ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ/অন্য প্রভাত

অন্য প্রভাত।

 বারাণসীর প্রভাত, সুশীতল ও শিশির-সিক্ত; এখানে শীতের প্রভাত, কিন্তু আমাদের দক্ষিণ ফ্রান্‌সে, অক্টোবর মাসে ঋতুকালের যেরূপ মৃদুমধুর ভাব হয়, এখানেও কতকটা সেইরূপ।

 নগরের যে দূর উপকণ্ঠে আমি বাস করি, সেখান হইতে প্রতিদিন প্রাতে, নদীর ধারে যখন বেড়াইতে যাই, তখন দেখিতে পাই, পল্লীগ্রামের ছোট ছোট ব্যবসাদারেরা,—খুব যেন শীত লাগিতেছে এই ভাবে চাদর কিংবা শালে চোখ্‌ পর্য্যন্ত ঢাকিয়া শহরের দিকে ছুটিতেছে; লাঠির আগায় ঝুলাইয়া, ক্ষীরের হাঁড়ী, চাউল-পিঠার চুব্‌ড়ি ময়দার ঝুড়ী,—গঙ্গায় যাহা নিঃক্ষিপ্ত হইবে সেই সব জুঁইফুলের মালা, গাঁদাফুলের মালা, কাঁধে করিয়া চলিয়াছে।

 নদীতে নামিবার পূর্ব্বেই, ঘাটের উপরে, একজন সন্ন্যাসীর সম্মুখে আমি দাঁড়াইলাম। সন্ন্যাসীর বয়স ত্রিশবৎসর; ইনি একটি পুরাতন চতুষ্কমণ্ডপে আড্ডা গাড়িয়াছেন। তাঁহার পূর্ব্বপুরুষ সন্ন্যাসীরা ভূমির উপর যে অগ্নি এতদিন জ্বালাইয়া রাখিয়াছিলেন, সেই অগ্নি তিনিও এখন দিবারাত্রি রক্ষা করিতেছেন। দুই সহস্র বৎসর হইতে এই অগ্নি এই একইস্থানে জ্বলিতেছে। ইনি বৃদ্ধ, মাংসহীন; ইহার দীর্ঘ কেশ মস্তকের চূড়াদেশে স্ত্রীলোকের খোঁপার মত বাধা; নগ্ন দেহ ভস্মলপ্ত ইনি আমার গলায়, এক ছড়া জুঁইফুলের মালা নিঃক্ষেপ করিলেন, ধ্যানবিহ্বল অতীব মধুর দৃষ্টিতে মুহূর্ত্তকাল আমার দিকে চাহিয়া দেখিলেন, তাহার পর বাহুর দ্বারা একটা ইঙ্গিত করিয়া, আবার ধ্যানে নিমগ্ন হইলেন। “যদি ইচ্ছা হয়, এইখানে বসে ধ্যান কর।” তাঁহার চির-অবারিত গৃহের সেকেলে ধরণের থামের মধ্য হইতে, নিম্নস্থ গঙ্গার-উপর আমাদের দৃষ্টি নিপতিত হইতেছে—পরপারের বিশাল সমভূমি দেখা-যাইতেছে—সেই মরুভূমি, যাহা এখনও নৈশ বাষ্পজালে আচ্ছন্ন; এবং তাহারই পশ্চাৎ হইতে যাদুকর সূর্য্য ধীরে ধীরে উদিত হইতেছেন! পার্শ্ববর্ত্তী আর একটি চতুষ্কমণ্ডপ, যাহা এই চতুষ্কের উপর ঝুঁকিয়া রহিয়াছে, এবং যেখান হইতে এই চতুষ্কটি দেখা যায় সেইখানে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে, বারাণসীর সমস্ত দেবদেবীর উদ্দেশে, প্রভাত-সঙ্গীত ধ্বনিত হইতেছে; স্তম্ভশ্রেণীর মধ্য হইতে, উদয়াচলের দিকে মুখ করিয়া কতকগুলা দীর্ঘ তূরী বন্যপশুর ন্যায় বিকট গর্জ্জন করিতেছে; এবং এই কর্ণবধির ভীষণ কোলাহলে যোগ দিয়া ঢাক-ঢোল ভিতর হইতে বাজিতেছে।

