দশ

 প্রথম কৈশোরের এই ভালবাসা আমার সারা কৈশোর ও প্রথম যৌবন জুড়ে অধিকৃত ছিল—আত্মীয় স্বজনের চোখের অন্তরালে অন্তঃসলিলা ফল্গুস্রোতের মত। সে কথা শুধু সে জানতো আর আমি জানতুম; তবে অত ছোট বয়সে সে এ ভালবাসাকে ঠিক বুঝতো কিনা জানি নে, বালিকা ও কিশোরী স্বভাবের প্রেরণায় নিতান্ত অবহেলায় সে অর্দ্ধসজ্ঞানে তা’ নিজের রূপের মন্দিরের প্রাপ্য পূজা বলেই হয়তো অত্মসাৎ করতো। আমার প্রথম প্রেম ছিল অশ্রুতে ভরা, বিষাদকুয়াসায় আচ্ছন্ন কোজাগরী রাত। বার বছরেরটি হয়ে সে ভালবাসতো আমার এক মাসতুত ভাইকে, আমার দিকে তাঁর রূপমদির চোখে কতই না অবহেলায় চেয়ে আঁচল উড়িয়ে চলে যেত; আমার বুকটা নিঙড়ে সে হুপোদা’র দলে গিয়ে মিশে কাপাটি খেলতো, আমার দু’চোখ ফাটিয়ে জল বের করে অম্লান বদনে তারই হাত ধরে সে বেড়াতে বেরুতো, আমার জগৎ সংসার উদাস করে দিয়ে তারই পাশটি ঘেঁষেই বনভোজনে বসতো। আমি আর সহ্য করতে না পেরে মাঠের মাঝে পাথরের উপর গিয়ে বুক চুরমার করা আবেগে বিরহের কবিতা লিখতুম। এই ছেলেমানুষ প্রেমের মাঝে ছিল করুণ ও হাস্যরস দুই-ই।

 আমরা ভাবি নারী বুঝি বড় নিষ্ঠুর, এমনই করে কতই না ক্ষেত্রে সে নির্দ্দয় পাষাণের মত প্রেমার্থীর ভিক্ষা পায়ে দলে চলে যায়, অক্লেশে তারই চোখের ওপর আর একজনকে অযাচিত হয়ে চাওয়ার অধিক দিয়ে দেয়। নারীকে নিষ্ঠুর পাষাণী বলবার সময় আমরা ভুলে যাই সেও ইচ্ছা অনিচ্ছার দাস মানুষ, তারও কাউকে ভাল লাগে, কাউকে ভাল লাগে না—প্রতিদান নির্ব্বিশেষেই। আমি তাকে হাজার চাইলেও তার হৃদয়ের দিগদর্শনের কাঁটাটি যদি আমার দিকে না ঘোরে তা হলে সে করবে কি? এই একাঙ্গী প্রেমের খেলা সারা জগৎ জুড়ে চলছে, এর ট্রাজেডির বেদনায় পশু উদ্ভিদ ও জড় জগৎ অবধি থর থর আবেগে কাঁপছে। ভাল আমরা নিতান্তই অবশ হয়েই বাসি, একেবারেই হিসাব-হারা সে প্রেম, বিজ্ঞান সে মানে না, নীতি নরকের ভ্রূকুটির ধার সে ধারে না, সুরে বাঁধা বীণার মত বাজিয়ের হাত পড়লেই আত্মহারা হয়ে সে বেজে ওঠে। তার চাঁদটি উদয়াচলে পূর্ণ ষোল কলায় দেখা দিলেই তার সাগরবক্ষ দুলে ফেঁপে উজান ডাকে। এহেন প্রেমের ব্যাপারে যারা উচিত অনুচিতের কথা বলে তারা নীতির ঠুলি চোখে রাতপেঁচা, তারা প্রকৃত প্রেমের ধারা কি বা জানে? প্রেম দূরে থাক, হীন কামের খেলায়ই মানুষ কতখানি অবশ হতজ্ঞান হয়ে পড়ে তার সন্ধান আমাদের হিন্দু সমাজের উন্নত কালের সমাজকাররা জানতেন! মনু পরাশরে তাই হিন্দু প্রায়শ্চিত্য বিধিতে দেখতে পাই শত শত রকম স্বাভাবিক অস্বাভাবিক মৈথুনের তালিকা ও তার জন্য কতই না হালকা হালকা প্রায়শ্চিত্য বিধি। কোন্ বিবাহকে তাঁরা বৈধ করে না নিয়েছিলেন, শ্রেণী বিভাগে তাহাদের নিকৃষ্ট স্থান দিলেও রাক্ষস বিবাহ অবধি ছিল সে যুগে বৈধ। তন্ত্র করে গেছেন যবনীকেই ও নষ্টা স্ত্রীকে সাধনার শ্রেষ্ঠ শক্তি। আর আজ আমরা কতখানি হৃদয়হীন, কতদূর অনুদার, তাই আমাদের সমাজ ভরে গেছে ব্যভিচারে, ভ্রূণহত্যায়, নারীঘাতে, আত্মহত্যার পাপে; মা বাপ আত্মজন নিজেদের নাড়ী ছেঁড়া বুকের মেয়েকে নিজের হাতে ঠেলে দিচ্ছে গণিকার পথে, নিজের হাতে তার হাতে তুলে দিচ্ছে বিষের পাত্র। মানুষ যেখানেই হয়েছে এই ভগবানের জগতে বিচারক সেইখানেই সে ধর্ম্মের সমাজের নামে সেজেছে শয়তান। সে নিষ্ঠুরতার তার অবধি নেই। হিংস্র বাঘের তবু নিষ্ঠুরতার সীমা আছে, সেও আপন সন্তান চেনে। কিন্তু ধর্ম্মের নামে যে অন্ধ হয় তার নিষ্ঠুরতাই কল্পনায় গড়েছে চৌষট্টি নরকের বিভীষিকা।

