আজাদী সৈনিকের ডায়েরী/ভারত আক্রমণকালে নেতাজীর বাণী—দিল্লীর পথই স্বাধীনতার পথ

৪ঠা ফেব্রুয়ারী ১৯৪৪:

 এইবার যুদ্ধ আরম্ভ হইবে। আজ নেতাজী সেনাবাহিনীর উদ্দেশে যে বাণী দিয়াছেন তাহা মর্ম্মস্পর্শী। নেতাজীর বাণী পাঠ করিয়া শুনানো হইল।

 ‘দূরে, বহুদূরে— নদ নদী ছাড়াইয়া, অরণ্য পর্বত ছাড়াইয়া— ঐ আমাদের মাতৃভূমি! ঐ দেশে আমরা ফিরিয়া যাইতেছি। ঐ শোন! ভারত আমাদের ডাকিতেছে, ভারতের রাজধানী দিল্লী আমাদের ডাকিতেছে। আটত্রিশ কোটি দেশবাসী আমাদের আহ্বান করিতেছে—আত্মীয়েরা আত্মীয়দের ডাকিতেছে।

 ‘উঠ। নষ্ট করিবার মত সময় নাই। অস্ত্র হাতে নাও। দেখ, তোমার সম্মুখে স্বাধীনতার পথ রহিয়াছে। যে পথ আমাদের পূর্বগামীরা নির্মাণ করিয়া গিয়াছেন আমরা সেই পথ ধরিয়া অগ্রসর হইব। শত্রুসেনার মধ্য দিয়া পথ করিয়া লইব। ভগবান যদি চাহেন, আমরা শহীদের ন্যায় মৃত্যু বরণ করিব। যে পথ ধরিয়া আমাদের সেনাবাহিনী দিল্লীতে পৌছিবেন, শেষ শয্যা গ্রহণ করিবার সময় আমরা একবার সেই পথ চুম্বন করিয়া লইব।’

 ‘দিল্পীর পথই স্বাধীনতার পথ। চলো দিল্লী!’

 চোখের সামনে ভাসিয়া উঠিল, আমাদের মহীয়সী মাতৃভূমি—আরাকান্ য়োমা পর্বতশ্রেণী—চিন্দুইন নদী ছাড়াইয়া—নিবিড় অরণ্যের পরপারে। মনে হইল—এবার এই নির্ব্বাসিত জীবন শেষ হইবে— দেশে ফিরিব। বাড়ীর প্রতি একমাত্র আকর্ষণ—বৃদ্ধা মা। তিনি কি বাঁচিয়া আছেন?—নাই, একথা মন বলিতে চাহে না। দেশের জন্য আকুল আগ্রহ মনে জাগিয়াছে।

১১ই ফেব্রুয়ারি ১৯৪৪: মেইমিয়ো:

 আজ মেইমিয়োতে জরুরি কাগজপত্র লইয়া আসিয়াছি। মেইমিয়ো জাপানী বাহনীর একটি প্রধান ঘাঁটি। বার্মায় দুটি বড় ঘাঁটি—একটি রেঙ্গুনে, আর একটি মেইমিয়োতে।

 মেইমিও মান্দালয় লাসিও রেলওয়ে লাইনে একটি ষ্টেশন—রেঙ্গুন হইতে ৪২২ মাইল দূরে। শহরটি পাহাড়ের উপর—প্রায় ৩৫০০ ফিট উচ্চে। এককালে এখানে বার্মার লাট সাহেবের গ্রীষ্মাবাস ছিল। পুরাতন গভর্ণমেণ্টের বাড়ীগুলি এখন জাপানী সেনাবিভাগের ব্যবহারে আসিয়াছে। বৃটিশ আমলেও এখানে মিলিটারির বড় আস্তানা ছিল।

 সেণ্ট্ জোসেফ স্কুলের বাড়ীতে আমার থাকিবার স্থান হইয়াছিল।

 এখানে কর্ম ব্যস্ততার চিহ্ন খুব বেশী দেখা গেল। সম্ভবত ভারত আক্রমণের আয়োজন চলিতেছে।

 আমাদের উপর নির্দেশ ছিল উত্তর বার্মার জেনারেল অফিসার কম্যাণ্ডিং মোতাগুচির হাতে কাগজগুলি দিবার জন্য; কিন্তু তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ হইল না। তাঁহার সহকারী কাগজগুলি গ্রহণ করিলেন।