আখ্যানমঞ্জরী (দ্বিতীয় ভাগ)/ন্যায়পরতা ও ধর্ম্মশীলতা
ন্যায়পরতা ও ধর্ম্মশীলতা
ইংলণ্ডের অন্তঃপাতী উর্ষ্টর্ শায়র্ প্রদেশে, ইবেশাম নামে এক উপত্যকা আছে। এক প্রাচীন ধনবান্ পাদরি, বহুকাল অবধি, তত্রত্য (দবালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন। ১৭৮৪ খৃষ্টাব্দে তাঁহার মৃত্যু হইলে, তদীয় শয্যা, আসন, পরিচ্ছদ প্রভৃতি সমস্ত বস্তু, নিলাম করিয়া, বিক্রীত হইল। ঐ দেবালয়ে মৃত পাদরির এক সহকারী নিযুক্ত ছিলেন, তিনিই দেবালয়সংক্রান্ত সমস্ত কার্য্য সম্পন্ন করিতেন। তিনি যে সামান্য বেতন পাইতেন, তাহাতে তদীয় পরিবারবর্গের ভবণপোষণ সম্পন্ন হইত না; ফলতঃ, তিনি অতি কষ্টে দিনপাত করিতেন।
যৎকালে, মৃত পাদরির বস্তু সকল বিক্রীত হয়, তৎকালে তিনি একটি পুরাতন আলমারি কিনিয়াছিলেন। তিনি আলমারিটি বাটীতে আনিয়া, ঝাড়িয়া পুছিয়া, পরিষ্কৃত করিতে লাগিলেন। আলমারিতে দুইটি দেরাজ ছিল। একটী দেরাজ খুলিয়া, তাহার ভিতরে, তিনি দুইটি টাকার থলি দেখিতে পাইলেন, থলি খুলিয়া গণিয়া দেখিলেন, প্রত্যেক থলিতে দুই শত গিনি আছে। এই গিনিগুলি আত্মসাৎ করিলে, তিনি যাবজ্জীবন সুখে ও স্বচ্ছন্দে, কালযাপন করিতে পারিতেন।
যদিও, যার পর নাই দুঃখী ছিলেন, কিন্তু, অর্থলোভে অসৎ পথে পদার্পণ করিতে পারেন, তিনি সেরূপ প্রকৃতির লোক ছিলেন না। তিনি সাতিশয ধর্ম্মশীল ও ন্যায়পরায়ণ ছিলেন, অসৎ উপায়ে অর্থলাভ করা অতি গর্হিত ও ধর্ম্মবিরুদ্ধ কর্ম্ম বলিয়া বিবেচনা করিতেন। তিনি, মনে মনে এই আলোচনা করিতে লাগিলেন, ইহা যথার্থ বটে, আমি এই আলমারি কিনিয়াছি, সুতরাং, আলমারিতে আমার স্বত্ব ও অধিকাব জন্মিযাছে, কিন্তু আলমারি কিনিয়াছি বলিয়া, অলিমারির অভ্যন্তরস্থিত চারি শত গিনিতে, কোনও মতে, আমার স্বত্ব ও অধিকার জন্মিতে পারে না। অতএব, অর্থলোভের বশীভূত হইয়া, এই গিনিগুলি আত্মসাৎ করিলে, নিতান্ত নীচাশয় ও যার পর নাই অধার্ম্মিকের কার্য্য করা হইবে। পরস্ব-হরণ, লোকতঃ ও ধর্ম্মতঃ, সর্ব্বতোভাবে, নিতান্ত ন্যায়বিরুদ্ধ কর্ম্ম।
এই সিদ্ধান্ত করিয়া, তিনি, গিনি লইযা মৃত পাদরির উত্তরাধিকারীদিগের নিকট উপস্থিত হইলেন; এবং সবিশেষ সমস্ত, তাঁহাদের গোচর করিয়া, গিনিগুলি তাহাদের সম্মুখে রাখিয়া দিলেন। তাঁহারা, তদীয় ঈদৃশ আচরণ দর্শনে যৎপরোনাস্তি প্রীত ও চমৎকৃত হইলেন, এবং এই পৃথিবীতে আর কেহ, আপনকার ন্যায় ধর্ম্মশীল ও ন্যায়পরায়ণ আছেন, আমাদের এরূপ বোধ হয় না, এইরূপ বলিয়া, মুক্তকণ্ঠে তাঁহাকে সাধুবাদ প্রদান করিতে লাগিলেন।