 আমি প্রতিদিন প্রাতে যাহা করিয়া থাকি, আজও সেইরূপ, বারাণসীর দস্তুর অনুসারে নদীতে নামিলাম। এই সময়ে আমার নৌকা আমার জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করিয়া থাকে।

 প্রথমে, শ্মশান-ভূমির সম্মুখ দিয়া আমাকে যাইতে হইবে। যদিও কিছু দিন হইতে, এই পবিত্র নগরে মারাভয় দেখা দিয়াছে, তবু একটা বই শব নাই; এই মৃতদেহটি তীরের উপর শয়ান থাকিয়া আ-কটি গঙ্গার জলে নিমজ্জিত রহিয়াছে। কিন্তু আরও কতকগুলা মৃতদেহ আজ রাত্রে নিশ্চয়ই পোড়ান হইয়াছে; কেননা, মাটির উপর কতকগুলা ধূমায়মান চেলাকাঠ, সম্মুখে খানিকটা জল,—মানব-অঙ্গারে সমস্ত কালো হইয়া গিয়াছে, বিষ্ঠা ও গলিত আবর্জ্জনার সহিত স্নানশুষ্ক পুষ্পমালা সেই জলে ভাসিতেছে। সন্ন্যাসীর সেই মৃতদেহটা বরাবর একইভাবে এইখানে খাড়া হইয়া রহিয়াছে; বাহুদ্বয় আড়াআড়িভাবে স্থাপিত, মস্তক অবনত, অঙ্গুলীর মধ্যে থুতী রক্ষিত, ধূসর চূর্ণে দেহ আচ্ছন্ন থাকায় মনে হইতেছে যেন গ্রীশ দেশের কোন পিত্তল-প্রতিমূর্ত্তি পৃথিবীতে বেড়াইতে আসিয়াছে; কিন্তু দীর্ঘকেশকলাপ লালরঙ্গে রঞ্জিত এবং মস্তক জুঁইফুলের মুকুটে বিভূষিত।

 এই সব ফুলের মধ্যে, এই সব হল্‌দে ফুলের মালার মধ্যে, স্ফীত শবদেহ—জলমগ্ন গরু, মৃত কুক্কুরসকলও ভাসিতেছে এবং গঙ্গার পুরাতন পুতিগন্ধে এই চমৎকার স্বচ্ছ বায়ু পূর্ণ হইয়া রহিয়াছে; এই পূতিগন্ধ,—গোলাপী প্রভাতের মায়ারাজ্যের মধ্যে, মৃত্যুর ভাবকে আনিয়া বসাইয়াছে ও সযত্নে রক্ষা করিতেছে।

 মনে হইতেছে যেন বসন্ত আগতপ্রায়; প্রথমে যখন এখানে আসি, তখন শীতের লক্ষণ সকল দেখা দিয়াছিল, এখন সে সব লক্ষণ আর দেখিতে পাই না। এখন প্রভাতে, একপ্রকার নূতনতর অবসাদ অনুভব করা যায়; মনে হয়, নদীর জলও যেন একটু গরম হইয়াছে; ভারতের সূক্ষ্ম মলমল্‌-শাড়ী-পরিহিতা, দীর্ঘকুন্তলা স্নান-রতা রমণীগণ গঙ্গার জলে আজকাল একটু বেশীক্ষণ থাকিতেছে। স্নানার্থী ছোট ছোট পাখীর ঝাঁকে নদী আচ্ছন্ন; পায়রা, চড়াই, সকল রঙেরই পাখী দলে দলে থাকিয়া, পূজা-রত ব্রাহ্মণদের মধ্যে ঝাঁপাইয়া পড়িতেছে; তাহাদের চক্‌চকে পিত্তল-ঘটির উপর, তাহাদের ফুলের মালার উপর আসিয়া বসিতেছে; নৌকার সমস্ত কাছির উপর পায়ের নখ বাধাইয়া রহিয়াছে এবং পূর্ণকণ্ঠে গান করিতেছে। পবিত্র গাভীগুলা এখন আরও অলস হইয়া পড়িয়াছে, ঘাটের সিঁড়ির নীচে রদ্দুরে আরামে শুইয়া আছে; এইখানে বালকেরা আসিয়া উহাদিগকে আদর করিতেছে, তাজা ঘাস দিতেছে, সবুজ খাক্‌ড়া দিতেছে।

