ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ/শ্রীরাগমের অভিমুখে
শ্রীরাগমের অভিমুখে।
যে পান্থনিবাসে আমি আশ্রয় লইয়াছি, উহা পূৰ্ববর্ণিত নিঃসঙ্গ শৈলটি হইতে প্রায় দেড় ক্রোশ, এবং শ্রীরাগমের বৃহৎ মন্দির হইতে তিন ক্রোশ দূরে। ইহা অরণ্যমধ্যস্থিত একটি তরুশূন্য রৌদ্রস্নাত মুক্ত পরিসরের মধ্যে অবস্থিত। এখানে একজাতীয় “লজ্জাবতী লতা-গাছ আসিয়া তালবৃক্ষের স্থান অধিকার করিয়াছে। উহার পাত এত অল্প ও এত সূক্ষ্ম যে, উহাতে কিছুমাত্র ছায়া হয় না। চারি দিকেই অবসাদক্লিষ্ট ঝোঝাড়, শুষ্ক দগ্ধ তৃণরাশি। শুষ্কতা-প্রযুক্ত এক্ষণে ভারতের সমস্ত উত্তর প্রদেশ, সমস্ত রাজস্থান অরণপথে অগ্রসর; সেই অসাধারণ শুষ্কতার একটু নমুনা যেন এই চিরআ চিরশ্যামল দক্ষিণ দেশেও আসিয়া পড়িয়াছে।
আমার আবাস হইতে শ্রীরাগমে যাত্রা করিবার সময়, যে নগরটির মাথার উপরে পূর্ব্ববর্ণিত শৈলটি ঝুঁকিয়া রহিয়াছে—সেই নগরটির মধ্য দিয়া আমাকে যাইতে হইল। তাহার পর, দুই ঘণ্টা কাল গাড়ীতে তাল প্রভৃতি তরুপুঞ্জের নীচে দিয়া কতকগুলি মন্দিরের নিকট উপনীত হইলাম। এই মন্দিরগুলি, বলিতে গেলে, আসল মন্দিরটির পূৰ্বেদ্যিোগমাত্র।
এই মন্দিরগুলি বিভিন্ন যুগের ও বিভিন্ন আকারের।—ইহারা যেন সাদাসিধা ও ক্ষোদিত বিবিধ প্রস্তরের উদ্দাম বিলাসলীলা। ভক্তগণ সাগ্রহে ও উৎসাহভরে এখানে আসিয়া ফুল ও ফুলের মালা রাখিয়া যাইতেছে। এ মালাগুলি কল্যকার উৎসবের জন্য অতি অপূর্ব্ব। প্রত্যেক প্রবেশপথে, প্রত্যেক তোরণপ্রকোষ্ঠে, বিষ্ণুদেবের (মহাদেবের?) ভীষণ ত্রিশূলগুলি সাদা ও লাল রঙে টাটকা রং করা হইয়াছে। এই সকল মনুষ্যদিগেরও ললাটে ত্রিশূলচিঃ অঙ্কিত। এখানকার কোনও কোনও তালবন বিষ্ণু দেবের উদ্দেশে বিশেষরূপে উৎসর্গীকৃত, এবং বিষ্ণুদেবেরই নিজস্ব রঙে অনুলিপ্ত। স্তম্ভের ন্যায় মসৃণ প্রত্যেক বৃক্ষকাণ্ড সাদা ও লাল রঙে রঞ্জিত; -কোথায় যে মন্দিরের শেষ ও বনের আরম্ভ, তাহা বুঝা দুষ্কর। সমস্ত প্রদেশটিই যেন একটি বিশাল ভজনালয়।
অবশেষে আসল মন্দিরে আসিয়া পৌছিলাম। মন্দিরটি প্রকাণ্ড, এবং উহার সাতটি ঘের। প্রথম ঘেরটির পরিধি তিন ক্রোশ। উহার মধ্যে ২১টি মন্দির;—মন্দিরের চূড়াগুলি ৬০ ফুট পরিমাণ আকাশ ভেদ করিয়া উদ্ধে উঠিয়াছে।
