অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড)/প্রথম পর্ব/অধ্যায়: এগারো
অধ্যায় : এগারো
কোলকাতার জ্যোতিষচর্চা
কোলকাতার জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চার ইতিহাস কলকাতারই সমবয়স্ক। কলকাতার জন্ম থেকেই জ্যোতিষীরা ছিলেন। তাঁরা বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীদের কোষ্ঠী বিচার করে দিতেন। গ্রহশান্তির জন্য নানা ধরনের দেবতার পূজা করতেন, যজ্ঞ করতেন, কবচ তৈরি করে দিতেন।
প্রায় ৩০০ বছর আগের কোলকাতার যে দু’জন জ্যোতিষীর নাম আজও জ্যোতিষীরা অতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন, তাঁরা হলেন জ্যোতিষ বাচস্পতি ও ফকিরচাঁদ দত্ত। জ্যোতিষ বাচস্পতি কোষ্ঠী ও হাতের রেখা দেখে ভবিষ্যৎ গণনা করতেন। ফকিরচাঁদ শুধু কোষ্ঠী বিচারের পর প্রয়োজন মতো কবচ ধারণের বিধান দিতেন। কবচ তৈরি করে দিতেন। কবচের মধ্যে ছিল নব-গ্রহ-কবচম, সূর্য-কবচম, চন্দ্র-কবচম্ বা সোমস্য-কবচম্, মঙ্গলস্য-কবচম্, বুধস্য-কবচম, বৃহস্পতে-কবচম্, শুকুস্য-কবচম, শনেঃ কবচম্, রাহোঃ-কবচম্, কেতোঃ-কবচম্ ইত্যাদি। বাচস্পতিও প্রয়োজনে কবচ দিতেন।
প্রতিটি গ্রহের কবচ করতে ঐ গ্রহের গ্রহদেবতার পুজো করতেন ফকিরচাঁদ। রবির দেবতা মাতঙ্গী। রবির কবচের দক্ষিণা ছিল ‘ধেনুমূল্য’। চন্দ্রের দেবতা কমলা। দক্ষিণা শঙ্খ। মঙ্গলের দেবতা বগলা। দক্ষিণা ‘যুগল রক্তবর্ণের বস্ত্র’। বুধের দেবতা ত্রিপুরাসুন্দরী। দক্ষিণা ‘স্বর্ণমুদ্রা’। বৃহস্পতির দেবতা তারা। দক্ষিণা ‘পীতাভ যুগলবস্ত্র’। শুক্রের দেবতা ভুবনেশ্বরী। দক্ষিণা ‘অশ্বমূল্য’। শনির দেবতা দক্ষিণাকালী। দক্ষিণা ‘কৃষ্ণবর্ণ গাভীমূল্য’। রাহুর দেবতা ছিন্নমস্তা। দক্ষিণা লৌহ। কেতুর দেবতা ধূমাবতী। দক্ষিণা ‘ছাগলমূল্য’।
‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোলজি’র সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত চ্যাটার্জি জ্যোতিষ বাচস্পতি ও ফকিরচাঁদ দত্তের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বললেন, এঁরা প্রবাদপুরুষ। গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে দীর্ঘ সময় পুঁথির প্রতিটি নিয়মনিষ্ঠা মেনে কবচ তৈরি করতেন। তারপর ঐ কবচ গঙ্গাজলপাত্রে ডুবিয়ে রেখে যে গ্রহের জন্য কবচ সেই গ্রহ-মন্ত্র নির্দিষ্ট সংখ্যকবার জপ করতেন। বিশুদ্ধ উচ্চারণে পূর্ণ জপসংখ্যা ছাড়া কবচ তৈরি সম্পূর্ণ হয় না। আজ পঞ্জিকা খুললেই বা পত্র-পত্রিকায় মাঝেমধ্যে নানা ধরনের শক্তিশালী, মহাশক্তিশালী, কবচের বিজ্ঞাপন দেখবেন। এঁদের বেশিরভাগই কবচে কিছু আশীর্বাদী ফুল, বেলপাতা ভরে দেন। এ তো স্রেফ প্রতারণা। গ্রহশান্তির জন্য গ্রহরত্ন ধারণ করা অনেক সহজ। কারণ ভাল গ্রহরত্ন পাওয়া অনেক সহজ; কিন্তু খাঁটি, ঋষিতুল্য কবচ তৈরি করার মতো মানুষ বিরল।
