উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/কবিতা ও গান/ব্রহ্মসংগীত
ব্রহ্মসংগীত
সিন্দুরা। তেওরা
কে ঘুচাবে হায় রে প্রাণের কালিমা রাশি,
কৃপা বারি করি সিঞ্চন।
যাবে কি দিন এইভাবে, হায় রে,
আর কবে পুরিবে প্রাণের আশা।
লুটায়ে ধরণীতলে, ডাকিলে দয়াল বলে,
তাপিত প্রাণে পায় পাপী মধুর করুণা-বারি;
আর কি আছে হে দীনহীনের সম্বল বিনা
সেই করুণাময়ের করুণা?
বেহাগ মিশ্র। কাওয়ালি
চরণ-তলে পড়ে রহিব! প্রভু হে যে ইচ্ছা তোমার!
মোরা আর কিছু নাহি জানি; প্রভু হে, যে ইচ্ছা তোমার!
বাধা নাহি ছিল কিছু দিতে শুধু দুখ, তবু দয়াময় দিলে কত সুখ,
প্রভু, দীনে নিলে কিনে, কি বলিব আর!
ভকতি করিয়া করি তব গুণগান,
সুখে দুখে দেহ পিতা পদতলে স্থান;
হউক প্রার্থনা এই জীবনের সার।
মুলতান। কাওয়ালি
জয় দীন-দয়াময়, নিখিল-ভুবন-পতি,
প্রেমভরে করি তব নাম।
আজি ভাই ভগিনী মিলি পরাণ ভরিয়া সবে
তব গুণ গাই অবিরাম।
ভকতি করিয়া নাথ পূজি তোমারে,
প্রভু গো তোমারেই চাহে সবার প্রাণ;
হাত জুড়িয়া মোরা নিয়ে প্রণতি করি, আশিস’ আশিস’ প্রাণারাম।
হায়, অন্ধ সবে মোরা চক্ষু থাকিতে নাথ, ধূলিতে পড়িয়া অসহায়;
আর কে বা আছে গো হেন, কাছে থাকিয়া সদা
ডাকে, “পাপী, আয় আয় আয়!”
রেখো না রেখো না নাথ ফেলিয়ে আঁধারে, কোথায় এলেম পথ নাহি হেরি;
প্রভু এই জগতে তব থাকি যতদিন মোরা,
তব শান্তিসুধা করি পান;
আর ভুলিয়া অপর সব মনের হরষে যেন
করি সদা ও গুণগান!
শেষে পৃথিবীর যবে ফুরাইয়ে খেলা,
তোমারি আদেশে ত্যাজিব এ দেহে;
ডাকিয়া লইও পিতা তোমার সুখের দেশে, চিরশান্তিময় যেই স্থান।
বিভাস। একতালা
বল দেখি ভাই এমন করে ভুবন কেবা গড়িল রে!
গগন ভরে তারার মাণিক ছড়ায়ে কে রাখিল রে!
উজল ঊষায় আলোক-খেলা, তাহে মোহন মেঘের মেলা,
নবীন রবি শোভন শশী হেরে নয়ন ভুলিল রে!
শীতের পবন বহে ধীরে, দোলা দিয়া নদী-নীরে,
দুলিয়ে কমল, বকুল ফুলে, সুবাস নিয়ে যায় গো হরে।
সুধায় সুখে শোভায় সুরে কে রাখিল ভুবন পুরে!
এমন দয়াল বল কে ভাই, দেহ জীবন যে দিল রে।
দয়াল আমা দয়া করে, ধরায় জনম দিলেন মোরে,
মায়ের পরাণ দিলেন দয়াল, গলায়ে ভাই আমার তরে।
দয়ার ত নাই তুলনা রে, দয়ালকে ভাই ভুলো না রে,
দয়াল মোদের বাসেন ভালো, দয়াল বল বদন ভরে!
দক্ষিণী সুর। একতালা
বালক। বরষ পরে, পিতার ঘরে, মিলিনু সকলে;
বালিকা। চল সবে ভাই, সবে মিলে গাই, জয় পিতা বলে।
বালক। সুখের দিনে, দেখ গো প্রাণে, কতই বাসনা;
বালিকা। কত সাধ মনে, পিতার চরণে, করিব অর্চনা।
বালক। শিশু যে অতি, অল্পমতি, কি জানি আমরা;
বালিকা। তবু যাহা পারি, প্রাণপণ করি, চল করি ত্বরা।
বালক। দুঃখী লোকে, কব ডেকে, পিতার বারতা;
বালিকা। কব, “আঁখি মেল, দেখ দ্বারে এল জগতের পিতা।”
বালক। ভাই বোনেতে, তাঁর কাজেতে, কত সুখে রব;
'বালিকা। কত সুখে রব, কত কিছু পাব, সকলে দেখাব!
বালক। শিশুর কথা, শুনেন পিতা, কি তাঁর করুণা!
বালিকা। মোরা তারে ছেড়ে, পাপ-লোভে পড়ে কোথাও যাব না।
সকলে। শুন গো পিতা, তোমার হেথা, রাখ গো মোদেরে;
কভু তোমা ছেড়ে, নাহি যাব দূরে, সেবিব তোমারে।
না বুঝে কভু, দোষী প্রভু হলে ও চরণে;
ক্ষমো দয়া করে, বুঝায়ো স্নেহভরে, মধুর বচনে।
কি গুণ আছে, তোমার কাছে, পারি যাইবারে;
তুমি দয়া করে, নিলে যাব তরে; প্রণমি তোমারে!
সুর: “সকাতারে ঐ কাঁদিছে সকলে”
মিশ্র। কাওয়ালি
জাগো পুরবাসি, ভগবত-প্রেমপিয়াসি!
আজি এ শুভ দিনে কি বা বহিছে করুণা-রস-মধু-ধারা,
শীতল বিমল ভগবত-করুণা-রস-মধু-ধারা।
শূন্য হৃদয় লয়ে নিরাশায় পথ চেয়ে, বরষ কাহার কাটিয়াছে?
এস গো কাঙ্গাল জন, আজি তব নিমন্ত্রণ, জগতের জননীর কাছে।
কার অতি দীন হীন বিরস বদন?
(ও গো) ধুলায় ধুসর মলিন বসন?
কে বা আছ, শুন গো বারতা,
ডেকেছেন তোমারে জগতের মাতা।