আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী/২২

২২

পল্লীর ব্যথা[]

 কলিকাতার রম্য হর্ম্ম্যবাসী সুখসেবী জমীদার ও ব্যারিষ্টারবর্গ পল্লীগ্রামের দুর্দ্দশা কল্পনার নেত্রে দেখেন বটে, কিন্তু তাহার প্রকৃত অবস্থা অতি অল্প লোকই বুঝিতে পারেন । খুলনা জিলার এমনই দুর্দ্দশা যে, ২/১ ঘর জমীদার ব্যতীত—যেমন সাতক্ষীরা ও নকীপুর—সকলেই প্রায় বারো মাস সহরতলীতে বাস করেন । গণনা করিয়া দেখা গিয়াছে, খুলনা জিলার এই প্রকার অন্যূন এক শত জমীদার, তালুকদার, গাঁতিদার প্রভৃতি বিদেশে অবস্থান করেন । সুতরাং তাঁহাদের সঙ্গে প্রজাবর্গের সম্বন্ধ শুধু নায়েব, গোমস্ত প্রভৃতি কর্ম্মচারীর ব-কলম। মাত্র তিন সপ্তাহ হইল সাতক্ষীরা মহকুমার অন্তর্ভূক্ত কতকগুলি স্থানে ঘুরিয়া, ফিরিয়া বেড়াইয়াছি । সেগুলি আবার লবণাক্ত প্রদেশ ; দেখিলাম, নৌকাযোগে জালা পূর্ণ করিয়া প্রায় এক ‘গণের’ পথ হইতে একটু মিষ্ট পানীয় জল আনিয়া লোক প্রাণধারণ করিতেছে । কোথাও বা দেখি যে, কাহারও জমীদারীর অন্তর্ভূত একটি উচ্চ প্রাইমারী স্কুল কোন রকমে অস্তিত্ব রক্ষা করিয়া আসিতেছে । এক জন জমীদার মাসে এক টাকা চাঁদা দিবেন বলিয়া প্রতিশ্রুত হইয়াছিলেন, কিন্তু তাহাও কয়েক বৎসর দিতে ভুলিয়া গিয়াছেন । এই শ্রেণীর জমীদার যখন ফসলের সময় মফঃস্বলে পদার্পণ করেন, তখন প্রজাগণের থর-হরি কম্প- ‘বর্গী এল দেশে’ এইরূপ আতঙ্ক উপস্থিত হয় । আবার বিশ্বস্তসূত্রে অবগত হইলাম, এই শ্রেণীর এক জমীদারের বিরুদ্ধে তাঁহার প্রজাগণ ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট দরখাস্ত করিয়াছে, তিনি যেন আর, তাঁহার জমীদারীতে সশরীরে না আইসেন। বাকী-বকেয়া খাজনার উপর নজর ও সেলামী দিতে প্রজাগণের প্রাণান্ত হয়। অবশ্য, এ বিবরণ জমীদার সাধারণের উপর প্রযোজ্য, এমন আমি বলিতেছি না। তবে এ প্রকার নমুনা নিতান্ত বিরল নহে। সুখের বিষয়, সাতক্ষীরার জমীদারগণের প্রজারঞ্জক বলিয়া পুরুষানুক্রমে খ্যাতি আছে এবং তাহদের জমীদারীর ভিতর অন্যায় অত্যাচার একবারে নাই বলিলেও অত্যুক্তি হয় না।