 এই প্রথম ব্যর্থ প্রেমের ব্যথাই আমার কবিত্বের স্রোত খুলে দিয়েছিল। আমার কিশোর চিত্ত দয়িতকে ঘিরে আকুল আকাঙ্ক্ষায় গুন্ গুন্ করে ফিরতো, প্রেমাস্পদের বুকের কোরকটি তার মধু ও পরাগকোষ নিয়ে আমার কাছে খুলতো না বলে তাকে ঘিরে সে গুঞ্জনের আর বিরাম ছিল না। সে দেওঘর থেকে চলে গেলে চিঠি লিখতুম ভাষাকে বুকের মধুতে ডুবিয়ে ডুরিয়ে কত না মিষ্টি করে, সে তা’ পড়ে অবাক বিস্ময়ে বলতো—‘এমন সুন্দর চিঠি আমি তো লিখতে পারি নে’; অথচ ছোট হলেও সে আমার অনেক ওপরে পড়তো, আমার দু’ বছর আগে সে প্রবেশিকায় উত্তীর্ণ হয়। তার হৃদয় যে শুষ্ক, প্রেম যে তার গুরু হয়ে বসে নি ভাষায় ছন্দ ও মধু আনতে! তার ওপর আমাদের দেশে মেয়েদের শিক্ষা তখন এমন নিকৃষ্ট ছিল যে সে দু’ ছত্র ইংরাজি অবধি বলতে বা লিখতে পারতো না আর আমি তার দু’ ক্লাস নীচে পড়েও কবিত্বে ষ্টাইলে অনবদ্য করে পাতার পর পাতা ইংরাজি লিখে চলতুম। সেই থেকে সুন্দর করে গুছিয়ে চিঠি লেখার ক্ষমতা আমার মাঝে গজাতে লাগলো। বোমার যুগে ধরা পড়ায় আমার কৈশোরের যৌবনের সাথীগুলিকে লেখা শত শত চিঠি তাদের বাপ মা ভয়ে আতঙ্কে পুড়িয়ে ফেলেছেন। নইলে সে হতো এক অপূর্ব্ব পত্রাবলীর সংগ্রহ।

 আমার বড় মামা ছিলেন ভারি চমৎকার মানুষ। তাঁর কথায় কথায় দুলে দুলে নিঃশব্দ চাপা হাসির ঝড় তোলা এখনও আমার মনে পড়ে। গৌরকান্তি পুরুষ, চিরকুমার, স্বাধীনচেতা, ইংরাজ-বিদ্বেষী বড় মামা আমার জীবনে কখন সরকারী চাকুরী করেন নি, নইলে দাদাবাবুর বন্ধু সার হেন্‌রি কটন আদির আনুকূল্যে তিনি অনেক উচ্চপদই পেতে পারতেন। সে কালে শুধু কাগজে লিখে মাসে দেড় শ, দু’শ, কখন কখন আড়াই শ’ টাকা অবধি তিনি রোজগার করেছেন। বেঙ্গলী, ইণ্ডিয়ান মিরর, হোপ, অমৃত বাজার আদি কাগজে তাঁর লেখা সম্পাদকীয় স্তম্ভে প্রধান প্রবন্ধ হয়ে বের হতো। সাংবাদিক Journalistic ইংরাজি তিনি লিখতে পারতেন অতি চমৎকার।