মন্দিরগুলির প্রকাণ্ডতা ও প্রাচুর্যের মধ্যে যেন আত্মহারা হইয়া যাইতে হয়; উহাদের আত্যন্তিক বহির্বিকাশে অন্তরাত্মা যেন ক্লিষ্ট হইয়া পড়ে। উহাদের আকার এত বৃহৎ, এবং সূক্ষ্ম কারুকার্যও এত প্রচুর যে, তৎসমস্ত মনোমধ্যে ধারণা করা দুষ্কর। ভারতবর্ষ-সম্বন্ধে যাহা কিছু পাঠ করা গিয়াছিল, যাহা-কিছু জানি বলিয়া বিশ্বাস ছিল, পরীস্থানের নাট্যদৃশ্য ইতপূৰ্বে যাহা-কিছু দেখিয়াছিলাম, সমস্তই এই চমৎকারজনক দৃশ্যের নিকট হার মানে। ভারতবর্ষীয় পুষ্পের নিকট আমাদের ছোট ছোট সুন্দর ফুলগুলি যেরূপ,–এই সকল লাল পাথরের রাশি-রাশি প্রকাণ্ড শুপের নিকট, এই সকল বিংশতিবাহু বিংশতিমুখ দেবতাদিগের নিকট, আমাদের সাদাটে রঙ্গের ছোট-ছোট প্রস্তরে গঠিত, “সেণ্ট” ও “এঞ্জেলে” ভূষিত ক্যাথিড্রাল গির্জ্জাগুলিও তদ্রুপ।
প্রথম ঘেরটি যার-পর-নাই বিরাট প্রকাণ্ড; উহা মন্দিরের অন্যান্য অংশ নির্ম্মিত হইবারও বহুপূৰ্বে বিরচিত—কোনও দুজ্ঞেয় পুরাকালের সামিল বলিয়া মনে হয়। কোন এক যুগের লোকেরা “ব্যাবেল” মন্দিরের মত একটা প্রকাণ্ড মন্দির এখানে নির্মাণ করিবে বলিয়া কল্পনা করিয়াছিল, কিন্তু মন্দিরটি সমাপ্ত না হইতে হইতেই, তাহাদের কল্পনা-বত্নি বোধ হয় নিৰ্বাপিত হইয়া যায়। যে তোরণের মধ্য দিয়া এই ঘেরের ভিতরে প্রবেশ করিতে হয়, উহার খিলান ৪০ ফুটের উদ্ধে বিলম্বিত; এবং উহা ১৩১৪ গজ পরিমাণ—দীর্ঘ অখণ্ড প্রস্তরসমূহে নির্মিত। উহার শীর্ষদেশে একটি ত্রিকোণাকৃতি অসমাপ্ত চূড়ার তলদেশের নিদর্শন এখনও দৃষ্ট হয়। ঐচুড়া সমাপ্ত হইলে, একটা ভীষণ প্রকাণ্ড অসম্ভব ব্যাপার হইয়া উঠিত, সন্দেহ নাই। সমস্তই তাবৎ লোহিত বর্ণে রঞ্জিত। এবং উহার খোদাই-কার্যখচিত আলিসার উপর কতকগুলি পবিত্র টিয়া পাখী সপরিবারে বাস করে;—মনে হয়, যেন উহাতে উজ্জ্বল সবুজের কতকগুলি দাগ পড়িয়াছে।
তোরণগুলির অপর দিকে, মন্দিরের উদার প্রশস্ত বীথিসমূহ প্রসারিত; ক্রমপরম্পরাগত অন্যান্য ঘেরগুলির মধ্য দিয়া এই সমস্ত বীথিগুলি বরাবর চলিয়া গিয়াছে। উহাদের দুই ধারে ধর্ম্মসংক্রান্ত বিবিধ ইমারৎ, মেছো-, পুষ্করিণী, বাজার, কুলুঙ্গীর মধ্যে আসীন বিবিধ দেবমূর্তি, উচ্ছি তৃ-স্তম্ভ প্রস্তরগঠিত দ্বারহীন সেকেলে-ধরণের মণ্ডপগৃহ;—এই মণ্ডপগূহের থাম-গুলি ভারতীয় ধরণের—চতুমুখী; খিলানপার্শ্বের ‘ঠে’-স্বরূপ, থামের মাথাগুলি কতকগুলি বিকটাকার মূর্ত্তিতে গঠিত।
