অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড)/প্রথম পর্ব/অধ্যায়: পনেরো
অধ্যায় : পনেরো
এক বেহায়া জ্যোতিষীর কাহিনি
১১ ডিসেম্বর ১৯৮৮ জ্যোতিষীদের হৃদয়ে দেগে দেওয়া আর একটি ‘কালা দিবস’। ১১ ডিসেম্বরই টেলিগ্রাফ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় বিশাল গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল একটি অসাধারণ খবর—‘বয়েজ স্কাউট অফ বেঙ্গল’-এর ময়দান টেন্টে এক দারুণ লড়াই জমবে। এ-এক অভূতপূর্ব লড়াই। সাঁই শিক্ষা আশ্রম ইন্টারন্যাশনালের উপাচার্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন সায়েন্স অ্যান্ড র্যাশনালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন-এর সম্পাদক প্রবীর ঘোষকে। সাঁইবাবার বিভূতি খাইয়ে দেবেন উপাচার্য। খাওয়ার তিন-দিনের মধ্যে প্রবীরবাবুর পেটে তৈরি হবে তিন থেকে পাঁচটা খাঁটি সোনার টাকা। প্রবীরবাবুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন মেদিনীপুরের বিখ্যাত হস্তরেখাবিদ নরেন্দ্রনাথ মাহাতো। তিনি প্রমাণ করেই ছাড়বেন হস্তরেখাবিদ্যা বিজ্ঞান আর যুক্তিবাদীদের তরফ থেকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে এ-যুগের কাঁপিয়ে দেওয়া একটি নাম—ডাইনি সম্রাজি ইপ্সিতা রায় চক্রবর্তীকে।
সত্যিই, এক অসাধারণ সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১১ ডিসেম্বরের বিকেলে। সম্মেলনে এত বিপুল সংখ্যক সাংবাদিকের উপস্থিতি বাস্তবিকই আমাদের সমস্ত রকম কল্পনার বাইরে।
এই সাংবাদিক সম্মেলনের দিন এবং তার আগে-পরের দিনগুলো ছিল উত্তেজনার বারুদে ঠাসা, ঘটনার ঘনঘটায় জমজমাট। তিন চ্যালেঞ্জারের একজন ছিলেন জ্যোতিষী। তাঁর প্রসঙ্গ এখানে প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় আনলাম। অন্য দুই আরও বেশি উত্তেজক ঘটনার প্রসঙ্গ এখানে আনলাম না অপ্রাসঙ্গিক বিবেচনায়। (‘যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা’ বইয়ের ১ম খন্ডে আরও বহু চ্যালেঞ্জারের সঙ্গে এই দুই চ্যালেঞ্জারকে হাজির করেছি।) তবে নরেন্দ্রনাথের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলাম জেনে আপনারা অবশ্যই বুঝে ফেলেছেন, এর একটা পূর্ব ইতিহাস আছে। শ্রীনরেন্দ্রনাথ মাহতো হস্তরেখাবিদ-এর ২৮.১০.১৯৮৮-তে লেখা একটি চিঠি পাই। ঘ্যামচ্যাক্ ছাপানো প্যাডে লেখা চিঠি। প্যাডের ছাপানো অংশ পড়ে জানতে পারলাম, তিনি মেদিনীপুর শহর, মুগবেড়িয়া, বেলদা ও ঝাড়গ্রামে হাত দেখতে বসেন সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে। চিঠিটি এই :
মাননীয় প্রবীর ঘোষ,
সম্পাদক
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি
কলকাতা-৭৪।
মহাশয়,
আপনার মানসিকতা যুক্তিবাদী হওয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
জ্যোতিষশাস্ত্র ও হস্তরেখাবিদ্যা যে অবিজ্ঞান নয়, একথা আমি আপনাকে দিয়েই প্রমাণ করে দিতে পারি। আর যদি না পারি তবে আমি আপনার যুক্তিবাদী সমিতির সদস্য হবো।
আমি হস্তরেখাবিদ্যার ছাত্র, সুতরাং এই বিদ্যা সংক্রান্ত যুক্তিসম্মত প্রশ্ন করলে আমি উত্তর দিব। কারণ ব্যক্তিগতভাবে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ আমার নেই।
হস্তরেখাবিদ্যার মধ্যে মহান সত্য নিহিত আছে এবং মানবকল্যাণে এর প্রয়োজনীয়তা আছে। যুক্তিবাদী মানুষের কাছে একথা আমি প্রমাণ করে দিতে পারি। আশা করি আমার পত্রের গুরুত্ব দিবেন মানুষ হিসেবে।
নমস্কারান্তে
শ্রীনরেন্দ্রনাথ মাহাতো
সুজাগঞ্জ
পোঃ ও জেলা—মেদিনীপুর।
উত্তরে ৫.১১.১৯৮৮ শ্রীমাহাতোকে একটি চিঠি পাঠাই। চিঠির প্রতিলিপি এখানে তুলে দিলাম।