 কয়েক মাস হইল, কৃষি-কমিশনে সাক্ষ্য দিবার সময় বলিয়াছিলাম যে জমীদার, যদি দেশবাসী হইয়াও প্রজা-পীড়ক হন, তাহা হইলে ও দেশের মঙ্গল। কেন না, পুষ্করিণী খনন, পুরাতন দীঘির পঙ্কোদ্ধার প্রভৃতি তাঁহাদের নিজ ব্যবহার্য্য জলের জন্য করিতেই হয়। তাহা ছাড়া বারো মাসে তের পার্ব্বণে যে টাকা ব্যয় হয়, সে টাকা দেশেই থাকিয়া যায়। কিন্তু কলিকাতাবাসী জমীদারগণ প্রজার অর্থ শোষণ করিয়া চৌরঙ্গীতে বিলাস-ভবনে বাস করেন; তাঁহাদের গৃহসজ্জা ও নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য, মোটর-গাড়ী, বিজলী বাতি ও পাখা, আরামকেদারা প্রভৃতি বিলাসের অঙ্গ, সমস্তই বিদেশী। এই সকল জমীদারকে আমি জিজ্ঞাসা করি, তোমরা জমীদারীর আয়ের কত ভগ্নাংশ প্রজাবর্গের উন্নতিকল্পে ব্যয় কর? এই ত গেল অনুপস্থিত জমীদারদিগের কথা। তাহার পর পল্লীগ্রামের আর এক সর্ব্বনাশ, যিনি একটু লেখাপড়া শিখিয়া মাথা তুলিয়াছেন, তিনি একবারে দেশছাড়া। শরৎ চট্টোপাধ্যায় ‘পল্লী-সমাজে’ যে চিত্র অঙ্কন করিয়াছেন, তাহা বাঙ্গালার সকল পল্লীর উপর প্রযোজ্য। যত অকর্ম্মা অশিক্ষিত ‘রদী মাল’, তাহারাই গ্রামে থাকিয়া যত রকম কোন্দল, মামলা মোকর্দ্দমা, বিবাদ বিসংবাদ কুড়াইতে ব্যস্ত। গ্রাম হইতে নৈতিক বা অর্থ-নৈতিক উন্নতি একেবারে তিরোহিত হইয়াছে। জমীদার ও শিক্ষিত লোকমাত্রই দেশত্যাগী বলিয়া প্রাচীন কালের বড় বড় সরোবর প্রায় মজিয়া আসিতেছে। জল-নিঃসরণের পথ ও জঙ্গল কাটার অভাবে ম্যালেরিয়া, কলেরা প্রভৃতি ভীষণ আকার ধারণ করে। এই খুলনারই কয়েকটি গ্রামে ঘুরিয়া খবর পাইলাম যে, বন্য শূকরের অত্যাচারে কৃষিকর্ম্ম করা দায়; বিশেষতঃ আলু-কচুর চাষ অসাধ্য হইয়া দাঁড়ায়। এই ত দেশের অবস্থা; অথচ দেশে টাকা ছড়ান রহিয়াছে, বিদেশীরা আসিয়া ইহা মুঠো মুঠো কুড়াইয়া লইয়া যাইতেছে। সামান্য দুই একটি দৃষ্টান্ত দিতেছি; তাহা সাতক্ষীরার লোক বুঝিবেন। খুলনার সদর ও সাতক্ষীরা মহকুমার দক্ষিণ ভাগে ‘নোনা গাঙ্গে’ অনেক স্থানে ঘুসো চিংড়ী ধরিবার খটী আছে।

 এই সমস্ত নদীর জলকর আমাদের; যে জেলেরা এই মাছ ধরে, তাহারাও আমাদের প্রজা; যেখানে মাছ শুকায়, সে-ও আমাদের নিজের জমী। অথচ বাল্যকাল হইতে দেখিতেছি, বোম্বাই অঞ্চলের নাখোদা বণিক্‌গণ এই জেলেদিগকে বড় বড় ডেক্‌চী কিনিয়া দেয় ও টাকার দাদন দেয় এবং শুক্‌না মাছ প্রচুর পরিমাণে বিদেশে রপ্তানী করে। কিন্তু আমরা কি এতই অর্ব্বাচীন যে, এই ঘরের দুয়ারে যে ব্যবসাটা চলিতেছে এবং যাহা হইতে বিদেশীরা লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জ্জন করিতেছে, তাহা হইতে আমরা সামান্য জলকর ভিন্ন আর কিছুই পাই না? আর একটি দৃষ্টান্ত দিই, আপনারা সকলেই জানেন যে, কপোতাক্ষতীরবর্ত্তী এই সাতক্ষীরা মহকুমারই অন্তর্ভূক্ত বড় দলে’র বিরাট হাট আছে, এখানে বৎসরে লক্ষ লক্ষ টাকার মাল আমদানী-রপ্তানী হয়। কিন্তু ইহার প্রধান লভ্যাংশ মাড়োয়ারীগণ করায়ত্ত করিয়াছে; তাহারা লোটা-কম্বল সম্বল লইয়া কত দূর-দেশ হইতে আসিয়া অতর্কিতভাবে এখানকার সমস্ত ব্যবসায় হস্তগত করিয়াছে। অথচ আমরা আমাদের ছেলেদিগকে ৫ বৎসর বয়স হইতেই বিদ্যালয়ে পাঠাই, পাঠের তাড়নায় তাহদের স্বাস্থ্য ভঙ্গ করি—একটার পর আর একটা, তাহার উপর আর একটা পাশ করাই, পরে হীনবীর্য্য অস্থিকঙ্কালসার যুবকগণ চাকরীর অভাবে হা—অন্ন হা-অন্ন করিয়া হৃদয়-বিদারক চীৎকার করিতেছে।

