আজকের আমেরিকা/গ্যাথো
গ্যাথো
আমাদের দেশে অনেকেই হয়ত গ্যাথো কথাটা মোটেই বুঝবেন না। যেখানে গরীব ইহুদীরা বসবাস করে থাকে, পোল্যাণ্ডের জমিদার এবং ধনীরা তাকেই শ্লেষ করে গ্যাথো বলত। পোল্যাণ্ড হতে অনেক লোক আমেরিকায় এসে বসবাস করছে। তাদের মাঝে ধনীও আছে দরিদ্রও আছে। যে সকল স্থানে আমেরিকার দরিদ্র লোক বসবাস করে, পোল্যাণ্ড হতে আগত ধনীরা সেই স্থানগুলিকে গ্যাথো নাম দেয়―পরে সেই কথাটি সর্বসাধারণ গ্রহণ করে। এখন আমি নিউইয়র্ক নগরীর একটি দরিদ্র পাড়ার কথা বলব যা গ্যাথো নামেই পরিচিত।
ভারতের কত লোক না খেয়ে মরে অথবা রোগে ভুগে মরে তার খবর অতি অল্প লোকই রাখে। কিন্তু গরমের সময় আমেরিকায় অতি গরমে কত লোক মারা গেল সেই সংবাদ রয়টার পৃথিবীর সর্বত্র প্রচার করতে কোনরূপ কসুর করেন না। আমি বুঝতাম না গরমে লোকে কি করে মরে। তাই আমেরিকায় এসে যখন শুনলাম ঐ ‘গৈবী ব্যামারী' নিউইয়র্কে দেখা দিয়েছে তখন আর স্থির থাকতে পারলাম না। ব্রডওয়ে ধরে গ্যাথোর দিকে চললাম। গ্যাথোতে থাকে দরিদ্র এবং বেকার। সেদিকে যেতে হলে একটি ভারতীয় ক্লাব পথে পড়ে। আমার ইচ্ছা হল গ্যাথো দেখবার পূর্বে ক্লাবের সদস্যদের সংগে একটু কথা কয়ে যাই। ক্লাবে গিয়ে যখন আমি বললাম আমেরিকার দরিদ্র পাড়াতে বেড়াতে চলেছি তখন তারা একটু আশ্চর্য হল। একজন আমাকে বল্ল সেখানে ভগবানের আশীর্বাদ পড়ে নি, সেখানকার লোক মহাপাপী। তারা মহাপাপী বলেই তাদের এই দুর্দশা। আমি কিন্তু তাদের কথায় মোটেই দমলাম না। কারণ আমি ভাল করে জানতাম দরিদ্রতা কোথা হতে এসেছে। তাই চললাম গ্যাথোর দিকে।
নিউইয়র্কের এবং আশপাশের ছোট ছোট শহর থেকে দরিদ্র লোক গ্যাথোতে এসে বাস করে। পথ ঘাট শহরের অন্যান্য স্থানেরই মত, তবে শহরের অন্যত্র এক-একটা কম্পার্টমেণ্টে যত লোক থাকতে পারে, এ পল্লীতে তার দ্বিগুণএরও বেশি লোক বাস করে। অকর্মণ্য হয়ে যাদের দিন কাটাতে হয় তাদের দিন যে কত কষ্টে কাটে, তা এই পাড়ার লোকরাই ভাল করে জানে।
যে স্থানের জলবায়ু ভাল, সেখানে থাকবার স্থানের অভাব হলেও লোকের ক্ষুধা হয়। ক্ষুধার জ্বালায় পথে পথে হাঁটতে হাঁটতে অনেকে সস্তা খাদ্য খায়। এতে ক্রমেই শরীর দুর্বল হয়। স্নানের অসুবিধা থাকায় অনেকে স্নান করতে পারে না। যদিও বাইরে গরম, তবুও জলের পাইপ খুললে যে জল আসে তা ভয়ানক ঠাণ্ডা। ঠাণ্ডা জলে স্নান করা শীতের দেশের লোক সহ্য করতে পারে না, তাই তারা বিনা স্নানেই থাকে। ক্রমাগত না খেয়ে, অভ্যাসবশে যখন পথে বেরোয়, তখন অনেক সময় তারা গরম সহ্য করতে পারে না। কাজেই পথে পড়ে যায় এবং দুর্বল হৃদ্যন্ত্র অনভ্যস্ত উত্তাপে সহজেই স্থির হয়ে যায়। একেই বলে ‘ড্রপ ডাউন’। এই ধরনের মরণ বড়লোকদের কাছে ঘেঁষে না, গরীবদেরই বিনাশ করে। সৌভাগ্য বলব কি দুর্ভাগ্য বলব জানি না, গ্যাথোয় গিয়ে তিনটি লোককে পথে পড়ে মরতে দেখেছিলাম। পুলিশ এসে তাদের পকেট পরীক্ষা করে একটি সেণ্টও বার করতে পারে নি; পেয়েছিল কতকগুলো মামুলী