 প্রতিদিনের ন্যায় আজও সমস্ত বারাণসী এইখানে উপস্থিত; সমস্ত নগ্ন-গাত্র লোক, উচ্চবর্ণের সমস্ত পিত্তল-মূর্ত্তি,—তটস্থ বিশাল সোপানধাপের উপর, অপূর্ব্ব আতপত্রের ছায়াতলে, যেখানে ষড়্‌ভুজ দেবতারা বাস করে সেই প্রস্তরের চতুষ্কমণ্ডপের মধ্যে, অথবা ভরপূর রদ্দুরে, ভাসন্ত তক্‌তার উপর ও জলের মধ্যে সমবেত হইয়াছে।

 শুধু আমিই গঙ্গার উপর, এই সময়ে আরাধনা করিতেছি না, শুধু আমিই স্নান, প্রণতি, জুঁই ও গেঁদা ফুলের নৈবেদ্যদান প্রভৃতি পূজার কোন অনুষ্ঠানই করিতেছি না। প্রত্যেক ডিঙ্গিনৌকার উপর, প্রত্যেক সোপান-ধাপের উপর, প্রতিদিন প্রভাতে এই আনন্দ-উৎসব আরম্ভ হয়; এই ভক্তবৃন্দের মধ্যে আমার কোন স্থান নাই; তাহাদের এরূপ তাচ্ছিল্যভাব, যে, আমার দিকে উহারা একবার চাহিয়াও দেখে না; এখন ভ্রমণের সুবিধা হইয়াছে, ভারতের দ্বার সকলের নিকটেই উন্মুক্ত, পর্য্যটকের বন্যায় বারাণসী এখন পরিপ্লাবিত, কিন্তু এই পর্য্যটকদিগের মধ্যে আমি নগণ্যভাবে চলিয়াছি...আমি প্রথম যখন এখানে আসি, তখন আমি যেরূপ ছিলাম, এখন আর আমি সে-আমি নই; তত্ত্বজ্ঞানীদের গৃহে থাকিয়া, এমন একটি ভাব আমার মনে মুদ্রিত হইয়া গিয়াছে, যাহা কখনই বিলুপ্ত হইবার নহে। আমি “দ্বারদেশের বিভীষিকাগুলা” পার হইয়াছি এবং এক্ষণে শান্তভাবে, আত্মসমর্পণ করিয়া, অভিনব তত্ত্বগুলির ঈষৎ আভাস পাইতেছি। অনেকদিন পর্য্যন্ত অনন্তকালকে আমি উপলব্ধি করিতে পারি নাই, কিন্তু যখন হইতে এই অনন্তকালের মূর্ত্তি, আর এক আকারে, আমার সম্মুখে আবির্ভূত হইল, তখন হইতেই সমস্ত জিনিষেরই ভাব বদলাইয়া গেল,—জীবনের ভাব বদলাইয়া গেল, মৃত্যুরও ভাব বদলাইয়া গেল।