কবচ তৈরির পর সঠিক উচ্চারণ প্রতিনিয়ত বজায় রেখে সঠিক সংখ্যায় জপ বাস্তবিতই কেউ করতে পারতেন কি না, সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। পুরনো পুঁথি ও ‘পুরোহিত দর্পণ’-এ দেখেছি শুক্রের কবচের জন্য ২১,০০০ বার জপ করার প্রয়োজন হয় ‘ওঁ হ্রীং শুক্রায়”। কেতুর বেলায় ২২,০০০ বার জপতে হয় ‘ওঁ হ্রীং ঐং কেতবে’। সবচেয়ে কম জপতে হয় রবি-কবচের বেলায়। তাও নেই নেই করে ৬,০০০০ বার জপতে হবে ‘ওঁ হ্রীং হ্রীং সূর্যায়’। জপের গণনতা কম-বেশি হলেই তো কবচের গুণ ফক্কা (এটা অবশ্য আমার কথা নয়, পুরনো পুঁথিপত্তর ও পুরোহিত দর্পণের কথা)
গ্রহের খারাপ প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে, জীবনে সাফল্য পেতে কবচের পরিবর্তে রত্ন ব্যবসায়ে কোলকাতার যিনি প্রথম নেমেছিলেন তাঁর নাম ফণিভূষণ রায়। ফণিবাবু ১৯৪৫ সালে বিবেকানন্দ রোডে প্রতিষ্ঠা করলেন এম. পি.-র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশ বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন।
কলকাতায় প্রথম জ্যোতিষশাস্ত্র ছাত্রদের শেখানো শুরু করেন হৃষিকেশ শাস্ত্রী। তাও এটা বিশ শতকের একেবারে গোড়ার কথা। এর আগে জ্যোতিষশাস্ত্রের শিক্ষণকেন্দ্র বলতে বোঝাত কোলকাতার গ্রেট স্ট্রিট বা হাতিবাগান। হাতিবাগানের মতোই হাওড়ার জানবাড়িও জ্যোতিষচর্চার কেন্দ্রস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
হাতিবাগান বা গ্রে স্ট্রিটের শাস্ত্রী পরিবারেই চার ছেলে কৈলাসচন্দ্র, রমেশচন্দ্র, হরিশচন্দ্র ও কাশীশ্বর জ্যোতিষী হিসেবে যথেষ্ট প্রসিদ্ধ লাভ করেছিলেন। রমেশচন্দ্র আনন্দবাজার পত্রিকাগোষ্ঠীর কৃপায় ব্যাপক প্রচার পেয়েছিলেন এবং পরিচিত হয়েছিলেন ‘জ্যোতিষ সম্রাট’ হিসেবে।
রমেশচন্দ্র বসবাস শুরু করেছিলেন ওয়েলিংটন স্কোয়ারের কাছে। বাসস্থানের লাগোয়া গড়ে তুলেছিলেন জ্যোতিচর্চা ও জ্যোতিষ-শিক্ষণ-কেন্দ্র। তবে এটা ছিল তাঁর একান্তই ব্যক্তিগত শিক্ষাদানের ব্যাপার। নাম দিলেন ‘অল ইন্ডিয়া অ্যাস্ট্রোলজিকাল অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনমিকাল সোসাইটি’।
কলকাতার জ্যোতিষচর্চার এবং গ্রহরত্ন-ব্যবসায়ের রমরমা শুরু বিশ শতকের ষাটের দশকে। ষাটের দশকের শুরুতে স্বর্ণনিয়ন্ত্রণ আইন জারি হতে কোলকাতার বহু সোনার দোকানেরই ঝাঁপ বন্ধ হয়েছিল। অনেক দোকানই রূপান্তরিত হয়েছিল শয্যা-সামগ্রী বা শাড়ি-কাপড়ের দোকানে। বেশ কিছু দোকানের হাত-বদলও ঘটেছিল। অনেক স্বর্ণশিল্পীর অর্থাভাবে আত্মহত্যাও করেছিলেন। যে-সব সোনার দোকান তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখার সংগ্রামে ব্যস্ত ছিল, তারা প্রত্যেকেই একে একে জ্যোতিষ বিভাগ খুলে গ্রহরত্ন বিক্রি করে ক্রেতাদের ভাগ্য ফেরাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেদের ‘ভাগ্য’ ফেরাতে চাইল। প্রতিটি পাথর বিক্রিতে ১০০ শতাংশ থেকে ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ। অতএব জ্যোতিষীদের সঙ্গে অনেক রত্ন ব্যবসায়ীই কমিশনের রফা করলেন। নামী দামি জ্যোতিষীরা খদ্দের বুঝে ব্যবস্থাপত্র দিতে লাগলেন। আইন-ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী, সিনেমার স্টার, গায়ক, ডাক্তারদের হাতে তুলে দিতে লাগলেন হিরে, চুনি, ক্যাটস-আইয়ের ব্যবস্থাপত্র, সেই সঙ্গে খাঁটি রত্ন কোথায় পাওয়া যাবে তার হদিশ। ব্যবসা জমে উঠতে লাগল। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের পালে হাওয়া ফিরতে লাগল। জ্যোতিষ বিভাগে কার কতজন দামি-দামি জ্যোতিষী রয়েছে তার প্রচার নেমে গেলেন ব্যবসায়ীরা। বিজ্ঞাপন দিয়ে অপরিচিত জ্যোতিষীদের বিখ্যাত করে দিলেন। দৈনিক পত্রিকাগুলোতে গ্রহরত্ন রমরমা শুরু হল। স্বর্ণ-নিয়ন্ত্রণ আইন জারি হওয়ার আগে যেখানে কলকাতার জ্যোতিষ বিভাগসহ রত্ন-ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল দশজন, সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সেই সংখ্যা দাঁড়ায় আশির উপর। বর্তমানে অবশ্য এই সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। এখন প্রায় প্রতিটি সোনার দোকান মানেই জ্যোতিষী ও গ্রহরত্নের বিভাগ স্বর্ণ-ব্যবসায়ী নন, শুধুমাত্র গ্রহরত্ন বেচেন এমন দোকানের সংখ্যাও বর্তমানে কলকাতায় দশের বেশি।
সত্তরের দশক কলকাতার জ্যোতিষীদের ‘সুবর্ণ দশক' বলে চিহ্নিত। ১৯৭৫-এ জ্যোতিষচর্চা ও জ্যোতিষশাস্ত্র শিক্ষার জন্য গড়ে উঠল ‘অ্যাস্ট্রোলজিক্যাল রিসার্চ প্রজেক্ট’। ১৯৭৮-এ গড়ে উঠল ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোলজি’। আসল উদ্দেশ্য, জ্যোতিষীদের প্রমোট করা।
কলকাতার বিভিন্ন জ্যোতিষচর্চা কেন্দ্র এবং জ্যোতিষশাস্ত্র শিক্ষণ কেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছে প্রধানত বিভিন্ন গ্রহরত্ন ব্যবসায়ীদের সক্রিয় সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতায়। কলকাতার বর্তমানে জ্যোতিষচর্চা কেন্দ্র এবং জ্যোতিষ-শিক্ষা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বিজ্ঞাপনে কেষ্ট-বিষ্টু হল :—
১। অল ইন্ডিয়া অ্যাস্ট্রোলজিক্যাল অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি, ৮২/২এ, রফি আহমেদ কিদওয়াই রোড, কলকাতা ৭০০ ০১৩
২। অ্যাস্ট্রোলজিক্যাল রিসার্চ প্রজেক্ট, ৭০, কৈলাস বসু স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০২৬
৩। হাউজ অফ অ্যাস্ট্রোলজি, ৪৫এ, এস, পি মুখার্জি রোড, কলকাতা ৭০০ ০২৬
৪। বিশ্ব জ্যোতির্বিদ সংঘ, ২ আদিনাথ সাহা রোড, কলকাতা ৭০০ ০৪৮
৫। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোলজি, ৭এ, বিনয় বসু রোড, কলকাতা ৭০০ ০২৫
৬। শ্রীশ্রীশিবকালী আশ্রম, নিশিকানন, তেঘরিয়া, কলকাতা ৭০০ ০৫৯ এখানে ডাকযোগে জ্যোতিষী ও তান্ত্রিক তৈরি করা হয়।
