উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/টুনটুনির বই/টুনটুনি আর বিড়ালের কথা

টুনটুনি আর বিড়ালের কথা


 গৃহস্থের ঘরের পিছনে বেগুন গাছ আছে। সেই বেগুণ গাছের পাতা ঠোঁট দিয়ে সেলাই করে টুনটুনি পাখিটি তার বাসা বেঁধেছে। ‘প্রণাম হই মহারানী’

বাসার ভিতর তিনটি ছোট্ট-ছোট্ট ছানা হয়েছে। খুব ছোট্ট ছানা, তারা উড়তে পারে না, চোখও মেলতে পারে না। খালি হাঁ করে আর চীঁ-চীঁ করে।

গৃহস্থের বিড়ালটা ভারি দুষ্টু। সে খালি ভাবে ‘টুনটুনির ছানা খাব।’ একদিন সে বেগুন গাছের তলায় এসে বললে, ‘কি করছিস লা টুনটুনি?’

টুনটুনি তার মাথা হেঁট করে বেগুণ গাছের ডালে ঠেকিয়ে বললে, ‘প্রণাম হই, মহারানী!’ তাতে বিড়ালনী ভারি খুশি হয়ে চলে গেল।

এমনি সে রোজ আসে, রোজ টুনটুনি তাকে প্রণাম করে আর মহারানী বলে, আর সে খুশি হয়ে চলে যায়। ‘দূর হ লক্ষ্মীছাড়া বিড়ালনী’ এখন টুনটুনির ছানাগুলি বড় হয়েছে, তাদের সুন্দর পাখা হয়েছে। তারা আর চোখ বুজে থাকে না। তা দেখে টুনটুনি তাদের বললে, ‘বাছা, তোরা উড়তে পারবি?’

ছানারা বললে, ‘হ্যাঁ মা, পারব।’ টুনটুনি বললে, ‘তবে দেখ তো দেখি, ঐ তাল গাছটার ডালে গিয়ে বসতে পারিস কি না।’

ছানারা তখনই উড়ে গিয়ে তাল গাছের ডালে বসল। তা দেখে টুনটুনি হেসে বললে, ‘এখন দুষ্টু বিড়াল আসুক দেখি!’

খানি বাদেই বিড়াল এসে বললে, ‘কি করছিস লা টুনটুনি?


টুনটুনি বেগুন গাছে নামছে

তখন টুনটুনি পা উঁচিয়ে তাকে লাথি দেখিয়ে বললে, ‘দূর হ, লক্ষ্মীছাড়ী বিড়ালনী!’ বলেই সে ফুডুক করে উড়ে পালাল।

দুষ্টু বিড়াল দাঁত খিঁচিয়ে লাফিয়ে গাছে উঠে, টুনটুনিকেও ধরতে পারলে না, ছানাও খেতে পেল না। খালি বেগুন কাঁটার খোঁচা খেয়ে নাকাল হয়ে ঘরে ফিরল।