আমার বাল্যকথা/দেবেন্দ্র সভা
দেবেন্দ্র সভা
দেবেন্দ্রসভায় নানা লোকের সমাগম ছিল, তার মধ্যে কতকজন খাস-দরবারের লোক। আম-দরবারের যে সব লোক যাওয়া আসা করত তাদের কথা পাড়বার আবশ্যক নেই। একমাত্র বলে রাখি যে, এক সময়ে ব্রাহ্মসমাজে যাঁরা ঘন ঘন যাওয়া আসা করতেন তাঁদের মধ্যে অনেকে ছিলেন সম্ভ্রান্ত স্বর্ণবণিক শ্রেণীর লোক। এখন আর সে দলের লোক দেখতে পাই না—এমন হতে পারে যে, এক্ষণে দেবতার আরাধনায় মগ্ন থেকে তাঁরা আর উচ্চতর সাধনার সময় পান না। যে সকল লোক এক সময়ে দেবেন্দ্রসভার অন্তরঙ্গ ছিলেন তাঁদের দু চারজনের কথা বল্লেই যথেষ্ট হবে।
বৈকুণ্ঠনাথ দত্ত—ছোট্ট মানুষটি কিন্তু তাঁর ব্যবসাবুদ্ধি তীক্ষ্ণ ছিল। তাঁর মাথায় কতরকম speculation খেলত কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে কিছুতেই সাফল্যলাভ করতে পারতেন না। আজ চায়ের ব্যবসা, কাল বই, পরশু কাপড়—তাঁর কথা শুনলে মনে হত এবার বুঝি সোনার কাটি হাতে পেয়েছেন—যাতে ছোয়াবেন সোনা ফলবে। শেষে দেখা যেতো কোনটাতেই তাঁর মনোমত ফললাভ হল না।
আর এক ছিলেন রাজা কালীকুমার; জাতিতে স্বর্ণবণিক, হৃষ্ট পুষ্ট, শুচিবাইগ্রস্ত লোক, যিনি সন্দেশ ধুয়ে খেতেন। তিনি পারস্য সাহিত্যের অনুরাগী ছিলেন—তাঁর সহচর একটি মুসলমান যুবক সঙ্গে সঙ্গে ফিরত। তাঁর ফারসী বয়েৎ আওড়ানো মনে পড়ে—একটি স্তোত্র মনে আছে, তা এই:—
তু জান পাক-অয় সর্বসর্ বে আব খাক, অয়ি নাজ্নি
(তুমি প্রাণ, পবিত্র সর্বশঃ, না আপ মাটি, হে প্রিয়তম)
বল্লা জ্-জাঁ হম্ পাকতর রূহে ফদাক অয়ি নাজ্নি
(ও আল্লা প্রাণ হতেও পবিত্রতর আত্মায় লীন হে প্রিয়তম)
তুমি প্রাণ তুমি ওহে পূর্ণ পুণ্যময়,
প্রপঞ্চ অতীত তুমি, ওহে প্রিয়তম।
প্রাণ হতে পুণ্যতর তুমি হে মহেশ,
একাত্মা তুমি ও আমি ওহে প্রিয়তম॥
বড়দাদা রাজার নাম রেখেছিলেন ‘সম্ভোগ বিলাস।’
সম্ভোগ বিলাস নামে মাংসের ঢিবি
মধ্যে শিবে নেড়ে আর গুড়গুড়ি জিবী।