 দাদাবাবু রাজনারায়ণ বসুর বংশটাই ছিল ইংরাজ-বিদ্বেষী। যৌবনে ভারত মেলার অনুষ্ঠান করে দাদাবাবুরা বিরাট জনসভায় গোটা কয়েক মঞ্চ করে তার ওপর দাঁড়িয়ে আবৃত্তি করাতেন কবি হেমচন্দ্রের “বাজ রে শিঙ্গা বাজ এই রবে, সবাই স্বাধীন এ বিপুল ভবে, ভারত শুধুই ঘুমায়ে রয়”, তাঁদের অদ্ভূত গুপ্ত সমিতির কথা আত্মকাহিনীতে ইতিপূর্ব্বেই লিখেছি। পথে চলতে চলতে শ্বেতশ্মশ্রু সেই কুব্জ মানুষটি ইংরাজ দেখলেই সগর্ব্বে বুক ফুলিয়ে চলতেন, কটমট করে রক্ত চক্ষে সে বেচারীর দিকে চাইতেন, দাঁতে দাঁত দিয়ে ঘুঁসি পাকিয়ে মনের ঝাল তাঁর মেটাতেন। অথচ কোন ভাল ইংরেজ বাড়ীতে এলে সৌজন্য ও ভদ্রতার অবধি থাকতো না। সিপাহী যুদ্ধের কত গল্পই আমরা দিদিমা, দাদাবাবু ও বড় মামার মুখে শুনেছি।

 হেডমাষ্টার যোগীনবাবুর সঙ্গে জুটে বড়মামা কিছুদিন একখানি সাপ্তাহিক কাগজ বার করেন, বোধ হয় ২।৩ বছর সেখানি চলেছিল; দেওঘরের বাড়ীতে আমরা তার ফাইল ছেলেবেলায় দেখেছি। দাদাবাবু ও বড় মামার আলমারি ভরা বই পড়ে আমার যা’ কিছু লেখা পড়া শেখা। নিতান্ত ছেলেবেলায় দাদাবাবুর দেখাদেখি যখন উপনিষদ গীতা ও পুরাণ পড়তে চেষ্টা করেছি তখন সংস্কৃতের কোন বোধই আমার গজায় নি। বারবছর বয়স থেকে নভেলের তো আমি ছিলুম পোকা। স্কুলের বই ছাড়া বাইরের বই পড়ার ঝোঁক আমাকে দিয়েছিলেন হেডমাষ্টার মশাই, সখারাম বাবু, বড় মামা ও দাদাবাবু। তারপর এলেন মেজদা ও সেজদা—দুই-ই সমান গ্রন্থকীট, তাঁদের অপূর্ব্ব পুস্তক সংগ্রহ নিয়ে আমার জ্ঞান-তৃষ্ণার্ত্ত জীবনে দু’জনে পূর্ণচন্দ্রের মত উদয় হলেন। সে কথা পরে বলবো।

 দেওঘর স্কুলে ছাত্র জীবনে বলতে গেলে আমার অভিভাবক কেউ ছিলেন না। নামে মাত্র অভিভাবক ছিলেন দাদাবাবু ও বড়মামা। যখন নীতি-বাগীশ আত্মীয়রা হঠাৎ আবিষ্কার করলেন, যে, আমি লুকিয়ে লুকিয়ে রাঙা মাকে চিঠি লিখি তখন একটা ধমক চমক টিকা টিপ্পনীর ঝড় উঠলো—একেবারে Tempest in a Tea pot আর কি। তাঁরা সব এসে দল বেঁধে দিদিমাকে মুখপাত্র করে দাদাবাবুর কাছে লাগালেন, “ও যদি এ রকম কেলেঙ্কারী করে, একটা বাজারে বেশ্যার সঙ্গে সম্পর্ক রাখে, তা’ হলে ওর বোনের বে হবে না যে!” কি অকাট্য যুক্তি নিষ্ঠুরতা ও নির্ম্মমতার সপক্ষে! দাদাবাবু দু’ হাত ও দাড়ি নেড়ে বলে দিলেন, “ও যা খুসী তাই করবে, ও একেবারে স্বাধীন।” বাস, তারপর আমার যবনিকার অন্তরালে দাঁড়িয়ে উল্লাসে নৃত্য ও প্রতিপক্ষদের মুখ কাঁচু মাচু করে কাষ্ঠ হাসি হেসে সরে পড়া। রেগে মেগে দিদিমা বললেন, “এঃ! বুড়োর ভীমরতি ধরছে, কথার ছিরি দেখো না!” দাদাবাবু কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে দন্ত কিড়িমিড়ি করে ইসারায় দেখিয়ে দিলেন যেন কার মুখ ধরে মেঝেয় রগড়াচ্ছেন আর মুখে বললেন, “বেওকুফ কুফ্—কুফ্—কুফ্!” তাঁর গালাগালের ভাণ্ডারে ওর বেশী সঞ্চয় আর ছিল না, খুব রাগলে ঐ পর্য্যন্ত বলতেন।

 বড় মামারও সেই মত সেই রায় সুতরাং আমায় পায় কে? আমারই পোয়াবারো। বোধ হয় ছয় মাস কি এক বছর দেওঘরে থাকার পর একদিন স্কুলে বের হচ্ছি, বাগানের কাছে দেখি পাকা বাঁশের লাঠিটি হাতে রামরাজ তেওয়ারি স্বশরীরে দাড়িয়ে। আমি তো অবাক, “দারোয়ানজী! তুমি এখানে?”