 তুমি সহরের দিকে যতই দৃষ্টিনিক্ষেপ কর না কেন, আদমশুমারীর বিবরণে জানা যায়, শত করা ৫/৬ জন মাত্র সহরে বাস করে। আর বাকী ৯৪/৯৫ জন ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ম্যালেরিয়াগ্রস্ত হইয়াও পাড়াগাঁয়ে বাস করিতে বাধ্য। এই জনসঙ্ঘ লইয়াই ত বাঙ্গালী জাতি। আমরা কলিকাতায় বসিয়া যতই রাজনৈতিক আন্দোলন করি না কেন, যত দিন না আমরা এই বিপুল জনসংঘের মধ্যে লোকশিক্ষা বিস্তার করিতে পারিব, তত দিন রাজপুরুষদের নিকট কোন প্রকার যে দাবী-দাওয়া আদায় করিতে পারিব, তাহা মনে হয় না। এখন আর এক অদ্ভূত নেশা জাতিকে অভিভূত করিয়াছে, অর্থাৎ কাউন্সিলে প্রবেশ। এই উন্মত্ততায় কাহাকেও বা ২০/২৫/৩০ হাজার, এমন কি, লাখ টাকা পর্য্যন্ত ব্যয় করিতে দেখা গিয়াছে। সে দিন এক জন বিশিষ্ট এবং অভিজ্ঞ সংবাদপত্রসেবীর সহিত আলাপ করিতে করিতে আমি আক্ষেপ করিয়া বলিয়াছিলাম যে, এই নির্ব্বাচনব্যাপারে সমগ্র বাঙ্গালায় অন্যূন ১২/১৫ লাখ টাকা ব্যয় হইয়াছে। তিনি হাসিয়া বলিলেন, ৫০ লাখ টাকার এক পয়সা কম নহে। কাউন্সিলে ঢুকিয়া বড় বড় গগন-ফাটান ইংরাজী ভাষায় বক্তৃতা করিয়া দেশোদ্ধার করা বড়ই সহজ ব্যাপার। কিন্তু এই যে, পল্লীতে কোটি কোটি অজ্ঞ বর্ণজ্ঞানশূন্য নরনারী, তাহাদের সহিত তোমার কি সংযোগসম্বন্ধ রহিয়াছে? আমি নিজে রসায়নাগারে গবেষণা তুচ্ছ করিয়াও দেশহিতকর নানা কার্য্যে কাউন্সিলপদপ্রার্থী অনেকের কাছে ভিক্ষাপাত্র লইয়া দ্বারস্থ হইয়াছি; কিন্তু যিনি অম্লানবদনে কাউন্সিলে প্রবেশ করিবার জন্য ২০/৩০ হাজার টাকা ব্যয় করিয়াছেন, তিনিই আবার আমাকে রিক্তহস্তে ফিরাইয়া দিয়াছেন। এখন আবার বড় বড় নেতার ‘বোলচাল’ শুনি, কাউন্সিলে ঢোকা বিড়ম্বনা মাত্র। গভর্ণমেণ্টকে হারাইয়া দিলেও যদিচ্ছাচারী সার্টিফিকেসন করিবে। যদি সত্য সত্যই ইহার যাথার্থ্য প্রতিপন্ন হয়, তবে পল্লীসংস্কার কি সংগঠন মুখের কথা না হইয়া কার্য্যে পরিণত করা হয় না কেন?

 তুমি সহরতলীতে থাক, আবার গ্রীষ্ম পড়িলেই শৈলবিহারে যাইয়া অর্থের শ্রাদ্ধ কর। অথচ তুমি নেতা বলিয়া সাধারণের কাছে মানসম্ভ্রম চাও। ইহা কি প্রহসন নহে? আজ হিন্দু-মুসলমান সমস্যা, ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ সমস্যা জটিল হইতে জটিলতর হইয়া দাঁড়াইতেছে। হিন্দু বল, মুসলমান বল, ব্রাহ্মণ বল, অব্রাহ্মণ বল, সকলেই ত এই বাঙ্গালার মাটী, বাঙ্গালার জল ও বাঙ্গালার হাওয়ায় পরিপুষ্ট। সকলেই ইহার সমান অধিকারী। তবে এ গৃহ-বিবাদে আজ দেশ জর্জ্জরিত কেন? আমার মনে হয়, বাঙ্গালার গ্রামই প্রকৃত মিলন-মন্দির। যদি অনুন্নত শ্রেণী বা তথাকথিত অস্পৃশু শ্রেণী বুঝিত যে, জমীদার ও শিক্ষিত সম্প্রদায় প্রকৃতপক্ষে তাহদের হিতাকাঙ্ক্ষী, তাহা হইলে কখনই এই আত্মকলহরূপ বহ্নি ইন্ধন পাইত না। জমীদার ও প্রজায়, শিক্ষিতে ও অশিক্ষিতের মধ্যে, এমন এক প্রাচীর ব্যবধান রহিয়াছে যে, কখনই জনসাধারণ ভাবিতে পারে না যে, উহারা তাহাদের বন্ধু। এই যে ঝগড়া, ইহার কারণ গৃঢ়তর—মনোবৃত্তিমূলক। আজ যদি আমরা প্রকৃত প্রস্তাবে দেশকে তুলিবার জন্য বদ্ধপরিকর হইতাম, তাহা হইলে অগ্রে এই বিপুল জনসংঘকে আমাদের সহিত একতাসূত্রে আবদ্ধ করিতাম, তাহাদিগের অভাব-অভিযোগে কর্ণপাত করিতাম। কিন্তু তাহাদের সহিত আমাদের একেবারে ফারখৎ!

