অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড)/প্রথম পর্ব/কিছু কথা


কিছু কথা


মগজ ধোলাই প্রসঙ্গে
রাজনীতিকদের জ্যোতিষ ও রাজনীতি

তাবৎ ভারতবাসীদের চেতনাকে প্রভাবিত করার মত একটি ঘটনা ঘটল ২১ জুন ১৯৯১। ভারতের নবম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরসিমহা রাও ওই দিন শপথ নিলেন পাঁজিপুথি দেখে রাহুর অশুভ দৃষ্টি এড়াতে ১২টা ৫৩ মিনিটে।

 পি. ভি নরসিমহা রাও সুপণ্ডিত, দার্শনিক, সাহিত্যিক, বহুভাষাবিদ, তখন তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সর্বোচ্চ পদাধিকারী, রাষ্ট্রের কাণ্ডারী। এমন একজন বিশাল মাপের মানুষ জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি যখন অগাধ আস্থা পোষণ করেন, তখন সাধারণ মানুষেরও জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি আস্থা বাড়ে। জ্যোতিষশাস্ত্রের অভ্রান্ততা বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত বহু মানুষই এরপর শাস্ত্রটিকে অস্বীকার করাটা কিঞ্চিৎ মূঢ়তা বলেই মনে করতেই পারেন। অসাধারণ মানুষের বিশ্বাস সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রভাবিত হলে সাধারণ মানুষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে জন্মালেই তাদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে। জীবনের প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত আগে থেকেই ঠিক হয়ে রয়েছে। এ অমোঘ, অব্যর্থ।

 নির্ধারিত কথার অর্থ—যা ঠিক হয়েই রয়েছে; যার পরিবর্তন সম্ভব নয়। জ্যোতিষীরা দাবি করেন, জ্যোতিষশাস্ত্র এমন একটি শাস্ত্র যে শাস্ত্র নির্ধারিত পথে বিচার করে একজন মানুষের, পূর্বনির্ধারিত ভাগ্য গণনা করা যায়।

 মজাটা হল এই, সাধারণ মানুষ যখন শ্রীনরসিমহা রাও থেকে বাজপেয়ীর জ্যোতিষ পরামর্শ মেনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করায় তাঁদের জ্যোতিষশাস্ত্রে পরম বিশ্বাসী বলে মনে করছেন, তখন তাঁরা কিন্তু জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর সামান্যতম আস্থা প্রকাশ করে বসে থাকেননি। শ্রীশরদ পাওয়ারকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রতিযোগিতায় পরাজিত করার জন্য শ্রীরাও বিড়লা, হিন্দুজা, আম্বানিদের মতো বিশাল শিল্পপতিদের দোরে দোরে ঘুরেছেন। নিজের দলের সাংসদদের সমর্থন আদায় করতে নাকি প্রত্যেক সমর্থক সাংসদকে ৫০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছেন শ্রীশরদ পাওয়ারের শিবির, যাতে শামিল হয়েছিলেন কির্লোস্কার, বাজাজ, নুসলি ওয়াদিয়া, গুলাবচাঁদ প্রমুখ শিল্পগোষ্ঠী। শ্রীনরসিমহার পক্ষে সিংহভাগ সাংসদদের সমর্থন নিশ্চিত করতে শ্রীনরসিমহার সমর্থক শিল্পগোষ্ঠীই নাকি অর্থ জুগিয়েছেন। এ-সবই এই বইটির পাঠকদের কাছে পুরনো খবর হয়ে গেছে। কারণ, এই খবর তামাম ভারতবর্ষের বহু পত্র-পত্রিকাতেই বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯১-এর ২০, ২১, ২২ জুন। শ্রীনরসিমহা সত্যিই যদি জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাস করতেন, তবে নিশ্চয়ই তাঁর নিত্যকার দুপুরের ভাত-ঘুমকে নির্বাসনে পাঠিয়ে শ্রীশরদকে রুখতে শিল্পপতিদের কাছে হত্যে দিয়ে পড়তেন না, পাওয়ার দখলের জন্য প্রাণকে বাজি রেখে লড়াই চালাতেন না। জ্যোতিষশাস্ত্রকে বিশ্বাস করে, ভাগ্যকে বিশ্বাস করে শরীরকে বিশ্রাম দেওয়ার রুটিনই বজায় রাখতেন। ভাগ্য যখন পূর্বনির্ধারিত, তখন যে কোনও প্রচেষ্টাই তো অর্থহীন। প্রধানমন্ত্রী হওয়া যদি ভাগ্যে নির্ধারিতই থাকে, তবে কে তাকে খণ্ডাবে? এ তো অমোঘ, অব্যর্থ। আর ভাগ্যে যদি প্রধানমন্ত্রী হওয়া লেখা না থাকে, তবে অবশ্যই ভাগ্য; যে ভাগ্য জন্মকালীন গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান অনুযায়ী নির্ধারিত হয়ে গেছে।