কাগজপত্র, বাইবেলের পাতা, স্যোসিঅ্যালিজ্ম সম্বন্ধে ছোট দু-একটা পুস্তিকা ইত্যাদি। বিকালের সংবাদপত্রে বেরুল―গ্যাথোয় আজ তিনজন লোক ‘হীট ওয়েভ’ সহ্য করতে না পেরে মারা গেছে। দারিদ্র্যের জন্য, না খেতে পেয়ে দুর্বল হয়ে মারা গেছে, একথা কেউ বলল না। যেখানে মুদ্রাযন্ত্রের স্বাধীনতা সর্ববিদিত, যেখানে ডিমক্রেসির পূর্ণ প্রভাব বর্তমান বলে কথিত, সখানেও মুদ্রাযন্ত্র অবলীলাক্রমে গরীবের কথা ভুলে যায়।
আমার ধারণা ছিল পৃথিবীর সকল ইহুদীই সুখী এবং ধনী। গ্যাথোতে এসে আমার সে ধারণা ভেংগে গেল। দরিদ্র ইহুদীর দল বেঁচে থাকবার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করছে, কিন্তু ব্যবসায়ে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাদের মেরুদণ্ড ভেংগে দিচ্ছে। গ্যাথোতে সারাদিন কাটিয়ে ঘরে ফিরে গিয়ে অনেকক্ষণ বিশ্রাম করে ফের বিকাল দশটার সময় গ্যাথোতে ফিরে এলাম। ভদ্রলোকরা সাধারণত যে সময়ে হারলামে আসেন আরাম করতে, আমি গোলাম সে সময়ে গ্যাথোতে দরিদ্রের দীর্ঘ নিঃশ্বাসের উগ্রতা হৃদয়ংগম করতে।
তখনও রাত হয়নি, সবেমাত্র দশটা বেজেছে। দরিদ্রের ছেলেময়েরা সারাদিন পথে বেড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে তথাকথিত এপার্টমেণ্টএ ফিরে চলেছে। অল্পাহারে ও পরিশ্রমে কেউ বা কাতর, কেউ বা প্রায় অর্ধমৃত। খৃষ্টধর্ম প্রচারকরা আমেরিকার জাতীয় পতাকা টাংগিয়ে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে পাপীদের পরিত্রাণার্থে ডাকছে; কিন্তু খেয়ে বাঁচবার জন্য কেউ একটা পয়সাও নিরন্নদের দিচ্ছে না। কেউ দাঁড়িয়ে শুনছে, কেউ বা কান না দিয়েই চলে যাচ্ছে। ছেলেতে ছেলেতে মেয়েতে ময়েতে পথের উপর দাঁড়িয়ে বেশ বচসা চলেছে সামান্য এক টুকরা রুটির জন্য। পথের কাছে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ বৃদ্ধকে বলছে, “আজ আর কিছু খেতে পাইনি।” আমি নিগ্রো-বেশে পথে চলেছি তাই আমাকে কেউ কিছু বলছে না। মাত্র দুএকটা বলবান যুবক মাঝে মাঝে মুখের কাছে এসে বলছে, “এই, তোর কাছে সিগারেট আছে?” যখনই বলছি, “হে প্রভু আমিও যে একটি চাই, আপনার কাছে যদি অর্ধদগ্ধ সিগারেটের টুকরা থাকে তবে দয়া করে দিয়ে যান।” অমনি “দুঃখিত” বলে পাশ কাটিয়ে তারা চলে যাচ্ছিল।
ছোট ছোট কাফিখানায় সস্তা দরে কাফি বিক্রি হচ্ছে। এক পেয়ালা কাফি এবং একখানা মারগারিন মিশ্রিত রুটির টুকরা পাঁচ সেণ্টে বিক্রি হচ্ছে। ছোট ছোট মিষ্টির টুকরার দাম এক সেণ্ট। ছোট ছোট মিষ্টির দোকানে খুব ভিড়; ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা শৃঙ্খলা এবং ধৈর্য বজায় রেখে কি সুন্দর দাঁড়িয়ে আছে! এইসব দেখলে আমেরিকার শিক্ষাবিভাগকে ধন্যবাদ না জানিয়ে থাকা যায় না।
