আমার বাল্যকথা/দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর (বড়দাদা)

দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর (বড়দাদা)

 ছেলেবলায় বড়দাদা আমার সঙ্গের সঙ্গী ছিলেন, আমার কনিষ্ঠ ভ্রাতা হেমেন্দ্রনাথ প্রথম বয়সে আমাদের সঙ্গে সমকক্ষভাবে মেশবার অধিকারী ছিলেন না। বড়দাদা যখন খুব ছোট তখন থেকে তাঁর ছবি-আঁকার নৈপুণ্য ও কবিত্ব শক্তি প্রকাশ পায়—কিন্তু হায়! এই দুই বিদ্যার কোনটিই তাঁর জীবনে স্থায়ীভাবে কার্যকরী হল না। তাঁর বাল্যকালের কবিত্বোচ্ছাসে দুইটি কাব্যরত্ন প্রসূত হয়—মেঘদূতের পদ্যানুবাদ ও স্বপ্নপ্রয়াণ; তা ভিন্ন গুম্ফাক্রমণ কাব্য[] ও অন্যান্য ছোট খাট কবিতা অনেক আছে যা সেই সময়কার ভারতী প্রভৃতি পত্রিক। খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু কি জানি কি কারণে, বাদে্গবী চপলা লক্ষ্মীর ন্যায় তাঁর নিকট হইতে সহসা অন্তর্ধান হলেন, বড়দাদা কাব্যামৃতপান হতে বিরত হয়ে তত্ত্ববিদ্যানুশীলনের দুরূহ চিন্তা ও ধ্যানে মগ্ন হলেন, চিত্রকলার চর্চাও ঐখানে থেমে গেল। তত্ত্বজ্ঞান আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে আর দুইটি সৌখিন কলা তাঁর মনোরাজ্য অধিকার করে বসল—বাক্সরচনা প্রণালী, আর রেখাক্ষর বর্ণমালা। এতে এত সময় নষ্ট করা হল কেন? জিজ্ঞাসা করলে বড়দা হেসে বলেন, এ শুধু ছেলেখেলা নয়, এ দুই বিদ্যা সাহিত্যেরই অঙ্গীভূত। লিখতে বসলে লেখবার নানা সরঞ্জাম চাই, কাগজ, কাগজ রাখবার বাক্স, পকেট বই— এই সকল সামগ্রী আগে থাকতে সংগ্রহ করতে হয়—তাই লেখাপড়ায় দিনকতক ক্ষান্ত দিয়ে বড়দা লেখবার জিনিষ তয়েরির কাজে মন দিলেন। একদিকে যেমন, কাগজের কারুকার্য, অন্যদিকে লিখন প্রণালী সংস্কারের প্রতি মনোনিবেশ করে রেখাক্ষর বর্ণমালার সৃষ্টি করলেন। সাহিত্য ব্যবসায়ীর যাতে সময় সংক্ষেপ হয় তাই উদ্দেশ্য। এই দুই সখের বিদ্যায় তাঁর বিস্তর সময় ও পরিশ্রম ব্যয় হল। এই দুই বিদ্যা যদিও সামান্য তবু বড়দাদা অসামান্য ধৈর্য ও অধ্যবসায়সহকারে তাদের আয়ত্ত করতে নিযুক্ত রইলেন। তার জন্যে চিন্তা শিক্ষা ও সাধনা যা কিছু প্রয়োজন কিছুই বাকী রাখেন নাই। বাক্সতত্ত্বের জন্য সমুদায় গণিতশাস্ত্র মন্থন করে তাঁর কাজের উপযোগী বিষয় সকল সংগ্রহ করতে হয়েছে, সেই সংক্রান্ত নূতন নিয়মাবলী প্রস্তুত করতে হয়েছে। সেই নব গণিতশাস্ত্র বারংবার সংস্কারের পর এইক্ষণে কোন এক আমেরিকান পণ্ডিতের হস্তে সমর্পিত হয়েছে, পরীক্ষার ফল কি হয় দেখবার জন্য বড়দাদা পথ চেয়ে আছেন। এই ত গেল বাক্স-প্রকরণ। রেখাক্ষর, সেও এক অপূর্ব বস্তু, তাতে কত কবিত্বরস, কতরকম রেখাপাতের কৌশল ছড়াছড়ি, না দেখলে তার মর্যাদা বোঝা যায় না। সম্প্রতি এই রেখাক্ষর পদ্ধতি পুস্তকাকারে মুদ্রিত হয়েছে—এ বিষয় কেহ জানতে ইচ্ছা করলে অনায়াসে কৌতূহল চরিতার্থ করতে পারবেন। দুঃখের বিষয় এই যে তাঁর কোন ছাত্র রেখাক্ষর লেখায় এ পর্যন্ত কৃতিত্ব দেখাতে পারলে না। এখনকার সময়ে কোন সুনিপুণ রেখাক্ষর-লেখক পেলে আমরা অনেকে ভাগ্য মনে করি।

