আজাদী সৈনিকের ডায়েরী/আজাদ হিন্দ, সঙ্ঘের কার্যপ্রণালী
২২শে ডিসেম্বর ১৯৪৩:
আজাদ হিন্দ্ গভর্ণমেণ্ট নেতাজীর নেতৃত্বে আশাতীতভাবে সংগঠিত হইয়াছে। ভারতীয়দের মধ্যে বালক বৃদ্ধ যুবা—স্ত্রী-পুরুষ সকলেরই মনে এক নূতন উদ্দীপনা—নূতন উৎসাহ জাগিয়াছে। লোকে এখন আর নিজেদের অরক্ষিত মনে করে না। জাপানী অধিকৃত অঞ্চলে অন্য সকল জাতি অপেক্ষা আমাদের খাতির বেশী। আজ সিঙ্গাপুর ও মালয়ে আমরা বুক ফুলাইয়া চলিতে পারি।
মালয়, পূর্ব্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ, বার্মা প্রভৃতি স্থানে যত ভারতবাসী আছে, সকলেরই সমর্থন ইহা লাভ করিয়াছে—সকলেই উৎসাহের সহিত সহযোগিতা করিতেছে। আজাদ হিন্দ্ সঙ্ঘের সভ্যসংখ্যা হইয়াছে প্রায় সাত লক্ষ। অসংখ্য শাখা স্থাপিত হইয়াছে।
শাখার সংখ্যা
বার্মায়—১০০
মালয়ে—৭০
শ্যাম—২৪
ইহা ব্যতীত পূর্ব্ব ভারতী দ্বীপপুঞ্জের জাভা, সুমাত্রা, বোর্নিও, সেলিবিস প্রভৃতি দ্বীপে, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জে, ইন্দোচীন, চীন, মাঞ্চকুয়ো প্রভৃতি স্থানে অসংখ্য শাখা রহিয়াছে।
ভারতবর্ষ আমাদের দেশ—কিন্তু রাষ্ট্র বিদেশীর কবলে। এখানে রাষ্ট্র গঠিত হইয়াছে প্রবাসী ভারতবাসীর মনের ভূমিতে; রাষ্ট্র আছে—দেশ নাই।
আজাদ হিন্দ্ গভর্ণমেণ্টের প্রজা প্রবাসী ভারতবাসী মাত্রেই। আমাদের রাষ্ট্রও গভর্ণমেণ্টের যাবতীয় কাজ করিতেছেন। ভারতীয়গণ তাহাদের ট্যাক্স দিতেছেন আজাদ হিন্দ্ গভর্ণমেণ্টকে—জাপানীদের নয়!
ইংরেজ যখন জাপানীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে, তখন দেশের মধ্যে এক ভীষণ বিশৃঙ্খলা উপস্থিত হইয়াছিল। লুণ্ঠন, অত্যাচার ও নরহত্যা অবাধে চলিয়াছিল—রক্ষা করিবার কেহ ছিল না। সেই সময় ভারতীয় স্বাধীনতা সঙ্ঘ ভারতবাসীদের রক্ষার জন্য অগ্রসর হইয়াছিল। তারপর নেতাজী যেদিন আসিলেন, সেদিন হইতে আমাদের মর্য্যাদা স্বাধীন দেশের প্রজার ন্যায়।
যুদ্ধের ফলে অনেক ভারতবাসী শ্রমিকের অবস্থা শোচনীয় হইয়াছিল। ভারতীয়দের মধ্যে ভিখারীর সংখ্যা অত্যন্ত বাড়িয়াছিল। ভিক্ষাও মিলিত না—অনেক লোক অনাহারে মারা গিয়াছিল। আজাদ হিন্দ্ গভর্ণমেণ্ট হইতে ইহাদের সাহায্যের ব্যবস্থা হইয়াছে। সিঙ্গাপুর ও কুয়ালা-লামপুরে খুব বড় সাহায্যকেন্দ্র খোলা হইয়াছে।
এখানে প্রত্যহ সহস্রাধিক নরনারীকে সাহায্য দেওয়া হয়। খাদ্য ছাড়া প্রয়োজন মত ঔষধ ও পথ্যও দিবার ব্যবস্থা আছে।
বেকার ও দুর্দ্দশাগ্রস্ত ভারতীয়গণ যাহাতে চাষ করিয়া অন্নসংস্থান করিতে পারে, এই উদ্দেশ্যে মালয়ে অনেকটা জায়গা লওয়া হইতেছে।
প্রবাসী ভারতীয়গণের পুত্রকন্যাগণের শিক্ষার যে ব্যবস্থা বৃটিশ আমলে ছিল, তাহা আর নাই। আজাদ হিন্দ্ গভর্ণমেণ্ট স্থানে স্থানে জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপন করিতেছেন।
প্রজাদের উন্নতি ও মঙ্গল বিধানই রাষ্ট্রের কর্ত্তব্য; আজাদ হিন্দ্ গভর্ণমেণ্ট সেই কর্ত্তব্য পালন করিতেছেন।