 মহা-বিস্ময় জাগে যখন দেখি সুপণ্ডিত, ধুরন্ধর রাজনীতিবিদ শ্রীনরসিমহা রাও কথা ও কাজে দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছেন। সমস্ত প্রচার মাধ্যমগুলোর সাহয্যে জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি তাঁর গভীর বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার কথা প্রচার করছেন। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি, বিশ্বাস না রেখে নিজের অধিকার ছিনিয়ে নিতে সংগ্রাম চালিয়েছেন।

কেন এই দ্বিচারিতা? তবে কি ধুরন্ধর রাজনীতিবিদ শ্রীরাও চান তাঁর শাসনকালে বঞ্চিত মানুষগুলো তাদের প্রতিটি বঞ্চনার জন্য নিজ-ভাগ্যকেই দায়ী করুক? তাই কি ডংকা বাজিয়ে জ্যোতিষবিশ্বাসের পক্ষে তাঁর প্রচার তাঁর এই স্ববিরোধী চরিত্রের কথা দেশবাসীরা যদি তোলে তিনি রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁদের উদ্দেশে কী বলবেন? তখন কি উপদেশ দেবেন, “হে দরিদ্র-ভারতবাসী, হে মূর্খ ভারতবাসী, আমি যা বলি তাই করো, যা করি তা কোরো না।”

 যে শিল্পপতি, ধনীদের দেওয়া সহস্র কোটি টাকা ব্যয় করে শ্রীরাওয়ের দল ক্ষমতায় এসেছে, যে শিল্পপতিদের পছন্দের মানুষ হিসেবে শ্রীরাও নেতা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও কিছু করার চিন্তা নিশ্চয়ই শ্রীরাও বা তাঁর দল কখনই করবে না, করতে পারে না। তেমনটা করলে শ্রীরাও এবং তাঁর দলের সরকারের অস্তিত্বই বিপন্ন হবে।

 ১৯৯০-এর নভেম্বরে চন্দ্রশেখর যখন প্রধানমন্ত্রী হন সেবারও বিশাল টাকার খেল হয়েছিল। সে-বারও কিংমেকার-শিল্পগোষ্ঠীরই চন্দ্রশেখরকে পছন্দ করেছিলেন বলেই চন্দ্রশেখর প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। শিল্পপতিরা নিশ্চয়ই তাঁদেরই কৃপা করবে, তাঁদের পিছনেই অর্থ ঢালবে, শাসনক্ষমতায় বসাবে, যাঁরা শিল্পপতিদের একান্তই বিশ্বস্ত। অতএব এইসব শাসকগোষ্ঠী ধনকুবেরদের যে বিরোধিতা করতে পারে না, করার সাধ্য নেই এ-কথা অতি স্পষ্টভাবে বুঝে নিতে হবে।

 একবিংশ শতাব্দীতে পা ফেলেও আমাদের দেশের জননেতারা আর এক পা রাখল মধ্যযুগে। তখন ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়। মুরলীমনোহর যোশী, লালকৃষ্ণ আডবানি, অরুণ জেটলি, অটলবিহারী বাজপেয়ীর মত উচ্চশিক্ষিতরা বিজেপির শীর্ষনেতা। তাঁদের কী ব্যবহার আমরা দেখেছি? পাঁজিপুঁথি দেখে লোকসভা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের সুসময় বেছে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাজপেয়ী শপথ নিয়েছেন টিকিধারীর পরামর্শ মেনেই।

 এসব দেখে মনে হতেই পারে, ওঁরা জ্যোতিষশস্ত্রে বিশ্বাসী। সত্যিই ওঁরা যদি জ্যোতিষে বিশ্বাসী হতেন বা ঈশ্বরে বিশ্বাসী হতেন, তবে নিশ্চিন্তে থাকতেন—ভাগ্য পূর্বনির্ধারিত। যা হবার তা হবে-ই। কোনওভাবেই পাল্টানো যায় না। এই প্রত্যয় থাকলে, শুভ দিন খোঁজার চেষ্টা থেকে অবশ্য বিরত থাকতেন।