 আমি বাল্যকালে রেখাক্ষর লিখনপদ্ধতি অভ্যাস করি নাই, কেবল নিজের সংঙ্কেত লিপিতে টুকে নিয়ে অনেকানেক বক্তৃতা লিপিবদ্ধ করেছি। আদিব্রাহ্মসমাজের বেদী হতে পিতৃদেব যে সকল উপদেশ দিতেন সেগুলি বলবার সময় আমি অমনি নোট করে নিতুম, পরে অবসর মতে বিস্তার পূর্বক লিখে দিলে তিনি সংশোধন করে ছাপাতে দিতেন, পর সপ্তাহে সেই ছাপা কাগজগুলি উপাসকমণ্ডলীর মধ্যে বিতরণ করা হত— সেইগুলি ‘ব্রাহ্মধর্মের ব্যাখান’ আকারে প্রকাশিত হয়েছে। সে সময়ে কেশবচন্দ্র ব্রহ্মানন্দ ব্রাহ্মসমাজে যোগ দিয়েছেন; নূতন নূতন বক্তৃতা, নূতন ব্রহ্মসঙ্গীত—ব্রাহ্ম সমাজে যেন নবজীবন সঞ্চার করেছে। ধর্মশিক্ষার জন্য ব্রহ্মবিদ্যালয় নামক একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তাতে কেশবচন্দ্র সেন ইংরাজীতে ও আমার পিতা বাঙ্গলায় উপদেশ দিতেন। পিতৃদেবের প্রদত্ত উপদেশগুলি পূর্বোক্ত প্রণালীতেই লিপিবদ্ধ ও পরে ‘ব্রাহ্মধর্মের মত ও বিশ্বাস’ নামক গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। আমি ইংলণ্ড যাবার পর পিতৃদেবের বক্তৃতা তুলে নেবার কাজে হেমেন্দ্রনাথ আমার স্থান অধিকার করেন।

 বড়দাদা আর আমি দুজনে মিলে কোন কোন সময় গান রচনা করতুম। ব্রহ্মসঙ্গীতের কতকগুলি আমাদের যুক্তরচনা, কতক বা আমাদের নিজস্ব রচনা।

 তা ছাড়া বড়দাদা অনেকগুলি ভাল ভাল হেঁয়ালি রচনা করেছিলেন। তার অনেক ভুলে গিয়েছি; দু একটি যা মনে আছে তা এই:—

১। বল দেখি তিন অক্ষরের কথা,
প্রথম অক্ষরদ্বয়ে সবে যায় বাঁধা
শেষ দু অক্ষরে আর সবে যায় বেঁধা;
সবটাতে দুইপারে—বেঁধা আর বাঁধা
মূর্খে কি বলিতে পারে পণ্ডিতের ধাঁধা।—(রসিক)
২। বল দেখি দুটি ফল,
তার ভিতরে পাওয়া যায়
ব্রহ্মাণ্ডের যা কিছু সকল।—(বেল-কুল)
৩। ইংরাজিতে বলে যাহা প্রথম অক্ষর,
বাঙলায় তাহা বলে দ্বিতীয় অক্ষর,
প্রথমে দ্বিতীয়ে তথা জানায় আপত্তি,
সবতাতে ঘাড়নাড়ে, বিষম বিপত্তি।

দু অক্ষরে ফল এ কি বল দেখি ভাই,
কেহ বলে বড় মিষ্টি কেহ বলে চাই।—(নোনা)

 বড়দাদা আমাদের বাড়ীর কবি ছিলেন। আমাদের অনেক ঘরাও কথা তাঁর কবিতার মধ্যে স্থান পেত। তিনি তাঁর স্বপ্নপ্রয়াণ কাব্যে আমাদের ভাইদের এইরূপ বর্ণনা করেছেন:—

ভাতে যথা সত্য হেম, মাতে যথা বীর,
গুণজ্যোতি হরে যথা মনের তিমির।
নব শোভা ধরে যথা সোম আর রবি,
সেই দেব-নিকেতন আলো করে কবি।


পণ্ডিত মহাশয়

যখন উপর হতে প্রচণ্ড পণ্ডিত
ডাকিতে লাগিল হয়ে বিষম কুপিত,
হাসিখুসি ঘুরে গেল তখন সবার
দল সাথে ম্লান মুখে চলেন সদ্দার।
পণ্ডিত মুহূর্ত পরে আইল সেখানে।
চশমা বাহির করে পরে সাবধানে॥
খসবার ভয়ে তাহা পরিল কসিয়া,
তার পরে যুত করে লইল বসিয়া।
শিষ্যদের আরম্ভিল পরে শিক্ষা দিতে;
ভূত পালাইয়া যায় কথার ভঙ্গিতে।
“এস দেখি তোমাদের দেখি একবার।
তোমাদের সঙ্গে হল পেরে ওঠা ভার।
আজ কাল তোমাদের অনিয়ম ভারি,
বাবুকে না বলে আর থাকিতে না পারি॥”

