অন্নদামঙ্গল/শিবনিন্দায় সতীর দেহত্যাগ
শিবনিন্দায় সতীর দেহত্যাগ।
সভাজন শুন জামাতার গুণ বয়সে বাপের বড়।
কোন গুণ নাই যেথা সেথা ঠাই সিদ্ধিতে নিপুণ দড়॥
মান অপমান সুস্থান কুস্থান অজ্ঞান জ্ঞান সমান।
নাহি জানে ধর্ম্ম নাহি মানে কর্ম্ম চন্দনে ভস্মজ্ঞেয়ান॥
যবনে ব্রাহ্মণে কুক্কুরে আপনে শ্মশানে স্বরগে সম।
গরল খাইল তবু না মরিল ভাঙ্গড়ের নাহি যম॥
সুখে দুঃখ জানে দুঃখে সুখ মনে পরলোকে নাহি ভয়।
কি জাতি কে জানে কারে নাহি মানে সদা কদাচারময়॥
কহিতে ব্রাহ্মণ কি আছে লক্ষণ বেদাচারবহিষ্কৃত।
ক্ষত্ত্রিয়কথন না হয় ঘটন জটা ভস্ম আদি ধৃত॥
যদি বৈশ্য হয় চাসি কেন নয় নাহি কোন ব্যবসায়।
শূদ্র বলে কেবা দ্বিজ দেয় সেবা নাগের পৈতা গলায়॥
গৃহী বলা দায় ভিক্ষা মাগি খায় না করে অতিথিসেবা।
সতী ঝি আমার গৃহিণী তাহার সন্ন্যাসি বলিবে কেবা॥
বনস্থ বলিতে নাহি লয় চিতে কৈলাস নামেতে ঘর।
ডাকিনীবিহারী নহে ব্রহ্মচারী এ কি মহাপাপ হর॥
সতী ঝি আমার বিদ্যুত আকার বাতুলের হৈল জায়া।
আমি অভাজন পরম ভাজন ঘটক নারদ ভায়া॥
আহা মরি সতি কি দেখি দুর্গতি অন্ন বিনা হৈলা কালী।
তোমার কপাল পর বাঘছাল আমার রহিল গালি॥
শিবনিন্দা শুনি রোষে যত মুনি দধীচি অগস্ত্য আদি।
দক্ষে গালি দিয়া চলিলা উঠিয়া শ্রবণে কর আচ্ছাদি॥
তবু পাপ দক্ষ নিন্দি কত লক্ষ সতী সম্বোধিয়া কহে।
তার মৃত্যু নাই তোর নাহি ঠাই আমার মরণ নহে॥
মোর কন্যা হয়ে প্রেত সঙ্গে রয়ে ছি ছি এ কি দশা তোর।
আমি মহারাজ তোর এইসাজ মাথা খেতে আলি মোর॥
বিধবা যখন হইবি তখন অন্ন বস্ত্র তোরে দিব।
সে পাপ থাকিতে নারিব রাখিতে তার মুখ না দেখিব॥
শিবনিন্দা শুনি মহাদুঃখ গুণি কহিতে লাগিলা সতী।
শিবনিন্দা কর কি শকতি ধর কেন বাপা হেন গতি॥
যারে কালে ধরে সেই নিন্দে হরে কি কহিব তুমি বাপ।
তর অঙ্গজনু তেজিব এ তনু তবে যাবে মোর পাপ॥
তিনি মৃত্যুঞ্জয় গালিতে কি হয় মোর যেতে আছে ঠাই।
কর্ম্ম মত ফল যজ্ঞ যাবে তল তোর রক্ষা আর নাই॥
যে মুখে পামর নিন্দিলে শঙ্কর সে মুখ হবে ছাগল।
এতেক কহিয়া শরীর ছাড়িয়া উত্তরিলা হিমাচল॥
হিমগিরিপতি ভাগ্যবান অতি মেনকা তাহার জায়া।
পূর্ব্বতপবরে তাহার উদরে জনমিলা মহামায়া॥
সতী দেহ ত্যাগে নন্দী মহা রাগে সত্বরে গেলা কৈলাসে।
শূন্য রথ লয়ে শোকাকুল হয়ে নিবেদিলা কৃত্তিবাসে॥
শুনিয়া শঙ্কর শোকেতে কাতর বিস্তর কৈলা রোদন।
লয়ে নিজগণ করিলা গমন করিতে দক্ষ দমন॥
কৃষ্ণচন্দ্র রায় রাজা ইন্দ্রপ্রায় অশেষ গুনসাগর।
তাঁর অভিমত রচিলা ভারত কবিরায় গুণাকর॥