 এই সাতক্ষীরা ও সদর মহকুমার লবণাক্ত অঞ্চলের বড়ই দুর্দ্দশা। এখানকার মালিক অসংখ্য; এই জন্য মিলিয়া মিশিয়া বাঁধ-বন্দী সুচারুরূপে হয় না। এই কারণে নোণা জল ঢুকিয়া অনেক ক্ষেত্র পর পর অজন্মাগ্রস্ত হইয়া থাকে। কেবল বরুণদেবের উপর নির্ভর করিয়া থাকিতে হয়; ষোল আনা ফসল ত এক প্রকার উপন্যাসের কথা হইয়াছে। ২/৪ বৎসর অন্তর ৮ আনা ৬ আনা ফসল জন্মিয়া থাকে। এই কারণে জমীদার, গাঁতিদার, প্রজা সকলেই দুর্দ্দশাগ্রস্ত। এই দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র উপজীবিকা আমন ধান্য। এই জন্য এই অঞ্চলকে একফসলী বলা যায়। যদি ফসল না হইল, তাহা হইলেই হাহাকার। অনেক লোকের মাদুর বুনিয়া কোন রকমে গ্রাসাচ্ছাদনের সংস্থান হয়। কিন্তু ইহাও বঙ্গদেশের একটা প্রাকৃতিক নিয়ম দেখিতে পাই, যে অঞ্চলের লোক যতই অভাবগ্রস্ত, সে অঞ্চলের লোক আবার ততই অলস ও উদ্যমশূন্য। এই ‘একফসলী’ অঞ্চলে বছরে ৯ মাস লোকের কোন প্রকার কাজকর্ম্ম থাকে না। কিন্তু ইহারা অযথা এই সময় আলস্যে যাপন করে। ইহাদের ভিতর যদি এমন কোন গৃহশিল্প প্রবর্ত্তন করা যায়, যাহাতে এই অবসরকালে কিছু কিছু রোজগার করিতে পারে, তাহা হইলে দুঃখ-দৈন্যের অনেক উপশম হয়। তাঁত ও চরকা স্থানে স্থানে প্রচার করিয়া অনেক অর্থ ব্যয় করা গিয়াছে; কিন্তু দুঃখের সহিত জানাইতে হইতেছে যে, আমাদের প্রচেষ্টা তাদৃশ সফলতা লাভ করে নাই, কিন্তু আবার পুরাতন অভিজ্ঞতার উপর দাঁড়াইয়া-নবীন উদ্যোগের সহিত কয়েকটি কেন্দ্রে কায আরম্ভ হইয়াছে। সাধারণ লোক পরিশ্রম করিতে নারাজ; এমন কি, ধান একবার পাকিয়া উঠিলে ঘর হইতে নড়িতে চাহে না। পরদেশী আসিয়া ধান কাটিয়া মলিয়া গোলায় তুলিয়া দিবে এবং কৃষকগণ পায়ের উপর পা দিয়া বাজারের ভাল মাছ ও বিলাসদ্রব্য কিনিবে।