“ভারি নাকি অনিয়ম” ছাত্র এক কয়।
পণ্ডিত হাসিয়া বলে “অনিয়ম নয়?
লজ্জা করে না তোমার বলিতে ওকথা?
পড়াশুনা ত্যাগ করি ছিলে সব কোথা?
দেখ দেখি চেয়ে কত হইয়াছে ব্যালা?
ছি ছি ছি বিদ্যার প্রতি এত অবহেলা।
যাও পড়ে কাজ নাই, কর গিয়ে খ্যালা।”
এই বলে ঘাড় ধরে দিল এক ঠ্যালা॥
কৈলাস মুখুয্যে ছিল বসে এক কোণে,
মুচকি মুচকি হাসি সব কথা শোনে।
একজন চুপে কহে “হাসিছ যে বড়?”
কৈলাস ইঙ্গিতে কহে “কর্তা খাপা বড়!”


তেতালায় দুপুর রাত্রি

গভীর নিশীথ মাঝে বাজে দ্বিপ্রহর।
শ্রমশান্তি সুধাপানে মজে চরাচর॥
নিশির উদার স্নেহে ঢালি দিয়া বুক।
ভুঞ্জিতেছে বসুমতী বিশ্রামের সুখ॥
শূন্যে করে তারাগণ জ্যোতির সঞ্চার।
গাছপালা ঝোপে ঝাপে লুকায় আঁধার॥
কে কোথায় পড়ি আছে কোন চিহ্ন নাই ৷
নিদ্রায় মগন সবে নিজ নিজ ঠাঁই॥
কীটপতঙ্গের মাঝে খদ্যোত কেবল,
পঞ্চভূত মাঝে বায়ু শিশির শীতল,
জীবের শরীরে আর নিশ্বাস পতন,
এই কয়ে যা আছয়ে জীবের লক্ষণ॥

বরাহনগর উদ্যানে

নিশি অবসান প্রায়, সুখে সবে নিদ্রা যায়,
শয্যা কেহ ছাড়িতে না চাহে।
ঘা দিয়া হৃদয় মাঝে, মঙ্গল আরতি বাজে,
বেণুধ্বনি কি মধুর তাহে॥
দ্বিজরাজ হেন বেলা, বাহির হল একেলা
হর্ম হতে সুরম্য উদ্যানে।
নিঃশব্দ তরঙ্গবর্তী চলে গঙ্গা স্রোতস্বতী
সনমুখ দিয়া সিন্ধু পানে॥
শশী অস্ত যায় যায় কি দুর্দ্দশা হায় হায়
কেবা তার দুরবস্থা দেখে।
এমন যে বন্ধু তারা, স্বচ্ছন্দে এখন তারা
তারে ফেলে যায় একে একে॥
স্নিগ্ধ অতি এই কাল, নাহি কোন গোলমাল
নিস্তব্ধ ব্রহ্মাণ্ড সমুদয়,
ঝোপ ঝাপে অন্ধকার, নভস্থল পরিষ্কার
লতাপাতা হিমবিন্দুময়॥
পরপার যায় দেখা, যেন এক চিত্রলেখা,
পশ্চিম দিগন্তে নভসীর।
গাছে গাছে একাকার, মাঝে মাঝে রহে আর
দেবালয় প্রাসাদ কুটীর॥
শাখাপত্র ঢুলাইয়া, জলপুঞ্জ ফুলাইয়া,
বুলাইয়া মাঠ ময়দান,
মৃদুমন্দ বায়ু বহে মনে মনে দ্বিজ কহে,
আহা কি সুন্দর এই স্থান।

শান্তিনিকেতন

শান্তিনিকেতন, শান্ত সুশোভন,
সুভদ্র হরিত ক্ষেত্র শ্যামাকান্ত নিভৃত কানন।
বিমল শোভায়, সরোবর ভায়,
নভসীর বনশ্রীর স্বচ্ছ দরপণ।

 আমি যে পণ্ডিতের নিকট সংস্কৃত অধ্যয়ন করতুম বড়দাদা তার কাছে পড়তেন না,— তাঁর সংস্কৃত অধ্যাপক ছিলেন রামনারায়ণ পণ্ডিত, ‘বহুবিবাহ’ নাটক রচয়িতা। তাঁর শিক্ষাগুণে বড়দাদা সংস্কৃতকাব্যে শীঘ্রই ব্যুৎপত্তি লাভ করেছিলেন। সংস্কৃত পদ্যে একটি কলিকাতা বর্ণনা আছে সে তাঁর সেই সময়কার রচনা। তার কয়েকটি শ্লোক আমার যা মনে আছে তা এই:—