 এরপর ২০০৪ সালে কেন্দ্রে এল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার। এরাও সেই মুদ্রার আর এক পিঠ। সেই একই স্ববিরোধিতা, একই ভন্ডামিতে ভরা। ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’-এর তৈরি ২০০৫ সালের সার্ভে অনুসারে ঘুষের দুর্নীতিতে ভারত পৃথিবীর এক নম্বর দেশ। ঘুষের পিছনে খরচ হয় বছরে ২১০০ কোটি টাকা। ২০০৭ সালে মায়াবতী উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন জিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন জানাবার বিনিময়ে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অর্থনৈতিক দুর্নীতির সব মামলা বন্ধ করে দেবার দাবি জানান কংগ্রেস সুপ্রিমো সোনিয়া এবং প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের কাছে।

 মায়াবতী এমন অদ্ভুত দাবি করার দুঃসাহস দেখাতে পারেন, কারণ তিনি জানেন দুর্নীতির কত ক্ষমতা।

 পুলিশদের কালি-ঝুলি মাখা ইমেজকে সাফা-সুরত করার মহান কর্তব্য রাষ্ট্রের, আরে বাবা—‘রাষ্ট্র ব্যবস্থা' মানেই তো শেষ পর্যন্ত টাকাওয়ালাদের শোষণ কায়েম রাখার সামাজিক কাঠামোকে টিকিয়ে রাখা। পুলিশ-সেনারা-ই তো রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। রাষ্ট্রের শোষণ আর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোনও জনগোষ্ঠী ‘ট্যা-ফোঁ’ করলে পুলিশ আর সেনারাই তো রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কথা ভাবতে লোকে ভয়ে কাঁপবে। এমন ‘বন্ধু’ পুলিশদের কালি-ঝুলি সাফ করার কাজে রাজনীতিক সাফ মাথাগুলো বসে থাকবে—হতেই পারে না। হয়ও নি। মুম্বইয়ের সিনেমাওয়ালাদের ডেকে মুখ ফুটে সমস্যার কথা বলতে না বলতেই ‘গঙ্গাজল’, ‘খাকি’, ‘অব্ তক ছপ্পন' তৈরি হয়ে যায়। সিনেমাগুলোতে মাফিয়াদের হত্যাকারী হিসেবে পুলিশদের প্রজেক্ট করা হয়। আমজনতার স্বার্থে দুর্নীতির ধ্বজাধারীদের পুলিশ হত্যা করতে থাকে, অন্ধ করতে থাকে। অত্যাচারিত, শোষিত, আইনের দরজায় বারবার ঠোক্কর খাওয়া আমজনতার স্বপ্ন-পূরণ ঘটায় সিনেমাগুলো। জনগণের চোখে রাতারাতি খলনায়ক থেকে নায়ক হয়ে যায় পুলিশ। ‘নো অ্যারেস্ট, নো বিচার, অ্যাকশন অন দ্যা স্পট’—এই হুজুগে গা ভাসায় জনগণ হাঁফ ছেড়ে বাঁচে পুলিশ-মাফিয়া-রাজনীতিকদের মেলবন্ধন। সুখানুভূতি তাদের মনে, সুখানুভূতির হুজুগে ভাসছে ভারতীয় পাবলিক। রাষ্ট্রের শত্রুকে সরকারের শত্রুকে এবং গরিবদের বন্ধুকে ‘মাওইস্ট' বা ‘নকশাল’ বলে চিহ্নিত করে অন দ্যা স্পট গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিলেও পাবলিক খুশ্।

 দুর্নীতিকে স্বমূল উপড়ে ফেলতে পুলিশরা ‘কন্ট্রাক্ট কিলার’দের বাবা হয়ে উঠবে, দুর্নীতি ঝাড়ে-বংশে বিদায় নেবে—এমনটা হয় না। হতে পারে না। কারণ,

রাষ্ট্রের সমস্ত অন্যায় ও শোষণকে রক্ষা করতেই পুলিশের
সৃষ্টি। পুলিশের দুর্নীতিতে তাই রাষ্ট্র থাকবে চোখ বুজে।
এই দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্কের ঐতিহ্য অতি প্রাচীন।

 পুলিশ যদি কখনও বোকার মতো ফেঁসে যায়, তখন তাকে বাধ্য হয়েই বলির পাঁঠা করতে হয়। এটাই প্রচলিত নিয়ম।

 নির্বাচন কী? না, শোষকদের, ধনীদের দালালি করার অধিকার কে দখল করতে পারবে, তার প্রতিযোগিতা। বেনিয়া আর শিল্পপতিরা নিজেদের হাতে দেশ শাসনের দায়িত্ব না রেখে তাদের এজেন্টদের জিতিয়ে আনতে চায়। এ’জন্য শিল্পপতিদের মধ্যে লড়াই আছে।