৭। হাতিবাগান টোল (এটাই আদি টোল বলে দাবি করেন মনসারাম), ১৩৩ এ, শ্রী অরবিন্দ সরণি (গ্রে স্ট্রিট)। কলকাতা ৭০০ ০০৬
৮। ক্যালকাটা অ্যাসট্রলজিক্যাল রিসার্চ সেন্টার, ১১৭ এ জে সি বোস রোড, কলকাতা ৭০০ ০১৪।
৯। ইনস্টিটিউট অফ্ অ্যাসট্রোলজিক্যাল সায়েন্স, ১০এ মনীন্দ্র মিত্র রো, কলকাতা ৭০০ ০০৯।
১০। বেঙ্গল অ্যাসট্রোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন্ ৬এ, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিট। কলকাতা ৭০০ ০৭৩
১১। বিশ্ব জ্যোতিষ বিদ্যাপীঠ, ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি অব্ অ্যাসট্রোলজি, ৮, আশুতোষ শীল লেন, কলকাতা ৭০০ ০০৯
১২। বঙ্গীয় তান্ত্রিক সমাজ, ৮১৬ লেকটাউন, ব্লক এ, কলকাতা ৭০০ ০৮৯
১৩। হাতিবাগান টোল, ১২৯ বি, শ্রীঅরবিন্দ সরণি, কলকাতা ৭০০০০৬ (এটাই আদি টোল বলে দাবি হাঁকেন শ্রীনিমাই ঠাকুর)
১৪। ওয়ার্ল্ড অ্যাসট্রোলজার্স-সোসাইটি (গভঃ রেজিঃ), ৫/এফ শ্যামাচরণ মিত্র লেন। কলকাতা ৭০০ ০৩৬ ডাকযোগে জ্যোতিষ শিক্ষা ও উপাধি প্রদান করা হয়।
১৫। কলেজ অফ জ্যোতির্বিদ্যা (গভঃ রেজি), ৮ বি ঈশ্বর মিল লেন, কলকাতা
১৬। অ্যাকাডেমি অব্ ইন্ডিয়ান অ্যাসট্রোলজি (গভঃ রেজি), ৫২, সূর্য সেন স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০৯
এদের অনেকের বিজ্ঞাপনের পাশে লেখা ‘গভ. রেজি' অর্থাৎ যেন সরকারের কাজে রেজিস্ট্রিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানেও এক বিশাল ধাপ্পা। এইসব জ্যোতিষ ও তন্ত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতারণা শেখানো শুরুই করে প্রতারণার মধ্য দিয়ে৷ এইসব কলেজ বা গবেষণাকেন্দ্রগুলো সরকার অনুমোদিত কোনও বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়।
ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন সংক্ষেপে ইউ জি সি
স্বীকৃতি না দিলে তাকে সরকার স্বীকৃত
কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় বলে
দাবি করা যায় না।
পাড়ার অনেক ক্লাব-ই যেমন ‘সোসাইটি’ হিসেবে রেজিস্টেশন করা, তেমন-ই সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অফিস থেকে ‘সোসাইটি’ হিসেবে নিজেদের নাম রেজিস্ট্রেশন করানো। সেটাই হল সংক্ষেপে ‘গভঃ রেজিঃ’।
এইসব তথাকথিত ইউনির্ভাসিটি, কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেওয়া কোনও ডিপ্লোমা, ডিগ্রি বা ডক্টরেট-এর এক পয়সা দাম নেই আইনের চোখে। তবু ওরা অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত বা প্রতারণায় হাত পাকাতে চাওয়া জ্যোতিষীদের কাছে নানা ধরনের, উপাধি, গোল্ডমেডেল ইত্যাদি বিক্রি করে চলেছে। এমন অশিক্ষিত জ্যোতিষীর অভাব নেই, যারা মনে করে এইসব সংস্থায় নাম রেজিস্ট্রি করিয়ে ডিগ্রি বা উপাধি নিয়ে যেহেতু বসেছি, তাই পেশাটা আইনি হয়ে গেল। অজ্ঞতা আর লোভের সুযোগ নিয়ে কত রকম বে-আইনি ব্যবসা যে এদেশে চলে!