কলিকাতা

ইংরাজ রাজরাজ্যং যৎ ত্রিলোকীতলবিশ্রুতং
রাজধানীং সুবিস্তীর্ণাং কলিকাতাং বিভর্ত্তি তৎ।
পয়ঃ পূরপ্রবাহিন্যা গঙ্গয়া পুণ্যসঙ্গয়া
কলিকাতা পুরী ভাতি নিত্যং মেখলিনীব সা।

রথা রম্যাঃ সুগম্যাশ্চ যত্র ভান্তি সহস্রশঃ
দৃতিপাত্রগলদ্বারি-নিবারিতরজশ্চয়া
শতঘ্নীশতযুক্তেন দুর্গেণ দুর্গ হারিভিঃ
উদ্যৎ বিদ্যুৎপ্রভাজাল সৈন্যশস্ত্রাস্ত্রশোভিনা।

ত্রিলোক বিশ্রুত এই ইংরাজ রাজ্যের মাঝে
সুবিস্তীর্ণা রাজধানী কলিকাতা কিবা সাজে।
পূর্ণকায়া পুণ্যতোয়া জাহ্নবী বহিয়া যায়,
তারি অঙ্গে কলিকাতা মেখলিনীসম ভায়।
সুরম্য সুগম্য যথা শতপথ ব্যাপি রয়,
চর্মপাত্র গলদ্বারি ধূলিরাশি নিবারয়।

শত শত তোপযুক্ত দুর্গ্রহ দুর্গ রক্ষিত,
উদ্যৎ বিদ্যুৎপ্রভাসম সৈন্যাস্ত্রশস্ত্রসজ্জিত॥

 বড়দাদা সংস্কৃত ছন্দে অনেক বাঙ্গলা কবিতা রচনা করেছেন, তার কয়েকটি নমুনা দিচ্ছি:—

প্রভাত বর্ণনা

বৃক্ষগণ হেলিত সুশীতল সমীরণে,
পুষ্প যত প্রস্ফুটিত পুষ্পময় কাননে।
মত্ত মধুপায়িদল আইল ত্বরা করি,
জাগিল বিহঙ্গকুল ভাগিল বিভাবরী।

টঙ্কাদেবী

ইচ্ছা সম্যক্ জগ দরশনে কিন্তু পাথেয় নাস্তি,
পায়ে শিল্কী মন উড়ু উড়ু, একি দৈবের শাস্তি।
টঙ্কাদেবী করে যদি কৃপা না রহে কোন জ্বালা,
বিদ্যাবুদ্ধি কিছুই কিছু না খালি ভস্মে ঘি ঢালা।
মন্দাক্রান্তা

ইঙ্গবঙ্গের বিলাত যাত্রা

বিলাতে পালাতে ছটফট করে নব্য গৌড়ে,
অরণ্যে যে জন্যে গৃহগ বিহগ প্রাণ দৌড়ে,
স্বদেশে কাঁদে সে গুরুজন বশে কিছু হয় না,
বিন। হ্যাট্‌টা কোটটা ধুতি পিরহনে মান রয় না। ১
পিতা মাতা ভ্রাতা নব শিশু অনাথ। হুট করি,
বিরাজে জাহাজে মসি মলিন কুর্তা বুট পরি,
সিগারে উদ্গারে মুহুর মুহু ধূমলহরী
সুখ স্বপ্নে আপ্নে মুলুকপতি মানে হরি হরি।২

বিহারে নীহারে বিবিজন সনে স্কেটিঙ করি,
বিষাদে প্রাসাদে দুখিজন রহে জীবন ধরি।
ফিমেলে ফিমেলে অনুনয় করে বাড়ি ফিরিতে,
কি তাহে, উৎসাহে মগন তিনি সাহেব গিরিতে।৩
ফিরে এসে দেশে গল কলর বেশে হটহটে,
গৃহে ঢোকে রোখে উলগত দেখে বড় চটে,
মহা আড়ী সাড়ী নিরখি চুলদাড়ী সব ছিঁড়ে
দুটা লাথে ভাতে ছরকট করে আসন পিঁড়ে।৪
শিখরিণী

(রেখাক্ষর বর্ণমাল। হইতে)

