অন্নদামঙ্গল/সতীর দক্ষালয়গমন

সতীর দক্ষালয়গমন।

একি মায়া এ কি মায়া করছমায়া।
সংসারে যে কিছু দেখি তব মায়া ছায়া।
নিগম আগমে তুমি নিরুপমকায়া।
ত্রিগুণজননী পুন ত্রিদেবের জায়া।
ইহ লােকে পরলোক তুমি সে সহায়া।
ভারত কহিছে মােরে দেহ পদ ছায়া।

পলাইতে না পেয়ে ফাঁফর হৈলা হর।
কহিতে লাগিলা কম্পমানকলেবর
তােমরা কে মােরে কহ পাইয়াছি ভয়।
কোথা গেল মাের সতী বলহ নিশ্চয়।
কালীমূর্ত্তি কহিতে লাগিলা মহাদেবে।
পূর্ব্ব সর্ব্ব জান কেন পাসরিলা এবে।
পরম প্রকৃতি আমি ভেবে দেখ মনে।
প্রসবিনু তুমি বিষ্ণু বিধি তিন জনে।
তিন জনে তােমরা কারণ জলে ছিলা।
তপ তপ তপ বাক্য কহিনু শুনিলা।
তিন জন পরস্পর লাগিলা জপিতে।
শবরূপে আইলাম ভাসিতে ভাসিতে।


পচাগন্ধে উঠি গেলা বিষ্ণু ভাবি দুখ।
বিধি হৈলা চতুর্ম্মুখ ফিরি ফিরি মুখ॥
তুমি ঘৃণা না করিয়া করিলা আসন।
প্রকৃতিরূপেতে তোমা করিনু ভজন॥
পুরুষ হইলা তুমি আমার ভজনে।
সেই আমি সেই তুমি ভেবে দেখ মনে॥
এত শুনি শিবের হইল চমৎকার।
প্রকাশ করিলা তন্ত্র মন্ত্র সবাকার॥
লুকাইয়া দশ মূর্ত্তি সতী হৈলা সতী।
গৌর বর্ণ ছাড়ি হৈলা কালীয় মূরতি॥
মোহিত মহেশ মহামায়ার মায়ায়।
যে ইচ্ছা করহ বলি দিলেন বিদায়॥
রথ আনি দিতে শিব কহিলা নন্দিরে।
রথে চড়ি গেলা সতী দক্ষের মন্দিরে॥
প্রসূতি সতীরে দেখি কালীয়বরণ।
কহিল দেখিয়াছিল যেমন স্বপন॥
আহা মরি বাছা সতি কালী হইয়াছ।
ছাড়িবে আমারে বুঝি মনে করিয়াছ॥
স্বপনে দেখেছি দক্ষ শিবেরে নিন্দিবে।
শিলনিন্দা শুনি তুমি শরীর ছাড়িবে॥
শিব করিবেন দক্ষে যজ্ঞ সহ নাশ।
তোমা দেখি স্বপ্নে মোর হইল বিশ্বাস॥
জগন্মাতা হয়ে মাতা বলেছ আমায়।
জন্মশোধ খাও কিছু চাহিয়া এ মায়॥

মার বাক্যে মাতা কিছু আহার করিয়া।
যজ্ঞ দেখিবারে গেল সত্বরা হইয়া॥
কৃষ্ণবর্ণা দেখি সতী দক্ষ কোপে জ্বলে।
শিবনিন্দা করিয়া সভার আগে বলে॥
ভারত শিবের নিন্দা কেমনে বর্ণিবে।
নিন্দাছলে স্তুতি করি শঙ্কর বুঝিবে॥