আনন্দমঠ (১৯৩৮)/পাঠভেদ
‘আনন্দমঠে’র বিভিন্ন সংস্করণের পাঠভেদ
‘আনন্দমঠ’ বঙ্কিমচন্দ্রের পরিণত বয়সের রচনা হইলেও প্রথম ও পরবর্ত্তী সংস্করণগুলিতে পরিবর্ত্তনের পরিমাণ সামান্য নয়। ঘটনা-সংস্থান ও ‘শান্তি’-চরিত্রের পরিবর্ত্তন বিশেষভাবে লক্ষণীয়। মত-পরিবর্ত্তনে বঙ্কিমচন্দ্রের দ্বিধা ছিল না; এ বিষয়ে ‘কৃষ্ণচরিত্রে’র দ্বিতীয় বারের বিজ্ঞাপনে তাঁহার উক্তি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলিতেছেন—
মত পরিবর্ত্তন স্বীকার করিতে আমি লজ্জা করি না। আমার জীবনে আমি অনেক বিষয়ে মতপরিবর্ত্তন করিয়াছি—কে না করে?—মতপরিবর্ত্তন, বয়োবৃদ্ধি, অনুসন্ধানের বিস্তার, এবং ভাবনার ফল। যাহার কখনও মত পরিবর্ত্তিত হয় না, তিনি হয় অভ্রান্ত দৈবজ্ঞানবিশিষ্ট, নয় বুদ্ধিহীন এবং জ্ঞানহীন।
‘আনন্দমঠ’ ১২৮৭ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসের ‘বঙ্গদর্শনে’ শুরু হইয়া ১২৮৯ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাসে সমাপ্ত হয়। বঙ্কিমের জীবিতকালে ইহার পাঁচটি সংস্করণ হইয়াছিল। ১ম—১২৮৯ বঙ্গাব্দ (১৮৮২), ২য়—১২৯০ বঙ্গাব্দ (১৮৮৩), ৩য়—১২৯২ বঙ্গাব্দ (১৮৮৬, এপ্রিল), ৪র্থ—ডিসেম্বর ১৮৮৬ খ্রীঃ এবং ৫ম—১৮৯২ খ্রীঃ। আমরা ১ম, ২য়, ৩য় ও ৫ম সংস্করণের পাঠ মিলাইয়া দেখিয়াছি। মূল পরিবর্ত্তন সম্বন্ধে তৃতীয় বারের বিজ্ঞাপন ও পঞ্চম বারের বিজ্ঞাপনে বঙ্কিমচন্দ্র স্বয়ং সংক্ষেপ বিবৃতি দিয়াছেন। প্রথম চারি সংস্করণে ‘আনন্দমঠে’র ঘটনাস্থল ছিল বীরভূম, অজয়ের তীরবর্ত্তী কোনও আরণ্য ও পার্ব্বত্য প্রদেশ; কিন্তু আসলে সন্ন্যাসী-বিদ্রোহ ঘটিয়াছিল উত্তর বঙ্গে। বঙ্কিমচন্দ্র তৃতীয় সংস্করণে এই ভুলের উল্লেখমাত্র করিয়াছেন, পরিবর্ত্তন করেন নাই। পঞ্চম সংস্করণে এই পরিবর্ত্তন করিবার চেষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র করিয়াছেন, কিন্তু সমগ্র গ্রন্থে বীরভূমের নদী, অরণ্য ও পর্ব্বত এমন ভাবে মিশিয়া ছিল যে, সামান্য কয়েকটা নাম তুলিয়া অথবা বদলাইয়া বীরভূমকে বরেন্দ্রভূম করা সম্ভব হয় নাই; বরেন্দ্রভূমিকে ছাপাইয়া বীরভূমিই ফুটিয়া উঠে। পঞ্চম সংস্করণে ‘শান্তিকে অপেক্ষাকৃত শান্ত করা’ হইয়াছে।
প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং পঞ্চম সংস্করণের প্রথম খণ্ড প্রথম পরিচ্ছেদে পাঠভেদ অতি সামান্য। কয়েক স্থলে মাত্র কয়েকটি শব্দ যোগ করা হইয়াছে, কিংবা কোন শব্দের বদলে অন্য শব্দ ব্যবহার করা হইয়াছে; আমরা সেগুলির উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন মনে করি। যে সকল স্থলে কোন বিশেষ পরিবর্ত্তন বা পাঠভেদ হইয়াছে, তাহাই উল্লেখ করা গেল।
প্রথম খণ্ড—প্রথম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৮—২য়, ৩য় ও ৬ষ্ঠ পংক্তির “সহরে” স্থলে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংস্করণে ঐ ঐ স্থলে “নগরে” আছে; এবং ২য় পংক্তির “নগরে” শব্দটি তারকা-চিহ্নিত করিয়া পাদটীকায় বলা হইয়াছে—
নগর বা রাজনগর— সাবেক বীরভূম রাজ্যের রাজধানী।
প্রথম খণ্ড—প্রথম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৮, ২য় পংক্তির “সহরে যাইও।”-র পর ১ম সংস্করণে ছিল—
নগরে মহেন্দ্রের পিতৃস্বসা বাস করেন।
প্রথম খণ্ড—প্রথম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৮, ৮ম পংক্তির গোড়ায় বাদ গিয়াছে—
“যদি তাহাই হইয়া থাকে, তবে”
প্রথম খণ্ড—প্রথম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৮, শেষ পংক্তি “কি হাতিয়ার লইবে?” কথাগুলির পর ১ম সংস্করণে ছিল—
এই বলিয়া মহেন্দ্র তাহার পাছু পাছু গৃহপ্রবেশ করিলেন। আসিয়া দেখিলেন, কল্যাণী একখানা রূপাবাঁধা ছোরা কোথা হইতে বাহির করিয়া আবার তাহা রাখিল। বলিল, “এ অস্ত্র স্ত্রীজাতির নয়।” এই বলিয়া আর কি খুঁজিতে লাগিল।
মহেন্দ্র বলিল, “আবার কি?”
কল্যাণী বলিল, “কিছু না।” এই বলিয়া
প্রথম খণ্ড—ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৬, ৯ম পংক্তির “গৃহত্যাগ করিয়া”-র পর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংস্করণে ছিল—
মুরশিদাবাদের পথে
প্রথম খণ্ড—ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৬, ১১শ পংক্তির “তাহা জানি।”-র পর প্রথম সংস্করণে ছিল—
সন্তানের একাজ নহে।
প্রথম খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৬, ২৪শ পংক্তির “নগরে” স্থলে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংস্করণে “রাজনগরে” আছে।
প্রথম খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৬, শেষ পংক্তির “সিপাহী চলিয়াছে।”-র পর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংস্করণে ছিল—
“রাজনগর, বা নগর” কি তাহা বুঝাইতে হইতেছে।
প্রথম খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৭, ১ম পংক্তির “বাঙ্গালা প্রদেশ” স্থলে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে আছে—
বীরভূম প্রভৃতি প্রদেশ
প্রথম খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৭, প্রথম অনুচ্ছেদের পর ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে নিম্নোক্ত অংশ ছিল—
বাঙ্গালার পক্ষে সাধারণ নিয়ম এই। কিন্তু বীরভূম প্রভৃতি প্রদেশ সম্বন্ধে একটু স্বতন্ত্র বন্দোবস্ত ছিল। বীরভূম প্রদেশ বীরভূমের রাজার অধীনে। রাজনগর বা নগর— তাঁহাদেরই রাজধানী। বীরভূমের রাজারা পূর্ব্বে স্বাধীন ছিলেন, সম্প্রতি মুরশিদাবাদের অধীন হইয়াছিলেন। পূর্ব্বে বীরভূমে হিন্দুরাই স্বাধীন রাজা ছিলেন। কিন্তু আধুনিক রাজবংশ মুসলমান। যে সময়ের কথা লিখিতেছি, তাহার পূর্ব্বে রাজ আলিনকি খাঁ বাহাদুর সিরাজ উদ্দৌলার সহায়তায় কিছু লম্বাই চৌড়াই করিয়া কলিকাতা লুটিয়া শাসিয়াছিলেন। তার পর ক্লাইবের পাদুকাস্পর্শে মুসলমানজন্ম সার্থক করিয়া, বেহেস্তে যাত্রা করিবার উন্মুখ হইয়াছিলেন।
প্রথম খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৭, ৮ম পংক্তির “অতএব বাঙ্গালার কর ইংরেজের প্রাপ্য।” স্থলে ১ম, ২য় ও তৃতীয় সংস্করণে ছিল—
বাঙ্গালার অন্যান্য অংশের ন্যায় বীরভূমের কর ইংরেজের প্রাপ্য।
প্রথম খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৭, ৮ম পংক্তির “কিন্তু শাসনের ভার নবাবের উপর।” স্থলে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংস্করণে ছিল—
কিন্তু শাসনের ভার বীরভূমের রাজার উপর।
প্রথম খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৭, ১০-১১শ পংক্তির “কিন্তু খাজানা আদায় হইয়া কলিকাতায় যায়।” এই অংশের পরিবর্ত্তে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে নিম্নলিখিত অংশ ছিল— বীরভূম প্রদেশে এ পর্য্যন্তও কালেক্টার নিযুক্ত হয় নাই। রাজাই ইংরেজের কর আদায় করিয়া কলিকাতায় পাঠাইয়া দিতেন।
অতএব বীরভূমের খাজনা কলিকাতায় যায়।
প্রথম খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৭, ১৬শ পংক্তির “একজন গোরা।” কথাগুলির পর ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে ছিল—
সে কোম্পানীর চাকর নহে। দেশীয় রাজগণের সৈন্যগণমধ্যে তখন অনেক গোরা অধ্যক্ষতা করিত।
প্রথম খণ্ড—অষ্টম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৮, দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের গোড়ায় ১ম, ২য় ও তৃতীয় সংস্করণে ছিল—
পাঠক এইস্থানে দিঙ্নিরূপণ করুন।
প্রথম খণ্ড—অষ্টম পরিচ্ছেদ। পৃ. ২০, ২য় পংক্তির গোড়ায় “আরও এক শালা ঐ।” এই কথা কয়টি প্রথম সংস্করণে ছিল না।
প্রথম খণ্ড—অষ্টম পরিচ্ছেদ। পৃ. ২০, ১৪শ পংক্তির “চতুষ্কোণ করিবার” স্থলে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে আছে—
লাইন ফরম করিবার
প্রথম খণ্ড—অষ্টম পরিচ্ছেদ। পৃ. ২০, ১৪শ পংক্তির “আজ্ঞা দিলেন।” কথাগুলির পর “ইংরেজের নেশা বিপদের সময় থাকে না।”—অংশটি প্রথম সংস্করণে ছিল না; পরবর্ত্তী সংস্করণগুলিতে ইহা যোজিত হইয়াছে।
প্রথম খণ্ড—নবম পরিচ্ছেদ। পৃ. ২১, ১৬শ পংক্তির “জমিদারের ছেলে···কাজের বেলা হনুমান্!” কথাগুলির পরিবর্ত্তে ১ম সংস্করণে ছিল—
তুমি কি কাপুরুষ যে যুদ্ধে ভয় পাও?