প্রত্যেক ঘেরের তোরণের মাথার উপর সেই একই রকম, বর্ণনাতীত, গুরুভার ত্রিকোণাকৃতি চূড়া—৬০ ফুট উচ্চ। ১৫ “থাক্” প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড দেবমূর্ত্তি সারি সারি উপর্যপরি স্থাপন করিয়া এই চূড়াটি নির্মিত হইয়াছে। ত্রিদিববাসিগণ অযুত চক্ষু দিয়া উপর হইতে অবলোকন করিতেছেন-অযুত অঙ্গের বিবিধ ভঙ্গী করিতেছেন। কতকগুলি দেবতা স্বীয় দেহের উভয় পার্শ্ব হইতে বিংশতি বাহু হাত-পাখার মত প্রসারিত করিয়া আছেন। কঁহাদের মাথায় মুকুট, হস্তে অসি, বিবিধ প্রকারের সাঙ্কেতিক পদার্থ, পদ্মফুল, অথবা নরমুণ্ড। তাহাদের ঘন পংক্তির মধ্যে নানা প্রকার কাল্পনিক পও পরস্পরের সহিত জড়াজড়ি ভাবে রহিয়াছে;—অসম্ভব-বৃহৎ-পুচ্ছধারী ময়ূর অথবা পঞ্চশীর্ষ ভুজঙ্গ। তা ছাড়া, পাথরগুলা এমন ভাবে উত্তীর্ণ এরূপ গভীর ভাবে খোদিত যে, প্রত্যেক প্রধান ও আনুষঙ্গিক মুক্তি, সমগ্র মূর্ত্তিসমষ্টি হইতে যেন স্বতন্ত্র বলিয়া মনে হয় যেন উহাদের প্রত্যেককে পৃথক করিয়া খুলিয়া লওয়া যাইতে পারে। এই সমস্ত মূর্তি-সংঘাত আকাশ ভেদ করিয়া উন্ধে উঠিয়াছে, এবং ক্রমশঃ সরু হইয়া, সুতীক্ষ্ণ শূলাগ্রের ন্যায়, সারি-সারি কতকগুলি বিন্দুমাত্রে পর্য্যবসিত হইয়াছে। সমস্ত পদার্থ, সমস্ত জীবজন্তু, সমস্ত নগ্নমূর্ত্তি, সমস্ত পরিচ্ছদ, সমস্ত ভূষণ, একই অপরিবর্তনীয় রঙ্গে রঞ্জিত। কত কত শতাব্দীর সহিত যুঝাবুঝি করিয়া এই রংটি স্বকীয় উজ্জ্বলতা এখনও পর্য্যন্ত রক্ষা করিয়াছে। এখানে রক্ত-লোহিত বর্ণেরই প্রাধান্য। দূর হইতে দেখিলে, প্রত্যেক চূড়াই লাল বলিয়া মনে হয়। কিন্তু কাছে আসিলে, অন্য রঙ্গেরও মিশ্রণ দৃষ্ট হয়;—উহাতে সবুজ, সাদা ও সোনালি রঙ্গের মিশ্রণ রহিয়াছে।
দেবকার্যে নিযুক্ত যে সকল ব্রাহ্মণ অতীব শুদ্ধাচারী, তাহারাই মন্দিরের শেষ ঘেরটির মধ্যে সপরিবারে বাস করিবার অধিকারী। এই শেষ তোরণের উভয় পার্শ্বে কতকগুলি জীবন্ত হস্তী প্রস্তর-চাতালের উপর শিকল দিয়া বাঁধা। এই বৃদ্ধ হস্তীগুলি অতীব পবিত্র বলিয়া পরিগণিত। এখন ইহারা আনন্দে বৃংহিতধ্বনি করিতেছে। ভক্তগণপ্রদত্ত তরুণ বৃক্ষের ডালপালা চর্বণ করিতেছে। যেমন এক দিকে অসংখ্যমূর্ত্তিসমন্বিত এই সমস্ত গুরুভার মন্দিরচূড়ার গম্ভীর মহিমা, তেমনই আবার। চতুষ্পর্শ্বে কতকগুলা নিতান্ত