আখ্যানমঞ্জরী (দ্বিতীয় ভাগ)/নিরপেক্ষতা ও ন্যায়পরতা
নিরপেক্ষতা ও ন্যায়পরতা
জর্জ্জ্ ওয়াশিংটনের সভাপতিত্ব সময়ে আমেরিকার ইয়ুনাইটেড্ ষ্টেটস্ প্রদেশে একটি লোক নিযুক্ত হইবে, উহা বিলক্ষণ লাভের ও সম্মানের পদ। ঐ পদে নিযুক্ত হইবার প্রার্থনায় দুই ব্যক্তি আবেদন করেন। তন্মধ্যে এক ব্যক্তি সভাপতির অতি আত্মীয়। সকল স্থানে সকল সমযে সকলের সমক্ষে সভাপতি এই ব্যক্তির উপর অকৃত্রিম স্নেহ, দয়া ও আত্মীয়তার প্রদর্শন করিতেন। উভয়ে সর্ব্বদা একত্র উপবেশন ও একত্র আহারবিহার প্রভৃতি করিতেন। বস্তুতঃ, এই ব্যক্তি সভাপতির বহু কালের আত্মীয় ছিলেন। আমি অবধারিত এই পদে নিযুক্ত হইব, এই বিশ্বাসে ইনি আবেদন করিয়াছিলেন; এবং সকল লোকও স্থির করিয়াছিলেন, ইনিই এই পদে অবধারিত নিযুক্ত হইবেন। অপর আবেদনকারী সভাপতির চিরবিরোধী। সভাপতি যখন যাহা করিতেন, এই ব্যক্তি তাহাতেই দোষারোপ করিতেন, এবং সভাপতি যাহাতে অপদস্থ হয়েন, সতত সে চেষ্টা পাইতেন। কিন্তু ইনি বিলক্ষণ কার্য্যদক্ষ, পরিশ্রমী ও সৎপথবর্ত্তী ছিলেন; বুদ্ধি ও বিবেচনা, যত্ন ও পবিশ্রম সহকারে সত্বর ও সুশৃঙ্খলরূপে কার্য্যনিৰ্বাহ করিতে পারিতেন। বস্তুতঃ, উপস্থিত পদে নিযুক্ত হইবার নিমিত্ত ইনি সর্ব্বপ্রকারে সর্ব্বাপেক্ষা যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। যাহা হউক, সভাপতি আপন প্রিয়পাত্রকে নিযুক্ত না করিয়া, এ ব্যক্তিকে নিযুক্ত করিবেন, ইহা কেহ একক্ষণের জন্যও মনে করেন নাই।
কিন্তু ওয়াশিংটন্ যার পর নাই নিরপেক্ষ ও ন্যায়পরায়ণ ছিলেন, সুতরাং স্বীয় বিপক্ষকে স্বীয় আত্মীয় অপেক্ষা অধিকতর উপযুক্ত বিবেচনা করিয়া, তাঁহাকেই উপস্থিত পদে নিযুক্ত করিলেন। এই নিয়োগ দর্শনে, ব্যক্তিমাত্রেই বিস্ময়াপন্ন হইলেন। তদীয় আত্মীয় সাতিশয় ক্ষুদ্ধ ও দুঃখিত হইলেন, এবং যৎপরোনাস্তি অবমানিত বোধ করিলেন। এক আত্মীয়, অমুককে নিযুক্ত না করা অতি অন্যায় হইয়াছে, এই বলিয়া, অনুযোগ করিতে লাগিলেন। তখন ওয়াশিংটন্ বলিলেন, দেখ, অমুক আমার আত্মীয়, তাহার কোনও সন্দেহ নাই, এবং এতদিন আমি তাহার উপর যেরূপ স্নেহ, দয়া ও আত্মীয়তা প্রদর্শন করিয়া আসিয়াছি, এক্ষণেও তদ্রুপ করিব, তাঁহার কোনও সন্দেহ নাই। কিন্তু আমার বিপক্ষ তাহার অপেক্ষা সর্ব্বাংশে যোগ্য ব্যক্তি, আত্মীয় ব্যক্তির হিতসাধনেব অনুরোধে যথার্থ যোগ্য ব্যক্তিকে নিযুক্ত না করা, কোনও মতে ন্যায়ানুগত হইতে পারে না। এজন্য আমি তাহাকে নিযুক্ত করিতে পারি নাই। আর বিবেচনা করিয়া দেখ, এ আমার নিজের বিষয় হইলে আমি যথেচ্ছ আচরণ করিতে পারিতাম। আমি সভাপতিপদে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছি, যাহাতে সর্ব্বসাধাবণের হিত হয়, সেই দিকে দৃষ্টি বাখিয়া চলাই আমার পরে এক্ষণে সর্ব্বতোভাবে উচিত ও আবশ্যক। অমুক ব্যক্তি আমার আত্মীয়, অতএব তাহাব হিতসাধন করিব, অমুক ব্যক্তি আমার বিপক্ষ, অতএব তাহার অহিতসাধন করিব, যদি এরূপ বুদ্ধি ও এরূপ বিবেচনার অনুবর্ত্তী হইয়া চলি, তাহা হইলে এই দণ্ডে আমার সভাপতির আসন হইতে অপসারিত হওয়া উচিত।