'পশ্চিমবঙ্গ জুড়েই জ্যোতিষী তৈরির ‘কর্মযজ্ঞ চলেছে’
এখন শুধু কলকাতা বা বৃহত্তর কলকাতার ছড়ি ঘোরাবার যুগ শেষ। পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মত-ই গড়ে উঠেছে জ্যোতিষশাস্ত্র শিক্ষাকেন্দ্র। এরা সবাই বিভিন্ন পঞ্জিকা ও পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাত্র-ছাত্রী টানে। তবে ভাটপাড়া’র নাম জ্যোতিষী তৈরির ব্যাপারে এক নম্বরে। ভাটপাড়া এখনও একটা কিংবদন্তি। এটাও মনে রাখবেন, কিংবদন্তি হওয়ার সঙ্গে সত্যি-মিথ্যের কোনও সম্পর্ক নেই।
এবার এলোপাথাড়ি জ্যোতিষী তৈরির কারখানাগুলোর নাম বলে যাচ্ছি।
(১) কলেজ অফ অ্যাসট্রো-মেডিক্যাল রিসার্চ (গভঃ রেজিঃ) পোস্ট ও গ্রাম: খামারচণ্ডী, জেলা হুগলি।
(২) ইন্ডিয়ান কলেজ অফ অ্যাসট্রোলজি অ্যান্ড অ্যাসট্রোনমি (গভঃ রেজিঃ) এস, এম, আলি রোড, পোঃ ব্যারাকপুর, জেলা উত্তর ২৪ পরগনা।
(৩) রয়্যাল প্যালেস তন্ত্র রিসার্চ সেন্টার, ২২৩/৩ মহেন্দ্র ভট্টাচার্য রোড।
(৪) অ্যাসট্রোলজিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট, (গভঃ রেজিঃ), এ ৯/১২০ কল্যাণী, নদীয়া।
(৫) জ্যোতিষ শিক্ষা প্রসার বিভাগ (শিক্ষা ও গবেষণা কেন্দ্র), সি. ই/১৭৭ ইস্টল্যান্ড কোয়ার্টার, ইচ্ছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা।
( ৬) নৈহাটি অ্যাসট্রোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট (গভঃ রেজিঃ), ৭ বিজয়নগর, সেন্ট্রাল পার্ক, নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা।
(৭) ত্রিনয়নী চতুষ্পাঠী জ্যোতিষ কার্যালয়, ১৬/১ নব নারীতলা ১ম বাইলেন
(৮) কলেজ অফ অ্যাস্ট্রোলজি অ্যান্ড অ্যাসট্রোনমি অফ ইন্ডিয়া (গভঃ রেজিঃ)। পলতা, কল্যাণগ্রাম, পোঃ বেঙ্গল এনামেল। জেলা—উত্তর ২৪ পরগনা।
(৯) হুগলী ইন্সটিটিউট অফ বৈদিক শাস্ত্র (গভঃ রেজিঃ) (৭২টি ক্লাস নিয়ে জ্যোতিষ শিক্ষা শেষ করা হয়), ৪২, নেতাজী সুভাষ অ্যাভিনিউ, শ্রীরামপুর, হুগলি।
(১০) আসাম বঙ্গীয় জ্যোতিষ ও তন্ত্র সোসাইটি (গভঃ রেজিঃ), ১৫০ আর বি সি রোড, নৈহাটি, পোঃ গরিফা, জেলা–উত্তর ২৪ পরগনা।
(১১) সারদাশ্রী জ্যোতিষশ্রম/শারদাশ্রী শাস্ত্রীয় বিদ্যালয়, পোঃ দাসপুর, জেলা- মেদিনীপুর, পিন-৭২১২১১
(১২) ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব পামিস্ট্রি, ১৫ নং রায়বাগান, তালপুকুর, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা।
(১৩) ভাটপাড়া-নৈহাটি ইনস্টিটিউট অব বৈদিক অ্যাসট্রোলজি অ্যান্ড অ্যালায়েড স্টাডিজ (গভঃ রেজিঃ), ৬৬ ঠাকুরপাড়া রোড, পোঃ নৈহাটী, জেলা—উত্তর ২৪ পরগনা।
(১৪) এশিয়াটিক রিসার্চ ইনসটিটিউট, ২ নং এয়ারপোর্ট গেট, দমদম, উত্তর ২৪ পরগণা।
(১৫) ভাটপাড়া জ্যোতিষ গবেষণাগার, ৬৯, বিন্দুবাসিনী রোড, ভাটপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হালহকিকত
একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন এইসব বে-আইনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গজিয়ে উঠেছে কলকাতা ও তার আশে-পাশের জেলায়।
শিয়ালদা ও রাজাবাজার অঞ্চলে পকেটমারদের পকেট কাটা
শেখানোর যে পরিকাঠামো আছে, এইসব জ্যোতিষ
‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে' সেই নূন্যতম
পরিকাঠামোও নেই।
শিয়ালদা, রাজাবাজারে দেখেছি গোটা লাউয়ের গায়ে ভেজা পাতলা কাপড় জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে হবু পকেটমার কী অধ্যবসায় ও নিপুণতার সঙ্গে ব্লেড চালিয়ে ভেজা কাপড় কেটে ফেলছে, লাউয়ের একটা আঁচড় না লাগিয়ে। আর জ্যোতিষ শেখাবার মুদিখানাগুলোর অবস্থা বাস্তবিক-ই মুদিখানার মতো। এক হাতে টাকা দাও, এক হাতে ডিগ্রি-টিগ্রি নাও। ওরা ছাত্র-ছাত্রীদের একটুকুও শেখায় না, কীভাবে একজনকে দেখে তার সম্বন্ধে অনেক কিছু জানা যায়। একজনের পোশাক, জুতো, ঘড়ি, চশমা, চামড়ার মসৃণতা, শারীরিক পরিপাট্য, শারীরিক ভাষা, রুচি, কথা বলার ধরন, উচ্চারণ পদ্ধতি, শ্বাস নেওয়ার পদ্ধতি (খুব সহজেই বোঝা যায় হাঁপানিতে কষ্ট পাচ্ছেন কি না), এমনি নানা বিষয়ে নজর রেখে অনেক কিছুই জেনে ফেলা যায়। কোন্ বয়সের মেয়েকে নিয়ে মা এলে সমস্যাটা মেয়েটির বিয়ে, কোন্ বয়সের ছেলে বা মেয়েকে নিয়ে এলে সমস্যাটা লেখাপড়া—বুঝতে হবে। ক্লায়েন্টের সঙ্গে কী ভাবে কথা বলে হাঁড়ির খবর জানতে হয়, বুঝতে হবে। জানতে হবে মানুষের দুর্বলতা। ক্লায়েন্টের সেন্টিমেন্টে ঠিকমত সুড়সুড়ি দিতে পারলে অর্ধেক জয় ওখানেই হাসিল। ছা’পোষা মানুষদের বলুন, আপনি অন্যের জন্যে যতটা করেন, অতটা দাম পান না। এমন চাটুকারিতায় ধান্দাবাজ রাজনীতিকরা পর্যন্ত কাবু, সাধারণ মানুষ তো কোন ছার। ১৮ থেকে ৪৮ পর্যন্ত বয়সের ‘সুন্দরী’দের আপনার অদ্ভুত সন্মোহনী শক্তি আছে। গুণমুগ্ধের সংখ্যা প্রচুর। মিলে যাবে। আজও এদেশের পুরুষরা মনের সৌন্দর্যের চেয়ে দেহের সৌন্দর্যকে বেশি গুরুত্ব দেয়। দৈহিক সৌন্দর্য সচেতন, কম শিক্ষিতা, কাজকর্মহীন অলস মহিলাকে বলুন, ‘আপনি সাহসী, প্রগতিশীল, মুক্তমনের মানুষ’— দেখবেন কুমারী থেকে বিবাহিতা প্রত্যেকেই বোল্ড আউট হবেন। স্বল্পশিক্ষিতা, কাজকর্মহীন, অলস যুবতীর মাথা সাধারণভাবে ‘শয়তানের কারখানা’। ছেলেদের মাথা চিবিয়ে খেতে ওস্তাদ। লাম্পট্য তাদের কাছে ‘সাহসী’ ও ‘মুক্তমনার প্রতীক। এটাকে মাথায় রেখে ঘুরিয়ে বলুন। দারুণ ফল পাবেন।
একজন হবু জ্যোতিষীকে প্রতারণার প্রথম পাঠটুকুও দেয় না এইসব তথাকথিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এখান থেকে ডিগ্রি কিনে প্রতারণা করতেই করতেই প্রতারণার সূক্ষ্ম কলাকৌশল শিখতে হয়। “যে যত বড় জ্যোতিষী সে তত বড় প্রতারক”—যুক্তিবাদীদের এই স্লোগান আক্ষরিক অর্থে যথার্থ।
