আনন্দ-তুফান/প্রকৃতির নূতন বেশ

(ভক্তের অন্তর মণ্ডপে দুর্গোৎসব।)
প্রকৃতির নূতন বেশ।


বরিষার জলে, স্নান করি সুখে,
কিসের লাগিয়া আজ,
‘সুন্দরী’ সাজিয়া, হাসিছে প্রকৃতি,
পরিয়া শোভন সাজ?

কেন হেন সাজে, সাজি সুধাকর,
সুনীল আকাশে বসি’,
করে সুধা দান, ভুলায় জগৎ
হাসিয়া, আসিলে নিশি?

কেন সরোবরে,  রূপসী নলিনী
হাসে উষাকালে হেরি,
কেন ফুল-কুল,  ফুটি উপবনে,
ভুলায় পুরুষ নারী?

কেন পাখিগণ,  উঠি’ নিশা-শেষে,
ধরিয়া মধুর তান,
হৃদয় খুলিয়া,  গায় ধীরে ধীরি,
ললিত ললিত-গান?

নানা ফলে কেন,  ভরা বসুমতী,
দিতে কা’রে উপহার?
তরু-শাখে কত,  কত বা হৃদয়ে,
আছে ধরি’ আপনার?

কেন ঘরে ঘরে,  আনন্দের রোল,
হয় শুনি অবিরাম,
বালক, বালিকা,  যুবক, স্থবিরে,
কেন করে ‘দুর্গা’ নাম?

বুঝি বা ভবের,  হরি’ দুখ-ভার,
করিতে অভয় দান,
ভবানী-আগম,  শুনিয়া জগতে,
হাসিছে জীবের প্রাণ!

সুন্দরী প্রকৃতি,  তা’ই বুঝি হেন,
পরেছে সুন্দর সাজ,
তা’ই বুঝি শশী,  সুধাময় এত,
নিরখি নয়নে আজ!

তা’ই এ জনতা,  বিপণি আপণে,
হয় নিরন্তর হেরি,
আঁধার সংসার,  মহোৎসবে আজি
পূর্ণ, দিবা-বিভাবরী!

তা’ই নর নারী,  সানন্দ অন্তরে,
ক্রয় করে নব বাস,
পবিত্র হইয়া,  পূজিতে সে পদ,
পূরিয়া মনের আশ!

তা’ই ফুল-কুল,  হাসে উপবনে,
খুলিয়া রূপের ডালা,
ষাঁ’ হ’তে সুরূপ,  ষাঁ’ হ’তে সুবাস,
তাঁ’রি গলে হ’বে মালা!

যেখানে সেখানে,  শুনি তাঁ’রি কথা,
সকলেই সুখে ভাসে,
‘আনন্দ’ তাঁহার,  ধরে না হৃদয়ে,
আসিবেন যাঁ’র বাসে!


কত আয়োজন, আকিঞ্চন কত,
কত যে যতন তাঁ’র,—
“এস মা অম্বিকে! দাসের আবাসে,
এই কথা করি সার!”

চণ্ডীপাঠচ্ছলে, বিল্বমূলে বসি’,
ভকতে গাইছে গান,—
“এস মা ঈশানি! নাশ ভব-ভার,
কর মা পাপীরে ত্রাণ!—

পড়ি মায়া-পাশে, মরি গো শঙ্করি!
বেড়ী বড় বাজে পায়;
হের ত্রিনয়নে! কাতর তনয়ে,
তার মা! সংসার-দায়।”

দেখিতে দেখিতে  আসে যে সপ্তমী,
নাহি দিন বেশী আর,
তা’ই দুর্গানাম,  শঙ্খ-ঘণ্টা ধ্বনি,
হয় শুনি অনিবার।