আখ্যানমঞ্জরী (দ্বিতীয় ভাগ)/যথার্থ বিচার
যথার্থ বিচার
তুরস্কদেশীয় এক ধনবান্ ব্যক্তি, বলপূর্ব্বক, এক দুঃখী প্রতিবেশীব বাসস্থান অধিকার কবেন। দুঃখী ব্যক্তি, নিতান্ত নিরুপায় হইয়া, অবশেষে বিচারালয়ে তাঁহার নামে অভিযোগ করিলেন। এই ব্যক্তির নিকট বাটীর দলীল ছিল। কিন্তু, তাঁহাব প্রবল প্রতিপক্ষ ঐ দলীল অপ্রমাণ করিবার নিমিত্ত অর্থবলে বহুসংখ্যক সাক্ষীর যোগাড় করিয়া রাখিয়াছিলেন। এতদ্ব্যতিরিক্ত অনায়াসে আপন অভিপ্রায় সম্পন্ন করিবার বাসনায়, তিনি বিচারপতিকে পাঁচ শত টাকা উৎকোচ দেন।
বিচারপতি অতিশয় ধর্ম্মশীল ও নিতান্ত ন্যায়পরায়ণ ছিলেন, অর্থলোভী ও উৎকোচগ্রাহী ছিলেন না। প্রতিবাদী উৎকোচ দেওযাতে তিনি বুঝিতে পারিলেন, এ ব্যক্তি নিঃসন্দেহ অন্যায় করিয়া, দুঃখী প্রতিবেশীর বাটী অধিকার কবিয়াছে। আমায় হস্তগত করিবার নিমিত্ত পাঁচ শত টাকা উৎকোচ দিল, কিন্তু, এই উৎকোচদান যে উহার পক্ষে যার পর নাই অনর্থক হইতেছে, তাহা বুঝিতে পারিতেছে না। যাহা হউক, এক্ষণে আমি উহাকে কিছু বলিব না, বিচারের দিন, এই উপলক্ষে উহাকে বিলক্ষণ শিক্ষা দিব। এই স্থির করিয়া, তিনি পাঁচ শত টাকার তোড়াটি রাখিয়া দিলেন।
বিচারের দিন ঐ দুঃখী ব্যক্তি, বিচারপতির নিকট বাটীর দলীল দাখিল করিলেন, কিন্তু অর্থবল নাই, এজন্য ঐ দলীলের প্রামাণ্য প্রতিপন্ন কবিবার নিমিত্ত একটি সাক্ষীরও যোগাড় কবিতে পারিলেন না। এদিকে তদীয় প্রতিপক্ষ, বহুসংখ্যক সাক্ষী দ্বারা ঐ দলীল কৃত্রিম, ইহা প্রতিপন্ন করিবার নিমিত্ত যথেষ্ট চেষ্টা করিতে লাগিলেন। তিনি বিচারপতিকে বলিলেন, যদি এ বাটী উহার হইত, তাহা হইলে অন্ততঃ একজনও উহার পক্ষে সাক্ষী দিতে আসিত। যখন উহার একটিও সাক্ষী নাই, তখন এ বাটী আমার বলিয়া বিচারালয়ে অভিযোগ করা কতদূর অন্যায় হইয়াছে, ধর্ম্মাবতার তাহার বিচার করুন।
এই কথা শুনিয়া বিচারপতি বলিলেন, ইহা যথার্থ বটে, ও ব্যক্তি আপন অধিকার সপ্রমাণ করিবার নিমিত্ত একটিও সাক্ষী উপস্থিত করিতে পারিতেছে না। কিন্তু, আমি উহার পক্ষে অন্ততঃ পাঁচশত সাক্ষী উপস্থিত করিতে পারি। এই বলিয়া, তিনি প্রতিবাদীর দত্ত পাঁচশত টাকা বহিষ্কৃত করিলেন, এবং বলিলেন, ও ব্যক্তি যে ঐ বাটীর যথার্থ অধিকারী, এই পাঁচশত টাকা তাহা সম্পূর্ণরূপে সপ্রমাণ করিয়া দিতেছে। এ বিষয়ে আমার আর অণুমাত্র সন্দেহ নাই। ইহা বলিয়া, তিনি যথোচিত ভর্ৎসনা ও ঘৃণাপ্রদর্শন পূর্বওক টাকার তোড়াটি প্রতিবাদীর গায়ে ফেলিয়া দিলেন, এবং বাদী, বাটীর যথার্থ অধিকারী বলিয়া মোকদ্দমার নিষ্পত্তি করিলেন।