 কিন্তু তবু (তত্ত্বজ্ঞানীদের ভাষা অনুসারে) “জাগতিক মায়ায়’’ এখনও আমি আচ্ছন্ন! সমস্ত পার্থিব ও ক্ষণস্থায়ী বিষয় সম্বন্ধে সন্ন্যাস ও বৈরাগ্যের অঙ্কুর তাঁহারাই আমার অন্তরে নিহিত করিয়াছিলেন। বারাণসী যেমন একদিকে ধর্ম্মবিষয়ে গুহ্যতন্ত্রী, তেমনি আবার পার্থিব বিষয়ে ইন্দ্রিয়োন্মাদক। বারাণসীর সমস্ত লোক কেবল পূজাঅর্চ্চনা ও মৃত্যুরই চিন্তা করে; ইহা সত্বেও, বারাণসীর সমস্ত পদার্থই যেন নেত্র প্রভৃতি ইন্দ্রিয়গণকে ফাঁদে ফেলিবার জন্য জাল বিস্তার করিয়া রাখিয়াছে। আমি জানি না, এরূপ স্থান আর দ্বিতীয় আছে কিনা। বারাণসী যেমন মানুষকে একদিকে ত্যাগের দিকে,—তেমনি আবার তাহা হইতে দূরে—ভোগের দিকেও সত্ত্বর লইয়া যাইতে সমর্থ। আলোক, বর্ণচ্ছটা, আর্দ্র শাড়ী-পরিহিতা, অর্দ্ধনগ্না মদালসনয়না নবযুবতী—এই সমস্তই ইন্দ্রিয়ের ফাঁদ। পুরাতনী গঙ্গানদীর বরাবর ধারে-ধারে ভারতের অতুলনীয় নারীরূপের হাট বসিয়াছে...

 আমার আদেশের অপেক্ষা না করিয়াই আমার মাঝিমাল্লারা প্রতিদিনের ন্যায় আজও নৌকাকে আবার উজান বাহিয়া লইয়া গেল। আমরা সেই পুরাতন প্রাসাদ-অঞ্চলের সম্মুখে উপনীত হইলাম। স্থানটি অতীব নির্জ্জন ও ধ্যানচিন্তার অনুকূল...আজ অপরাহ্নে তত্ত্বজ্ঞানীদের সেই ক্ষুদ্র গৃহে আবার প্রত্যাগমন করিব; ভয়-মিশ্রিত একটা মনের টানে আমি সেইখানে যাইতেছি। তাঁহাদের যে উপদেশ প্রথমে আমার চিত্ত আকর্ষণ করিতে পারে নাই, আমার নিকট বীভৎস-ভীষণ বলিয়া মনে হইয়াছিল, এখন তাহাই ক্রমশ আমার মনকে অধিকার করিতেছে; ইহারই মধ্যে তাঁহারা আমার পূর্ব্ব-জীবনের কেন্দ্রটিকে টলাইয়া দিয়াছেন; মনে হয় যেন সেই মহা বিশ্বাত্মার সহিত বিলীন করিবার জন্য, তাঁহাদেরই ন্যায়, আমার অন্তরস্থ ক্ষুদ্র আত্মাটিকেও তাঁহারা ছেদন করিয়াছেন...

 তত্ত্বজ্ঞানীরা বলেন-“যাহা তোমা হইতে ভিন্ন, যাহা তোমার আত্মার বাহিরে অবস্থিত, তাহাই তোমার কামনার বিষয় হইতে পারে; কিন্তু যদি তুমি জানিতে পার যে, তোমার চৈতন্যের অন্তর্গত সমস্ত বিষয় তোমাতেই রহিয়াছে, এবং সমস্ত বিশ্বের সার বস্তুটি তোমার মধ্যেই অবস্থিত, তখন তোমার সমস্ত কামনা তিরোহিত হয় এবং সমস্ত শৃঙ্খল বিলীন হইয়া যায়।”

 “স্বরূপত তুমি ঈশ্বর। এই সত্যটি যদি তোমার হৃদয়ে মুদ্রিত করিতে পার, দেখিবে,—যাহা হইতে সমস্ত দুঃখ যাতনা সমুদ্ভত হয়, সেই মায়াময় সসীমভাব সমূহ—সেই পৃথক্‌ সত্তার বাসনা-সকল স্খলিত হইয়া পড়িবে।...”