প্রথম খণ্ড—নবম পরিচ্ছেদ। পৃ: ২১, শেষ পংক্তির “এরা কি রকম দস্যু?” স্থলে ১ম সংস্করণে ছিল—
এরা দস্যু না দেবতা?
প্রথম খণ্ড—দশম পরিচ্ছেদ। পৃ. ২৩, ১৬শ পংক্তির “অবলা কেন মা এত বলে।” স্থলে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে ছিল—
কে বলে মা তুমি অবলে!
প্রথম খণ্ড—দশম পরিচ্ছেদ। পৃ. ২৪, ২৪শ পংক্তিতে “রাজার?” স্থলে প্রথম সংস্করণে ছিল—
রাজা বেটা কে?
প্রথম খণ্ড—দশম পরিচ্ছেদ। পৃ. ২৪, ২৬শ পংক্তির “যে রাজা রাজ্য···রাজা কি?” স্থলে ১ম সংস্করণে ছিল—
হিন্দুর রাজ্যে আবার মুসলমান রাজা কি?
প্রথম খণ্ড—দশম পরিচ্ছেদ। পৃ. ২৫, ৫ম পংক্তির “কেবল দুধ ঘির যম।” কথাগুলি ১ম সংস্করণে নাই।
প্রথম খণ্ড—দশম পরিচ্ছেদ। পৃ. ২৫, ১৩-১৪ পংক্তির “মুসলমান রাজা” স্থলে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে “রাজা” আছে।
প্রথম খণ্ড—দশম পরিচ্ছেদ। পৃ. ২৫, ২৩শ পংক্তির “অবলা কেন মা এত বলে।” স্থলে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে আছে—
কে বলে মা তুমি অবলে—
প্রথম খণ্ড—একাদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ২৮, ৬ষ্ঠ পংক্তির “বিষ্ণুর অঙ্কোপরি” স্থলে ১ম, ২য় ও তৃতীয় সংস্করণে আছে—
সর্ব্বোপরি, বিষ্ণুর মাথার উপরে উচ্চ মঞ্চে বহুল রত্নমণ্ডিত আসনোপবিষ্টা
প্রথম খণ্ড—দ্বাদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ৩১, ১০ম-১১শ পংক্তির “সন্ন্যাসী ঠাকুরদের সম্পত্তির মধ্যে কতকগুলি গাই ছিল।” এই কথাগুলি ১ম সংস্করণে নাই।
প্রথম খণ্ড—— ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ৪০, ৩য়-৬ষ্ঠ পংক্তিতে যে গানটি আছে, তাহা প্রথম সংস্করণে নিম্নলিখিতরূপ ছিল—
ধীরসমীরে, যমুনাতীরে,
বসতি বনে বনমালী।
প্রথম খণ্ড—পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ৪২, ১৬শ পংক্তির পর ১ম সংস্করণে ছিল—
“কুরু মম বচনং সত্বররচনং”—কি করিতে হইবে?
প্রথম খণ্ড—পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ৪২, ১৭শ পংক্তিতে “তটিনীতীরে” স্থলে ১ম সংস্করণে “যমুনাতীরে,” এবং ১৮শ পংক্তির “বরনারী’ স্থলে “বনমালী” ছিল।
প্রথম খণ্ড——পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ৪২, ১৯শ পংক্তির “আবার কোন মাগী না খেয়ে পড়িয়া” স্থলে ১ম সংস্করণে “কেহ” ছিল।
প্রথম খণ্ড—সপ্তদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ৫০, ২০শ পংক্তির “জ্ঞানানন্দনামা এক জন অতি তেজস্বী সন্তান” স্থলে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে “ধীরানন্দ” ছিল।
প্রথম খণ্ড——সপ্তদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ৫০, ২২শ পংক্তির “জ্ঞানানন্দ” স্থলে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে “ধীরানন্দ” ছিল।
প্রথম খণ্ড—সপ্তদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ৫১, ১ম পংক্তির “বাঙ্গালায় নাই।” স্থলে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে “বীরভূমে নাই।” ছিল।
প্রথম খণ্ড—সপ্তদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ৫১, ২য় পংক্তিতে “ধীরানন্দ তাঁহার পশ্চাদ্গামী হইয়াছেন জানি।” এই কথাগুলি ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে নাই।
প্রথম খণ্ড——অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ৫২, ১৭শ পংক্তি ও ২৫শ পংক্তির “জ্ঞানানন্দ” স্থলে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে “ভবানন্দ” আছে।
প্রথম খণ্ড—অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ৫২, ১৯শ পংক্তির এবং পৃ. ৫৩, ৬ষ্ঠ পংক্তির “নদীর জলে” স্থলে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে যথাক্রমে “অজয়ের জলে” ও “অজয়ে” আছে।
প্রথম খণ্ড—অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ৫৩, ২৫শ পংক্তির “তখন সত্যানন্দ বলিলেন,” হইতে পৃ. ৫৪ শেষ—“পলায়ন করিতে লাগিল।”—এই অংশের পরিবর্ত্তে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে আছে—
কিন্তু এই সকল কার্য্যে তাহাদের অধিক সময় নষ্ট হইল। ইত্যবসরে নগরের রাজা আসদুলজমান বাহাদুর নগরস্থ সৈন্য সকল সংগ্রহ করিলেন, এবং কামান, গোলা, বন্দুক লইয়া সন্তানসম্প্রদায়ের সম্মুখীন হইলেন। সন্তানদিগের অস্ত্র কেবল ঢাল তরবারি ও বল্লম। কামান, গোলা, বন্দুক দেখিয়া তাহারা কিছু ভীত হইল। তোপের মুখে অসংখ্য সন্তান মরিতে লাগিল। তখন সত্যানন্দ বলিলেন, “ফিরিয়া চল, অনর্থক বৈষ্ণববধে প্রয়োজন নাই।” তখন পরাজিত হইয়া সন্তানেরা ম্লানমুখে নগর ত্যাগ করিয়া পুনর্ব্বার জঙ্গলে প্রবেশ করিল।
অষ্টাদশ পরিচ্ছেদের পর প্রথম খণ্ড শেষ হইয়াছে; এবং ইহার পর ২য় খণ্ডের ১ম পরিচ্ছেদটি (পৃ. ৫৫-৫৯) যোজিত হইয়াছে।
দ্বিতীয় খণ্ড—দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। পৃ.৬০, ২৬শ পংক্তির “আচ্ছাদিত করিল।” —এই কথাগুলির পরে ১ম সংস্করণে ছিল—
কিন্তু কিছুই তো ঢাকিল না। সে হৃদয়ের অপূর্ব্ব গঠন-শোভা বস্ত্রের উপর হইতে সম্পূর্ণ অনুমেয় রহিল।
দ্বিতীয় খণ্ড—দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। পৃ. ৬১, ১ম-৪র্থ পংক্তির “কিন্তু পরিতে... রাখিল।” এই অংশের পরিবর্ত্তে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে ছিল—
চাঁদমুখখানি নবীন দাড়ি গোঁপে শোভা পাইতে লাগিল।
দ্বিতীয় খণ্ড—দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। পৃ. ৬১, ৫ম পংক্তি “আবৃত করিল।” কথাগুলিরপর ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে ছিল—
যদি কোন কবি সে রূপ দেখিত, তাহা হইলে এই নবীন “কৃষ্ণত্বচং গ্রন্থিমতীং দধানাকে” দেখিয়া এবার মন্মথের বিনাশ দূরে থাকুক, পুনরুজ্জীবনের শঙ্কা করিত।
দ্বিতীয় খণ্ড—দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। পৃ. ৬১, ৬ষ্ঠ পংক্তির “নিরীক্ষণ করিল।”-র পর ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে ছিল—
নিরীক্ষণ করিয়া কেহ কোথায় নাই নিশ্চিত বুঝিয়া, অতি গোপনে সংরক্ষিত একটি পেটিকা খুলিল। খুলিয়া তাহা হইতে একটি মোট বাহির করিল। মোট খুলিয়া তাহার ভিতর যাহা ছিল তাহা মাটির উপরে সাজাইল। কতকগুলি তুলটের পুথি। ভাবিল “এগুলি কি করি, সঙ্গে লইয়া গিয়া কি হইবে? এত বা বহিব কি প্রকারে? রাখিয়া গিয়াই বা কি হইবে? রাখারই বা আর প্রয়োজন কি—দেখিয়াছি জ্ঞানেতে আর সুখ নাই, ও ভস্মরাশিমাত্র—ও ভস্ম ভস্মই হোক।”—এই বলিয়া শান্তি সেই গ্রন্থগুলি একে একে জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ করিলেন। কাব্য, সাহিত্য, অলঙ্কার, ব্যাকরণ, আর কি কি তাহা এখন বলিতে পারি না, পুড়িয়া ভস্মাবশিষ্ট হইল।