 সংসদীয় নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দল শাসনক্ষমতা দখলের দিকে এগোতে চাইলে, লোকসভায় বা বিধানসভায় উল্লেখযোগ্য আসন পেয়ে দাপট বজায় রাখতে চাইলে সেই রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে বিপুল অর্থ ঢালতেই হবে। বর্তমানে নির্বাচন মানেই এক অর্থ—প্রশাসন—সাংগঠিনক শক্তির সম্মিলিত ধূর্ত পরিচালনা। বিরোধীদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে, লুঠ করে, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদির সাহায্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে বিরোধীদের তাড়িয়ে এলাকা দখল হল প্রাথমিক কাজ। বিশাল প্রচার ব্যয়, রিগিং, বুথদখল, ছাপ্পা ভোট এ-সব নিয়েই এখনকার নির্বাচন। এ এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর জন্য অস্ত্র সংগ্রহ ও মাসলম্যানদের পিছনেও বইয়ে দিতে হয় অর্থের স্রোত। এই শত-সহস্র কোটি টাকা গরিব খেটে খাওয়া মানুষদের এক-টাকা দু-টাকা বা পাঁচ-টাকা চাঁদায় তোলা যায় না। তোলা হয়ও না। নির্বাচনী ব্যয়ের শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশি টাকা জোগায় ধনকুবেররা বিনিময়ে তারা এইসব দলগুলোর কাছ থেকে পায় স্বস্তিতে শোষণ চালাবার গ্যারান্টি। বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো কৌশল হিসেবে খেটে খাওয়া মানুষদের কাছ থেকে নির্বাচনী তহবিলের জন্য চাঁদা আদায় করে দেখাতে চায় “মোরা তোমাদেরই লোক।” সংসদ থেকে মন্ত্রীদের ঘুষ খাওয়া, মানুষ পাচারের বৃত্তান্ত বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখে দেখে রাজনীতিক দেখলে এখন বমি আসে।

 এইসব রাজনৈতিক দলের নেতারা যখন মাঠে ময়দানে, পত্র-পত্রিকায়, বেতারে, দূরদর্শনে, গরিবি হটানোর কথা বলেন, শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের কথা বলেন, মেহনতি মানুষের হাতিয়ার বলে নিজেদের ঘোষণা করেন, তখন কিন্তু এইসব তর্জন গর্জনে শোষকশ্রেণির সুখনিদ্রায় সামান্যতম ব্যাঘাত ঘটে না।

শোষকশ্রেণি জানে তাদের কৃপাধন্য রাজনৈতিক দল ও নেতাদের
এইসব বজ্রনির্ঘোষ স্রেফ শোষিত মানুষকে ভুলিয়ে রাখার কৌশল।
হুজুরের দল চায় এ-ভাবেই তাদের চাকরবাকর রাজনৈতিক
দলগুলো শোষিতদের আপনজনের মুখোশ পরে
শোষিতদের বিভ্রান্ত করুক, যাতে তাদের
সম্মিলিত ক্ষোভ দানা বেঁধে
বিস্ফোরিত হতে না
পারে।

 এই সমাজ-ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে শোষণ কায়েম রাখার স্বার্থেই শোষণকারীদের দালাল রাজনৈতিক দলগুলো শোষিত সাধারণ মানুষদের মগজ ধোলাই করে নানা ভাবে।

 ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই চায় মানুষ অদৃষ্টবাসী হোক, বিশ্বাস করুক পূর্বজন্মের কর্মফলে, ঘুরপাক খাক নানা সংস্কারের অন্ধকারে। এমন বিশ্বাসগুলো শোষিত মানুষগুলোর মাথায় ঢুকিয়ে দিতে পারলে শোষিত মানুষ তাদের প্রতিটি বঞ্চনার জন্য দায়ী করবে নিজের ভাগ্যকে, কর্মফলকে, ঈশ্বরের কৃপা না পাওয়াকে। শোষিত মানুষগুলোর চিন্তা চেতনা যদি স্বচ্ছতা পায়, ওরা যদি অন্ধ-সংস্কার ও বিশ্বাসের দেওয়াল ভেঙে বেরিয়ে আসে, তবে তো ওদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে প্রতিটি বঞ্চনার পিছনেই রয়েছে এই সমাজেরই কিছু মানুষ, এই সমাজেরই কিছু নিয়ম-কানুন ব্যবস্থা বা অব্যবস্থা, দুর্নীতি ও শোষণ। শোষিত মানুষ যদি বুঝতেই পারে তাদের বঞ্চনার কারণের মূলে ভাগ্য, কর্মফল বা ঈশ্বরের কৃপাহীনতা দায়ী নয়, দায়ী সমাজের বর্তমান ব্যবস্থা, তখন তারা বঞ্চনামুক্ত হতে একদিন নিশ্চয়ই এই সমাজ ব্যবস্থাকেই পাল্টাতে চাইবে। সমাজের মূল ধরে টান দেবে। এতে শোষকশ্রেণি ও তাদের কৃপাধন্য দালালদের অস্তিত্বই যে বিপন্ন হয়ে পড়বে। এটা খুব ভালোমত জানে এবং বোঝে বলেই শোষকশ্রেণি ও তাদের দালালদের নানা পরিকল্পনা প্রতিনিয়তই চলছে। চলছে নানা ভাবে মগজ ধোলাইয়ের পদ্ধতি।

