আনন্দ-তুফান/বরণ
দেখিতে দেখিতে প্রাণ যায় রে যেমতি
নাভিশ্বাস-শ্বসিত রোগীর,
নিবারিয়া ব্যাধির যাতনা—
প্রিয়জন কাঁদে উচ্চরবে!
দেখিতে দেখিতে সেইরূপ,
দশমীর কাল-রবি, নিমেষে চলিল অস্তাচলে—
আঁধার হইল বসুন্ধরা।
ডাকিল বিশ্বাস-শাখে মোহিনী বায়সী—‘মায়া’;
ফুকারিল রিপু-ফেরুদল;
অন্ধ হ’ল জীব পুনর্ব্বার,
কুহকিনী নিদ্রার পরশে;
মোহ-নিদ্রা,—চিরনিদ্রা যেন।
এইরূপে হারাইয়া হৃদয়ের নিধি—মহামায়া;
ক্রমে যেন হেরিল স্বপনে;—
“এ কি! এ কি সর্ব্বনাশ!
কোথা আমি? জননী কোথায়?”
(তা’ই নাহি শান্তি ‘দুর্গ-মহোৎসবে’ আর;
ভকতে ভুঞ্জিত যাহা।
অন্ধ এই মর্ত্যবাসী জীবে,
ছায়া তা’রি নিরখি এখন।)
পরে বুঝিল যখন, হারায়েছি অমূলা-রতনে,
অযতনে, মায়া-ঘোরে মজি’;
অশ্রুধারা বহিল তখন—অসময়ে।
এরূপে ক্রমশঃ হায়! শান্তি-হারা হয়ে,
‘পাপ’-পদ সেবি অবিরাম,
পশুসম হয়েছে মানুষে;—
(তবু বুঝি প্রাণের জ্বালায়,
ছায়ামাত্র ধরি’ সে পূজার[১],
করে লৌকিক এ পূজা জীব,
দিয়া নাম—‘দুর্গা-মহোৎসব’?
নতুবা আনন্দ[২]কেন না হেরি জীবের,
পূজিয়া আনন্দময়ী তারা?)—তা’ই বুঝি,—
(জীবগণ নিরখিয়া ‘বিজয়া’[৩] রূপিণী মায়ে)
বিজয়ার দিনে, ম্রিয়মাণ নিরখি সবারে মর্ত্ত্যধাম?
নতুবা বিষাদে কেন পুর-নারীগণ,
বিজয়ার বাদ্যনাদ শুনি’,
নিরখে আঁধার এ সংসার,
সর্ব্বনাশ অন্তরে গণিয়া?
দীর্ঘশ্বাস পশিয়া শ্রবণে,
কহে এই কথা যেন কর্ণে মোর;–
“কেন মা করুণাময়ি! এ হেন প্রমাদ,
বাদ্যনাদ ঘটায় শঙ্করি?”
কেন চারিদিক্ হ’তে আসে ঊৰ্দ্ধশ্বাসে
আবাল বনিতা যুবদল,
শেষ দেখা দেখিতে তোমারে?—
বল না মা মোরে সুরেশ্বরি!
কেন বা কামিনীকুল শোকাকুলা হ’য়ে,
ল’য়ে পাদ্য অৰ্ঘ্য বরণ-ডালা সাথে,
বরে[৪] সজল-নয়নে তোমা’ আজ?
কেন কাঁদিয়া কাঁদিয়া
চুমে ও বদন-শশী—সুধাময়?
কহে কত কথা, কাণে কাণে তব,
ক্ষীণধ্বনি, না পশে শ্রবণে;
লয় সবে ও চরণ-ধূলি, অঞ্চলে মুছিয়া,
‘আশা’ যেন কহে ও সবারে
হৃদয়-মন্দিরে রাখিতে ও পা দু’খানি;
তরিতে মা! শমন-সঙ্কটে।