দ্বিতীয় খণ্ড—দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। পৃ. ৬১, ৮ম পংক্তির “বনদেবীগণ” স্থলে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে “গ্রামবাসিগণ” আছে।
দ্বিতীয় খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৭১, ৬ষ্ঠ পংক্তির “চাহনি”-র পর ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে ছিল—
এ বুড়োর কাছে
দ্বিতীয় খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৭১, ২২শ পংক্তির “চারি জন” স্থলে ১ম, ২য় ও৩য় সংস্করণে “দুই জন” ছিল।
দ্বিতীয় খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৭১, ২৫শ পংক্তির “আর?” স্থলে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে “দ্বিতীয়?” আছে।
দ্বিতীয় খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৭১, ২৬শ পংক্তির “ভবানন্দ। জ্ঞানানন্দ।” এই দুইটি নাম ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে নাই।
দ্বিতীয় খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৭২, ৪র্থ পংক্তির “তাই বা কিসে? তুমি”— এই কথাগুলির পর ১ম সংস্করণে ছিল—
ভৈরবী নও, বৈষ্ণবী নও, তবে
দ্বিতীয় খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৭৩, ৬ষ্ঠ-৮ম পংক্তির “স্বামী যে ধর্ম্ম—পরীক্ষা করিয়া দেখি।” এই অংশের পরিবর্ত্তে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে নিম্নলিখিত অংশটি আছে—
স্বামীর ধর্ম্মচ্যুতির ভয়ে আমি কাতরা। বৃষ্টির অভাবে মহান্ মহীরুহও শুষ্ক হয়, আমি মহান্ মহীরুহতলে বৃষ্টি করিব। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
সত্য। সে কি? মহান্ মহীরুহের অনাবৃষ্টির ভয়? জীবানন্দের ধর্ম্মচ্যুতি?
শান্তি। যাহা ঘটিয়াছে তাহা আবার ঘটিতে পারে।
সত্য। কি ঘটিয়াছে? জীবানন্দের ধর্ম্মচ্যুতি ঘটিয়াছে? হিমালয় গহ্বরে ডুবিয়াছে?
শান্তি। কেবল সহধর্ম্মিণী-সাহায্যের অভাবে।
সত্য। কি বলিতেছ, আমি কিছুই বুঝিতেছি না।
শান্তি। কাল মধ্যাহ্নে তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়াছিলেন। ব্রত ভঙ্গ হইয়াছে।
এবার সেই পলিতকেশ ব্রহ্মচারী চক্ষু ঢাকিয়া কাঁদিতে বসিল। সত্যানন্দকে আর কেহ কখন কাঁদিতে দেখে নাই।
শান্তি বলিল “প্রভু, আপনার চক্ষে জল কেন?”
সত্য। প্রায়শ্চিত্ত কি জান?
শান্তি। জানি, আত্মহত্যা।
সত্য। তাই কাঁদিতেছি। জীবানন্দের শোকে কাঁদিতেছি।
শান্তি। আমিও তাই আসিয়াছি; যাহাতে জীবানন্দ না মরে, সেই জন্য আসিয়াছি।
সত্য। বৎসে, তোমার অভীষ্ট সিদ্ধ হউক। তোমার সকল অপরাধ মার্জ্জনা করিলাম। তুমি সম্ভানমধ্যে পরিগণিত হইলে। আমি এতক্ষণ তোমার মর্ম্ম বুঝি নাই, তাই তিরস্কার করিতেছিলাম? আমি কি বুঝিব? বনচারী ব্রহ্মচারী বৈ ত নই। স্ত্রীলোকের তুল্য হইব কি প্রকারে? জীবানন্দ মরিবে, আমিও রাখিতে পারিব না, তুমিও রাখিতে পারিবে না। জীবানন্দ আমার প্রাণাধিক প্রিয়, কিন্তু দেখ দক্ষিণ হস্ত গেলে দেবতার কার্য্য করিতে পারিব না। যত দিন পার, জীবানন্দকে পৃথিবীতে রাখিও। সঙ্গে সঙ্গে আপনার ব্রহ্মচর্য্যা রাখিও। তুমি আমার প্রিয় শিষ্য হইলে। সন্তান মাত্রই আমার আনন্দ। এই জন্য সন্তানেরা সকলে আনন্দ নাম ধারণ করে। এ আনন্দমঠ। তুমিও আনন্দ নাম ধারণ কর। তোমার নাম নবীনানন্দই রহিল।
দ্বিতীয় খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৭৩, ১৭শ পংক্তির “বুড়ো বয়সে ছেলে মানুষকে” কথাগুলি ১ম সংস্করণে নাই।
দ্বিতীয় খণ্ড—অষ্টম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৭৫, ৬ষ্ঠ পংক্তির “প্রদীপটি উজ্জ্বল করিয়া” হইতে পৃ. ৭৬-এর শেষ “শয়ন করিলেন।”— এই অংশের পরিবর্ত্তে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে নিম্নোদ্ধৃত অংশটি ছিল—
তদুপরি শয়ন করিল।
কিছুক্ষণ পরে জীবানন্দ ঠাকুর প্রত্যাগত হইলেন। হরিণ চর্ম্মের উপর একটা মানুষ শুইয়া আছে, ক্ষীণ প্রদীপালোকে অতটা ঠাওর হইল না। জীবানন্দ তাহারই উপর উপবেশন করিতে গেলেন। উপবেশন করিতে গিয়া শান্তির হাঁটুর উপর বসিলেন। হাঁটু অকস্মাৎ উঁচু হইয়া জীবানন্দকে ফেলিয়া দিল।
জীবানন্দের একটু লাগিল। জীবানন্দ উঠিয়া একটু ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন, “কে হে তুমি বেল্লিক?”
শান্তি। আমি বেল্লিক না, তুমি বেল্লিক। মানুষের হাঁটুর উপর কি বসবার জায়গা?
জীব। তা কে জানে যে তুমি আমার ঘরে চুরি করিয়া এসে শুইয়া আছ?
শান্তি। তোমার ঘর কিসের?
জীব। কার ঘর?
শান্তি। আমার ঘর।
জীব। মন্দ নয়, কে হে তুমি?
শান্তি। তোমার বোনাই।
জীব। তুমি আমার হও না হও, আমি তোমার বোধ হইতেছে। তোমার গলার সঙ্গে আমার ব্রাহ্মণীর গলার একটু সাদৃশ্য আছে।
শান্তি। বহুদিন তোমার ব্রাহ্মণীর সঙ্গে আমার একাত্মভাব ছিল, সেই জন্য বোধ হয় গলার আওয়াজ একরকম হয়ে গেছে।
জীব। তোর যে বড় জোের জোর কথা দেখ্তে পাই? মঠের ভিতর না হতো তো এক ঘুষোয় দাঁতগুলো ভেঙ্গে দিতুম।
শান্তি। দাঁত ভেঙ্গেছে অনেক সাঙাত। কাল রাজনগরে কটা দাঁত ভেঙ্গেছিলে, হিসাব দাও দেখি। বড়াইয়ে কাজ নেই, আমি এখানে ঘুমুই। তোমরা সন্তানের দল, লেজ গুটিয়ে, বামুনঠাকুরুণদের আঁচলের ভিতর নুকোওগে।
এখন জীবানন্দ ঠাকুর কিছু ফাঁপরে পড়িলেন। মঠের ভিতর সন্তানে সন্তানে মারামারি করা সত্যানন্দের নিষেধ। কিন্তু এরও বড় মুখের দৌড়, দুঘা না দিলেও নয়। রাগে সর্ব্বশরীর জ্বলিতে লাগিল। অথচ গলার আওয়াজটা মধ্যে মধ্যে বড় মিঠে লাগিতেছে, যেন কি মনে হয়, যেন কে স্বর্গের দ্বার খুলিয়া ডাকিতেছে, আর বলিতেছে এলেই ঠ্যাঙে লাঠী মার্বো। জীবানন্দের উঠিতেও ইচ্ছা করিতেছিল না, বসিতেও পারেন না। ফাঁপরে পড়িয়া বলিলেন,
“মহাশয় এ ঘর আমার, চিরকাল ভোগ দখল করিতেছি, আপনি বাহিরে যান।”
শান্তি। এ ঘর আমার, অর্দ্ধ দণ্ড ভোগ দখল করিতেছি। আপনি বাহিরে যান।
জীব। মঠের ভিতরে মারামারি করিতে নাই বলিয়াই লাথি মারিয়া তোমায় নরককুণ্ডে ফেলিয়া দিই নাই, কিন্তু এখনি মহারাজের অনুমতি আনিয়া তোমায় তাড়াইয়া দিতে পারি।
শান্তি। আমি মহারাজের অনুমতি আনিয়াই তোমায় তাড়াইয়া দিতেছি। তুমি দূর হও।
জীব। তাহা হইলে এ ঘর তোমার। মহারাজকে কেবল জিজ্ঞাসা করিয়া আসিতেছি; আগে বল তোমার নাম কি?