শ্রীনরেন্দ্রনাথ মাহাতো
সুজাগঞ্জ॥ পোস্ট: জেলা – মেদিনীপুর ২৫.১১.1988
মহাশয়,
গত ২৮.১০.১৯৮৮ তারিখে লেখা আপনার চিঠিটি পেয়েছি। চিঠিতে জানিয়েছেন, আপনি প্রমাণ করে দেবেন জ্যোতিষশাস্ত্র ও হস্তরেখাবিদ্যা অপ-বিজ্ঞান নয়। আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য আপনি যে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।
আগামী ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৮ বিকেল চারটের সময় ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’র ময়দান তাঁবুতে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে আহ্বান করেছে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি। ওই দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত থেকে আপনি আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জামানত হিসাবে ৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেন বলে আশা রাখি।
আপনার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সাত দিনের মধ্যে আপনাকে দশ ব্যক্তির হাত বা হাতের ছাপ (যা আপনি চাইবেন) দেখতে দেব। দেখে প্রত্যেক হাতের বা হাতের ছাপের অধিকারীর অতীত সম্বন্ধে পাঁচটি করে প্রশ্নের মধ্যে অন্তত চারটি করে প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে এক মাসের মধ্যে।
সর্বসমক্ষে আপনি আমি এবং আপনার ও আমার পক্ষে দুজন করে ব্যক্তি বা কোনও নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে দিয়ে আপনি এবং আমি অনুসন্ধান করে নেব যে আপনার উত্তর ঠিক কী ভুল। অনুসন্ধান আপনার উত্তর পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে শেষ করা হবে।
আপনি জিতলে অনুসন্ধান শেষের সাতদিনের মধ্যে দেব আপনার জমা দেওয়া পাঁচ হাজার টাকা ও আমার প্রণামী পঞ্চাশ হাজার টাকা। অর্থাৎ মোট পঞ্চান্ন হাজার টাকা। আশা রাখি আপনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি থেকে পিছু হটবেন না।
যুক্তিবাদী অভিনন্দন-সহ
প্রবীর ঘোষ
সম্পাদক
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি
প্রেস কনফারেন্সে শেষ পর্যন্ত অনেক মজাই ঘটেছিল। কিন্তু যা ঘটেনি, তা হলো শ্রীনরেন্দ্রনাথ মাহাতোর উপস্থিতি। পরের দিন বহু ভাষাভাষী পত্রিকাতেই দারুণ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল ওই সাংবাদিক সম্মেলনের কথা। বহু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল এক বা একাধিক ছবিও। তারপরও এর জের চলেছিল দীর্ঘদিন ধরে। আনন্দবাজার ও বসুমতীতে প্রকাশিত হয়েছিল এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই সম্পাদকীয়। বহু পত্র-পত্রিকাতেই যখন বারবার ঘোষিত হচ্ছিল যুক্তিবাদের জয়যাত্রার কাহিনি, ঠিক তখনই ২৮ জানুয়ারি ১৯৮৯ ‘আজকাল’ পত্রিকায় ‘প্রিয় সম্পাদক’ কলমে প্রকাশিত হলো নরেন্দ্রনাথ মাহাতোর এক বিস্ফোরক চিঠি। ‘বিস্ফোরক’ কথাটি ব্যবহার করার কারণ, চিঠিটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দু-দিনে আমার বহু প্রিয়জন, বহু শ্রদ্ধেয় মানুষ, বহু সহযোদ্ধা এবং বহু শুভানুধ্যায়ী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চেয়েছিলেন প্রকৃত ঘটনা। এই সময় এমনই বহু অভিযোগ পেয়েছি—কিছু কিছু বাবাজিদের চ্যালারা এই নিয়ে কিছু কিছু সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মীদের উত্ত্যক্তও করেছেন। নরেন্দ্রনাথ মাহাতোর চিঠিটা এখানে তুলে দিলাম।
প্রবীর ঘোষকে ফের চ্যালেঞ্জ