শোষণ ব্যবস্থাকে কায়েম রাখতেই মগজ ভাগ্য ও ঈশ্বর নিয়ে গুজব

 সময় এগোচ্ছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মন থেকে খসে পড়ছে অনেক সংস্কার, অনেক মূল্যবোধ। মানুষ অনেক পুরনো ধ্যান-ধারণা বিদায় দিচ্ছে। লড়াই কৌশল পাল্টাচ্ছে। হতদরিদ্র শোষিত মানুষগুলো ‘স্বয়ম্ভর গ্রাম’ বা ‘কমিউন’ গড়ে তুলেছে। স্বয়ম্ভর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে শোষণহীন সাম্য। এইসব গ্রামের আর্থিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতির বৃদ্ধি ঘটেছে উত্তরোত্তর। ২০০৭ মার্চের পরিসংখ্যান অনুসারে ভারতের ৬০০ জেলার মধ্যে ২০০ জেলায় গড়ে উঠেছে স্বয়ম্ভর গ্রাম। ধনীরাও শোষণের নানা নতুন নতুন কৌশল বের করছে, বের করছে গরিব মানুষগুলোর মগজ ধোলাইয়ের নানা প্যাঁচ-পায়জার। এইসব কূট কৌশল যেমন ধনীদের ভাড়া করা কিছু বুদ্ধিমান মানুষের মস্তিষ্ক থেকে বের হচ্ছে, তেমনই কিছু কিছু বুদ্ধিমানদের কাছে সে-সব ধরাও পড়ে যাচ্ছে। এইসব বিক্রি না হওয়া বুদ্ধিমানদের কেউ কেউ এগিয়ে আসছেন বঞ্চিত মানুষদের ঘুম ভাঙাতে। তাঁদের চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গড়ে উঠছে নানা সংগঠন, নানা গোষ্ঠী। এইসব সংগঠন ও গোষ্ঠী বঞ্চিতদের ধোলাই করা মগজে আবার ধোলাই করে ঢুকিয়ে দিচ্ছে নতুন চিন্তা। জাগিয়ে তুলছে নতুন চেতনা। গড়ে উঠছে নতুন সমাজ-সাংস্কৃতিক পরিবেশ। এমনই দুটি সংগঠন ‘যুক্তিবাদী সমিতি’ এবং ‘হিউম্যানিস্টস্ অ্যাসোসিয়েশন’।

 হুজুরের দল অবশ্যই এই অবস্থায় হাত-পা গুটিয়ে বসে থেকে এক সময় বঞ্চিত মানুষগুলোর সরব দাবি ও ক্ষোভকে সন্মান জানিয়ে রাজ্য-পাট ছেড়ে দিয়ে সন্ন্যাস নেয় না। ওরা অবশ্যই প্রতিরোধ গড়ে তোলে, প্রতিআক্রমণ চালায়। শোষকরা ভালমতোই জানে সংখ্যাগুরু শোষিত মানুষদের পায়ের তলায় দাবিয়ে রেখে দাবিয়ে চলার মত পুলিশ ও সেনা রাষ্ট্র-শক্তির নেই। তাই নানা কৌশলে চেষ্টা করে শোষিত ক্ষুব্ধ মানুষগুলোকে দমিয়ে রাখতে। ‘নিয়তি’ বা ‘ভাগ্য’ এবং ‘ঈশ্বর’ এমনই দুই কার্যকর কৌশল।