শান্তি। আমার নাম নবীনানন্দ গোস্বামী, তোমার নাম কি?
জীব। আমার নাম জীবানন্দ গোস্বামী।
শান্তি। তুমিই জীবানন্দ গোস্বামী! তাই এমন?
জীব। তাই কেমন!
শান্তি। লোকে বলে, আমি কি কর্বো।
জীব। লোকে কি বলে?
শান্তি। তা আমার বল্তে ভয়ই কি? লোকে বলে জীবানন্দ ঠাকুর বড় গণ্ডমূর্খ।
জীব। গণ্ডমূর্খ, আর কি বলে?
শান্তি। মোটা বুদ্ধি।
জীব। আর কি বলে?
শান্তি। যুদ্ধে কাপুরুষ।
জীবানন্দের সর্ব্ব শরীর রাগে গর গর করিতে লাগিল, বলিলেন, “আর কিছু আছে?”
শান্তি। আছে অনেক কথা—নিমাই ব’লে আপনার একটি ভগিনী আছে।
জীব। তুমি বড় বেল্লিক হে—
শান্তি। তুমি ভল্লুক হে।
জীব। তুমি উল্লুক, অর্ব্বাচীন, নাস্তিক, বিধর্ম্মী, ভণ্ড, পামর!
শান্তি। তুমি—যলায়বায়াবোচীচঃ—তুমি—স্তুশ্চুভিশ্চশাৎ—তুমি ষ্টুভিষ্ট্বষ্যাদান্তটোঃ।
জীব। বের শালা এখান থেকে—তোর দাড়ি ছিঁড়িব।
শান্তি তখন গণিল প্রমাদ! দাড়ি ধরিলেই মুস্কিল। পরচুলো খসিয়া পড়িবে। শান্তি সহসা রণে ভঙ্গ দিয়া পলায়নে তৎপর হইল।
জীবানন্দ পিছু পিছু ছুটিল। মনে মনে ইচ্ছা, ভণ্ডটা মঠের বাহিরে গেলে দুই ঘা দিব। শান্তি যাই হউক স্ত্রীলোক—দৌড়ধাপে অনভ্যস্ত। জীবানন্দ এ সকল কাজে সুশিক্ষিত। শীঘ্র গিয়া শান্তিকে ধরিল। এবং তাহাকে ভূতলে ফেলিয়া প্রহার করিবে বলিয়া তাহাকে কায়দা করিয়া জাপটাইয়া ধরিতে গেল। স্পর্শ মাত্রেই জীবানন্দ চমকিয়া শান্তিকে ছাড়িয়া দিল। কিন্তু শান্তি বাহু দ্বারা জীবানন্দের গলা জড়াইয়া ধরিল।
জীবানন্দ বলিল, “এ কি! তুমি যে স্ত্রীলোক! ছাড়! ছাড়! ছাড়!” কিন্তু শান্তি সে কথায় কর্ণপাত না করিয়া চীৎকার করিয়া ডাকিতে লাগিল, “ওগো, তোমরা দেখ গো! এক জন গোঁসাই জোর করিয়া স্ত্রীলোকের সতীত্ব নষ্ট করিতেছে।”
জীবানন্দ তাহার মুখে হাত দিয়া বলিল, “সর্ব্বনাশ! সর্ব্বনাশ! অমন কথা মুখে এনো না। ছাড়! ছাড়! আমার ঘাট হয়েছে, ছাড়!”
শান্তি ছাড়ে না; আরও চেঁচায়, শান্তির কাছে জোর করিয়া ছাড়ানও সহজ নয়। জীবানন্দ যোড়হাত করিয়া বলিতে লাগিল, “তোমার পায়ে পড়ি, ছাড়!” শেষে স্ত্রীলোকের আর্ত্তনাদে অরণ্য পরিপূরিত হইয়া গেল।
এ দিকে মঠের গোঁসাইরা স্ত্রীলোকের প্রতি অত্যাচার হইতেছে শুনিয়া, অনেকে ধুনুচির ভিতর প্রদীপ জ্বালিয়া লাঠি সোঁটা লইয়া বাহির হইলেন। দেখিয়া জীবানন্দ থর থর কাঁপিতে লাগিল। শান্তি বলিল, “অত কাঁপিতেছ কেন? তুমি ত বড় ভীত পুরুষ! আবার লোকে তোমাকে বলে মহাবীর?”
গোঁসাইরা আলো লইয়া নিকটবর্ত্তী হইল দেখিয়। জীবানন্দ সকাতরে বলিলেন, “আমি অতিশয় কাপুরুষ, তুমি আমায় ছাড়, আমি পলাই।”
শান্তি। জোর করিয়া ছাড়াও না।
জীবানন্দ লজ্জায় স্বীকার করিতে পারিলেন না যে, তিনি স্ত্রীলোকের জোরে পারিতেছেন না। বলিলেন,
“তুমি বড় পাপিষ্ঠা।”
শান্তি তখন মুচকি হাসিয়া, বিলোল কটাক্ষ ক্ষেপণ করিয়া বলিল,
“প্রাণাধিক! আমি তোমার প্রতি অতিশয় আসক্ত। তোমার দাসী হইব বলিয়াই এখানে আসিয়াছি, আমায় গ্রহণ করিবে, স্বীকার কর, ছাড়িয়া দিতেছি।”
জীব। দূর হ পাপিষ্ঠা! দূর হ পাপিষ্ঠা! অমন কথা আমাকে কাণে শুনিতে নাই।
শান্তি। আমি পাপিষ্ঠা, তাতে সন্দেহ নাই; নহিলে স্ত্রীজাতি হইয়া পুরুষের কাছে প্রেম ভিক্ষা চাইতে যাইব কেন—আমার কথাটি রাখিবে? ছাড়িয়া দিতেছি।
জীব। ছি! ছি! ছি! আমি ব্রহ্মচারী আমাকে অমন কথা বলিতে নাই—তুমি আমার—
শান্তি সভয়ে বলিল, “চুপ কর! চুপ কর! চুপ কর! আমি শান্তি।”
এই বলিয়া শান্তি জীবানন্দকে ছাড়িয়া তাঁহার পায়ের ধূলা মাথায় লইল। পরে যোড়হাত করিয়া বলিল, “প্রভু! অপরাধ নিও না। কিন্তু ছি! পুরুষমানুষের ভালবাসার ভাণ্ করাকে ধিক্! আমাকে চিনিতেই পারিলে না!”
তখন জীবানন্দের মনে সকল কথা প্রস্ফুট হইল। শান্তি নহিলে এ কার্য্য আর কার? শান্তি নহিলে এ রঙ্গ আর কে জানে? শান্তি নহিলে কার বাহুতে এত বল? তখন আনন্দিত হইয়া, অপ্রতিভ হইয়া জীবানন্দ কি বলিতে যাইতেছিলেন—কিন্তু অবকাশ পাইলেন না, গোঁসাইয়েরা আসিয়া পড়িয়াছিল। ধীরানন্দ আগে আগে। ধীরানন্দ এই সময়ে জীবানন্দকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “গোলমাল কিসের?”
জীবানন্দ ফাঁপরে পড়িলেন, কি উত্তর দিবেন? শান্তি সেই সময়ে চুপি চুপি তাঁহাকে বলিল,
“কেমন বলিয়া দিই—তুমি আমায় ধরিয়াছিলে?”
এই বলিয়া ঈষৎ হাসিয়া শান্তি, ধীরানন্দের কথার উত্তর দিল—বলিল,
“গোলমাল—একটা স্ত্রীলোকে চেঁচাইতেছিল। ‘আমার সতীত্ব নষ্ট করিল! আমার সতীত্ব নষ্ট করিল’ বলিয়া চেঁচাইতেছিল। কিন্তু কই? জীবানন্দ ঠাকুর এত খুঁজিলেন, আমি এত খুঁজিলাম, দেখিতে পাইলাম না। এই বনটার ভিতর আপনারা একবার দেখুন দেখি—ওদিকে শব্দ শুনিয়াছিলাম।”
গোঁসাইদিগকে শান্তি অরণ্যের নিবিড় অংশ দেখাইয়া দিল। জীবানন্দ শান্তিকে চুপি চুপি জিজ্ঞাসা করিলেন,
“বৈষ্ণবদিগকে এত দুঃখ দিয়া তোমার কি ফল? ও বনে গেলে কি ওরা ফিরিবে? সাপেই খাক্ কি বাঘেই খাক্।”
শান্তি। যখন বৈষ্ণব স্ত্রীলোকের নাম শুনেছে, তখন একটু কষ্ট না পেলে ফিরিবে না। তা না হয় ফিরাইতেছি।
এই বলিয়া শান্তি গোঁসাইজিদের ডাকিয়া বলিলেন, “আপনারা একটু সতর্ক থাকিবেন। কি জানি ভৌতিক মায়াও হইতে পারে।”
শুনিয়া একজন গোঁসাই বলিল, “তাই সম্ভব। নহিলে স্ত্রীলোক কোথা হইতে আসিবে?”