 বিলাসিতার স্রোত কলিকাতা হইতে পল্লীগ্রামের অন্তস্তম প্রদেশকেও প্লাবিত করিতেছে। যেখানে সেখানে হুঁকার পরিবর্ত্তে সিগারেট; আবার যেখানে যেখানে জিলা বোর্ডের রাস্তা আছে, সেইখানেই মোটরবাস চলিতে আরম্ভ হইয়াছে। সে দিন বাগেরহাটে দেখিলাম, সহর হইতে ষাটগম্বুজ মাত্র ৪ মাইল দূরে অবস্থিত। চাষীরা বাঁকে করিয়া তরি-তরকারী বিক্রয় করিতে আনে। কিন্তু ঘরে ফিরিয়া যাইবার সময় ২ আনা ৩ আনা দিয়া মোটরে চড়িয়া বসে। আসামের শিলচরে গিয়াও এই প্রকার দৃশ্য দেখিয়াছি। পাহাড়ীরা পিঠে করিয়া দ্রব্যসম্ভার বেচিতে আসে। ঘরে ফিরিবার সময় মোটর চড়িয়া আরামে যায়, অথচ এই সমস্ত কৃষিজীবী জমীদার ও মহাজনের নিকট ঋণে ডুবিয়া আছে এবং শিশুসন্তানদিগকে একটু দুধও জোগাইতে পারে না। আর তাহারা প্রতিদিন সিগারেট ও মোটরে বেশ ২ পয়সা ব্যয় করে। আমি অনেকবার বলিয়াছি, হাইকোর্টের ব্যারিষ্টার ও বিলাতফেরত জাতিমাত্রই সর্ব্বাপেক্ষা স্বদেশদ্রোহী। কেন না, স্বদেশজাত দ্রব্য ব্যবহার তাঁহাদের নিকট অসভ্যতার পরিচায়ক। হুঁকা, আলবোলা ও ফুরসীতে ধূমপান করিলে তাঁহাদের জাতি যায়। আর তাঁহারাই ফ্যাসানের উৎস! আর জনসাধারণকেই বা কি দোষ দিব? বাবুরা যাহা করেন, তাহারা তাহারই অনুকরণ করে। ইহাতে দেশের যে কি সর্ব্বনাশ হইতেছে, তাহ ২/১টি দৃষ্টান্তে উপলব্ধ হইবে। ১০ বৎসর আগে বাঙ্গাল দেশে ৫০ লক্ষ টাকার সিগার আমদানী হইত। ২ বৎসর পূর্ব্বে যে রপ্তানী দ্রব্যের তালিকা প্রচারিত হইয়াছে, তাহাতে দেখা গিয়াছে যে, উহা দেড় কোটীতে উঠিয়াছে। কিন্তু গত বৎসর হইতে বিলাতের অনেক ফার্ম্ম যে প্রকার নানা রকমের ও নানা মার্কার চুরুটের বিজ্ঞাপন প্রচার করিতেছে এবং ইহার ফলে পাড়াগাঁয়ে পর্য্যন্ত বিদেশী চুরুট যে প্রকার ছড়াইয়া পড়িতেছে, তাহাতে বেশ বুঝা যায় যে, ১৯২৭-২৮ খৃষ্টাব্দে এই আমদানী চুরুটের পরিমাণ অন্যূন ৩ কোটি টাকা হইবে। এ কি বিড়ম্বনা! এই বাঙ্গাল দেশ তামাকের আকর বলিলেও হয়। আর এই সাতক্ষীরার সন্নিকট কালোরোয়া চিটাগুড়ের একটি প্রধান আড়ত; অথচ ‘দা-কাটা’ তামাক খাওয়া এক প্রকার ধীরে ধীরে চলিয়া যাইতেছে। মোটর-গাড়ীর আমদানীও দেখা যাইতেছে যে, এই কয়েক বৎসরে কয়েক কোটি টাকা বাড়িয়াছে। একবার ভাবিয়া দেখুন, আমেরিকার দৈনিক মাথা পিছু আয় পৌনে ১৩ টাকা। ইংরাজ জাতির মাথা পিছু আয় পৌনে ৭ টাকা। আর আমাদের মাথা পিছু আয় না হয় বড় জোর ২ আনা। অথচ আমরা বিলাতী নেশায় বিভোর হইয়া বিলাতী জাতির অনুকরণে কোটি কোটি টাকা অকারণে বিদেশে পাঠাইতেছি, আর দিন দিন হৃতসর্ব্বস্ব হইয়া অকুলপাথারে ডুবিতেছি।

 কলিকাতাবাসী খুলনার জমীদারবর্গ—যাঁহাদের প্রজার মা–বাপ হওয়া উচিত—তাঁহারা যে তাঁহাদের কর্ত্তব্যপালন করেন না, তাহা পূর্ব্বেই বলিয়াছি এবং তাঁহাদের উপর কিছু তীব্রভাষা প্রয়োগ করিতেও বাধ্য হইয়াছি। তবে এ কথা বলা আমার উচিত যে, এমনও অনেক জমীদার আছেন, যাঁহারা ন্যায্য খাজানা পাইলে নিজেদের সৌভাগ্যবান্ মনে করেন। কিন্তু এখন দেখিতেছি, প্রজাবর্গের আর এক ভীষণ বিপদ উপস্থিত। যাহারা তাঁহাদের স্বগ্রাম, এমন কি স্বশ্রেণী ও পাড়াপড়শীর মধ্যে গণ্য, তাহাদের মধ্যে অনেকে এখন প্রকৃতপক্ষে তাঁহাদের প্রধান শত্রু হইয়া দাঁড়াইয়াছে। কোন কোন প্রজা, যাহারা একটু হিসাবী ও মিতব্যয়ী হইয়া একটু শ্রীমন্ত, তাহারা এখন তাহাদের প্রতিবেশীদিগকে এমন কড়া সুদে ও সর্ত্তে টাকা দাদন করিতেছে যে, বন্ধকী জমীজমা সমস্ত বিক্রী করিয়া সহজেই পাওনাদারের করতলস্থ হয় এবং এই জমী এক প্রকার খাস হইয়া তাহার বর্গাদাতা হিসাবে যে সমস্ত প্রজার সর্ত্ত উচ্ছেদ হইয়াছে, তাহাদের দ্বারা চাষ করায়, ফসল হইলে তাহার সুদে আসলে এবং চাষের খরচার বাবদ প্রায় সমস্ত ফসলই নিজ নিজ গোলায় তুলে। হতভাগ্য জোত্রহীন প্রজাগণ এ প্রকার দাসখত লিখিয়া এই বর্গাদাতাদিগের সম্পূর্ণ আয়ত্তাধীন। স্বতরাং দেখা যাইতেছে, সুদূরের জমীদার অপেক্ষা এই বর্গাদাতাগণই ভীষণ অত্যাচারী। ইহাদের কবল হইতে প্রজাসাধারণকে রক্ষা করা নিতান্ত দরকার।