বেরিয়ে দেখলাম মিশনারীরা যেমন একদিকে দাঁড়িয়ে ভগবানের গুণ কীর্তন করছেন, একটু দূরে দাঁড়িয়ে নাস্তিকরাও তেমনি ভগবানের নিন্দা করছেন। আর একটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেলাম, ডিমোক্র্যাসির প্রশংসা করে উচ্চকণ্ঠে লেকচার চলেছে, তার কাছেই আর একদল লোক ডিমোক্র্যাসিকে হিপোক্র্যাসি বলে কমিউনিজ্মএর লেকচার দিচ্ছে। পূর্বেই বলেছি, গ্যাথো গরীবের স্থান। কমিউনিজ্ম এখানকার লোকের প্রাণের জিনিস; তবু, অন্যান্য বক্তাকে কেউ আক্রমণ করছে না। যার বক্তৃতা ভাল হচ্ছে তার বক্তৃতা লোকে নির্বাক হয়ে শুনছে। যার বক্তৃতা লোকের ভাল লাগছে না তার কাছে থেকে লোক চলে যাচ্ছে। এমনও দেখেছি, কোনও কোনও বক্তার সামনে একটিও লোক নাই তবুও বক্তৃতার বিরাম নাই। মাঝে মাঝে এরূপ বক্তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কখনও দেখতাম বক্তা একজন শ্রোতা পেয়েও সুখী। কিন্তু যখনই বলতাম, “কালো লোকের আবার ভগবান কি? আপনাদের মত শ্বেতকায়দের সেবা করা, আপনাদের কথা মেনে চলাই হল কালোদের ধর্ম। আপনারাই হলেন আমাদের ভগবান।” অমনি বক্তৃতার সমাপ্তি হয়ে যেত।
গ্যাথোতে বিজলী বাতি প্রজ্জ্বলিত হয়েছে। বাতির আলো পথই আলোকিত করেছে, কিন্তু অনেক বাড়িতে সিঁড়ি বেয়ে উঠা বড়ই কঠিন। বাল্ভ নষ্ট হয়েছিল, অর্থাভাবে তা আর কেনা হয়নি। অনেকগুলি রুমের অবস্থাও অনেকটা তাই। রুমগুলিতে আলো নাই, বাতাস নাই, তারপর রুমগুলি অপরিষ্কার। অনেকে বলেন স্থানীয় লোকের দোষেই এই এলাকার বাড়িগুলি অপরিষ্কার থাকে। শরীর যখন রুগ্ন থাকে, মন যদিও কাজ করতে চায় তখন কাজ করার ক্ষমতা থাকে না। এ অন্চলের লোক অর্থাভাবে অনেকেই রোগগ্রস্ত। সে রোগ আর কিছুই নয়, শুধু পেটের ক্ষুধা মাত্র। সে রোগের অবসান করার জন্য অনেকেই পাঁচ পেনীর কার্ল-মার্কস্ কিনে পাঠ করে, হয়ত পাঁচ পেনীর বইই একদিন গ্যাথোকে সকল রোগ হতে মুক্ত করবে।
একটি বিষয় এখানে দেখতে পাওয়া যায় যা বলতেও আমার মুখ শুকিয়ে আসে। ইংলণ্ড হতে যখন আমেরিকার দিকে রওয়ানা হয়েছিলাম তখন কতকগুলি নাবিক আমেরিকায় গিয়ে কে কি আনন্দ করবে তারই কথা বলে আনন্দ পেত। একজন নাবিক বলছিল সে ব্রন্জ গিয়ে ছুটির দিনগুলি কাটাবে। ব্রন্জ প্রকৃতপক্ষে আমেরিকার বিনা লাইসেন্সের প্রাইভেট বারবণিতাদের আড্ডা স্থল। যে দেশ পৃথিবীর ধনের মালিক সে দেশে যদি অর্থাভাবে যুবতীর শরীর বিক্রয় করে তাতে কার না দুঃখ হয়। একেই বলে পূঁজিবাদ। পূঁজিবাদীরা নিজেদের স্বার্থ বজায় রাখতে গিয়ে আপনজনের প্রতিও অত্যাচার করতে ছাড়ে না। এতক্ষণ আমি গ্যাথো বলেই সকল কথার অবসান করছিলাম। গ্যাথো হল পোল্যাণ্ডে। পোল্যাণ্ডের ধনী, জমিদার এবং শাসক শ্রেণীকে কে না জানে? বাংলা দেশের ধনী, জমিদার এবং উপশাসকদের সংগে পোল্যাণ্ডের সমূহ মিল আছে সেজন্যই পোল্যাণ্ডের কথা বাদ দিয়ে আমেরিকার কথা বলাই দরকার।