কলকাতার জ্যোতিষীরা : একটি সমীক্ষা
বৃহত্তর কলকাতার জ্যোতিষীদের নিয়ে যুক্তিবাদী সমিতি ইতপূর্বে দু’বার সমীক্ষা চালিয়ে ছিল। একটি ১৯৮৮-তে। ১ মার্চ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। দ্বিতীয়টি ১ মার্চ ২০০২ থেকে ৩০ নভেম্বর ২০০২ পর্যন্ত।
১৯৮৮-র সমীক্ষার ফল ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ‘নাগরিক সমাচার’, ‘আলোকপাত’ ও আরও কিছু পত্র-পত্রিকার। ১৬ বছর আগের সমীক্ষা অনুসারে কোলকাতায় জ্যোতিষীর সংখ্যা দু’হাজারের মতো। কোলকাতায় পুরোপুরি পেশাদার জ্যোতিষীর সংখ্যা একশোর মতো; যাঁদের আয় মাসিক ২,৫০০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি।
দেড় হাজার জ্যোতিষীর মাসিক আয় ৫০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা। পশ্চিমবঙ্গে জ্যোতিষীর সংখ্যা সাড়ে চার হাজারের মতো। কলকাতার পর সবচেয়ে বেশি জ্যোতিষীর বাস মেদিনীপুরে। তখন মেদিনীপুর অবিভক্ত ছিল। এককালে ভারতে জ্যোতিষশাস্ত্রচর্চার পীঠস্থান ছিল নৈহাটির ভাটপাড়া। এখন এখানে জ্যোতিষী আছেন পাঁচ ঘর।
আগে জ্যোতিষচর্চায় ছিল ব্রাহ্মণদেরই একচেটিয়া অধিকার। এখন তাতে বিশাল এক থাবা বসিয়েছে অব্রাহ্মণ জ্যোতিষীরা। এই অব্রাহ্মণ জ্যোতিষীদের শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগই কায়স্থ।
জ্যোতিষচর্চার ক্ষেত্রে সেকালে পুরষদেরই একছত্র আধিপত্য ছিল। এখন যুগ পাল্টাচ্ছে। জ্যোতিষচর্চার এগিয়ে এসেছেন অনেক মহিলা।
কলকাতার প্রথম নামী মহিলা জ্যোতিষী পারমিতা। তারপর যাঁদের নাম উল্লেখযোগ্য, তাহলে তাঁরা হলেন অঞ্জলি দেবী, প্রিয়াংকা, লোপামুদ্রা, মণিমালা, কৃষ্ণা, কল্যাণী মুখার্জি। এখন টিভি ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারে আছেন জয়া, অনুরাধা, দেবকন্যা, গোপা শাস্ত্রী, খনা মা। এ-ছাড়া আরও অনেক মহিলা জ্যোতিষীরাই ডুবছেন, আবার নতুন নতুন নাম উঠে আসছেন। নামী-দামি হয়ে উঠছেন। নামটা কতখানি ব্যাপক, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে বিজ্ঞাপন ও প্রচারের ওপর। যার যত বিজ্ঞাপন, যার মত প্রচার, সে তত নামী। আর যা যত নাম, তার তত দাম।
বিজ্ঞাপন ও প্রচারের দৌলতে এককালের সম্রাট জ্যোতিষীর
দলও আবার এক সময় সিংহাসন ছেড়ে দিতে বাধ্য
হন, অন্য জ্যোতিষীদের সঙ্গে বিজ্ঞাপন ও
প্রচারের প্রতিযোগিতায় এঁটে
উঠতে না পেরে।
পুরনো দিনের পঞ্জিকা বা পত্রিকার পাতা ওল্টালেই চোখে পড়বে অতীত জ্যোতিষ-সম্রাটদের বিজ্ঞাপন। একটু কষ্ট করে খোঁজ করলেই দেখতে পাবেন, বর্তমানে অচেনা এইসব জ্যোতিষীদের অনেকেই এখনও জীবিত এবং এখনও জ্যোতিষ-পেশা আঁকড়ে আছেন।