“যুক্তিবাদী প্রবীরের চ্যালেঞ্জে 'ঈপ্সিতা, অগ্নিতা, নরেন্দ্রনাথ কেউ এলেন না!” আমার নামে এই শিরোনামে ১২ ডিসেম্বর, আজকালে, যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তা অসত্য। ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’র সম্পাদক প্রবীর ঘোষ এবং অনান্য যাঁরা নিজেদের যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক বলে মনে করেন, তাঁরা প্রায়ই হস্তরেখাবিদ্যা সম্বন্ধে না জেনে এই বিদ্যাকে বুজরুকি ধরে নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বহুদিন ধরে কাল্পনিক গল্প ও প্রবন্ধ লিখে আসছেন। আমি প্রবীরবাবুকে একটি চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম যে, হস্তরেখাবিদ্যা একটি বিজ্ঞান এবং তা আমি প্রমাণ করে দেব। আমার চিঠির উত্তরে ২৮ নভেম্বর ১৯৮৮-তে প্রবীরবাবু জানালেন যে, পাঁচ হাজার টাকা জামানত নিয়ে ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৮তে ময়দান-তাঁবুর সাংবাদিক সম্মেলনে আসুন। এই হল প্রবীরবাবুর আমন্ত্রণপত্রের নমুনা। ঐ চিঠির উত্তরে ৬ ডিসেম্বর '৮৮ প্রবীরবাবুরকে জানিয়েছি যে, কিভাবে কোন পদ্ধতিতে হস্তরেখাবিদ্যা যে একটি বিজ্ঞান, তা প্রমাণ করব। প্রবীরবাবু ১১ ডিসেম্বরের আগে ঐ চিঠি পেয়েছেন, কিন্তু সাংবাদিক সম্মেলনে আমার ৬ ডিসেম্বরের লেখা চিঠি পড়ে শোনান নি। এর থেকে বুঝলাম প্রবীরবাবু সততার সঙ্গে সত্যতা যাচাই করতে চাইছেন না। আমি অলৌকিকত্বের প্রমাণ দেখাতে চাইনি। আমি চেয়েছি হস্তরেখাবিদ্যা যে একটি বিজ্ঞান, তা প্রমাণ করতে। বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদীদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, সাধুবাবাদের অলৌকিকতা বা ভাঁওতার সঙ্গে হস্তরেখাবিদ্যার কোন সম্পর্ক নেই। আমার কিছু শর্ত আছে। তাতে যদি প্রবীরবাবু রাজি থাকেন, তাহলে এপ্রিল ’৮৯ মাসের কোন একদিন হস্তরেখাবিদ্যা যে একটি বিজ্ঞান, তা আমি এবং আর একজন প্রমাণ করে দেব।
নরেন্দ্রনাথ মাহাতো। মেদিনীপুর।
৩০ জানুয়ারি ’৮৯ আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে দেওয়া নরেন্দ্রনাথ মাহাতো চিঠির উত্তরও প্রকাশিত হলো ‘প্রিয় সম্পাদক’ কলমেই।
নরেন্দ্র মাহাতোকে চ্যালেঞ্জ ৫ হাজার টাকা জমা দিন
“প্রবীর ঘোষকে ফের চ্যালেঞ্জ” শিরোনামে ২৮ ডিসেম্বর ’৮৯ আজকালে শ্রীনরেন্দ্রনাথ মাহাতোর একটি চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। চিঠিতে শ্রীমাহাতোর প্রথম দাবি, “যুক্তিবাদী প্রবীরের চ্যালেঞ্জে ঈপ্সিতা, অগ্নিতা, নরেন্দ্রনাথ কেউ এলেন না?” শিরোনামে ১২ ডিসেম্বর আজকালে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা অসত্য। শ্রীমাহাতোর বক্তব্যের সরল অর্থ আমার মাথায় না ঢোকার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। সেই সঙ্গে তাঁর কাছে জানতে চাইছি, প্রকৃত সত্যটা তবে কী? সেদিনই বাস্তবিকই ওই তিনজনের কেউ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও আজকাল-সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সাংবাদিকেরা সত্য গোপন করেছিলেন বা বিকৃত তথ্য পরিবেশন করেছিলেন বলে শ্রীমাহাতো দাবি করেছেন? তেমন দাবি করলে শ্রীমাহাতোর মানসিক সুস্থতার বিষয়ে যে কোনও যুক্তিবাদী মানুষই সন্দেহ প্রকাশ করবে।
শ্রীমাহাতোর ২য় দাবি, “৬ ডিসেম্বর ’৮৮ প্রবীরবাবুকে জানিয়েছি যে কিভাবে বা কোন্ পদ্ধতিতে হস্তরেখাবিদ্যা যে একটি বিজ্ঞান তা প্রমাণ করব। প্রবীরবাবু ১১ ডিসেম্বরের আগে ঐ চিঠি পেয়েছেন কিন্তু সাংবাদিক সম্মেলনে আমার ৬ ডিসেম্বরে লেখা চিঠি পড়ে শোনান নি। এর থেকে বুঝলাম প্রবীরবাবু সততার সঙ্গে সত্যতা যাচাই করতে চাইছেন না।”