গোঁসাইয়েরা সকলেই এই মতে মত দিল। ভৌতিক মায়া স্থির করিয়া সকলেই মঠে ফিরিল। জীবানন্দ বলিল, “এসো, আমরা এইখানে বসি—এ ব্যাপারটা আমাকে বুঝাইয়া বল—তুমি এখানে কেন— কি প্রকারে আসিলে—এ বেশই বা কেন? এত রঙ্গই বা কোথায় শিখিলে?” শান্তি বলিল, “আমি কেন আসিলাম? —তোমার জন্য আসিয়াছি। কি প্রকারে আসিলাম?—হাঁটিয়া। এ বেশ কেন? আমার শক। আর এত রঙ্গ শিখিলাম কোথায়? একটি পুরুষমানুষের কাছে। সব তোমায় ভাঙ্গিয়া বলিব। কিন্তু এখানে বনে বসিব কেন? চল তোমার কুঞ্জে যাই।”
জীব। আমার কুঞ্জ কোথায়?
শান্তি। মঠে।
জীব। সেখানে স্ত্রীলোক যাইতে আসিতে নিষেধ।
শান্তি। আমি কি স্ত্রীলোক?
জীব। আমি মহারাজের নিয়ম লঙ্ঘন করিব না।
শান্তি। আমার প্রতি মহারাজের অনুমতি আছে। কুঞ্জেই চল, সব বলিতেছি। বিশেষ ঘরের ভিতর না গেলে আমার দাড়ি খুলিব না। দাড়ি না খুলিলে তুমি এ পোড়ার মুখ চিনিতে পারিবে না। ছি! পুরুষ এমন!
তৃতীয় খণ্ড—প্রথম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৭৮, ২২শ পংক্তির “স্থানীয় রাজপুরুষগণ তখন”-এর পরিবর্ত্তে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে ছিল—
তখন নগরের মহারাজাধিরাজের চৈতন্য হইল।
তৃতীয় খণ্ড—প্রথম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৭৮, ২৮শ পংক্তির “বলিতে বলিতে চলিয়া যায়।” কথাগুলির পর ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে নিম্নলিখিত অংশ ছিল—
রাজা আসদ-উলজমান বড় বিভ্রাটে পড়িলেন। অনেকগুলি গোলা, কামান, হাতী, ঘোড়া পাঠাইলেন, কিছুতেই সস্তানদিগের “জয় জগদীশ হরে” শব্দের নিবারণ নাই। আসদ-উলজমান দেখিলেন যে রাজ্যচ্যুত হই।
তখন তিনি কাতরে ইংরেজকে চিঠি লিখিলেন। লিখিলেন যে, কোন মতে আমি আর রাজস্ব সংগ্রহ করিতে পারি না বা পাঠাইতে পারি না; আপনারা রক্ষা করেন তবেই খাজনা আদায় করিব, নচেৎ আপনারা আসিয়া আদায় করুন। ইংরেজেরা পূর্ব্ব হইতে নিজে কতক কতক থাজনা আদায় করিতেছিলেন কিন্তু এখন তাঁহাদিগেরও যত্ন বিফল হইতে লাগিল।
তৃতীয় খণ্ড—প্রথম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৭৯, ১০ম পংক্তির “বিদ্রোহ নিবারণ জন্য প্রেরণ করিলেন।” স্থলে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে ছিল—
বিদ্রোহ নিবারণ জন্য বীরভূম প্রদেশে প্রেরণ করিলেন।
তৃতীয় খণ্ড—প্রথম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৭৯, ২০শ পংক্তির “হইয়া গেল।” কথাগুলির পর প্রথম তিনটি সংস্করণে নিম্নলিখিত পংক্তিটি ছিল—
এইরূপে ১১৮০ সাল বীরভূমে সন্তান নাম কীর্ত্তিত করিতে লাগিল।
তৃতীয় খণ্ড—দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। পৃ. ৮০, ২৫ পংক্তির “দ্রৌপদীর” স্থলে প্রথম সংস্করণে “সাঁওতাল-কুমারীদিগের” এবং “মনোযোগ দিলেন।” কথাগুলির পর ছিল—
তখনকার ভারতীয় ইংরেজেরা এখনকার ইংরেজদিগের ন্যায় পবিত্রচরিত্র ছিলেন না।
তৃতীয় খণ্ড—দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। পৃ. ৮১, ১১শ পংক্তির পর প্রথম তিনটি সংস্করণে এই কথাগুলি ছিল—
বাঘ কি?—বাঘ তো নয়,
তৃতীয় খণ্ড—দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। পৃ. ৮১-৮২, টমাসের সহিত শান্তির কথোপকথনে প্রথম সংস্করণে টমাসের মুখ দিয়া “টুমি, টোমায়” প্রভৃতি সাহেবী ঢঙে বাংলা উচ্চারিত হয় নাই।
তৃতীয় খণ্ড—দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। পৃ. ৮১, ১৭শ পংক্তি “টুমি rebel।” স্থলে ১ম সংস্করণে ছিল—
তুমি বিদ্রোহী।
তৃতীয় খণ্ড—তৃতীয় পরিচ্ছেদ। পৃ. ৮৪, ১২-১৪শ পংক্তির “কিন্তু প্রায়শ্চিত্তের কথা কেন?···প্রায়শ্চিত্ত কেন?”—এই অংশ প্রথম তিনটি সংস্করণে নাই।
তৃতীয় খণ্ড—তৃতীয় পরিচ্ছেদ। পৃ.৮৪, ১৬শ পংক্তির “শিখাইলে ত!”-র পর প্রথম তিনটি সংস্করণে আছে—
আমিও শিখিলাম। তুমিই স্ত্রীকুলে ধন্যা।
তৃতীয় খণ্ড—তৃতীয় পরিচ্ছেদ। পৃ. ৮৪, ২০শ পংক্তির “গায়িল।” কথাটির পর প্রথম তিনটি সংস্করণে ছিল—
গাইতে গাইতে দুই জনেই কাঁদিয়াছিল।
তৃতীয় খণ্ড—চতুর্থ পরিচ্ছেদ। পৃ. ৮৭, ১৭শ পংক্তির “না” স্থলে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে ছিল—
সকলি শেষ হইয়াছে। কেবল স্ত্রীত্ব শেষ হয় নাই।
তৃতীয় খণ্ড—চতুর্থ পরিচ্ছেদ। পৃ. ৮৭, ১৯-২১শ পংক্তির স্থলে প্রথম তিনটি সংস্করণে ছিল—
ক। স্বর্গ বর্গ বুঝিতে পারিলাম না। আপনি বুঝাইয়া দিতে পারেন?
ভব। যাহা আপনি বুঝি না, তাহা বুঝাইতে পারি না। সাহিত্য পূর্ব্বমত পড়া হইতেছে?
ক। পূর্ব্বাপর বুঝি না। কুমারসম্ভব পরিত্যাগ করিয়া হিতোপদেশ পড়িতেছি।
ভব। কেন কল্যাণি?
কল্যাণী। কুমারে দেবচরিত্র, হিতোপদেশে পশুচরিত্র।
ভব। দেবচরিত্র ছাড়িয়া, পশুচরিত্রে এ অনুরাগ কেন?