বসন্ত।

মধু ঋতু এল ধরণী মাঝে
হেলে দোলে লতা মোহন সাজে॥
অমৃত বরিষে মৃদু সমীর
পরাণ লভয়ে মৃত শরীর॥
ঝুরু ঝুরু ঝুরু বহিছে বায়।
ঝরিয়া পড়িছে বকুল তায়॥
মধু মালতীর ফুটিছে কলি—
চারিদিকে তার ঘুরিয়া অলি
গুন্ গুনায়িছে নব রসিক।
পহরে পহরে কুহরে পিক॥
ফুলের কে পায় কুল কিনারা
অগণন যেন গগন তারা॥
তরো তরো ফুল রঙ বেরঙ
শতেক ফুলের শতেক ঢঙ

কেহ বা দোলে কেহ বা ঝোলে
কেহ বা গন্ধে মাতায়ে তোলে।
কদম ছড়ায় কনক রেণু
রাখাল যথায় বাজায় বেণু॥
রাশি রাশি ফুলে ভরিল সাজি।
ঘরে ফিরে চল আর না আজি॥

কৃষ্ণের বিরহে।

কৃষ্ণ গেছে গোষ্ঠ ছাড়ি রাষ্ট্র পথে হাটে
শুল্কমুখ রাধিকার দুষ্কে বুক ফাটে॥
আনন্দের বৃন্দাবন আজি অন্ধকার,
গুঞ্জরে না ভৃঙ্গকুল কুঞ্জবনে আর॥
কদম্বের তলে যায় বংশী গড়াগড়ি,
উপুড় হইয়া ডিঙ্গা পঙ্কে আছে পড়ি॥
কালিন্দীর কূলে বসে কাঁদে গোপনারী
আর কি সে মনোচোর দেখা দিবে চক্ষে,
সিন্ধি কাঠি থুয়ে গেছে বিন্ধাইয়া বক্ষে॥
এত বলি হাহু করে বাষ্প আর মোছে।
সবারই সমান দশা কেবা কারে পোছে।

মুখ-হস্তের অভিন্নতা।

মুখে হাতে ভেদ নাই সাক্ষী তার তিন।
ভুজঙ্গ বিহঙ্গ আর মাতঙ্গ প্রবীণ॥
ভুজঙ্গের মুখখানি (বরজিয়া দাঁত)
কি সুন্দর মনোহর সুকোমল হাত॥
সাপুড়ের তুর্মি যবে বাজে ঘুরি ঘুরি।
কেমন ঘুরায় হাত গোখুরা গোখুরী॥

হাতের কায়দা দেখি সবে বলে “বা জী!”
শেখ্যাণ্ড করিতে কিন্তু কেহ নহে রাজী॥
বিহঙ্গের চঞ্চুহাত কম নহে বড়।
ছলা-কলা না জানুক কাজে খুব দড়॥
কেউটে গোখুরা আদি মহা মহা ফণী,
সারসের চঞ্চুহাতে ধোঁড়া যায় বনি।
হস্তীর হস্তটি এ যে মুখেরই লেজুড়,
জানে না অবোধ লোকে তাই বলে শুঁড়॥
খগে নাগে সাক্ষী মানি লেখে তাই শাস্ত্রে—
ভেদ নাই মুখে হাতে, দশনে নখাস্ত্রে॥

মনুয়া।

জাতিতে যদিও বনের টিয়ে
রতন মানিক মনুয়াটি এ॥
ছার কোয়েলিয়া ছার পাপিয়া।
মহুয়াটি মোর লাখ রুপিয়া।
কেবা জানে কুহু কে জানে পিউ।
গাহে রসভরে চাহে যা জিউ॥
কাণে যাহা শুনে দু একবার,
মন থেকে তা নড়ে না আর।

পেন্সিল-প্রকরণ।

লেখনী গুজিয়া কাণে পেন্‌সিল্‌ ধর।
এখন লেখ যা বলি—লেখ “হর হর”॥
পেন্‌সিল্ করিতে হয় অত কি ছুঁচালো?
অতিসূক্ষ্মে কোন কাজ উতরে না ভাল॥

সহজ মধ্যম সুরে বাঁধিবে সেতার।
সপ্তমে বাঁধিলে হবে সামলানো ভার॥
বেশী খাদ ভাল না, ভাল না বেশী জিল।
না সরু না মোটা করি কাটিবে পেন্‌সিল॥
রেখাক্ষর হবে তবে আজ্ঞার অধীন।
চাপ দিলে মোটা হবে—ঢিল দিলে ক্ষীণ॥
পেন্‌সিল্ খণ্ড তোমার মাসেক দুমাস—
নলপত করিয়া চলিবে যেন হাঁস॥
কালের গতিকে তাহা হয়ে গেলে আধা,
অবাধে চলিবে যেন রজকের গাধা॥
ঐ জন্তুটির মত মাস চারি খাটি
নূতন পেন্‌সিল্‌ দণ্ড লবে যবে কাটি
তখন তাহাকে হবে থামানো কঠিন।
ছুটিবে—পরাণ ভয়ে যেমতি হরিণ॥