 দ। হ্যাঁ, অনেক দিন তোমাদের দেখিনি, তাই দেখতে এলুম।

 রামরাজ অনেক কথাই জিজ্ঞেস করতে করতে আমার স্কুল পাঠ্য বইএর বোঝা নিজের হাতে বয়ে নিয়ে মাঠের পথে মহুয়া বন দিয়ে আমার পাশে পাশে চললো। স্কুলের কাছাকাছি এসে বইগুলি আমায় ফিরিয়ে দিয়ে বললো, “বাবা, মা এসেছেন।” আমি তো হতভম্ব! মা! এখানে মা?

 “হ্যাঁ, মা তোমার জন্যে কেঁদে কেঁদে যে অন্ধ হবার দাখিল। চলো, একবার দেখা দেবে চলো। এতক্ষণ তোমায় বলিনি, ভাবলুম আগে একবার মনটা বুঝে দেখি।

 চিরদিনই আমি চুরিচামারী ও ষড়যন্ত্রে ত্বরিত-কর্ম্মা, এসব ক্ষেত্রে উপস্থিত দুষ্টবুদ্ধি কেমন যেন দরকার হ’লেই জুটে যায়। দু’জনে পরামর্শ করে ঠিক হ’লো টিফিনের সময় বাড়ীতে কাজ আছে অছিলায় হেডমাষ্টার মশাইএর কাছে ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়া যাবে আর ঠিক সাড়ে চারটের সময় ভাল ছেলের মত যেন সোজা স্কুল থেকেই সুড় সুড় করে বাড়ী ফেরা যাবে। যে পরামর্শ সেই কাজ। হেডমাষ্টার আমায় খুব নীতিবাগীশ ভাল ছেলে বলে জানতেন, আমি মিথ্যা কথা বলবো এ তাঁর স্বপ্নের অগোচর। এক পাণ্ডার বাড়ীতে গিয়ে দেখি ঘরের দুয়োর ধরে আবেগকম্পিত হৃদয়ে জীর্ণা শীর্ণা মা আমার ছেলের প্রতীক্ষায় অনাহারে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে দেখে কোলে নেবেন কি, স্নেহাবেশে উত্তেজনায় থর থর করে কাঁপতে লাগলেন, চোখ দুটি অশ্রু ধারায় ঝাপসা হয়ে গেল, কোন গতিকে আমাকে বুকে কুড়িয়ে নিয়ে নির্ব্বাক আবেগে সে কি ব্যাকুল তাঁর কান্না। স্নেহ ভালবাসা একটা সাইক্লোনের মত, ঠিক কুটোটুকুর মত অসহায় করে ঐ ঝড় আমাদের কোথায় যে নিয়ে ফেলে তা’ বলা শক্ত। একজন খুব বড় সাধিকা যোগসিদ্ধা মেয়েকে আমি দেখেছি একটি বেরালকে প্রাণ ঢেলে ভালবাসতে। অতবড় স্থির ধীর ধ্যানী মেয়ে যখন বার ঘণ্টা পরে হারানো বেরাল খুঁজে পেল তখন তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগে হাঁপাতে লাগল। সে বেগ শান্ত হতে গেল পাঁচ মিনিট, ততক্ষণ মুখে তার আদরের ভাঙ্গা ভাঙ্গা আবোল তাবোল ভাষা, সারা শরীরে কম্প ও রুদ্ধশ্বাস বুকে শ্বাসকষ্ট।

 মায়ের আমার প্রতি এই ভালবাসা যখনই দেখতুম আমি বিস্ময়ে থ’ হয়ে থাকতুম। পরবর্ত্তী জীবনে আমি বুঝেছি এ ভালবাসা কি পর্য্যন্ত আকুল করা। হৃদয়ের বাঁধ একবার ভেঙ্গে সংযম হারিয়ে গেলে এর বেগ হয় অন্ধ ও একেবারে বাণ ডাকা রকমের দুর্জ্জয়। আমাদের প্রাণ ও হৃদয়ের ভূমিতে এ অগ্ন্যুৎপাৎ অহরহই হচ্ছে। সমাজ এখানে পরাস্ত, ধর্ম্ম এখানে নির্ব্বাক, মানুষ খুব দৃঢ় ইচ্ছা শক্তি না থাকলে এ বেগের মুখে ভাসমান ঐরাবত।