আজাদী সৈনিকের ডায়েরী/সুভাষচন্দ্র কর্ত্তৃক সর্বাধিনায়ক পদ গ্রহণ

২৫শে আগষ্ট ১৯৪৩

 আজ নেতাজী সুভাষচন্দ্র আজাদ্ হিন্দ্ ফৌজের সর্ব্বময় কর্ত্তৃত্ব গ্রহণ করিলেন। তাঁহাকে সিপা সালার নির্ব্বাচিত করা হইয়াছে।

 সর্ব্বাধিনায়কের পদ গ্রহণ করিয়া তিনি এক ঘোষণা করিয়াছেন। রেডিওতে সেই ঘোষণা শুনিলাম।

 ‘ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বার্থে আজ আমি আমাদের সৈন্যদের প্রত্যক্ষ পরিচালনার ভার গ্রহণ করিলাম। আমার পক্ষে ইহা আনন্দ ও গৌরবের বিষয়। ভারতের মুক্তিসেনার সেনাপতি হইবার অপেক্ষা বড় কোন সম্মান ভারতবাসীর পক্ষে থাকিতে পারে না।

 যে কার্য্যভার আমি গ্রহণ করিলাম তাহার গুরুত্ব সম্বন্ধে আমি সচেতন আছি। অবস্থা যতই কঠোর হউক না কেন, আপদে বিপদে সকল অবস্থায় কর্ত্তব্য সাধনের ক্ষমতা ভগবান যেন আমাকে দেন।

 আমি নিজেকে বিভিন্ন ধর্ম্মাবলম্বী ৩৮ কোটি ভাবতবাসীর সেবক বলিয়া মনে করি। আমার কর্ত্তব্য আমি এমনভাবে পালন করিব যাহাতে এই ৩৮ কোটি নরনারীর স্বার্থ আমার হাতে নিরাপদ থাকে এবং মাতৃভূমির অসন্ন মুক্তিসংগ্রামে স্বাধীন ভারত গভর্ণমেণ্ট প্রতিষ্ঠা ও ভারতের স্বাধীনতা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে স্থায়ী সৈন্যদল গঠনে প্রত্যেক ভারতবাসী আমার উপর পূর্ণ আস্থা রাখিতে পারেন। অবিমিশ্র জাতীয়তাবাদ, ন্যায়বিচার ও নিরপেক্ষতার উপর ভিত্তি করিয়াই ভারতের মুক্তি সেনা গঠিত হইতে পারে।

 ভারতমাতার মুক্তির জন্য আসন্ন সংগ্রামে, ৩৮ কোটি ভারতীয়ের শুভেচ্ছাভাজন গভর্ণমেণ্ট গঠনে এবং ভারতের স্বাধীনতা চিরদিন রক্ষার জন্য একটি স্থায়ী সেনাবাহিনী গঠনে আজাদ হিন্দ্ ফৌজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অভিনয় করিতে হইবে। আমরা যে সেনা বাহিনী গঠন করিব তাহার একমাত্র লক্ষ্য হইবে ভারতের স্বাধীনতা—ভারতের মুক্তির জন্য মন্ত্রের সাধন, কিংবা মৃত্যুবরণ। আমরা যখন দাঁড়াইব, দাঁড়াইব প্রস্তরের প্রাচীরের ন্যায়; আর যখন অগ্রসর হইব, তখন চলিব ষ্টিম রোলারের ন্যায়।

 আমাদের দায়িত্ব খুব সহজ নয়। যুদ্ধ দীর্ঘকাল চলিবে এবং খুবই কঠোর হইবে। আমাদের ন্যায়নিষ্ঠা ও দুর্ভেদ্যতার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রহিয়াছে। পৃথিবীর জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ ৩৮ কোটি মানবের স্বাধীন হইবার অধিকার নিশ্চয়ই আছে এবং স্বাধীনতার মূল্য দিতে তাহারা প্রস্তুত। আমাদের স্বাধীনতায় জন্মগত অধিকার হইতে বিচ্যুত করিতে পারে এমন কোন শক্তি পৃথিবীতে নাই।

 সহকর্মিগণ, অফিসার ও সৈনিকগণ! আপনাদের অকপট সমর্থন ও অনমনীয় অনুগত্যের দ্বারা আজাদ্ হিন্দ ফৌজ ভারতের মুক্তির যন্ত্রস্বরূপ হইবে। চূড়ান্ত জয় আমাদের হইবেই। আপনার বিশ্বাস করিতে পারেন যে আমাদের কার্য্য ইহার মধ্যেই আরম্ভ হইয়াছে।

 আসুন, আমরা ‘দিল্লী চলো’—এই ধ্বনি উত্থিত করিয়া সংগ্রাম আরম্ভ করি। যতদিন নূতন দিল্লীর বড়লাট প্রাসাদে আমাদের জাতীয় পতাকা না উড়ে-যতদিন ভারতের রাজধানীর ইতিহাস-প্রসিদ্ধ লাল কেল্লায় আজাদ হিন্দ ফৌজ তাহার বিজয় উৎসব না করে, ততদিন পর্য্যন্ত আমাদের সংগ্রামের বিরতি যেন না হয়।”