সাধন পদ্ধতি।

কেমনে পাকাবে হাত শুন সাবধানে;
শিষ্য জুটাইয়া আনি মন্ত্র দিবে কাণে।
শিষ্যটিরে কাছে ডাকি সম্ভাষিয়া মিষ্ট
সারস্বত যোগাসনে হয়ে উপবিষ্ট—
লেখনী করিয়া হাতে সাজিবে লেখক,
শিষ্যটি হইবে আর উত্তর সাধক॥
আউড়িবে সে ধীরে ধীরে সমাচার পত্র।
তুলিতে থাকিবে তুমি ছত্র পিছু ছত্র॥
ছিটা ফোঁটা দিবে না রেখাই যবে টানি
সঙ্গ গুণে তরি যাবে অঙ্গহীন বাণী॥

রেখার পোকামাকড় কৃমি বিটকাল,
উচ্চিংড়ি ফড়িং পিঁপড়া পালে পাল,
ক্ষান্ত হোক রোসো আগে করি কিলিবিলি;
ধীরে সুস্থে কোরো শেষে ফুটকুনি বিলি।
এক মেটে করিয়া করিবে কাজ ফতে।
দো মেটে করিবে শেষে অবকাশ-মতে॥

সিদ্ধিলাভ।

প্রথমে প্রথম খণ্ডে পাকাইবে হাত।
দ্বিতীয় খণ্ডের তবে উলটিবে পাত॥
মস্তকে মথিয়া লয়ে পুস্তকের সার।
হস্তকে করিবে তার তুরুক সোয়ার॥
হইবে লেখনী ঘোড়-দোউড়ের ঘোড়া।
আগে কিন্তু পাকা করি বাঁধা চাই গোড়া॥

 বড়দাদা গদ্যেও প্রবন্ধাদি অনেক লিখেছেন কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, সে সমস্ত একস্থানে পুস্তকাকারে মুদ্রিত হয় নাই। তাঁর গদ্য-লেখা সামান্যতঃ দুই ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে—দার্শনিক ও সামাজিক। তাঁর সর্বপ্রথম দার্শনিক প্রবন্ধ ‘তত্ত্ব-বিদ্যা’ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় কিন্তু সে অনেক কালের কথা, গ্রন্থখানি এখন পাওয়া যায় কি না সন্দেহ। সম্প্রতি কয়েকমাস ধরে ‘গীতাপাঠ’ নামক যে প্রবন্ধগুলি ‘প্রবাসী’ মাসিক পত্রিকায় আমরা ঔৎসুক্যসহকারে পাঠ করেছি—গীতাশাস্ত্রের এই যে অপূর্ব মৌলিক ব্যাখ্যা—এটি সম্পুর্ণ অবয়বে যখন বেরবে, তখন ইহা গীতাধ্যায়ীদের পরম আদরের সামগ্রী হবে সন্দেহ নাই। ‘তত্ত্ব-বিদ্যা’ হতে আরম্ভ করে এই ‘গীতাপাঠ’ যদি সমাপ্তির মধ্যে গণ্য করা যায়— এই দুইয়ের মাঝখানে বড়দাদার লিখিত বিবিধ দার্শনিক প্রবন্ধ আছে, যেমন “সারসত্যের আলোচনা” “বিদ্যা এবং জ্ঞান”, “হারামণির অন্বেষণ” “দ্বৈতাদ্বৈতবাদ”, “বিবৃতিবাদ” (evolution), “বোদ্ধধর্মের ঘাতপ্রতিঘাত” ইত্যাদি— এদের কতক ছোট ছোট পুস্তিকাকারে প্রকাশিত হয়েছে, কতক বা সাময়িক পত্রে ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত রয়েছে। উহাদের মধ্যে কোন কোন প্রবন্ধ অসম্পূর্ণ— হয়ত কোন একটা বিষয়ের অবতারণা করে তার আদ্যোপান্ত লিখে শেষ করা হয়নি, কোনটা অর্দ্ধাঙ্গ, কোনট। বিকলাঙ্গ, ভগ্নাবস্থায় অমনি পড়ে আছে— এ সকল ভাল করে দেখে শুনে গড়েপিঠে নেওয়া আবশ্যক। দার্শনিক ছাড়া সামাজিক প্রবন্ধও অনেক এদিক ওদিক ছড়িয়ে আছে, যেমন সোনার কাটি রূপোর কাটি, আর্যামি ও সাহেবিয়ানা, একটি প্রশ্ন ও উত্তর ইত্যাদি অনেকগুলি সারগর্ভ ও সুপাঠা। বড়দার এই লেখাগুলি উদ্ধার হয় আমার অনেকদিনকার সাধ—কিন্তু মনের ইচ্ছা মনেতেই রইল—তা পূর্ণ হবার কোন পন্থা দেখছিনে। আসল কথা হচ্ছে—এ ভার নেয় কে? দুটি লোক আমার মনে হচ্ছে— তাঁর সুযোগ্য পুত্র ধীমান্ সুধীন্দ্রনাথ এবং পৌত্র শ্রীমান্ দিনেন্দ্রনাথ, এরাই এই ভারগ্রহণের অধিকারী এবং উপযুক্ত-পাত্র। উভয়েই সাহিত্যসেবী ও সাহিত্যজগতে স্বনামখ্যাত,—উভয়েরই সময় আছে, সামর্থ্য আছে, এই কার্যে যা যা চাই সকলি আছে—এঁরা বড়দাদার লেখাগুলির সম্পাদকীয় ভারগ্রহণ করুন এই আমার একান্ত অনুরোধ। অনুরোধ কি ইঁহারা রক্ষা করবেন না? সাহিত্য ভাণ্ডারের এই বহুমূল্য রত্নগুলি প্রলয় সাগরে ডুবিতে দেওয়া কি লজ্জার কথা নহে?

