আমার খাতা/আমার পিতৃদেব
আমার পিতৃদেব।
আমার পূজনীয় পিতৃদেব কলিকাতার ঠাকুর বংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তিনি শৈশবে ঐশ্বর্য্যের মধ্যে প্রতিপালিত হন, তাঁহার বাল্য যৌবন ভোগৈশ্বর্য্যের মধ্যেই কাটে, তথাপি তিনি সংস্কৃত ও ইংরাজি বিদ্যায় ব্যুৎপত্তি লাভ করিয়াছিলেন, এক কথায় বলতে গেলে শিক্ষিত ছিলেন। মধ্য বয়েসে ঘটনাচক্রে তিনি বীত-বিভব হইয়াছিলেন। আমার যখন জ্ঞান হয় তখনও পিতার লক্ষ টাকার সম্পত্তি ছিল, কিন্তু তিনি শেষ জীবনে সব হারাইয়া অমূল্য রত্ন লাভ করিয়াছিলেন, নশ্বর ধন হারাইয়া আত্মজ্ঞান লাভ করিয়াছিলেন। ঐ সময় তিনি থিয়োজফিষ্ট হন এবং জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশেষ দক্ষতা লাভ করেন। তিনি গননা করিয়া যাহাকে যাহা ভবিষ্যৎ বাণী বলিতেন, তাহাই সফল হইত।
আমার পিতা দার্শনিক ছিলেন, বেদান্ত তাঁহার শেষ জীবনের সম্বল হইয়াছিল, তাঁর অনেকগুলি শিষ্যও ছিল। তিনি উপদেশসহাস্রী নামে এক সংস্কৃত পুস্তক অনুবাদ করেন। তাহা তাঁর এক শিষ্যের নামে ছাপা হইয়াছিল। কারণ তিনি যশ আকাক্ষা করিতেন না। তিনি সংস্কৃত, কাব্য ও অনেক পড়িয়াছিলেন; রঘু, কুমারসম্ভব, মাঘ, শকুন্তলা ভবভূতি ও ভারবী প্রভৃতি কবির শ্লোক সকল তাঁহার কণ্ঠস্থ ছিল। তিনি যখন আমাদের পণ্ডিত মহাশয়ের সহিত কাব্যালোচনা করিতেন তখন আমি কৌতূহলের সহিত সেই সকল শুনিতাম। আমি যা কিছু পাইয়াছি, তাহা পিতার আশীর্ব্বাদ ও উপদেশে। আমার হৃদয়ের তৃপ্তির জন্য তাঁহার অশেষ গুণের কথা দু একটি না বলিয়া থাকিতে পারিলাম না। তিনি অটল ধৈর্য্যের সহিত দরিদ্রতাকে হাস্যমুখে বহন করিতেন, তাঁহার শান্ত শ্রী দেখিলে সকলেরই ভক্তি হইত। তাঁহার কথা লিখিতে বসিয়া সেই ঋষিতুল্য কান্তি যেন দেখিতে পাইতেছি। পিতৃদেবের চরণে সভক্তি প্রণাম করিয়া তাঁহার কথা শেষ করিলাম
পিতা ধর্ম্ম পিতা স্বর্গঃ
পিতাহিঃ পরমন্তপঃ।
পিতরি প্রতীমাপন্নে
প্রিয়ন্তে সর্ব্বদেবতাঃ॥