ক। চিত্ত বশ নহে বলিয়া। [এই কথাগুলির পরিবর্ত্তে ২য়-৩য় সংস্করণে কেবলমাত্র “বিধিলিপি।” আছে]
তৃতীয় খণ্ড—চতুর্থ পরিচ্ছেদ। পৃ. ৮৮, ১২শ পংক্তি “ধর্ম্মে কণ্টক।” কথাগুলির পর প্রথম সংস্করণে ছিল—
কণ্টকেনৈব কণ্টকং।
তৃতীয় খণ্ড—চতুর্থ পরিচ্ছেদ। পৃ. ৮৮, ২৮শ পংক্তি “তবে তাঁরই হইব।” স্থলে ১ম সংস্করণে ছিল—
তবে তাঁর পায়ে লুটাইব।
তৃতীয় খণ্ড—পঞ্চম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৯৩, ১-৫ম পংক্তির “বলিলেন··হইলেন না।”— এই অংশের পরিবর্ত্তে প্রথম সংস্করণে ছিল—
ধীরানন্দও সরিয়া গেল।
তৃতীয় খণ্ড—ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৩, ২৩-২৫শ পংক্তির “গজের মত···ছি! মরিব!” স্থলে প্রথম সংস্করণে নিম্নলিখিত অংশটি ছিল—
গজদেহ স্থাপন করিয়া কি করিব? ইহা আমাকে করিতে হইয়াছে, অদৃষ্টে যাহা থাকে হইবে। আপনার ওজন আপনি না বুঝিয়া মানদণ্ডে আমি তুলিত হইতে উঠিয়াছিলাম। যে লোভী, যে পাপিষ্ঠ, যে ইন্দ্রিয় পরবশ, যে অধর্ম্মী তাহার আবার ধর্ম্ম কি? তাহার আবার সত্য কি? পাপে আমার ভয় কি? অনন্ত নরক আমার কপালে নিশ্চিত। ইহজীবন ধ্বংসের সম্ভাবনা, এই ইহজীবন ধ্বংসে আমার ভয় কি? অতএব যাহাই কপালে ঘটুক, আমি এ দুষ্কর্ম্ম করিব। এদিকেও প্রাণ যায়, সে দিকেও প্রাণ যাইবে। যে বিপদ দূরবর্ত্তী তাহাকে উপক্ষা করিয়া যে বিপদ নিকটবর্ত্তী তাহা হইতে আপনাকে উদ্ধার করিতে হয়। আমি ধীরানন্দের পরামর্শ শুনিব।—না! ধর্ম্মই সর্ব্বাপেক্ষা গুরু, এ জীবন হয়তো এই মুহূর্ত্তেই সর্পদংশনে শেষ হইতে পারে, কিন্তু জন্মান্তরের তো শেষ নাই। এ জীবনে আমি যদি সুখী হই, সে দুই দিনের জন্য, পরলোকে যদি আমি দুঃখী হই, সে অনন্তকালের জন্য।”
তৃতীয় খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৯৫, ১০ম পংক্তির পরে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংস্করণে নিম্নোদ্ধৃত অংশ ছিল—
শান্তি গলা চিনিল, বলিল, “রহ্ পোড়াকপালীর ছেলে! বুড়ো বয়সে তুমি মেয়েমানুষের সঙ্গে গায়িতে এসো!” এই বলিয়া শান্তি সারঙ্গের তারগুলি আর একটু চড়াইয়া লইয়া, কণ্ঠ আর একটু উঁচুতে তুলিয়া দিয়া, গায়িল—
বেদানুদ্ধরতে জগন্তি বহতে,
ভূগোলমুদ্বিভ্রতে,
দৈত্যং দারয়তে, বলিং ছলয়তে
ক্ষত্রক্ষয়ং কুর্ব্বতে।
পৌলস্ত্যং জয়তে হলং কলয়তে
কারুণ্যমাতন্বতে,
ম্লেচ্ছান্মুর্চ্ছয়তে দশাকৃতিকৃতে
কৃষ্ণায় তুভ্যং নমঃ।
বলিতে বলিতে সে দীর্ঘ তাল সেই উচ্চৈরব সে গগনবিদারক তান ছাড়িয়া দিয়া শান্তি গায়িল;—
“শ্রিতকমলাকুচমণ্ডল
ধৃতকুণ্ডল কলিতললিতবনমাল
জয় জয় দেব হরে।”
বাহির হইতে যে সঙ্গে গায়িতেছিল সে [আর সহ্য করিতে পারিল না। শ্বেত শ্মশ্রু, শ্বেত কান্তি, শ্বেত বসন, শ্বেত পুষ্পাভরণ লইয়া আসিয়া কুটীরমধ্যে প্রবেশ করিল,—বলিল, “মা গাও, তোমা হইতে সনাতন ধর্ম্ম উদ্ধার হইবে, গাও” বলিয়া—কেবলমাত্র ১ম সংস্করণে এই অংশটুকু আছে।] আপনি গাইল,
দিনমণিমণ্ডন, ভবখণ্ডন মুনিজনমানসহংস—
তৃতীয় খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৯৫, ১৭শ পংক্তির “চিনিতাম না।” কথাগুলির পর প্রথম সংস্করণে নিম্নলিখিত অংশটুকু ছিল—
চিনিলে আমি বলিতাম হে জীবানন্দ! আমার নিকট শপথ কর যে তুমি পত্নীসহবাস ত্যাগ করিবে না। মা আমার এক ভিক্ষা আছে, তুমি স্ত্রীবেশ আর গ্রহণ করিও না। সন্তানবেশ গ্রহণ করিয়া অসি চর্ম্ম বল্লম গ্রহণ পূর্ব্বক সম্ভানসেনা মধ্যে প্রবেশ কর। শান্তি। প্রভো এ আজ্ঞা আমায় কেন করেন? আপনার আজ্ঞায় শিবের শত্রু জয় করিয়াছি, বিষ্ণুর শত্রুও জয় করিতে হইবে? বলিয়া শান্তি গায়িল,
“মধু মুর নরক বিনাশন
গরুড়াসন সুরকুলকেলিনিদান
অমল কমলদললোচন
ভব মোচন ত্রিভুবন ভবনিধান
জয় জয় দেব হরে।”
বাবা! আপনি চুপ করিয়া রহিয়াছেন কেন, দেখিতেছেন না কি কাণ্ড হইতেছে?
সত্য। কি কাণ্ড হইতেছে?
শান্তি আপনি কি জানেন না?
সত্যা। সকল জানি না।
শান্তি। তবে আমি কাল বলিব। কিন্তু একটা কথা আমার জিজ্ঞাসা করিবার ইচ্ছা আছে আমার স্বামীর প্রতিজ্ঞাভঙ্গের কারণ আমি। মৃত্যুদণ্ড ঠাহার কপালে বিধান। তিনি ধর্ম্মে পতিত হইয়াছেন, তাহাকে মরিতে হইবে। সুতরাং আমাকেও মরিতে হইবে। কিন্তু আপনার কার্য্য উদ্ধার হইবে কি? কে কার্যোদ্ধার করিবে?
তৃতীয় খণ্ড-সপ্তম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৯৬, ৭ম পংক্তি “মা,” কথাটির পর ১ম সংস্করণে ছিল-
মনের কথা সকল তোমায় বলি, জীবানন্দ বল, ভবানন্দ বল, মহানন্দ বল, যে কেহ বল, আমার মনের কথা বুঝিয় যোগ্য তুমি ভিন্ন কেহ নহে।
তৃতীয় খণ্ড—অষ্টম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৯৬, ১৯শ পংক্তি “নদীতীরে” এবং ২০শ পংক্তি “নদীসৈকতপার্শ্বে” স্থলে প্রথম তিনটি সংস্করণে যথাক্রমে “অজয়তীরে” ও “অজয়সৈকত- পার্ধে” ছিল।
তৃতীয় খণ্ড—অষ্টম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৯৭, ১৮শ পংক্তির শত্রুদের” ও “হাদেৱ” স্থলে ১ম সংস্করণে “ইংরেজের” আছে।
তৃতীয় খণ্ড-নবম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৯৮, ৯ম পংক্তি “নদীর” এবং ১০ম পংক্তি “নদীপারে” স্থলে প্রথম তিনটি সংস্করণে যথাক্রমে “অজয়ের” ও “অজয়পারে” ছিল।
তৃতীয় খণ্ডনবম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৯৯, ১০-১১শ পংক্তির পাঠ ১ম সংস্করণে এইরূপ ছিল—
“জয় জয় জগদীশ হরে
মেচ্ছনিবনিধনে কলয়তি করবালা—"
তৃতীয় খণ্ড-নবম পরিচ্ছেদ। পৃ. ৯৯, ১৯শ পংক্তিতে “কৃপা করিবেন”-এর পর ১ম সংস্করণে ছিল—
এই সময় তোমরা তাহার কার্য কর
তৃতীয় খণ্ড—দশম পরিচ্ছেদে যে যে স্থলে “নদী” শব্দটি ব্যবহৃত হইয়াছে, সেই সেই স্থলে প্রথম তিনটি সংস্করণে “অজয়” ছিল।
তৃতীয় খণ্ড—দশম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১০৩, ৯ম পংক্তির “অবশিষ্ট সেনা” হইতে ১১শ পংক্তির “রক্ষা নাই।” পর্যন্ত অংশটির পরিবর্তে ১ম সংস্করণে নিমোক্ত অংশটি ছিল—
তাহারা যখন আম্রকাননে প্রবেশ করে, তখন গাছের উপর হইতে এক জন বলিল, “গাছে উঠ? গাছে উঠ! নহিলে বনের ভিতর ঢুকিয়া ইংরেজ তোমাদিগকে মারিবে।” দ্বন্ত সন্তানেরা গাছের উপর উঠিল।