 পদ্যই বল, গদ্যই বল, বড়দাদার লেখার যে একটি মাধুর্য, প্রসাদগুণ, একটি বিশেষত্ব, একটি মৌলিকতা আছে তা তাঁর নিজস্ব সম্পত্তি, অন্য কোথাও দেখা যায় না। দুরূহ দার্শনিক তত্ত্ব সকল অতি সহজ ভাষায় জলের ন্যায় প্রাঞ্জলভাবে লিখে যাওয়া তাঁর এক আশ্চর্য ক্ষমতা। তাঁর লেখাসকল যে পর্যন্ত নিরক্ষর সামান্য লোকেরও বোধগম্য না হয় সে পর্যন্ত তিনি সন্তুষ্ট থাকেন না। তাই কখন কখন আমরা দেখতে পেতুম তাঁর বড় বড় লেখা যার কিছুমাত্র অক্ষরজ্ঞান নেই এমন লোককে ডেকে শোনাতে তিনি উৎসুক— তাদের না শুনিয়ে তৃপ্ত হতেন না। যদিও তারা শোনবামাত্র ভাবগ্রহণ করতে পারত কি না বলা শক্ত। এই সম্বন্ধে একটি মজার গল্প আছে। আমাদের একটি পুরাণো দাসী (শিশুকালে যে আমাকে মানুষ করেছিল), আমরা সকলে তাকে ‘কাল দাই’ বলে ডাকতুম—বড়দাদা তাকে তাঁর ‘স্বপ্নপ্রয়াণ’ থেকে একটি কবিতা শোনাচ্ছিলেন; তার কানে তা ঠাকুর দেবতার কথার মত কি যে সুধামাখা মিষ্টি লাগল সে ভক্তির সহিত গড় হয়ে প্রণাম না করে আর থাকতে পারলে না।

