ইস্তাহার/প্রতিবাদ
ধনীর প্রাসাদে দামী আসবাবের মতো
পালিত সৌখীন কুকুর
সকালে সন্ধ্যায় মনিবের সঙ্গে নিয়মিত ভ্রমণে বের হয়।
প্রাসাদের সামনে পথের জঞ্জালের পাশে।
অনাহারে কিংবা কখনও অর্ধাহারে।
মুমূর্ষু হাঁপানী রোগীর মতে ধুঁকতে ধুঁকতে
লম্বা জিহ্বা নাচায় পথের কুকুর;
নির্জন দুপুরে নির্জীবের মতো ঝিমোয়।
প্রাসাদের কুকুরের দিকে কিন্তু সে পরম কৌতুকে
রোজই তাকিয়ে থাকে, আর ভাবে তার সৌভাগ্যের কথা।
বিলাসী কামরায় বাস। সোহাগের ধন।
অনায়াসে পোষা কুকুর পায় পুষ্টিকর খাদ্য।
তার ভাগ্যে ডাষ্টবিনের ঘৃণ্য কাড়াকড়ি মারামারি,
তারপর হয়ত কোন দিন সামান্য খাদ্য মেলে।
কুৎসিত অবাঞ্চিত কুকুরটা অনাদরে বাঁচে;
পথের ওপর কোনদিন সে নিশ্চয়ই মরে পড়ে থাকবে
অনাহারের যুদ্ধের শেষে পরাজয়ের গ্লানি বুকে নিয়ে।
পথের মানুষের দিকে তাকিয়ে সে ভাবে,
মানুষে মানুষেও আছে এই পার্থক্য, এই অবিচার।
বস্তুতঃ, মানুষের সমাজেই এমন ব্যবস্থার উৎপত্তি।
একদিকে মানুষেরা বাঁচে। অন্যদিকে মানুষেরাই মরে।
পোষা কুকুর যথাসময়ে তার মনিবের সঙ্গে
আজও বেরিয়েছে দৈনন্দিন ভ্রমণে,
পথের কুকুর তার চিরদুর্বল কণ্ঠকে
হাজার গুণ সবলতর করে কর্কশ স্বরে ডেকে উঠল, 'ঘেউ'!
পোষা কুকুর সেদিকে ভ্রূক্ষেপই করে না।
এবার তেড়ে গিয়ে সে ডাকল, ‘ঘেউ ঘেউঘেউ!
বিলাসী কুকুর তার মনিবের গা ঘেঁষে
নিরাপদ আশ্রয় পেতে চাইল।
মনিব তাঁর হাতের বাঁকা ছড়িখানা উঁচিয়ে ধরে
বিরক্তিতে তেড়ে এলেন।
কিন্তু পথের কুকুর বেপরোয়া।
বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে তার চোখে।
শুষ্ক কণ্ঠে 'ঘেউ ঘেউ' আর্তনাদে
মরিয়া হয়ে ছুটে গিয়ে
লে কামড়ে দিল পোষা কুকুরের তৈলাক্ত ঘাড়ে।
মনিবের বাঁকা ছড়ির নির্দয় আঘাত তার হাড়সর্বস্ব পিঠে
নির্মমভাবে দাগ কেটে দিল।
তবু অনেক দিনের অনেক বঞ্চনার অন্যায়ের বিরুদ্ধে
তার এই অকপট প্রতিবাদ।