নির্বাচন-নির্ভর রাজনৈতিক দলগুলোকে রাষ্ট্র-ক্ষমতা দখলের
লড়াইয়ে যে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়, তার পুরোটা
যেহেতু ধনী হুজুরের দলই জোগায় তাই রাষ্ট্র-ক্ষমতা
দখলকারী রাজনৈতিক দল বা রাষ্ট্রশক্তি হয়ে
দাঁড়ায় ধনীদের বিশ্বস্ত যো-হুজুরের দল।

 এরই সঙ্গে হুজুরের দল আরো অনেক বুদ্ধিজীবীর বিবেক কিনতে বাজারে নেমে পড়ে। টপাটপ বিক্রিও হয়ে যায় অনেকেই। শোষিত মানুষগুলোর মগজ ধোলাই করতে হুজুরের দল নামিয়ে দেয় রাষ্ট্রশক্তি, রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিজীবীদের। নেমে পড়ে সরকারী ও ধনী মালিকানাধীন প্রচার-মাধ্যম, পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি। মগজ ধোলাই করা হতে থাকে প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন ভাবে। পাশাপাশি তথাকথিত ধর্মীয় চেতনা এবং ভাগ্যে বিশ্বাস শোষিত মানুষের লড়াইকে ছিন্ন-ভিন্ন করতে নারী-পুরুষ, বাড়াবার চেষ্টা চলতে থাকে। প্রয়োজনে জাত-পাত ও সাম্প্রদায়িক নানা চিন্তাকে উস্কে দেওয়ার বিবিধ কৌশলও টপাটপ্ বের করতে থাকে হুজুরের উচ্ছিষ্টভোগী পরামর্শদাতা ও দালালের দল। ভক্তিরসের বান ডাকানো হতে থাকে নানা ভাবে। অদৃষ্টবাদ, অলৌকিকত্বের রমরমা বাজার তৈরি করতে সূক্ষ্ম বুদ্ধির কৌশলেই কাজ হয়। জ্যোতিষ ও প্যারাসাইকোলজিস্ট নামধারী প্রবঞ্চকের দল রাষ্ট্রশক্তির আসকারায় তাঁদের উদ্ভট সব চিন্তা সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে নিজেদের আখের গোছাবার পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের মগজ ধোলাই করে ধনী শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে। প্রতিটি ক্লাব, গণসংগঠন, লাইব্রেরি স্কুল, কলেজকে কুক্ষিগত করে নিজেদের ইচ্ছেমত সাংস্কৃতিক চেতনা মাথায় ঢোকাতে কখনও রাজনৈতিক দলগুলোকেও কাজে লাগায় হুজুরের দল। কুক্ষিগত করার জন্য লোভ, ভয়, বলপ্রয়োগ ইত্যাদিকে পাথেয় করে রাজনীতি পেশার মানুষগুলো। কখনও বা সাহায্যের বদান্যতায় সংস্থাগুলোর ইচ্ছেমত চলার ক্ষমতাকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়। আবার কখনও বা ওইসব সংস্থার নেতাদের বিবেক কিনেই সংস্থাকে পকেটে পুরে ফেলে হুজুরের দল। কখনও নিজেদের বিশ্বস্ত লোকদের দিয়ে ওই ধরনের সাজানো আন্দোলন শুরু করা হয়; আন্দোলনে শামিল মানুষদের বিভ্রান্ত ও লক্ষ্যভ্রষ্ট করার চেষ্টায়। এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রশক্তি আন্দোলনকারীদের দেশের সাধারণ মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সন্ত্রাসবাদী জাতীয়তাবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী, উগ্রপন্থী, নকশাল, আই এস আই-এর চর ইত্যাদি ছাপ মেরে দেয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সরকারি, বেসরকারি প্রচার মাধ্যমগুলোর নিরবচ্ছিন্ন প্রচারে শোষিত মানুষদের এই প্রতিরোধের বিরুদ্ধে দেশের শোষিত মানুষরাই বিরূপ মনোভাব পোষণ করে। এই সুযোগে রাষ্ট্র তার সন্ত্রাস চালায় নাগরিকদের উপরে কখনও বা সওদা হতে না চাওয়া উন্নত শির, বিপদজনক নেতার চরিত্র হননের নানা প্রচেষ্টা চালানো হয় সাজানো আন্দোলন- কারীদের সাহায্যে। কখনও বা নেতাকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে গুলিবিনিময়ের আষাঢ়ে গল্প ফাঁদা হয়।