বিজ্ঞাপনের দৌলতে ১৫ থেকে ২৫ বছর আগের নামী-দামি জ্যোতিষীরা হলেন ডঃ অসিতকুমার চক্রবর্তী, পণ্ডিত রামকৃষ্ণ শাস্ত্রী, সমরেন্দ্র দাস, শ্রীরবি শাস্ত্রী, মনসারাম, নিমাই ঠাকুর, ডঃ সন্দীপন চৌধুরী, পারমিতা, প্রিয়াংকা, নরোত্তম সেন, শুকদেব গোস্বামী ওরফে ভৃগু-আচার্য, শ্রীভৃগু ও অমৃতলাল।
বিজ্ঞাপনে ২০০৫ সাল থেকে যাঁরা সাধারণের পকেট হালকা করার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন, তাঁরা হলেন— রামকৃষ্ণ শাস্ত্রী, সুভাষ শাস্ত্রী, দেবযানী, শ্ৰীজয়ন্ত, মনসারাম, নিমাই ঠাকুর, মলয় শাস্ত্রী, শ্রীভৃগু, খনা মা, জয়া গাঙ্গুলী, বশিষ্ঠানন্দ, গৌতম ভারতী, প্রলয় শাস্ত্রী, অমৃতলাল।
অমৃতলাল এক বিষয়ে সবার চেয়ে আলাদা। তিনি রত্ন ধারণের ব্যবস্থাপত্র দেন। নাপরিবর্তে দেন মেটাল ট্যাবলেট।
বৃহত্তর কলকাতায় ‘জ্যোতিষ শিক্ষণ কেন্দ্র'-এর সংখ্যা ৫। জ্যোতিষ বিষয়ক প্রকাশিত পত্রিকার সংখ্যা ৪টি। ২০০৩-এর সমীক্ষায় জানা যায়, বৃহত্তর কলকাতায় ছোট-বড় মিলিয়ে জ্যোতিষীর সংখ্যা ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার। জ্যোতিষ চর্চা করে মাসিক আয় ১০ হাজার বা তার চেয়ে বেশিদের সংখ্যা এই রকম :—
মাসিক আয়— | জ্যোতিষীদের সংখ্যা |
১০ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে | ২৫০০ থেকে ৩০০০ |
৪০ হাজার টাকার বেশি এবং ১ লক্ষ টাকার মধ্যে | ১০০০ থেকে ১৫০০ |
১ লক্ষ টাকার বেশি এবং ২ লক্ষ টাকার মধ্যে | ২০০ থেকে ৩০০ |
২ লক্ষ টাকার বেশি এবং ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে | ১০০ থেকে ১৫০ |
৫ লক্ষ টাকার বেশি এবং ৩০ লক্ষ টাকার মধ্যে | ৪০ থেকে ৫০ |
এখন অবশ্য ভাগ্যগণকরা কেউ-ই নিজেদের শুধুমাত্র ‘জ্যোতিষী’ বলে বিজ্ঞাপন দেয় না। ওরা এখন প্রত্যেকেই ‘তান্ত্রিক’ ‘তন্ত্রভৈরব’, ‘তন্ত্রসিদ্ধ’, ‘অলৌকিকমাতা’ ইত্যাদি। কারণ ওরা ইতিমধ্যে জেনে গেছে, ভাগ্য পাল্টাবার কথা বললে যখন-তখন গ্রেপ্তার হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। যুক্তিবাদী সমিতির জন্যেই যে জ্যোতিষীদের ‘কপাল পুড়েছে’ জেনে যুক্তিবাদী সমিতিকে বশ করার কোনও তাবিজ ধারণ না করে নিজেদের পরিচয়ই পাল্টে ফেলছে। তান্ত্রিক ইত্যাদির ভড়ং নিয়ে পিঠ বাঁচাতে চাইছে। ভড়ংদাররা জানে এদেশে ধর্ম বিশাল ঢাল। তান্ত্রিক, ধর্মগুরু ইত্যাদিদের সাত খুন মাপ।
জ্যোতিষীদের ভয় অন্য জায়গায়। জ্যোতিষীদের প্রতারক চরিত্র- যেভাবে একের পর এক বে-আব্রু করেই চলেছেন যুক্তিবাদীরা, তাতে কারাবারে তালা দ্রুত পড়েই চলেছে। ভয় পেয়েছেন মন্ত্রীরাও, যাঁরা চান, তাঁদের মতামত ও খামখোলিপনার ওপর জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ‘হয়ে ওঠা’ নির্ভরশীল থাক। যুক্তিবাদের উত্থান মানেই সরকারি ব্যয়ে করদাতাদের অর্থে-দুজ্ঞেয়বাদী অবিদ্যার পৃষ্ঠপোষকতা থেকে পিছু হটা—এই সত্য মন্ত্রীরা বোঝেন।
মানব প্রজাতির অগ্রগমন অনিবার্য। আর অগ্রগমন মানেই অবিদ্যার পশ্চাৎ-অপসরণ।