গ্রাম্য জিনিস থাকায় বড়ই বিসদৃশ বলিয়া মনে হয়; কতকগুলি চালা-ঘর, কতকগুলা ঘোট ঘোট সেকেলে শকট, আদিমকালের শ্রমকার্য্যোপযোগী কৃতকগুলা সামগ্রী ইতস্ততঃ পড়িয়া: রহিয়াছে। এই পুরাতন প্রকারের পাদদেশে সমস্তই ভগ্ন চূর্ণ, সমস্তই বিলুপ্তমুখশ্রী। না জানি কোন্ সুদূর অতীতের নৃশংস বর্বরতা এই প্রাকারটির উপর ধ্বংসের ছাপ রাখিয়া গিয়াছে।
সূর্য অস্তগত। দ্বারদেশ পার হইয়া ভিতরে প্রবেশ করিব-সে সময় আর নাই। গুরুভার প্রস্তর-খিলানের নিমে, মন্দিরের অফুরন্ত মণ্ডপগুলির মধ্যে সন্ধ্যা দেখা দিয়াছে। তবে যে আমি প্রবেশ করিতেছি, সে কেবল কল্যকার রথযাত্রার কথা মন্দিরপুরোহিতদিগের নিকট জিজ্ঞাসা করিবার নিমিত্ত। ক্ষুদ্র চলন্ত ছায়ামূর্ত্তিবৎ ঐ সকল পুরোহিত, স্তশ্রেণীর অসীমতার মধ্যে কোথায় যেন হারাইয়া গিয়াছে।
উহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিয়া আমি যে কথা জানিতে পারিলাম, তাহা অতীব অস্পষ্ট ও পরস্পরবিরোধী। যথা,—বিষ্ণুদেবের রথযাত্রা আজ রাত্রেই, কিংবা আরও বিলম্বে আরম্ভ হইবে। দিন ক্ষণের উপর, তিথি নক্ষত্রের উপর সমস্তই নির্ভর করিতেছে।” * * * আমি বেশ বুঝিতে পারিতেছি, উহাদের ইচ্ছা নয়, আমি এই উৎসবে যোগ দিই।
এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত বরাবর দেওয়ালের ধারে ধারে দুই-সারি অদ্ভুত বিচিত্র ব্যাঘ্র, এবং স্বাভাবিক অপেক্ষা বৃহৎ রোষদীপ্ত অশ্ববৃন্দ অঙ্কিত—এইরূপ একটি গভীরনিনাদী সরু পার্শ্ব-দালানের মধ্যে, একজন অতীব সৌম্যমুর্তি বৃদ্ধ পুরোহিতের নিকট আমি সমস্ত অবগত হইলাম। তিনি বলিলেন, এই উৎসব, নিশ্চয়ই কাল সূর্যোদয়সময়ে হইবে, এবং যদি এই উৎসব দেখিতে হয়, তাহা হইলে আমাকে এইখানেই রাত্রিযাপন করিতে হইবে।
আমি তৎক্ষণাৎ গাড়ীতে উঠিয়া ক্ষুৎপিপাসানিবৃত্তির জন্য আমার বাসায় গেলাম, এবং রাত্রি যাপন করিবার নিমিত্ত আবার মন্দিরে ফিরিয়া আসিলাম।
কিছু আহাব করিয়া পান্থশালা হইতে যখন বাহির হইলাম, তখন মধুর চন্দ্রমা রজতকিরণ বর্ষণ করিতেছেন। এই কিরণচ্ছটা এত শুভ্র “যে মনে হয় যেন, তৃণশূন্য নগ্ন ভূমির উপর—সুধালিপ্ত প্রাচীরের উপর অজস্র তুষারপাত হইতেছে। *