 এই যে কথাগুলো লিখেছি, এর একটা কথাও কল্পনাপ্রসূত নয়। যখনই কোনও দরিদ্র শোষিত জনগোষ্ঠী ঘুম থেকে জেগে উঠেছে, প্রতিবাদে সরব হয়েছে, আঘাত হেনেছে হুজুরদের দুর্গে, তখনই এই আন্দোলনকে ধ্বংস করতে শোষকশ্রেণি ও রাষ্ট্রশক্তি এই পদ্ধতিগুলোকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রয়োগ করে চলেছে। যারা শোষণ করছে তারা চায়, যাদের শোষণ করছি তাদের এমন নানা নেশায় ভুলিয়ে রাখব, মাতিয়ে রাখব, বিভাজিত করে রাখবো যে তারা আমাদের বিরুদ্ধে কোনও দিনই সম্মিলিত শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে পারবে না।

 আন্দোলনকে জয়ী দেখতে চাইলে হুজুরের দল ও তাদের রক্ষার দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রশক্তি বা সরকার আন্দোলন ধ্বংস করতে কী কী কৌশল গ্রহণ করে থাকে সে বিষয়ে আমাদের একটা স্পষ্ট ধারণা থাকা একান্তই প্রয়োজনীয়। সম্ভাব্য আক্রমণ বিষয়ে অবহিত থাকলে সেই আক্রমণ প্রতিহত করা এবং পাল্টা আক্রমণ চালানো সহজতর হয়।

 শোষকশ্রেণি বা রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন যাঁরা চালাবেন তাঁদের এটা অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন প্রতিটি আন্দোলনের গতি-প্রকৃতির ওপর যথেষ্ট নজর রাখে রাষ্ট্রশক্তি বা সরকার। সরকারের গোয়েন্দা দপ্তরের রয়েছে বহু বিভাগ। আমাদের সরকারের ইন্টেলিজেন্ট ডিপার্টমেন্টেরই রয়েছে তিরিশের ওপর বিভাগ বা সেল। ছাত্র, রাজনৈতিকদল, ডাকাত, অপরাধজগত, নকশাল সংগঠন ইত্যাদি প্রত্যেকটা বিভাগের জন্যে রয়েছে সেল। গোয়েন্দারা এইসব সংগঠনগুলোর ওপর নজর রাখেন। এ-ছাড়াও গোয়েন্দাদপুরের ও বিভিন্ন থানারই রয়েছে নিজস্ব ইনফর্মার। এই ইনকর্মাররা প্রতিটি সেলেই তথ্য জোগাচ্ছে অর্থের বিনিময়ে। এরা সরকারি চাকরি করে না। এদের আত্মপরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে এক একজন বড় পুলিশ অফিসারদের হাতে থাকে সরকারি খরচে নিজস্ব বিশ্বস্ত ইনফর্মার। এরা কোথায় নেই? কোনও সংগঠন সরকারের পক্ষে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে সন্দেহ করলেই তাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় ইনফর্মার। এ-ছাড়া গোয়েন্দারাও নজর রাখেন। সুতরাং বিভিন্ন আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি বিষয়েই সরকার ও শোষকশ্রেণি সব সময়ই ওয়াকিবহাল। বিভিন্ন আন্দোলনের গত-প্রকৃতি বুঝে তাকে রুখতে সরকার হাজির করে নানা কৌশল।

 এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য কৌশল হলো, সাধারণ মানুষের চিন্তাধারাকে নিজের প্রয়োজনীয় খাতে বইয়ে নিয়ে যাওয়া।

 মানুষের চিন্তাধারাকে কোনও একটা বিশেষ খাতে বওয়াতে, চিন্তার কোনও বিশ্বাসকে স্থায়ীভাবে গাঁথতে যে পদ্ধতিটি এখনও সবচেয়ে বেশি সফল বলে স্বীকৃত, তা হল অসীম ধৈর্যের সঙ্গে সুযোগ পেলেই মিথ্যেকেই বার বার নানা ভাবে বিশ্বাসযোগ্য করে পরিবেশন করতে থাকা। সফল রাজনীতিকদের এসব বিষয় জানতে হয়, নইলে শিল্পপতিদের কাছে কলকে পাওয়া যায় না। ওরা ধৈর্য ধরে সুযোগ বুঝে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে জনসাধারণকে মাঝে মধ্যেই জানাতে থাকে ওদের জ্যোতিষ-বিশ্বাস ঈশ্বর বিশ্বাস ও অলৌকিক ক্ষমতাবান ধর্মগুরুদের প্রতি বিশুদ্ধ ভক্তির কথা। এতে কিছু কিছু ধর্মীয় সম্প্রদায় ও ধর্মগুরুর শিষ্যদের ভোট প্রভাবিত হয়, জনসাধারণের মধ্যে জ্যোতিষ ও ভাগ্য-নির্ভরতা বাড়তে থাকে। কর্মফলে বিশ্বাস, ঈশ্বরনির্ভরতা, গুরুনির্ভরতা ইত্যাদি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আত্মবিশ্বাস হ্রাস পেতে থাকে।

আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ আত্মনিবেদন করতে জানে, আত্মসমর্পণ
করার মধ্য দিয়ে দুঃখ ও বঞ্চনাকে ভুলতে জানে, কিন্তু
লড়াকু হতে জানে না। যে মানুষ লড়াকু নয়,
তাকে আবার ভয় কী?

