আমার বাল্যকথা/নবীনচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
নবীনচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
নবীনবাবু ছিলেন দেবেন্দ্রসভার বিদূষক। তিনি আমাদের সকলকে নিয়ে খুব হাস্য পরিহাস করতেন। আমাকে ডাকতেন ‘পক্ষী’ বলে। তিনি কখনো কখনো আমাদের কোন মিষ্টান্নের ভাগ দিয়ে বলতেন—
অর্ধ রুটি যদি খায় ঈশ্বরের জন
তাহার অর্ধেক করে অন্যে বিতরণ।
কত পাগলামী ছড়া আওড়াতেন সব মনে নেই। দু-একটা বলি—
অজসা গরসা
দুই সাপ—এই কালীয়দমনের দুই সর্দার রাম ও শ্যাম—
ধন্য ধন্য রাম শ্যাম তোমাদের কার্য
তোমাদের কার্য সকলের অনিবার্য
যখন তোমরা গিয়া চড় যার ঘাড়ে
অজসা গরসা আদি সবে তারে ছাড়ে।
অজসা গরসা যেন ছাড়ল, এখন রামশ্যামের হাত থেকে রক্ষা করে কে?
সাপ ও বেঙের কথোপকথন
সাপ—“জিহ্বা লিড়ি বিড়ি সিড়ি কিচড়ি মিচড়ি করি কুপ—” (আমি যদি কুপ করে তোকে খেয়ে ফেলি?)
ব্যাঙ—“হম্ যদি পানিমে ডুব গয়া ভুসম ভুসড়ি খায়া গুজড়ি মুজরি করি গুপ—” (আমি যদি গুপ করে জলে ডুবে যাই?)
নবীনবাবু চার রকম ভিন্ন প্রকৃতি লোকের কথা বলতেন—
বেগবেগা, বেগচেরা, চেরবেগা, চেরচেরা,। স্মরণশক্তির তারতম্যে এই চার রকম লোক হয়।
বেগবেগা,—যে শীঘ্র শেখে শীঘ্র ভুলে যায়;
বেগচেরা,—যে শীঘ্র শেখে চিরদিন মনে রাখে;
চেরবেগা,—যে দেরীতে শেখে শীঘ্র ভুলে যায়;
চেরচেরা,—যে দেরীতে শেখে দেরীতে ভোলে।
এর মধ্যে অবশ্য বেগচেরা হওয়াই প্রার্থনীয়। তার নীচে চেরাচেরা। চেরবেগাই অধম।
উপরে নবীনবাবুকে বিদূষকরূপেই চিত্রিত করে দেখান গেল, কেননা তাঁর ঐ দিক্টাই আমাদের চোখের সামনে থাকত; কিন্তু তা ছাড়া আর আর দিকেও তিনি ব্যাখ্যানযোগ্য। সাহিত্য-সমাজে তাঁর প্রতিপত্তি সামান্য ছিল না। কেবল আমাদের ঐ বয়সে তাঁর বিদ্যাসাধ্যের সর্বাঙ্গীণ মর্যাদা আমরা বুঝতে পারতুম না। শ্রীযুক্ত অক্ষয়কুমার দত্ত প্রথমে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি অবসর নেবার পর নবীনবাবু সম্পাদকীয় ভার গ্রহণ করেন ও দক্ষতাসহকারে কয়েক বৎসর সেই কার্য সম্পাদন করেন। তত্ত্ববোধিনী ভিন্ন তখনকার অন্যান্য সংবাদপত্রেও তাঁর প্রবন্ধাদি প্রকাশিত হত। ঐতিহাসিক তত্ত্বাবলীতে তাঁর বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল এবং বিশ্বকোষের পাতা উল্টে দেখলে তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ অনেক লেখা দেখতে পাওয়া যায়।