উড়িয়া স্বতন্ত্র ভাষা নহে/তৃতীয় অধ্যায়
ভারতের ভাষা পরিবর্ত্তন বিষয়ে, ভাষা-বিভাগের চতুর্থ কারণ সংঘটিত হইয়াছে দৃষ্ট হয়। ইহা সর্ব্ববাদিসম্মত ও একপ্রকার সিদ্ধান্তিত হইয়া আসিয়াছে যে, আর্য্যজাতি কোন এক সময়ে ভারতবর্ষে গঙ্গার সমীপবর্ত্তী প্রদেশে আসিয়া বসতি করেন। তাঁহাদিগের ভাষা সংস্কৃত ছিল, তাঁহারা বিন্ধ্য হিমালয়ের মধ্যবর্ত্তী স্থানে বসতি করিতেন; তাঁহাদের নামানুসারেই এক্ষণে বিন্ধ্য হিমালয়ের মধ্যবর্ত্তী স্থানকে আর্য্যাবর্ত্ত কহে। ক্রমে তাঁহারা যত ব্যাপ্ত হইলেন, তাঁহাদের ভাষাও তত বিস্তৃত হইয়া আসিল। সংস্কৃত নাটক নাটিকাদি পাঠে স্পষ্টই প্রতীতি জন্মে যে, সেই সময় সকলেই সংস্কৃত ভাষায় কথা বার্ত্তা কহিতেন না; রাজা ও মুনি ঋষিরা বা তৎ সদৃশ ব্যক্তিরাই ঐ ভাষায় কথা বার্তা কহিতেন; অপরে সংস্কৃতাপভ্রষ্ট বা সংস্কৃতোত্পন্ন প্রাকৃতাদি ভাষায় কথা কহিত[১]। পরে ক্রমে ক্রমে এই উভয় ভাষা মিশ্রিত হইতে আরম্ভ হয় ও ঐ মিশ্রণেও অবাস্তরের উৎপত্তি হয়; এবং বৌদ্ধধর্ম্মবলম্বীদিগের সংস্কৃত সদৃশ পালীভাষাও ক্রমে ঐ সকলের সহিত মিলিত হইয়া পড়ে। পরে পাঠান ও মোগলেরা আসিয়া এদেশ অধিকার করে, তাহাতেও তাঁহাদিগের ভাষার সম্মিলনে ঐ সকল ভাষার বিস্তর রূপান্তর হয়। অতএব স্পষ্টই দৃষ্ট হইতেছে যে, এই রূপে ক্রমে ক্রমে বিভিন্ন জাতির সমাগমে সংস্কতাদি ও ইরাণীয় ভাষার সহযোগে এদেশীয় ভাষা বিকৃত, রূপান্তরিত ও নানা শাখায় বিভক্ত হইতে আরম্ভ হয়। হিন্দী ভাষাতে যত আরবী ও পারসী শব্দ মিশ্রিত আছে বাঙ্গালা প্রভৃতিতে তত নাই, কারণ মোগল ও পাঠানেরা দিল্লী প্রভৃতি স্থানেই বহুল সংখ্যায় বসতি করিতেন; বাঙ্গালা প্রভৃতি স্থানে তাহদের অতিরিক্ত সমাগম ছিল না বলিয়া উহাতে ঐ সকলের অতি অল্প ভাঁজ দেখা যায়।
- ↑ কাব্যাদর্শ ৩০-৩১ পৃষ্ঠা