আমাদের শীতদেশীয় বৃক্ষের ন্যায়, চতুর্দিকস্থ লজ্জাবতী লতাগাছের মধ্যে, চন্দ্রের পাণ্ডুর কিরণ সর্ব্বতোভাবে প্রবেশ করিয়াছে। কেন না, উহার শাখাপল্লব অতীব বিরল ও সূক্ষ্ম প্রায় দৃষ্টির অগোচর। নরম পালকের থোপনার মত, উহাদের ছোট ছোট ফুলগুলিও যেন পড়ন্ত তুষারকণার অনুকরণ করিতেছে—ভূতলস্থ জমাট হিমকণার অনুকরণ। করিতেছে। মনে হয় যেন, শীতপ্রধান উত্তর দেশের একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য এই অত্যুষ্ণ দেশে পথ ভুলিয়া আসিয়া পড়িয়াছে। কিন্তু এখন আর আমি কিছুতেই বিস্মিত হই না—কেন না, এ দেশে যাহাই দেখি, তাহাই অপূর্ব্ব,সমস্তই যেন বিচিত্র ছায়াচিত্রপরম্পরা,—সমস্তই পরিবর্তনশীল মৃগতৃষ্ণিকা।
কিন্তু এই শীতের বিভ্রমটি ক্ষণিক; কেন না, এই শুষ্ক তৃণহীন ভূমিখণ্ড হইতে বাহির হইবামাত্র, বৃহৎ তালজাতীয় বৃক্ষের, বটবৃক্ষের, Bindweed বৃক্ষের পরিস্ফুট ছায়াতলে আসিয়া উপনীত হইলাম।
এই সময়ে উৎসব-দীপাবলীর আলোকচ্ছটায় নগরটি উদ্ভাসিত। সমস্ত অবারিত মন্দিরগুলি, এমন কি, আলমারীর ন্যায় সংকীর্ণ ও ক্ষুদ্রতম মন্দিরগুলিও, ছোট ছোট প্রদীপে ও হলদে ফুলের মালায় সুসজ্জিত। শ্রীরাগমের অভিমুখে আমার গাড়ী ছুটিয়া চলিয়াছে; একটার পর একটা কত দৃশ্যই আসিতেছে, কিন্তু সমস্তই পরস্পরের সহিত মিশিয়া যাইতেছে। * * *
আবার এই সময়েই “রামদানের মাস; সুতরাং মুসলমানের মধ্যেও এখন উৎসব আরম্ভ হইয়াছে! যে মসজিদটির সম্মুখে তুরীভেরী বাদ্যের সহিত, নানা রঙ্গের অসংখ্য উষ্ণীষ চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে, সেই মজিটি অসংখ্য প্রজালিত দীপকাঠিতে আচ্ছন্ন। পরী-দৃশ্যটি আরও সম্পূর্ণ করিবার জন্যই যেন সাদা প্রাচীরগুলি, স্তম্ভশ্রেণী, লতাপাতা অঙ্কিত আরবী-ধরণের নক্সাদি, প্রজ্বলিত দীপাবলী,—সমস্তই একটি লাল রঙ্গের সূক্ষ্ম মলম বস্ত্রখণ্ডে আচ্ছাদিত; তাহাতে, মজি একটু ঘোর-ঘোরভাব ধারণ করিয়াছে; উহাতে গোলাপী রঙ্গের ছায়া পড়িয়াছে; বোধ হইতেছে, যেন মজিটি আরও একটু দূরে সরিয়া গিয়াছে; সমস্ত বস্তুর আকারে ও দূরত্বে যেন এক প্রকার অস্পষ্ট অনিশ্চিতভাব আসিয়া পড়িয়াছে; কেবল মর্জিটির ঈষৎনীলাভ তুষারধবল “মিনার” চূড়াগুলি ও গম্বুজটি এই রঙ্গিন বস্ত্রের মধ্য হইতে মাথা বাহির করিয়া রহিয়াছে—উহাদের অর্ধচন্দ্রাকৃতি ধ্বজাগ্রগুলি চালোকে ঝিকমিক করিতেছে; এবং সমস্ত মিলিয়া এক সঙ্গে তারকা-খচিত আকাশের অভিমুখে সমুখিত হইয়াছে।