গাছের উপর হইতে নবীনানন্দ গোস্বামী কথা কহিতেছিলেন। সকলে গাছে উঠিলে, নবীনানন্দ বলিলেন, “বন্দুক তৈয়ারি রাখ—এখান হইতে আমরা নিরাপদে শত্রুসংহার করিব।” সকলে বন্দুক তৈয়ার রাখিল।
তৃতীয় খণ্ড—একাদশ পরিচ্ছেদের (পৃ.১০৩) গোড়ায় প্রথম সংস্করণে নিম্নোক্ত অংশটি ছিল—
লেপ্টনাণ্ট ওয়াটসন দুৰ্বদ্ধিক্রমে আম্রকানন ঘেসিয়া চলিলেন। দুর্ব্বদ্ধিই বা কি, জীবানন্দের দক্ষিণে কাপ্তেন হে যাইতেছে দেখিয়া ওয়াটসন মনে করিলেন যে, আমি ঠিক বামে গিয়া ঘেরিব, এই ভাবিয়া আম্রকানন ঘেসিয়া চলিলেন। তখন অকস্মাৎ হুড় হুড দুড় দুড় শব্দে গাছের উপর হইতে তাহার সৈন্যপৃষ্ঠে বন্দুকের গুলি পড়িতে লাগিল। লেপ্টনাণ্ট ওয়াটসন তখন উপরে চাহিয়া দেখিলেন, বলিলেন “আকাশ হইতে গুলি পড়ে না কি?” নিকটস্থ বৃক্ষ হইতে একজন বলিল, “না সাহেব, আমরা গাছ থেকেই মারিতেছি, ঐখানে দাড়াইয়া দাড়াইয়া গাছের উপর দুই, চারিটা গুলি চালাও না।”
আর এক জন বলিল, “সাহেব, ঐখানে একটু দাড়াইয়া দেখ, শুনিয়াছি জীবানন্দ নাকি যীশুখ্রষ্ট ভজিবে, ঐ আছে।”
লেপ্টনাণ্ট ওয়াটসন দেখিলেন বেগোছ, ইহাদিগের কিছু করিতে পারিব না। সৈন্যগণকে বলিলেন “তোমরা শীঘ্র অগ্রসর হও, একটু দূরে গেলে, গাছের বাঁদরে আর কামড়াইতে পারিবে না।”
তখন গাছের বাদরের বন্দুকের দৌড়ের বাহিরে সৈন্য লইয়া ওয়াটসন দ্রুতবেগে জীবানশেও আক্রমণে চলিলেন।
শান্তি তখন গাছের উপর হইতে বলিল “ভাই কঁদরের দল, একবার লাফাইয়া পড়িয়া ছুটিয়া রাঙ্গামুখোদের বাদরের কামড়ের জালাটা দেখাইয়া দিয়া আসিতে হইবে।” শাস্তি মনে মনে বলিতে লাগিল যে “যদি মেয়ে মানুষ না হইতাম তো”—সকলটুকু লিখিতে পারিলাম না। আগে নবীনানন্দ গাছ হইতে লাফাইয়া পড়িল, সঙ্গে ঝুপ ঝপ করিয়া বৃক্ষস্থ সকল সন্তান লাফাইয়া পড়িল, তখন নবীনানন্দ বলিলেন “ধীরে ভাই, ধীরে, মিলে মিশে, গোল কর না; সার বাঁধ, বন্দুক কাধে, বল্লম হাতে, ছুট! দৌড়। বল বন্দে মাতরং।” তখন বন্দে মাতরং গায়িতে গায়িতে তাহারা লেপ্টেনাণ্ট ওয়াটসনের ব্যটেলিয়নের উপর ধাবমান হইল।
শান্তি পিছাইয়া পড়িল-বলিল “ছি। কি করিতেছি? স্ত্রীলোক হইয়া যুদ্ধে যাই কেন? আমার ধর্ম ত এ নয়! আমি গাছের বাদর গাছেই থাকি।” এই বলিয়া শান্তি ফিরিয়া আসিয়া গাছের উপর উঠিয়া যুদ্ধ দেখিতে লাগিল।
জীবানন্দ প্রায় পুল পাইয়াছিল, কিন্তু দুর হইতে বন্দে মাতরং কাণে গেল। জীবানন্দ বলিল “ভাই দূর হইতে বন্দে মাতরং শুনিতেছি, ভাই মরি মরূবে, পুলে কাজ নাই, চল একবার উহাদের সঙ্গে গিয়া বন্দে মাতরং গাই।” জীবানন্দের সেনার আর প্রাণভয়ে পলান হইল না। বন্দে মাতরং গায়িতে গায়িতে সেই হতাবশিষ্ট পঞ্চসহস্র সন্তানসেনা লেপ্টেনাণ্ট ওয়াটসনের দিকে ধাবমান হইল এবং বক্সের মত লেপ্টনাণ্ট ওয়াটসনের সেনার উপরে পড়িয়া তাহাদিগকে খণ্ড বিখণ্ড করিল। এক দিকে জীবানন্দের সৈন্য আর এক দিকে নবীনানন্দের প্রেরিত সৈন্য দুই প্রবল তরঙ্গের আঘাতে দৃঢ়বল পৰ্বততুল্য ইংরেজ সেনা ক্ষয়িত হইতে লাগিল। ক্ষয় হয় তবু ভাঙ্গে না! ইংরেজের অতুল বল, অতুল সাহস, অতুল অধ্যবসায়। রাউণ্ডের পর রাউণ্ড, ফায়ারের পর ফায়ার, বৃষ্টির পর বৃষ্টি, মেঘের উপরে আরো মেঘ! পৃথিবী অন্ধকার হইল, গগন প্রতিধ্বনিতে বিদারিত হইতে লাগিল, কাননে ঝড় বহিল, পশু পক্ষী ভয়ে বিবরে লুকাইল, অজয়ে তুফান উঠিল। নবীনানন্দ বৃক্ষ হইতে ডাকিল মার মার যবন মার। ঐ ওপাশে, এই সেনার পরে জীবানন্দ আছে, যাও ফৌজদারী বাহী ভেদ করিয়া যাও ভাই। মার মার ফৌজদারী মার।” তখন দক্ষিণ বামে বিদ্ধ হইয়া, আহত নিহত বিপ্লুত স্থানচ্যুত বিভ্রাবিত হইয়া লেপ্টেনাণ্ট ওয়াটসনের সেনা ছিন্ন ভিন্ন ভাবে দিগ্বিদিকে পলায়ন করিল। মাঝখানে জীবানন্দের দলে এবং নবীনানন্দের প্রেরিত দলে দেখা হইল। তখন শান্তি আর থাকিতে পারিল না “ছি! নারীজন্মেই ধিকৃ।” এই বলিয়া শান্তি আবার গাছ হইতে লাফাইয়া পড়িল! যেখানে দুই বিজয়ী সন্তানসেনার সম্মিলন হইয়াছে সেইখানে কুরঙ্গীর ন্যায় শান্তি ছুটিয়া গিয়া উপস্থিত হইল। রণক্ষেত্রের মাঝখানে জীবানন্দে নবীনানন্দে দেখা হইল। দুই জনে দুই জনকে আলিঙ্গন করিল। যখন একটু অবসর পাইল তখন জীবানন্দ বলিল “শান্তি, আজ তোমার সমক্ষে মরিলে কি সুখ হইত?”
নবীনানন্দ বলিল “মরিবার এখনও সময় আছে, তুমি পুরুষ মানুষ তোমার তো বুদ্ধি শুদ্ধি নাই, মরিবার দরকার হলে আমায় বলিও, আমি পথ দেখাইয়া দিব; যাও দেখি যদি ঐ পথে মৃত্যু নামে অমূল্য- নিধি খুঁজিয়া পাও।” এই বলিয়া শান্তি কাপ্তেন হের সৈন্য দেখাইয়া দিল। যাইবার সময়ে জীবানন্দের কাণে কাণে বলিয়া দিল, “আজ মরিতে পাইবে না। সত্যানন্দের আদেশ।”
তখন বন্দে মাতরং গায়িতে গায়িতে জীবানন্দ অশ্বারোহণে সসৈন্যে কাপ্তেন হের প্রতি ধাবমান হইলেন। শান্তি বিষন্নমনে নারীজন্মকে ধিক্কার করিতে করিতে ফিরিয়া আসিয়া গাছে উঠিয়া গেছে। মেয়ে” বলিয়া আপনার নিন্দা করিতে লাগিল। কাপ্তেন হেও দেখিলেন যে, যাহার পলায়ন অবরোধ করিবার জন্য যাইতেছিলেন, সেই স্বয়ং আবার সম্মুখে আসিতেছে। কাপ্তেন হে ফিরিয়া জীবানন্দকে আক্রমণ করিবার জন্য তাহার অভিমুখী হইলেন। যেমন দুইটী পৰ্বতনিঃসৃত নদী বিপরীত দিক হইতে আসিয়া উপত্যকার এক গহ্বরে পরস্পরকে প্রহত করে—উতুঙ্গ তরঙ্গমালার ফেণনিচয় আকাশে প্রেরিত করে, শব্দে পৰ্বতকর বিদীর্ণ করে, তেমনি হে ও জীবানন্দের সেনায় তুমুল সংগ্রামের সংঘর্ষণে সংঘর্ষিত হইল। জয় পরাজয় নাই, শত শত প্রাণী নিহত হইতেছে, একবার ইংরেজসেনা “হরে” বলিয়া দৌড়িয়া আসিয়া শত শত সন্তান দলিত করিতেছে। আবার “কলসি করবালং” বলিয়া সন্তানের দল ইংরুেজের সেনাদলকে দলিত করিতেছে। জয় পরাজয় নাই,কি হয় বলা যায় না। কাপ্তেন হের কাছে ইংরেজের ৰাছা বাছা সেনা, বিশেষ গোরা অনেক,—পরাজয় কাহাকে বলে তাহারা ইউরোপে বা ভারতবর্ষে কখনও তা জানে না। প্রস্তরনির্মিত প্রাচীরশ্রেণীবৎ তাহারা স্থির দাড়াইয়া রহিল। সন্তানেরা যত উদ্যম করিল কিছুতেই গোরার প্রাচীর উল্লম্ফন করিতে পারিল না। তাহারা শত শত সন্তান নিহত করিতেছে কিন্তু একপদ পশ্চাদগামী হয় না!
