বিসর্জ্জন।

এ কি! এ কি সর্ব্বনাশ!
কেন রামাকুল কাঁদে অকস্মাৎ?
বলি’;–“কৈলাসবাসিনি!
যা’বে যাও, কেঁদ না জননি! .
ভুল না মা, কিঙ্করী সকলে শঙ্করি।”
হায়, এ কি রে বিষম স্বপ্ন অনিদ্রায়!—
সুনীল অম্বর হ’তে
বাজিল কি বজ্র আজি মর্ত্ত্যবাসি-শিরে?
(ধূমময় হেরি মর্ত্ত্যধাম!) শুনি নাম ‘বিজয়া-দশমী?’
কেমনে গেল রে ‘সপ্তমী’, ‘অষ্টমী’ আদি তিনদিন?
কিরূপে আসিল, কাল-দশমী-রূপিণী সর্ব্বনাশী,
গ্রাসিতে সংসার-সুখ-শশী—অসময়ে?
যখন হেরেছি তব ও রাঙ্গা চরণ,
ভুলেছি মা! ভবের যাতনা,
আত্মজ্ঞান[১] সহ সেই ক্ষণে; তা’ই
না হইল পূজা বুঝি—তব মুক্তিপ্রদ পা দুখানি;

না পেলু গো জানাইতে তোরে
জীবের যাতনা ঘোর—জননি।
বড় সাধ ছিল যাহা মনে, এতকাল।
চলিলে শঙ্করি! ভাসাইয়া শোক-সিন্ধু-নীরে,
অভাগা সন্তানে আজ—কোন্‌ প্রাণ?
জানিতাম দয়াময়ী তুমি—চিরদিন;
কিন্তু গো মা, ভাগ্যদোষে, জানিলাম এবে,
প্রকৃত নাম তব—‘পাষাণী’,—
পাষাণনন্দিনী! যাও, যথায় বাসনা তব;
কে রোধিবে গতি তব, গতি-বিধায়িনি!
কিন্তু, বড় সাধ ছিল মা মানসে,
থাকিবে দু’দিন, দেখাইব প্রাণেশ্বরি,
প্রাণের দুর্দ্দশা করেছে যা’ মায়া—মায়ালিনী;
পুরিল না সে বাসনা আর।
তবু কহি করযোড়ে;–
“এসো মা, এসো মা শিবে!
হৃদয়-আসনে পুনঃ যেন পাই মা তোমারে।
প্রণিপাত করি ও চরণে;
আশীর্ব্বাদ এই কর তারা,
“আমি যেন রহি মা আমার” চিরদিন।



  1. যতদিন মানবের ‘আত্মজ্ঞান’ (‘আমি পরমাত্মা হইতে পৃথক্‌’ এই জ্ঞান) থাকে, ততদিনই সে ভগবানের পুজোপাসন করে, কিন্তু যখন আত্মজ্ঞানশূন্য হয়, তখন তাহার আর কোন কার্য্য করিবারই শক্তি থাকে না।