আজ যাকে গ্যাথো বলা হচ্ছে গতকল্য এই স্থানটুকুকেই ব্রন্জ বলা হ’ত। এখনও লোকে অফিসিয়েল মতে গ্যাথোকে ব্রন্জই বলে। ব্রন্জে ইহুদী থাকে না, খৃষ্টানও থাকে। এখানকার খৃষ্টানরাও দরিদ্র। খৃষ্টান যুবতীরাও এখানে শরীর বিক্রী করতে বাধ্য হয়। ফাদার হফ্কিন, ফাদার ডিভাইন তারা শুধু মুখে মুখেই লোক সেবা করছেন কিন্তু তাদের মস্তিষ্ক এতই উর্বর যে, কি করে এই জঘন্য বারবনিতাবৃত্তি ব্রন্জ হতে লোপ পায় তার ব্যবস্থা করতে অসমর্থ। এখানে ইহুদীরা দরিদ্রতা সংগে করে নিয়ে আসেনি যাতে করে তাদের দোষ দেওয়া যেতে পারে। ইহুদীরা এখানে আসার পূর্বে খৃষ্টানরাই এখানে বাস করত, তবে কেন এদের এই দুর্দশা? এই দুর্দশার জন্য আমেরিকার ধনীরাই দায়ী।
ব্রন্জ হতে ফিরে আসতে অনেক রাত হয়েছিল। তবুও ইচ্ছা হছিল আরও দেখি। আরও লোকের সংস্পর্শে আসি। কিন্তু ঠাওর করে উঠতে পারছিলাম না কোনটা দেখতে হবে, কোন বিষয়টা জানতে হবে। টাইম্স্ স্কোয়ার কাছেই। টাইম্স্ স্কোয়ারটা দেখে আসবার ইচ্ছা হল। সেদিকে একটু বেড়াবার পর এক জন পূর্তরীকোবাসীর সংগে দেখা হয়। লোকটি বেশ বিদ্বান্ এবং বুদ্ধিমান। তাকে নিয়ে সোজা ঘরে চলে আসলাম এবং পুর্তরীকোতে আমেরিকানরা কেমন শাসন চালাচ্ছে তারই কথা জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম।
পুর্তরীকোবাসিন্দা ভদ্রলোককে দেখতে অনেকটা বাংগালীর মতই দেখায়, তবে তাঁর চুল অনেকটা নিগ্রোদের মত। তিনি নিজেই বললো “যদিও আমার শরীরের গঠন অনেকটা আপনার মতই, তবুও মাথার চুল নিগ্রোদের মতই রয়ে গেছে। আসলে আমি নিগ্রোই। আমার পূর্বপুরুষ এদিকের বাসিন্দা নন, তাঁরা কেনা গোলাম ছিলেন এবং তাঁদের আনা হয়েছিল আফ্রিকা হতে। আমার শরীরে নানা রকমের রক্ত আছে যেমন স্পেনিশ্, ইণ্ডিয়ান এবং নিগ্রো। লোকটির সরলতা আমাকে মোহিত করেছিল। তিনি বলেছিলেন, স্পেনিশ্ রাজত্বের সময় তাদের ভয়ানক দুর্দিন ছিল। আমেরিকানরা যেদিন হতে তাঁদের দেশে পদার্পণ করেছে সেদিন হতেই তাঁদের উন্নতি আরম্ভ হয়েছিল। এখন তারা বেশ সুখেই আছেন।
তিনি দুঃখ করে বললেন কতকগুলি বিদেশী লোক তাদের স্বাধীনতার জন্য চিৎকার করছে। এই চিৎকারের সংগে সুর মিলিয়ে কতকগুলি আমেরিকানও বলছে পুর্তরীকোদের স্বাধীন করে দিয়ে আমেরিকার সংগে সকল রকমের সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন করা হউক। অনেকে আবার পুর্তরীকোর সংগে হিন্দুস্থানেরও তুলনা করে। তারা বলে ভারতবর্ষ যদি বৃটিশ শাসন হতে মুক্তি পাবার জন্য আন্দোলন চালাতে পারে তবে পুর্তরীকোও সেরূপ মুক্তি সংগ্রাম চালাবার যোগ্য। আমি পুর্তরীকো ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করলাম আপনারা কি স্বাধীনতা চান না? ভদ্রলোক হেসে বললেন “না মহাশয়, আমরা স্বাধীনতা চাই না। আমেরিকানরা যদি আমাদের কাছ থেকে স্বাধীনতা চায় তবে তা আমরা দেব না।”
পুর্তরীকো পুরাতন একটি দ্বীপ। দ্বীপের আদিম অধিবাসীরা অনেক বৎসর ধরে পর্তুগীজ এবং স্পেনিশ্দের সংগে লড়াই করে একেবারে নির্মূল হয়। পরে এই দ্বীপে নিগ্রোদের আগমন হয়। নিগ্রোরা পর্তুগীজ এবং স্পেনিশ্দের গোলাম ছিল। নিগ্রোদের দ্বারা সকল কাজ হ’ত না বলে ইণ্ডিয়ানদের আমদানী করা হয়। স্পেনিশ্রা পুর্তরীকো দ্বীপের উন্নিত অতি অল্পই করেছিলো; পরে আমেরিকানরা যখন এই দ্বীপটি দখল করল তখন দাসব্যবসা একদম উঠিয়ে দিয়ে আমাদের সমূহ উন্নতি করতে থাকে। পুর্তরীকো পার্বত্যদেশ। এদেশে জমির বড়ই অভাব। আমরা আমেরিকার গমের উপরই নির্ভর করি। আমাদের লোকবল নাই এবং যা আছে তাদের শিক্ষাও তেমন নাই যাতে করে আমরা আমেরিকাকে ছেড়ে দিয়ে একদিনও টিকতে পারি।
