আজাদী সৈনিকের ডায়েরী/নেতাজীর শেষবাণী ও রেঙ্গুনত্যাগ

২৪শে এপ্রিল ১৯৪৫:

 আজ নেতাজী রেঙ্গুন পরিত্যাগ করিবেন। অনেকে বলিতেছে, এখনো আশা আছে—এটা সাময়িক বিপর্য্যয়। তাঁহার শেষ নির্দেশ বাণী প্রকাশিত হইয়াছে:

আজাদ হিন্দ ফৌজের অফিসার ও সৈনিকগণের প্রতি—

 ১৯৪৪ সালের ফেব্রুয়ারী হইতে যেখানে দাঁড়াইয়া আপনারা বীরের ন্যায় সংগ্রাম করিয়া চলিয়াছেন, গভীর মর্মবেদনা লইয়া ব্রহ্মদেশের সেই সংগ্রামক্ষেত্র হইতে আজ আমাকে বিদায় লইতে হইতেছে। ইম্ফল ও ব্রহ্মদেশে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হইয়া গেল। কিন্তু ইহা মাত্র সূচনা—বার বার আমাদের সেই চেষ্টায় ব্রতী হইতে হইবে। চিরদিন আমি আশা পোষণ করিয়াছি; তাই পরাজয় বরণ করিয়া লইতে পারিব না।

 ইম্ফলের সমতলক্ষেত্রে—আরাকানের জঙ্গল আর ব্রহ্মদেশে আপনারা শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিয়াছেন। আপনাদের মুক্তি সংগ্রামের এই বীরত্ব কাহিনী চিরদিনের জন্য ইতিহাসের পৃষ্ঠায় লিখিত থাকিবে।

 ইন্‌কিলাব জিন্দাবাদ!

আজাদ হিন্দ ফৌজ জিন্দাবাদ—জয় হিন্দ্

সুভাষচন্দ্র বসু

আজাদ হিন্দ্ ফৌজের সর্বাধিনায়ক

২১শে এপ্রিল ১৯৪৫

 ইংরেজ ও আমেরিকান বাহিনী দ্রুতগতিতে রেঙ্গুনের দিকে অগ্রসর হইয়া আসিতেছে। আমাদের সৈন্যদল তাহাদের দৃষ্টি এড়াইয়া শ্যামের অভিমুখে চলিয়াছে। নেতাজীও তাহাদের সহিত ব্যাঙ্ককে যাইবেন। সকলেরই ইচ্ছা নেতাজী এরোপ্লেনে যান। স্থলপথে যাত্রা নিরাপদ নয় এবং তাঁহার জীবন বিপন্ন হইবার সম্ভাবনা খুব বেশী। এরোপ্লেন প্রস্তুত; কিন্তু তিনি তাহাতে যাইতে সম্মত হইলেন না।

 নেতাজী বলিলেন—‘আমি আমার বীর সৈনিকদের বিপদের মুখে ফেলিয়া যাইতে পারি না। আমি তাহাদের সঙ্গেই থাকিব।’

 কয়েকজন বর্মী নেতা আসিয়াছেন তাঁহাকে বিদায় দিতে। সকলের মুখই বিমর্ষ। নেতাজি বলিলেন—‘আমাদের এই চেষ্টা ব্যর্থ হইতে পারে; কিন্তু ইহাতে দমিলে চলিবে না। আমরা আবার চেষ্টা কবিব। স্বাধীনতা আমাদের আসিবেই।’ সজল নয়নে তাঁহাকে বিদায় দিলাম।

 নেতাজি বলিয়াছেন—আবার তিনি আসিবেন—আমাদের সংগ্রামতো এই আরম্ভ। আমরা সেই দিনের প্রতীক্ষায় আছি। সে দিন কবে আসিবে—কে জানে!

সমাপ্ত