 মার্কসবাদের সঙ্গে অপরিক্ষিত এবং শুধুমাত্র বিশ্বাসনির্ভর জ্যোতিষশাস্ত্রের চূড়ান্ত বিবাদ থাকলেও কিছু কিছু মার্কসবাদী মন্ত্রী কিন্তু জ্যোতিষীদের সম্মেলনে হাজির হন প্রধান অতিথি, সভাপতি ইত্যাদি হয়ে। ওইসব সম্মেলনে শুভেচ্ছা বাণী পাঠান। মেহনতি মানুষের বন্ধু ওইসব মার্কসবাদী দলগুলো তাদের দলের মন্ত্রীদের এমন মার্কস-বাদ-ই কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার ফতোয়া জারি করেন না কেন? কেন এমন অদ্ভুত আচরণ? ওইসব কার্যকলাপ কি শুধুই মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত চ্যুতি বা নীতিভ্রষ্টতার নিদর্শন? না কি ক্ষমতার শাঁসে-জলে থাকার পরিণতিতে সাধারণ মানুষের চেতনাকে অদৃষ্টবাদী করে তোলার কূট কৌশল?

একটু তলিয়ে দেখলেই দেখতে পাবেন ওইসব তথাকথিত
অদৃষ্টবাদে বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতারা প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণ
অদৃষ্টবাদ বিরোধী চরম বাস্তববাদী। ‘ভাগ্যে যা লেখা
আছে তা-ই হবে', বলে কোনও রাজনৈতিক
নেতা বা দলই নির্বাচনের লড়াইয়ে হাত
গুটিয়ে বসে থাকে না।

মিটিং, মিছিল প্রচারের বিশাল ব্যয়, কর্মী, পেশীশক্তি, আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড়, বোর স্টক, জালিয়াতির নব-নব কৌশলকে কাজে লাগানোর প্রয়াস, বুথ দখল ইত্যাদি সকল বিষয়েই বিরোধী প্রার্থীকে টেক্কা দিয়েই জেতার চেষ্টা করে। ওরা জানে, ‘অদৃষ্টবাদ’ পৃথিবীর অন্যতম সেরা গুজব।

 আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই এ-দেশ ও এদেশের বাইরের সহযোদ্ধা ও সহমতের সাথীদের। কৃতজ্ঞতা জানাই তাঁদের উদ্দেশেও, যাঁদের প্রতিটি যোগাযোগ, প্রতিটি উষ্ণ অভিনন্দন, প্রতিটি গঠনমূলক সমালোচনা, প্রতিটি উপদেশ, প্রতিটি সাহায্য ও সহযোগিতা আমাকে ও সমিতিকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দিয়েছে, সাহস জুগিয়েছে, গতিশীল রেখেছে।

 ক্ষমাপ্রার্থী তাঁদের কাছে, যাঁদের কাছ থেকে নিয়েছিই শুধু, কিন্তু দিতে পারিনি চিঠির উত্তরটুকুও। পত্রলেখক-লেখিকাদের কাছে বিনীত অনুরোধ — চিঠির সঙ্গে অনুগ্রহ করে একটি জবাবী খামও পাঠাবেন।

 এমন কিছু চিঠির উত্তর দিতে পারিনি, যার উত্তরে বিস্তৃত আলোচনার প্রয়োজন ছিল, যা চিঠির স্বল্প পরিসরে সম্ভব ছিল না। পরবর্তী খণ্ডে সে-সব উত্তর নিয়ে নিশ্চয়ই হাজির হব।

 সংগ্রামের সাথী, প্রেরণার উৎস প্রত্যেককে জানাই সংগ্রামী অভিনন্দন।

 যুক্তিবাদী আন্দোলন, সাংস্কৃতিক আন্দোলন জয়যুক্ত হবেই।

৭২/৮ দেবীনিবাস রোড
কলকাতা ৭০০ ০৭৪

প্রবীর ঘোষ