আমাদের দ্বীপে যে সকল আমাদের কাজ করে তাদের মাইনের সংগে আমাদের মাইনের কোন প্রভেদ নাই। আমরা যখন আমেরিকায় আসি তখন আমেরিকানদের সংগে থাকতে পাই, যা স্থানীয় নিগ্রোরা পায় না। আমেরিকার বাইরে থেকে যদি কেউ আমেরিকানদের সমান মজুরী পায় তবে আমরা পাই এবং ফিলিপাইনোরাও পায়। ফিলিপাইনোরা স্বাধীন হবার উপযুক্ত কারণ তাদের লোকবল, এবং তাদের দেশের মাটির নীচে এবং উপরে দরকারী জিনিস পাওয়া যায়। আমাদের দেশে আম, কাঁটাল ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। শুধু আম কাঁটাল বিক্রি করে কি আমরা বাঁচতে পারি? আমরা আমেরিকার ঘাড়ে উঠে বসেছি, কোন মতেই আমরা আমেরিকার ঘাড় হতে নামব না। আমেরিকার অসৎ লোক গলা ফাটিয়ে চিৎকার করুক, তাদের কথা কে শুনে?
বাস্তবিক পুর্তরীকো দ্বীপ হতে আমেরিকার কোন লাভই হয় না। পিমীর এবং স্কট্রা নামক দ্বীপ দুটি রক্ষা করার জন্য বৃটিশ সরকার যেমন বিনা দ্বিধায় টাকা খরচ করেন, তেমনি আমেরিকাও পুর্তরীকো দ্বীপটির রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হল। আসলে পুর্তরীকো দ্বীপ কখনও একটি ব্যবসায়ের স্থান হবে না।
পুর্তরীকো ভদ্রলোক সে রাতটি আমারই সংগে কাটিয়ে পরের দিন হতে আমার ঘরে রীতিমত আসতে থাকেন এবং তাঁর সাহায্যে আমি আমেরিকার অনেক কথা জানতে সক্ষম হয়েছিলাম। এই পুর্তরীকো ভদ্রলোক আমেরিকার প্রায় দেশই ভাল করে বেড়িয়েছেন। একদিন তাকে “হিন্দু আমেরিকা” সম্বন্ধে কতগুলি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলাম। উত্তরে বলেছিলেন হিন্দুদের সম্বন্ধে তিনি কিছুই জানেন না, তবে আরব সভ্যতা সম্বন্ধে তার বেশ অভিজ্ঞতা আছে। ঘটনাক্রমে তিনি টানজিয়ার্স হয়ে স্পেনে যান এবং সেখান থেকে দেশে ফিরে আসেন। স্পেনের সংগে আরব সভ্যতার সমূহ সম্বন্ধ রয়েছে এবং স্পেনিশ সভ্যতাই দক্ষিণ আমেরিকার সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়।
নিউইয়র্ক হতে বিদায়ের পূর্বে একটা ছোট কাফেতে কয়েকজন লোকের সামনে বসে হঠাৎ কি একটা কথা বলেছিলাম। সেখানে ছিলেন রকফেলার বিল্ডিংএর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর। আমাকে তিনি তাদের বিল্ডিং সম্বন্ধে কতকগুলি প্রশ্ন করেন। আমি তার উত্তর আমার মতেই দিয়েছিলাম। অনেকের ধারণা বড় বড় বিল্ডিংএর ভারে নিউইয়র্ক ডুবে যাবে। আমি বলেছিলাম, “হাঁ সেরূপ ধারণা করার মত লোক পৃথিবীতে অনেক আছে তবে আমি সেরূপ হিন্দু নই। শক্ত ‘বটম’ (পাথর) যথায় উপরে ভেসে উঠেছে এবং যথায় গ্রেনেট হাতুড়ি দিয়েও ভাংগা যায় না সে স্থানে অট্টালিকার ভারে নগর ডুবে যাবে তা বাতুলই বলতে পারে।” বোধ হয় ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মহাশয় সাধারণ লোকের কাছ থেকে এরূপ কথা শুনেননি। তাই আমাকে তাঁর বাড়ি দেখতে নিমন্ত্রন করেন। পরের দিন যখন রকফেলার বিল্ডিং দেখতে গেলাম তখন দর্শকরূপে অনেক লোক তথায় হাজির ছিল। একটি একটি করে অনেক রুম দেখান হল। যখনই আমাকে কোন প্রশ্ন করা হচ্ছিল আমি হাঁ হুঁ করেই জবাব দিচ্ছিলাম। ম্যানেজিং ডাইরেক্টর বললেন, “এরূপ বিল্ডিং দেখে আপনার মন যেন উঠ্ছে না বলে মনে হয়, তার কারণ কি?” আমি বললাম, “দেখার মত এমন কিছু এখনও চোখে পড়েনি, যার উপর কোন মন্তব্য করা চলে। কংক্রিট, কাঁচ, লোহা, টিন―এর বেশি এখনও কিছুই দেখিনি।” তখন তিনি আমাকে ঘরের দরজার সামনেকার কয়েকখানা পাথর দেখালেন।
আমি পাথর সম্বন্ধে কিছু জান্তাম। তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, “এই পাথর কখানা যদি পাইরাইটিশ হয় তবে তার ওজন কত হবে?” আমি বললাম, “পাইরাইটিশ গলান যায় কিনা তা আমি জানি না এবং যদি গলান সম্ভব হয় তবে প্রত্যেক খানার ওজন পন্চাশ হতে ষাট টন হবে।” আমার জবাব শুনে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর বুঝলেন, আমি একমাত্র মাটির উপর ঘুরেই সন্তুষ্ট হইনি, মাটির নীচের সংবাদও কিছু রাখি। একটুকু বাজিয়ে দেখে আমাকে তাঁদের রেডিও সিটিতে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনাদের দেশে কতগুলি ভাষার সাহায্যে লোকে কথা বলে?” বুঝতে পারলাম, আমি যা বলব তাই অম্নি ব্রডকাষ্ট হবে। জবাব দিলাম, “ভারতে বর্তমানে একটি মাত্র ভাষা, যা প্রায় সকলেই বুঝে।”
“তার নাম কি?”
“হিন্দুস্থানী।”
“শুন্তে পাই ভারতে প্রায় শ’খানেক ভাষা আছে?”
“আমিও শুনেছিলাম, আমেরিকায় সবাই মিলিয়োনিয়ার।”
“তবে কি কথাটা প্রপেগেণ্ডা?”
“অনেকটা তাই।”
“আপনার জানামতে অন্য কোন ভাষা ভারতে প্রচলিত আছে কি?”
“হাঁ।”
“তার নাম কি?”
“তামিল।”
“হিন্দুস্থানী এবং তামিল ভাষার মাঝে প্রভেদ কি?”
“দুটি ভাষা দুটি মূল হতে বের হয়েছে।”
“তামিলরা হিন্দুস্থানী বুঝে?”
“পূর্বে বেশ ভালই বুঝত, মাঝে ইংলিশ ভাষা শিখতে গিয়ে হিন্দুস্থানী ভুলে যায়, এখন তারা আবার পূর্বস্মৃতি জাগিয়ে তুলছে।”
“অন্য তিনজন ভারতীয় পর্যটক বলেছেন যে ভারতে অন্তত পন্চাশটি ভাষা বিদ্যমান।”
“আমি বলি আমেরিকায় সত্তরটি ভাষার প্রচলন আছে, সে সম্বন্ধে আপনি কি বলতে চান?”
“আমি বলব মিথ্যা কথা।”
“আমি বলছি সত্য কথা। ঐ দেখুন গ্রীক্, শ্লাভ, ইতালীয়ানো, জার্মান, ফ্রেন্চ, পর্তুগীজ, স্পেনিশ ভাষায় সংবাদপত্র রয়েছে, তবুও বলতে চান আমি মিথ্যা বলছি? তারপর মেডিটেরিনিয়ান্বাসীদের মধ্যে কত ভাষার প্রচলন আছে তা যদি দেখতে চান তবে চলুন ২০ নম্বর স্ট্রীটে। এসকল ভাষা তো কতকগুলি লোকের মাঝে সীমাবদ্ধ। ঠিক সেরূপ ভারতেও কতকগুলি ভাষা কতকগুলি লোকের মাঝে সীমাবদ্ধ, কিন্তু সকলেই বোঝে হিন্দুস্থানী। এখন বলুন এই সত্য সংবাদ দিবার জন্য আমাকে কত দিবেন এবং কতইবা মিথ্যা সংবাদ-বিক্রেতাদের দিয়েছেন?”