শ্রীমাহাতো রেজিস্ট্রি ডাকে একটি চিঠি আমার বাড়ির ঠিকানায় পাঠিয়েছিলেন। রেজিস্ট্রি নম্বর আর এল ৪৬১৪, তারিখ ৬.১২.৮৮। ১২ ডিসেম্বর সেই চিঠি আমার স্ত্রী পান। আমার বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করাতে হলে শ্রীমাহাতো মতিঝিল পোস্ট অফিস পিন ৭০০ ০৭৪-এ খোঁজ নিতে পারেন। সেখানে আমার স্ত্রীর তারিখ সহ স্বাক্ষর রক্ষিত আছে। অতএব ১১ ডিসেম্বরের সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর পাওয়া চিঠি পড়ার কোনও প্রশ্নই উঠতে পারে না।
যে চিঠি পেয়েছি সেটাও খুব মজার। তাতে শ্রীমাহাতো জানিয়েছেন, বিশ বা তিরিশজন সাধারণ মানুষের মধ্যে আমি দশজন হৃদরোগী মিশিয়ে দিলে তিনি সেইসব হৃদরোগীদের চিহ্নিত করে দিয়ে প্রমাণ করবেন হস্তরেখাবিদ্যা একটি বিজ্ঞান ৷
শ্রীমাহাতোর চিঠি পড়ে জেনেছি তিনি চারটি শহরে হস্তরেখা বিচারে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে বসেন। আমার বড়ই কৌতূহল হচ্ছে এই জানতে যে তিনি কি হাত দেখে শুধুমাত্র হৃদরোগীদেরই চিহ্নিত করেন? হাত দেখে তিনি যদি মানুষের ভবিষ্যৎ ও অতীত বলতে সক্ষম বলে দাবি করেন তবে নিশ্চয়ই আমার হাজির করা দশজন মানুষের হাত দেখেও অতীত বলতে সক্ষম হবেন। তিনি বাস্তবিকই যদি আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে রাজি হন তবে অবশ্যই তাঁকে মানুষের অতীত বলে দেবার মধ্য দিয়েই হস্তরেখাবিদ্যার যথার্থতাই প্রমাণ করতে হবে। হৃদরোগী চিহ্নিতকরণে তিনি সফলতা পেলে বড় বেশি হলে এটাই প্রমাণ হতে পারে হাত দেখেও হৃদয়ের গোলমাল বোঝা যায়, কিন্তু এর ফলে ভাগ্যগণনায় হস্তরেখার কৃতকার্যতা প্রমাণ হবে কি? (যদি অবশ্যই বাস্তবিকই তিনি তা পারেন!)
শ্রীমাহাতোর ৩য় দাবি, “এপ্রিল ('৮৯) মাসের কোনও একদিন, হস্তরেখাবিদ্যা যে একটি বিজ্ঞান, তা আমি এবং আর একজন প্রমাণ করে দেব।”
একজন বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়েই আমি কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চাই। শ্রীমাহাতো যদি বাস্তবিকই আমার হাজির করা দশজন মানুষের অতীত সম্পর্কে করা পাঁচটি করে প্রশ্নের অন্তত চারটি করে সঠিক উত্তর দিতে পারেন তবে আমি পরাজয় স্বীকার করে নেব, এবং প্রণামী, হিসেবে দেব ৫০ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির’ সম্পাদক হিসেবে এও ঘোষণা করছি যে, পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সমিতিও ভেঙে দেব, কারণ তার প্রয়োজনীয়তা ফুরোবে।
ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখের মধ্যে শ্রীমাহাতো আমাদের সমিতির কার্যালয়ে ৫ হাজার টাকা জমা দিলে বাস্তবিকই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন বলে ধরে নেব, এবং ৮ এপ্রিল শনিবার কলকাতার প্রেস ক্লাবে আমরা দু'জনে সাংবাদিক বন্ধুদের সামনে হাজির হতে পারি।
আপনি আরও একজন চ্যালেঞ্জারের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলে চাইলে তাকেও ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অবশ্যই জমা দিতে হবে ৫ হাজার টাকা। ৮ এপ্রিল তাঁর জন্যই ধার্য রইল।
প্রবীর ঘোষ
সম্পাদক—ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি
৭২/৮ দেবীনিবাস রোড, কলকাতা-৭০০ ০৭৪
না, নরেন্দ্রনাথ মাহাতো ২৮ ফেব্রুয়ারি ’৮৯ কেন, আগস্ট ২০০৭-এ এই অংশটি লেখা পর্যন্ত ‘চ্যালেঞ্জ মানি’ জমা দিতে আসেননি, পরিবর্তে কিছু কিছু পত্রিকায় আবারও চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, আবারও গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে যেটা করে চলেছেন, সেটা হল, মাঝে মধ্যেই আমাকে একটি করে দীর্ঘ চিঠি পাঠাচ্ছেন। তাতে থাকছে প্রচুর গালমন্দ।