 এই ব্যাধির মূল নিরাকরণ করিতে হইলে লোকশিক্ষা জনসাধারণের মধ্যে প্রচার হওয়া দরকার। ইহারা হিতাহিতজ্ঞানবিবর্জ্জিত; ফসল হইলেই কি করিয়া উৎপন্ন কৃষিজাত দ্রব্য বিক্রয় করিয়া টাকা উড়াইয়া দিবে, সে জন্য ব্যতিবস্ত হইয়া পড়ে। বাজারে ৩ গুণ চতুর্গুণ দরে মাছ কিনিবে; তাহার পর চোখের তৃপ্তিকর ‘দেখনাই’ বিলাতী মাল-কিনিবার জন্য পাগল হইয়া উঠে; এমন কি, সাইকেল, কলের গান বাদ পড়ে না। আবার একবার অজন্মা হইলেই দিশেহারা হইয়া এই সমস্ত বিলাসদ্রব্য নামমাত্র মূল্যে বেচিয়া ফেলে। তাহার পর বৃটিশ রাজত্বের প্রারম্ভ হইতেই মামলা-মোকর্দ্দমায় দেশ উচ্ছন্ন হইল; এখন প্রজাবর্গের মধ্যেও এই মামলাস্পৃহা বলবতী হইতেছে। আবার দেখা যায়, একটু ভাল ফসল হইলেই মোকর্দ্দমার সংখ্যা বেজায় বাড়ে; বৃটিশ রাজত্বের পূর্ব্বে জমীদারই নিজ নিজ অধিকারে সমস্ত মামলা নিষ্পত্তি করিতেন এবং গ্রামে পঞ্চায়েত কর্ত্তৃক সালিশী বিচারে অনেক বিবাদ-বিসংবাদ মিটিয়া যাইত। কিন্তু এখন সে সমস্ত প্রাচীন সনাতন প্রথা লোপ পাইয়াছে। গভর্ণমেণ্টেরও যত কোর্ট-ফি বাড়ে, ততই সুবিধা। রাজনৈতিক আন্দোলনকারীর মধ্যে আমাদের দেশে ব্যবহারাজীবিগণই শীর্ষস্থান অধিকার করিয়া আছে। মামলা-মোকর্দ্দমা কমিলে উকীল, ব্যারিষ্টার, মোক্তার, টাউট প্রভৃত্তির অন্ন যাইবে। স্বতরাং তাঁহারা স্বার্থের মূলে কুঠারাঘাত করিবেন কেন? পূর্ব্বে গ্রামের মাতব্বর বা পঞ্চায়েৎ বিবাদী বিষয় নখদর্পণের মত দেখিতেন; স্বতরাং অতি সহজেই ন্যায্যবিচার হইত। এখন মিথ্যা, প্রবঞ্চনা, ধাপ্পা দিয়া আদালতের চোখে ধূলা দেওয়াই প্রধান উপায়। এই জন্য প্রবল পক্ষেরই জয়। যে দুর্ব্বল, বৃটিশ-আদালতে তাহার সুবিচার আশা করা বৃথা। এক দিকে কোর্ট-ফি, উকীলের ফি, মূলতুবীর পর মূলতুবী, নিম্ন আদালত হইতে উচ্চ আদালত, আবার উচ্চ হইতে উচ্চতর বিচারালয়-এই প্রকারে এক একটা মোকর্দ্দমা বছরের পর বছর চলিতে থাকে। ইহাতে বাদী প্রতিবাদী উভয়েই সর্ব্বস্বান্ত হয়। মুসলমান বাদশাহের সময়েও দীনদুঃখী সাক্ষাৎভাবে আসিয়া আবেদন-নিবেদন করিতে পারিত। কাবুলের বর্ত্তমান আমীর আসানুল্লা খাঁ পূর্ব্বকার এই প্রথার অনুবর্ত্তী হইয়া বিচারপ্রার্থী দরিদ্র প্রজাদের দুঃখের কাহিনী শুনানীর জন্য সপ্তাহে সপ্তাহে এক দিন নিদিষ্ট করিয়া দিয়াছেন। কিন্তু আমাদের দয়ার্দ্রচিত্ত গভর্ণমেণ্ট কোর্ট-ফি ভিন্ন কাহারও আবেদন গ্রাহ্য করেন না।