 বড়দাদার কাছ থেকে কার্যগতিকে অনেক দিন পৃথক হয়ে পড়েছি কিন্তু তাঁর স্মৃতি আমার জীবনের সঙ্গে জড়িত, কখনই বিলুপ্ত হবার নয়। সে ভালবাসা, সেই অট্টহাস, শিশুর ন্যায় সেই সরল অন্তঃকরণ ক্ষণে তুষ্ট ক্ষণে রুষ্ট, পুরাণো সে দিনের সে সব কথা কি কখন ভোলা যায়? তেহি নো দিবসাগতাঃ—সত্য কিন্তু মনোরাজ্যে সে সব দিন চিরদিনই জ্বলন্ত রয়েছে। আমাদের সেকালের দুএকটি ঘটনা মনে হচ্ছে। বড়দাদার একটি ভৃত্য ছিল, তার নাম কালী। তার উপর কত রাগ, কত তম্বী, কত ঝড় তুফান গালি বর্ষণ হচ্ছে, আমরা দেখছি অনেক সময় অকারণে; চসমা খুঁজে পাচ্ছেন না। তাকে কত ধমকান হচ্ছে, চীৎকার ধ্বনিতে আকাশ ফেটে যাচ্চে অথচ সেই চসমা হয়ত নিজের পকেটে—পকেটে বলাটাও ঠিক হল না, তাঁর চোখের উপর কপালে ঠ্যাকান রয়েছে— আমরা দেখিয়ে দিলে শেষে হেসে অস্থির। এদিকে এক হাতে যেমন তিরস্কার, পরক্ষণে অন্য হাতে তেমনি পুরস্কার। এইরূপ ক্ষতিপূরণের কাজ চলেছে, কালীও এই গালি গালাজ চড়টা চাপড়টায় কোন ভ্রূক্ষেপ না করে মনের সুখে কাজ করে যাচ্ছে।—বড়দাদার ভোলা স্বভাবের দরুণ যে কত লোক বিপদে পড়ত তার ঠিক নেই। হয়ত কাউকে খাবার নিমন্ত্রণ করেছেন সে যথাসময়ে এসে উপস্থিত কিন্তু বড়দাদার কিছুই মনে নেই—তাকে খাওয়ান দূরে থাকুক তার সামনেই নিজের খাবার খেয়ে যাচ্ছেন অথচ তাকে তার ভাগ দেবার কোন কথাই নেই। সে বেচারা প্রতীক্ষ করে আছে কখন তার জন্যে খাবার আসে—এদিকে রাত হয়ে যাচ্ছে —শেষে বড়দাদার ভুল ভেঙ্গে গেলে হাঁকাহাঁকি ডাকাডাকি পড়ে গেল।—একজন বড়দাদার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে—বড়দাদা ঠিক সেই সময় বেরবার উদ্যোগে আছেন— তাঁর বন্ধুর গাড়ী নিজের গাড়ী মনে করে তাতে চড়ে বেরিয়ে পড়লেন, সে বন্ধু বসেই আছে—অনেকক্ষণ পরে বাড়ী ফিরে এসে দেখেন তাঁর বন্ধু এখনো সেখানে বসে—বড়দাদা শেষে কারণ জানতে পেরে অপ্রস্তুত ও হাসতে হাসতে তাঁর বন্ধুর পীঠ চাপড়ে তাকে সান্ত্বনা করলেন। বনের জন্তু পাখী বশ করবার বড়দাদার আশ্চর্য ক্ষমতা, যেমন সাধু তুকারামের কথা শোনা যায় সেই রকম। তিনি সকালে তাঁর এজলাসে বসে আছেন আর কত চড়াই, সালিক ও অন্য পাখী তাঁর কাছে এসে তাঁর হাত থেকে খাচ্ছে—‘চড়াই পাখী চাউল খাকী আয়না ঠোকরাণা’ এই আদুরে ভাষায় চড়াইকে ডাকছেন। কত কাঠবেড়ালী তাঁর গায়ের উপর দিয়ে নির্ভয়ে চলে যাচ্ছে। ইন্দুরও খাবার ভাগ পায়। কাকের তো কথাই নেই ওরা ‘নাই’ পেলে ত মাথায় চড়বেই কিন্তু কাককে প্রশ্রয় দিলে অন্য পাখীদের উপর জুলুম করা হয়। একদিন তিনি বিরক্ত হয়ে একটা দাঁড় কাককে মেরে তাড়িয়ে দিতে বলেছিলেন। পরদিন দেখেন সে কাক যথাসময়ে তাঁর মজলিসে হাজির নেই। এই দেখে হুলুস্থুল বেধে গেল! সে কোথায় খোঁজ খোঁজ। খুঁজতে নানা দিকে চর পাঠান হল, তারা দ্যাখে সে কাক কোন্ একটা দূরের গাছে বসে আছে—তাকে আনিয়ে বড়দাদা তবে সুস্থির।

 বড়দাদার যা নিত্য নিয়মিত প্রাতঃস্নান ঠাণ্ডা জলে—তা চিরলই সমান চলেছে—শীতে গ্রীষ্মে রোগে অরোগে তার আর বিরাম নাই। তাঁর জ্বর কি কোন অসুখ হলে সেই স্নান বন্ধ করবার জন্যে কত সাধ্য সাধনা অনুনয় বিনয় করা যায় কিন্তু ভোরে উঠেই সেই ঠাণ্ডা জলে স্নান কিছুতেই নিবারণ করা যায় না। ঠাণ্ডার বদলে গরম জল কোন কালেই তাঁর মনোনীত হয় না। বড়দাদাকে ব্যামোর সময় ঔষধ পথ্য সেবন করানো এক বিষম দায়। তাঁর লেখায় মগ্ন হয়ে তিনি অনেক সময় আহার নিদ্রার নিয়ম ভুলে যান —এই বয়সে তার শরীরে আর এ অত্যাচার সহ্য হয় না। এখন শরীর সেবায় বিশেষরূপে মনোযোগ দেবার সময় এসে পড়েছে। তিনি নিজেই তা বুঝতে পেরেছেন;—এক একবার বলেও থাকেন— আর না! কিন্তু কাজে এ কথার কোন পরিচয় পাওয়া যায় না।

  1. পড়ে যেই লোক এই শ্লোক, পায় সে গুম্ফলোক ইহার পরে।
    যথা গুম্ফধারী ভারি ভারি, গোঁপের সেবা করি সুখে বিচরে॥

    ৺রাজনারায়ণ বসুর প্রতি লক্ষ্য করিয়া এই কাব্য রচিত হয়।