উড়িয়া স্বতন্ত্র ভাষা নহে/চতুর্থ অধ্যায়
প্রাকৃতিক বিভাগ ও কৃত্রিম বিভাগ এ উভয়ের অনেক অন্তর। প্রাকৃতিক ব্যাপারের পরিবর্ত্ত সাধনে মনুষ্য কখনই সক্ষম হইতে পারেন না। এক্ষণে অনেকে কহিয়া থাকেন যে, উত্তরে পূর্ণিয়া ও দিনাজপুর ইহার মধ্যে অন্যতর স্থান হইতে অবরন্ধ হইয়া, পূর্ব্বে মণিপুর পাহাড়, পশ্চিমে রাজমহল গিরি ও দক্ষিণে সুবর্ণরেখা নদী এই চতুঃসীমাবর্ত্তী স্থান বাঙ্গালা ভাষার স্থান; আর সুবর্ণরেখা হইতে আরম্ভ হইয়া সমুদ্রের উপকূলবর্ত্তী গঞ্জাম পর্য্যন্ত প্রায় সমুদয় ভূভাগ ও অপর দিকে বলেশ্বরের সমীপ-বাহী নীলগিরি নামে অপর এক গিরি, ইহার মধ্যবর্ত্তী স্থান উড়িয়া ভাষার স্থান। কিন্তু পূর্ব্ব-কথিত তাম্বা বিভাগের হেতু-ভূত প্রাকৃতিক ব্যাবস্থানুসারে এরূপ বিভাগ কখনই হইতে পারে না। উত্তরে হিমালয় প্রদেশ, পূর্ব্বে মণিপুর পাহাড় ও বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণে গঞ্জাম-সমীপবর্ত্তী দীর্ঘে ৪২ মাইল ও প্রস্থে ১৫ মাইল বিস্তৃত বৃহৎ চিলকাহ্রদ, ও পশ্চিমে রাজমহল গিরি ও দক্ষিণ-পশ্চিমবাহী নীলগিরি নামে যে অপর এক গিরি প্রায় ঘাট-পর্ব্বতের নিকটবর্ত্তী হইয়াছে, ইহারই মধ্যবর্ত্তী দুর্লঙ্ঘ্য পর্ব্বত ও সাগরাদি পরিবেষ্টিত সকল স্থান, প্রাকৃতিক বিভাগানুসারে একই ভাষার স্থাম বলিয়া গণ্য হইতে পারে। ইহার বিলোপ কোন মতেই যৌক্তিক হইতে পারে না। ঐ স্থান সকলের মধ্যে ধর্ম্ম এক এবং রীতি নীতি আচার ব্যবহারও এক। ফলতঃ এরূপ কোন নৈসর্গিক কারণই দেখা যায় না যে, পূর্ব্বোক্ত প্রাকৃতিক সীমান্তবর্ত্তী স্থানের ভাষাকে পৃথক্ পৃথক্ করে। ভাষাতত্ত্ববিদ্ পণ্ডিতদিগের ভাষা-বিভাগের সমস্ত লক্ষণানুসারেই এই সমুদায় স্থানের অর্থাৎ বাঙ্গালা ও উড়িষ্যার ভাষা একই হওয়া উচিত। বাস্তবিকও তাহাই, উড়িয়া ও বাঙ্গালা স্বতন্ত্র ভাষা নহে।