 ৫০।৬০ বৎসর পূর্বে গ্রামে গ্রামে গোয়াল-পোনা গরু থাকিত। গোচারণেরও অনেক মাঠ ছিল এবং বর্ষাকালে গরুর খাদ্যোপযোগী যথেষ্ট পল, বিচালী সংগ্রহ থাকিত। এখন পাটের চাষ বাহুল্য হওয়ায় এবং সকল শ্রেণীর একমাত্র উপজীব্য কৃষি হওয়ায় সমস্ত গোচারণের মাঠ ঘেরাও হইয়াছে। এখন আর ধর্ম্মের ষাঁড় দেখা যায় না। উপযুক্ত বৃষের অভাবে গোজাতি দিন দিন অবনতি প্রাপ্ত হইতেছে। গোজাতি যেমন আকারে খর্ব, তেমনই অস্থিকঙ্কালসার। খুলনা সহরে বর্ষাকালে টাকায় দেড় সের দুই সের দুধ, তাহাও মিলা ভার। পাড়াগাঁয়ে অনেক সময় টাকায় ৩৪ সের দুধ, তাহাও আবার দুষ্প্রাপ্য। ফল কথা, দুধের অভাবে শিশু সন্তান পুষ্টিলাভ করিতে পারে না এবং বাঙ্গালী জাতি ক্রমশঃই হীনবীর্য্য হইয়া পড়িতেছে।

 যাহা হউক, আর পল্লীগ্রামের দুর্দশার কাহিনী বিবৃত করিয়া আপনাদিগের ধৈর্য্যচ্যুতি করিতে চাহি না। সকলের অপেক্ষা দুঃখের বিষয় এই যে, আমরা সংঘবদ্ধ হইয়া কোন কার্য করিতে পারি না। দেশের যাহা কিছু অভাব-অভিযোগ, দুর্দ্দশা, তাহার বিমোচনের জন্য আমরা হাঁ করিয়া গভর্ণমেন্টের দিকে তাকাইয়া থাকি। হয় গভর্ণমেন্ট, না হয় বিধাতাপুরুষ আমাদের সমস্ত অভাব কুলাইয়া দিবেন। আমরা নিজে কিছু করিব না; হাত-পা গুটাইয়া বসিয়া থাকিব। জলকষ্ট? ডিষ্ট্রীক্ট বোর্ডের ঘাড়ে সমস্ত ভার চাপাইয়া দিব, কিন্তু ভুলিয়া যাই যে, জিলাবোর্ডের আয় মাত্র ৪ লক্ষ টাকা। তাহা হইতে নিম্নশিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তা মেরামত প্রভৃতি বাদ দিলে অতি অল্প টাকাই থাকে। তাহা দ্বারা এই ১৪ লক্ষ লোকের অভাবমোচন কিছুতেই হইতে পারে না। পূর্ব্বেই বলিয়াছি, এই খুলনার অধিকাংশ স্থানই একফসলের দেশ; ৯ মাস যদি নিরবচ্ছিন্ন আলস্যে না কাটাইয়া আমরা ‘গাঁতা’ দিয়া কায করিতে আরম্ভ করি, তাহা হইলে যে কত শত শত পুষ্করিণীর ও দীঘির পঙ্কোদ্ধার হয়, তাহা বলা যায় না। ফল কথা এই উদ্দ্যমহীনতাই আমাদের সর্ব্বনাশের মূল হইয়াছে। আমরা সমস্তই বুঝি, কিন্তু কায করিবার ক্ষমতা নাই। আমরা কি প্রকার অলস ও উদ্যমহীন, তাহার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ দিতেছি। প্রায় পাঁচ সপ্তাহ হইল, বাগেরহাট কলেজের সন্নিকটে এক জন চাষী গৃহস্থের বাড়ীর সন্নিকটে দেড় কাঠা পরিমাণ একটি পুকুর দেখিলাম। আমার এক জন সঙ্গী দেখাইলেন যে, পুকুরটি কচুরীপানার চাপে বুজিয়া গিয়াছে। শুধু যে জল দূষিত হইতেছে, তাহা নহে, ইহাতে মাছও বাঁচিতে পারিবে না। প্রত্যেক দিন স্নানের সময় যদি কাস্তে হাতে করিয়া এক জন দুই জন মিলিয়া আধ ঘণ্টাকাল এই ধাপ কাটে, তাহা হইলে এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত পানা নির্ম্মূল হয়। কিন্তু এই “একফসলী” দেশে দিব্য হাত-পা কোলে করিয়া গৃহস্থ সুখে নিদ্রা যায়। ফলতঃ এ প্রকার উদ্যমহীন অলস জাতির পরিণাম বড়ই শোচনীয়।