ইংরেজের ভাগ্যক্রমে
তৃতীয় খণ্ড—একাদশ পরিচ্ছেদ। ১০৪ পৃষ্ঠায় যে যে স্থলে “বন” শব্দ আছে সেই সেই স্থলে ১ম সংস্করণে “ইংরেজ” ছিল।
তৃতীয় খণ্ড—একাদশ পরিচ্ছেদ। পৃ.১০৪, ২৭শ পংক্তি “নেড়ে” স্থলে ১ম সংস্করণে “ইংরেজ” ছিল।
তৃতীয় খণ্ড—একাদশ পরিচ্ছেদ। ১০৫ পৃষ্ঠায় যে যে স্থলে “যবন” আছে ১ম সংস্করণে সেই সেই স্থলে “ইংরেজ” ছিল।
তৃতীয় খণ্ড-দ্বাদশ পরিচ্ছেদ। পৃ.১০৮, ৬ষ্ঠ পংক্তির “ববন” স্থলে ১ম সংস্করণে “ইংরেজের” এবং ঐ পংক্তির “আর নাই,” কথাগুলির পর ১ম সংস্করণে “মুসলমানের ছিল।
তৃতীয় খণ্ড-দ্বাদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৮, ৮ম পংক্তি “রাজধানী স্থলে প্রথম তিনটি সংস্করণে “নগর” ছিল।
তৃতীয় খণ্ড—দ্বাদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ১০৮, ১৯শ পংক্তি “এ প্রদেশ সমস্ত” স্থলে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে ছিল-
নগর তির সমস্ত বীরভূম।
তৃতীয় খণ্ড-দ্বাদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ১০৮, ২০শ পংক্তির বরেন্দ্রভূমিতে” স্কুলে প্রথম তিনটি সংস্করণে “বীরভূমিতে ছিল।
তৃতীয় খণ্ড-বাদশ পরিচ্ছেদ। পৃ. ১০৯, ১৭শ পংক্তির পর প্রথম তিনটি সংস্করণে নিম্নলিখিত অংশ ছিল-
মাথার উপর গাছের ডালে বসিয়া কে বলিল “আমি জানি কন্যা কোথায় আছে।” মহেন্দ্র উন্মুখ হইয়া বলিলেন “তুমি কে?”
সত্যানন্দ একটু কষ্টভাবে উন্মুখ হইয়া বলিলেন, “নবীনানন্দ! আমি তোমাকে বিদায় দিয়াছিলাম। তুমি এখনও এখানে কেন?”
শান্তি গাছের উপর হইতে বলিল, “প্রভু, স্বর্গে মর্তে আপনার অধিকার আছে, গাছের ডালে কি?
এই বলিয়া ঝুপ করিয়া শান্তি নামিয়া পড়িল।
চতুর্থ খণ্ড—প্রথম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১১১, ১৭শ পংক্তির “ধাবিত হইল।” কথাগুলির পর ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে ছিল-
যেখানে মহারাজ বীরভূমাধিপতি আসাদ-উল-জমান বাহাদুর রাজসিংহাসনে সুখে আসীন, সেই থানেই দারুণ রাজধবংসসুচক বার্তা পৌছিল। তখন অতি ব্যস্তে
চতুর্থ খণ্ড—তৃতীয় পরিচ্ছেদ। পৃ. ১১৭, ১৪শ পংক্তির সাহসে ভর করিয়া,” কথাগুলির পর ১ম ও ২য় সংস্করণে ছিল-~-
যা থাকে কপালে বলিয়া,
চতুর্থ খণ্ড—তৃতীয় পরিচ্ছেদ। পৃ. ১১৮, ২য় পংক্তির পর প্রথম তিনটি সংস্করণে নিম্নলিখিত অংশটি ছিল-
মহেন্দ্র বিষণ্ণভাবে বলিল, “হউক—তথাপি প্রায়শ্চিত্ত আছে।” পরে শাস্তির মুখপানে চাহিয়া বলিল, “কি প্রায়শ্চিত্ত আপনি জানেন?”
শান্তি বলিল, “মৃত্যু। কোন্ সন্তানে না জানে? আগামী মাঘী পূর্ণিমায় সে প্রায়শ্চিত হইবে স্থির হইয়াছে। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।”
এই বলিয়া শান্তি সেখান হইতে চলিয়া গেল। মহেন্দ্র আর কল্যাণী বাহতের ন্যায় দাড়াইয়া রহিল।
চতুর্থ খণ্ড—চতুর্থ পরিচ্ছেদ। পৃ. ১১৮, ৪র্থ পংক্তির উত্তর বাঙ্গালী মুসলমানের স্থলে ১ম সংস্করণে “বীরভূমি ইংরেজ মুসলমানের” এবং ২য় ও ৩য় সংস্করণে “বীরভূমি মুসলমানের” ছিল।
চতুর্থ খণ্ড-চতুর্থ পরিচ্ছেদ। পৃ. ১১৮, ৯ম পংক্তি “সন্তানশাসনার্থে Major Edwards” স্থলে প্রথম তিনটি সংস্করণে “বীরভূমি শাসনার্থ উড” ছিল। সুতরাং পরে যে যে স্থলে “এওয়ার্ডস” আছে, পূর্ব্ব সংস্করণগুলিতে সেই সেই স্থলে “উড” ছিল।
চতুর্থ খণ্ড—চতুর্থ পরিচ্ছেদ। পৃ. ১১৮, ২৩শ পংক্তি “নদীতীরে একটা মেলা” স্থলে প্রথম তিনটি সংস্করণে “কেন্দুবিল্লগ্রামে [জয়দেব—১ম সং] গোস্বামীর মেলা” ছিল। সুতরাং এই পরিচ্ছেদে যে যে স্থলে “মেলা” শব্দটির উল্লেখ আছে সেই সকল স্থলে “কেন্দুবিল্প” ছিল।
চতুর্থ খণ্ড—পঞ্চম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১২০, ৯ম ও ১১শ পংক্তির “মেজর সাহেব” স্থলে ১ম, ২য় ও ৩য় সংস্করণে “মেজর উড” ছিল। সুতরাং এই পরিচ্ছেদে শান্তি ও সাহেবের কথোপকথনে “সাহেব” ও “এডওয়ার্ডস”র স্থলে পূৰ্ব সংস্করণগুলিতে“উড” ছিল।
চতুর্থ খণ্ড—পঞ্চম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১২০, ২৮ পংক্তির “মেলামে” কথাটির পর প্রথম তিন সংস্করণে ছিল-
কিয়া বোল্টা হ্যায়। কিণ্ডেল-
শান্তি। কেঁদুলী—কেঁদুলীর মেলায় তারা যাবে না।
উড।
চতুর্থ খণ্ড—পঞ্চম পরিচ্ছেদ। পৃ.১২২, ১৫শ পংক্তির শেষ শব্দ “পা” স্থলে ১ম সংস্করণে “মাথা” ছিল।
চতুর্থ খণ্ড—ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ। পৃ, ১২২, ২৪শ পংক্তির “ফেলিয়া দিয়া” কথাগুলির পরিবর্তে ১ম সংস্করণে ছিল।
যমালয় নামক খারাপ যায়গায় পাঠাইয়া দিয়া
চতুর্থ খণ্ড-ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ। যে যে স্থলে “এড-ফ্লার্ড আছে, সেই সেই স্থলে প্রথম তিনটি সংস্করণে “উড” ছিল।
চতুর্থ খণ্ড—অষ্টম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৩১, ১ম-৩য় পংক্তির “তুমি বুদ্ধির পরিবে না আর।” পর্যন্ত অংশ প্রথম তিনটি সংস্করণে ছিল না।
চতুর্থ খণ্ড—অষ্টম পরিচ্ছেদ। এই পরিচ্ছেদে “সনাতন ধর্ম্ম” স্থলে প্রথম তিনটি সংস্করণে “আর্য্যধর্ম্ম” ছিল।
চতুর্থ খণ্ড—অষ্টম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৩১, ২০শ-২১শ পংক্তি “ইংরেজরাজ্যে···ধর্ম্মাচরণ করিবে।”—এই অংশটুকু ১ম সংস্করণে নাই।
চতুর্থ খণ্ড——অষ্টম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৩২, ৬ষ্ঠ-৭ম পংক্তির “ব্রত সফল···স্থাপিত করিয়াছ।”—এই অংশটুকুর পরিবর্ত্তে ১ম সংস্করণে ছিল—
ব্রত সফল হইবে না—কেন তুমি নিরর্থক নরশোণিতে পৃথিবী প্লাবিতা করিতে চাও?
চতুর্থ খণ্ড—অষ্টম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৩২, ১১শ-১২শ পংক্তির পরিবর্ত্তে ১ম সংস্করণে ছিল—
মহাপুরুষ। তুমি আর কিছু করিতে পারিবে না—তোমার দুই বাহু ছিন্ন হইয়াছে—তোমারও আর পরমায়ু নাই।
চতুর্থ খণ্ড—অষ্টম পরিচ্ছেদ। পৃ. ১৩২, শেষ পংক্তির পর প্রথম সংস্করণে ছিল—
বিষ্ণুমণ্ডপ জনশূন্য হইল। তখন সহসা সেই বিষ্ণুমণ্ডপের দীপ, উজ্জ্বলতর হইয়া জ্বলিয়া উঠিল; নিবিল না। সত্যানন্দ যে আগুন জ্বালিয়া গিয়াছিলেন তাহা সহজে নিবিল না। পারি ত সে কথা পরে বলিব।