 সেই রহস্যময় পুরাতন প্রাসাদের ধার দিয়া আমরা চলিয়া গেলাম। যাহারা জলের উপর চুল আছড়াইয়া—পরে সেই চুল কাঁধের উপর ফেলিয়া দেয়—আর চুল হইতে জল ঝরিয়া পড়ে—সেই সব রমণীদের আর দেখিতে পাইলাম না; ঘাটের সিড়িতে—অন্ধকারের উচ্চ দেয়ালের পাদদেশে, কেহই নাই। কিন্তু হঠাৎ একটা দ্বার উদ্‌ঘাটিত হইল—রাজপ্রাসাদের নিম্নতল-গহ্বরের গুরুভার বৃহৎ দ্বার;—এক মৌসমের জন্য, এই গহ্বরটি প্রতিবৎসর নদীর জলে নিমজ্জিত থাকে। সৌর করে উদ্ভাসিত হইয়া, একটি রমণী দ্বারদেশে আসিয়া দাঁড়াইল;—এই সব বিষন্ন প্রকাণ্ড প্রস্তর-রাশির মধ্যে একটি ক্ষুদ্র বিদ্যুন্ময়ী স্বপ্নমূর্ত্তি। পরিধানে রূপালি জরির পাড়ওয়ালা বেগ্‌নি রঙ্গের একখানি শাড়ী—এবং নারাঙ্গীজর্দ্দা রঙ্গের একটি ওড়্‌না। ওড়নাখানি রোমক-মহিলাদের ন্যায় মস্তকের কেশের উপর ন্যস্ত;—সম্মুখস্থ জনশূন্য সমভূমির দিকে তাকাইয়া না জানি কি দেখিতেছে, এবং চোখ্‌ ঢাকিবার জন্য নগ্নবাহু উঠাইয়া রহিয়াছে—সেই ভারত-সুলভ বড় বড় চোখ্‌—যাহার মধ্যে কি একটা অনির্ব্বচনীয় মোহিনী-শক্তি আছে। এই সব বেগ্‌নি ও জর্দ্দারঙের বস্ত্র,—উহার সুন্দর বক্ষদেশ, উহার সুনম্য নিতম্বের রেখা-নিচয় ফুটাইয়া তুলিয়াছে; উহার তরুণ দেহের সহিত সমস্তই বেশ মিশ্‌ খাইয়াছে…

 তত্ত্বজ্ঞানীরা আমাকে বলিয়াছিলেন-“তিনিই আমি, আমিই তিনি, এবং আমরা ঈশ্বর”…বোধ করি, যেন তাঁহাদের সেই অবিচলিত প্রশান্ত ভাব, আমাকেও আচ্ছন্ন করিতে আরম্ভ করিয়াছে।

 অনেকক্ষণ ধরিয়া আমি উহাকে নিরীক্ষণ করিলাম, আমার মন বিচলিত হইল না, আমার মনে কোন প্রকার আক্ষেপ কিংবা বিষাদের ছায়া পড়িল না; নবযৌবনা ভগিনীর রূপলাবণ্যে যেরূপ গর্ব্ব অনুভব করা যায়, সেইরূপ গর্ব্বভরে আমি তাহাকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিলাম; একটা ঘনিষ্ঠতর ভ্রাতৃ-বন্ধনে আমরা পরস্পরের সহিত আবদ্ধ হইলাম; এবং আজিকার প্রভাত, জগতের উপর যে অমেয় উজ্জ্বল মহিমাচ্ছটা বিকীর্ণ করিয়াছে, আমরা উভয়ে মিলিয়া যেন তাহা সম্ভোগ করিতেছি; আমরাই আলোক, আমরাই বহুমুখী প্রকৃতি, আমরাই বিশ্ব-আত্মা। আজিকার এই বিরল মুহূর্ত্তে, আমার সম্বন্ধে এই কথা বলা যাইতে পারে;—“যে সব মায়াময় সসীমভাব হইতে পৃথক সত্তার বাসনাদি উৎপন্ন হয়”—সেই সসীমভাবগুলা স্খলিত হইয়াছে…