 আমরা বছরের পর বছর প্রত্যক্ষ করিতেছি যে, খুলনা জিলায়, এমন কি, সমগ্র, বাঙ্গালায় হিন্দু-সমাজের মেরুদণ্ড ধোপা, নাপিত, কুমার, কামার প্রভৃতি শ্রেণী একেবারে লোপ পাইতেছে। কায়স্থ, ব্রাহ্মণ প্রভৃতি শ্রেণীর মধ্যে মেয়ের বিবাহ দেওয়া একটি দায়স্বরূপ হইয়াছে, উপরিল্লিখিত নিম্নশ্রেণীর মধ্যে অধিক পণে আবার কন্যা ক্রয় করিয়া বিবাহ করিতে হয়। কাজেই ৪০/৪৫ বছর বয়সে ২ শত হইতে ৪ শত টাকা পণে ৯/১০ বর্ষ বয়স্ক মেয়ে ক্রয় করিতে হয়। ইহারা অল্পদিন পরেই যুবতী বিধবা রাখিয়া ইহলোক হইতে বিদায় গ্রহণ করে। এই সমস্ত কারণে সমাজের কি বিষময় ফল হইতেছে, তাহা বলা যায় না; আর ইহাদিগেরই বা দোষ দিব কি? আমি গোষ্ঠীপতি মৌলিক, আমার বংশমর্য্যাদা রক্ষার জন্য আমাকে কুলীনকে কন্যাদান করিতে হইবে এবং কুলীনের মেয়ে ভিন্ন আমার বিবাহ করিবার সাধ্য নাই। অথচ এ প্রকার ব্যবস্থা মনু, যাজ্ঞবল্ক্য, এমন কি, রঘুনন্দনেও খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। তবে কেন এ শৃঙ্খল আমি পায়ে পরি? নৈতিক দুর্ব্বলতাই আমাদের সর্ব্বনাশের মূল। দৈহিক পক্ষাঘাত অপেক্ষা মানসিক পক্ষাঘাত আরও অধিকতর ক্ষতিকর; কিন্তু বুঝিয়া সুঝিয়াও আমাদের সমাজের নানাবিধ অনিষ্টকর প্রথা নিরাকরণ করিতে অগ্রসর হইতে পারি না। তাই বলিতেছি, এই মানসিক দুর্ব্বলতা পরিহার করিতেই হইবে,—যদি আমরা টিকিয়া থাকিতে চাই।

 পরিশেষে একটু আশার বাণী বলিয়া উপসংহার করব। এই সাতক্ষীরার সন্নিকটে অর্থাৎ আশাশুনি, বুধহাটা, মিত্র তেঁতুলিয়া প্রভৃতি কেন্দ্রে খুলনার দুর্ভিক্ষের পর হইতেই বাজিতপুরের আশ্রমের সেবকবৃন্দ কয়টি সেবাশ্রম খুলিয়াছেন। তাঁহারা অনুন্নত শ্রেণীর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাবিস্তারের চেষ্টা করিতেছেন এবং ম্যালেরিয়া, কলেরা, এমন কি গোমড়ক উপস্থিত হইলে যথাসাধ্য ঔষধ বিতরণ করিতেছেন এবং নিজেরা যাইয়া জীবনসংশয় করিয়া আর্ত্তের সেবা করিতে ক্রটি করেন না।

 খুলনার পরপারেও তাঁহারা আর একটি সুন্দর- সেবাশ্রম স্থাপন করিয়াছেন এবং নরনারায়ণের কল্যাণে আত্মোৎসর্গ করিয়াছেন।

 খালিলপুরের ত্যাগী অক্লান্তকর্ম্মী একনিষ্ঠ সাধক শ্রীযুত যামিনীভূষণ মিত্র খালিসপুরে আশ্রম খুলিয়া পার্শ্ববর্ত্তী অনেকগুলি গ্রামে চরকা চালাইতেছেন, এবং চরকার সূতার কাপড় সেই অঞ্চলে বুনাইয়া খদ্দর প্রস্তুত করিতেছেন। যাহাতে এই সদনুষ্ঠানগুলি বাঁচিয়া থাকিতে পারে তাহার জন্য খুলনাবাসিমাত্রেরই যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত। যদি অর্থাভাবে এই অনুষ্ঠানগুলি মুমূর্ষু অবস্থায় পতিত হয়, তাহা হইলে বড়ই গ্রানির বিষয় হইবে। মহেশ্বরপাশার একজন কৃতী সন্তান— শ্রীযুক্ত হরি চরণ ঘোষ —এই মহৎ উদ্দেশ্যে অনেক অর্থ-সাহায্য করিতেছেন। তিনি স্বগ্রামে যাহাতে এক হাজার চরকা নিয়মিত চলে, তাহার ব্যবস্থা করিতে সংকল্প করিয়াছেন। এই শ্রেণীর আশ্রম যতই নানা কেন্দ্রে স্থাপিত হয় এবং যাহাতে এই শ্রেণীর ত্যাগী যুবক দেশের, কল্যাণব্রতে জীবন সমর্পণ করিতে পারেন, তাহার জন্য বিশেষ চেষ্টা করিতে হইবে। পল্লীর ব্যথানিবারণের,এইগুলিই প্রকৃত ও প্রকৃষ্ট পন্থা।

সম্পূর্ণ!

  1. খুলনা জিলা সম্মিলনের সভাপতির অভিভাষণ, ২০শে জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৪ ।