চতুর্দ্দন্ত চারি শ্বেত বারণ হরিষে।
রত্ন ঘটে অভিষেকে অমৃত বরিষে॥  ১০॥

ভারত কহিছে মাগো এই দশ রূপে।
দশ দিকে রক্ষা কর কৃষ্ণচন্দ্র ভূপে।