হঠাৎ চারদিক আলো করে বাতিগুলি জলে উঠল। হাজার লোকে বসে যেখানে থিয়েটার শুনে, প্রবেশমূল্য যেখানে সকলের পকেটে সকল সময় থাকে না, হলিউডের স্টাররা যেখানে কথা বলে ধন্য হয়, পৃথিবীর
সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং ইম্পেরিয়েল বিল্ডিং ছাড়া আর কারো সংগে যার তুলনা হয় না।―সেই বিল্ডিং দেখে নয়ন আমার সার্থক হল। আজ আমার পরিব্রাজক-জীবন ধন্য হল―ঠকি নাই বলে, লোভ করি নাই বলে, দেশকে বেচি নাই বলে, ছোট-খাট ভাব আমার হৃদয়ে স্থান পায় নাই বলে। আজ আমি আর নিউইয়র্ক-এ থাকতে চাই না। নিউইয়র্কবাসী তথা আমেরিকাবাসী জেনেছে, ভারতের প্রকৃত পর্যটক টাকায় বশ হয় না, কারু কাছে মাথা নত করে না।রকফেলার বিল্ডিং-এ বসবার স্থান যেমন করে করা হয়েছে পৃথিবীতে আর তেমনটি কোথাও নাই। বসবার স্থানটিকে ওডিটরিয়াম বলা হয়। পূর্বকালে এরূপ বসার স্থান গ্রীকরা ব্যবহার করত সেই ধরনে লসএন্জেলসে অলিম্পিয়া গড়া হয়েছে কিন্তু রকফেলার বিল্ডিংএ বসার স্থান অন্য ধরনের। এর তুলনা শুধু এরই সংগে হয়। আমাদের দেশের লেখকগণ দিল্লীর বাদসার মসনদের কথা বেশ করে বলে ধন্য হয়েছেন। দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের সাহিত্যিকগণ দেশ-দেশান্তর ভ্রমণ করতে যাননি। যদি দিল্লীর বাদসার মসনদের বর্ণনাকারিগণ চীন-সম্রাটের মসনদ দেখতেন তবে দিল্লীর বাদশাকে ফরগণা গ্রামের ফকিরই বলতেন, আর বলতেন ভারতবাসীও দরিদ্রের জাত। চীন সম্রাটের প্রাসাদ, মসনদ এসবের সংগে তুলনা করার মত এমন কোন মসনদ অথবা প্রাসাদ ভারতে গড়ে উঠেনি। তাজমহলের নাম এখানে মোটেই বলা চলে না।
বর্তমান সময়ের বিশ্ববিখ্যাত তাজমহল কি করে পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্যের একটি হয়েছিল। এখানে তা বক্তব্য বিষয় নয়। সময় আসলে তাজমহলের ‘আশ্চর্য’ জিনিসটুকু আপনি প্রকাশিত হবে।
পুর্তরীকো ভদ্রলোককে সংগে নিয়ে আরও অনেকগুলি বড় বড় অট্টালিকা দেখতে গিয়েছিলাম। অট্টালিকাগুলি দেখে বড়ই আনন্দ হয়েছিল। নিউইয়র্ক নগরের বড় বড় বিল্ডিংএর একটি বিজ্ঞপ্তি পত্র আছে। সেই বিজ্ঞপ্তি পত্র অনুযায়ী নিউইয়র্ক নগরের দ্রষ্টব্য স্থানগুলি ভবিষ্যতের পর্যটকগণ যদি দেখেন তবেই ভাল হবে কারণ বিজ্ঞপ্তি পত্রের অদল বদলও হতে পারে।
রেডিও সিটি দেখে মনে একটা কি ভাব হল তা বলতে পারি না। একদম রুমে এসে মিঃ ও মিসেস মুখার্জির কাছে পত্র লিখেই তা পোস্ট করলাম এবং সাইকেল বের করে ছোট ঝোলাটি কেরিয়ারে বেঁধে সটান চিকাগোর পথে এসে দাঁড়ালাম।
আজ আমি নিউইয়র্ক হতে বিদায় নিব।
চিকাগো নিউইয়র্ক হইতে অনেক দূরে। হাজার মাইল পথ চলে যাব কয়েক দিনের মাঝে ভেবে পথে বেরিয়েছিলাম কিন্তু আমার মনে হল না আমাকে একটি বৃহৎ সেতু পার হতে হবে। এরূপ সেতু পৃথিবীতে আর নাই বললেও চলে। উপর দিয়ে চলেছে এলিভেটর, তার নীচে চলেছে মোটরগাড়ির লহর। মিনিটে মিনিটে সেতুর নীচে ফেরী বোটগুলির চিমনিগুলি উপরের পথিকদের নাকমুখ ধোঁয়া দিয়ে কালো করে দিয়ে চলে যাচ্ছে। সে দৃশ্য অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখবার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু হল না, হতে পারে না। চলতে হবে, নতুবা পথ বন্ধ হয়ে যায়, ঘাড়ের উপর লোক এসে পড়ে। সেতু পার হয়ে গিয়ে একটা ফাঁকা স্থানে এসে চোখ ভরে নিউইয়র্ক নগরের রূপ দেখতে লাগলাম। নগরের পরিচিত বন্ধুদের বলে আসিনি কোথায় যাব। তাই কাছের একটি মোটর স্ট্যাণ্ড হতে ফোন করে বাড়িওয়ালীকে আমার পথের নির্দেশ দিয়ে জানলাম, “আজ যদি কেউ আমার সংগে সাক্ষাৎ করতে আসে, তবে জানাবেন আমি কোন্পথে গিয়েছি।” বাড়িওয়ালী আমাকে জানালেন যে, এরই মাঝে কয়জন লোক এসে চলে গেছে এবং বলে গেছে আবার তারা আসবে। বাড়িওয়ালীকে জানালাম, ওয়ার্ল্ড ফেয়ারের কাছেই কোথাও রাত্রি কাটাব, এবং ঠিকানা জানালে যেন বন্ধুবান্ধবদের তিনি জানিয়ে দেন। বাড়িওয়ালী গুডবাই বলে রিসিভারটা রেখে দিলেন। এতদিনের পরিচয় নিমেষে কেটে গেল। একেই বলে পথপ্রবাসের বন্ধুত্ব।
পুরাতনের সামনেই যদি নতুন কিছু থাকে তবে পুরাতনের জন্য আপশুষ করতে হয় না। আমার সামনে সবই নতুন। পাশের দৃশ্যটি নতুন। হাজার হাজার মোটরকার পার্ক করা রয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন বৃহৎ কতকগুলি কচ্ছপ রৌদ্রে আরাম করে বসে আছে। শুধু কি তাই? অগণিত নরনারী বিশ্বমেলা দেখার জন্য আগিয়ে চলেছে। তাদের দুদিকের ঘরগুলি তত সুন্দর নয়। দরিদ্র লোক সেই ঘরগুলিতে থাকে। তারা সকলেই কাজে চলে গেছে নতুবা এত নির্জনতা অনুভব হবে কেন? লোকাকীর্ণ পথের দুদিকের দৃশ্য মোটেই সুন্দর নয়। এ স্থান পূর্বে আমি এসে দেখে গিয়েছিলাম, সেজন্যই এই দরিদ্র বাসিন্দার প্রতি একটা সহানুভূতি আপনি মনে জেগে উঠছিল। এখানে হট্ কেইস পাওয়া যায় না, প্যরেজ এবং অন্যান্য সুখাদ্য এখানকার রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায় না, তার কারণ সকলে জানেনা। যারা জানে তারা সেকথা মুখ খুলে বলে না। বলবার উপায় নাই। আমেরিকার ভাড়াটে সাহিত্যিক মজুর শুধু ধনীদের মন যুগিয়েই প্রবন্ধ লেখে। যখনই এই সাহিত্যিক মজুরগণ বেঁকে বশে এবং তাঁদের মনমত লেখতে আরম্ভ করেন তখন দেখতে পান তাঁদের প্রবন্ধ আমেরিকার কোনও সংবাদপত্রে স্থান পায় না। আমেরিকানরা আমাদের মত অল্পে তুষ্ট হবার লোক নয়। তারা টাকা প্রচুর চায় কারণ খরচ এন্তাহার করতে বাধ্য হয়। আর যারা নিজকে সংযত করে চলে তারাই বিদ্রোহী অথবা কমিউনিষ্ট বলে পরিচিত হয়। আমেরিকায় বিদ্রোহী অথবা কমিউনিষ্ট রূপে পরিচিত হওয়া আরামের নয়। কাজ করার অধিকারে হতে বন্চিত করা হয়, সমাজের লোক মেলামেশা করতে চায় না, এর চেয়ে বিড়ম্বনা আর কি হতে পারে। সাম্যবাদের প্রথম শ্লোকেই বলা হয়েছে সকল রকমের মজুরকে তাদের গুণানুযায়ী কাজ দিতে হবে, আমেরিকার সরকার সেরূপ কোন আইন এখনও করতে পারেনি, তবে ১৯৩৯ সালের শেষ পর্যন্ত দেখেছি, যারাই কমিউনিষ্ট বলে পরিচয় দিয়েছে তাদের কাছ হতেই কাজ করার অধিকারের পরিচয় পত্র কেড়ে নিয়েছে। আমেরিকা সরকার কাউকে কাজ দেবেন বলে গ্যারেণ্টি দেন না বটে তবে যারাই উপযুক্ত বয়সে পদার্পণ করে তারাই কর্মক্ষম বলে একখানা সার্টিফিকেট নিতে বাধ্য হয়।