একেই কি বলে সভ্যতা?/প্রথম অঙ্ক/দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক

দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক।
সিক্‌দার পাড়া ষ্ট্রীট। (বাবাজীর প্রবেশ।)

 বাবাজী। (স্বগত) এই তো সিক্‌দার পাড়ার গলি, তা কই? নব বাবুর সভাভবন কই? রাধেকৃষ্ণ। (পরিক্রমণ)। তা, দেখি, এই বাড়ীটাই বুঝি হবে। (দ্বারে আঘাত)

 নেপথ্যে। তুমি কে গা? কাকে খুঁজ্‌চো গা?”

 বাবাজী! ওগো, এই কি জ্ঞানতরঙ্গিণীসভার বাড়ী?

 নেপথ্যে। ও পুঁটী দেক্‌তো লা, কোন্‌ বেটা মাতাল এসে বুঝি দরজায় ঘা মাচ্চে? ওর মাথায় খানিক জল ঢেলে দে তো।

 বাবাজী। (স্বগত) প্রভো, তোমারি ইচ্ছে। হায়, এত দিনের পর কি মাতাল হলেম্‌!

 নেপথ্যে। তুই বেটা কে রে? পালা, নইলে এখনি চৌকীদার ডেকে দেবো।

 বাবাজী। (বেগে পরিক্রমণ করিয়া সরোষে) কি আপদ। রাধেকৃষ্ণ! কর্ত্ত মহাশয়ের কি আর লোক ছিল না, যে তিনি আমাকেই এ কর্ম্মে পাঠালেন? (পরিক্রমণ)। এই দেখ্‌চি একজন ভদ্রলোক এ দিকে আস্‌চে, তা একেই কেন জিজ্ঞাসা করিনে।

(একজন মাতালের প্রবেশ।)

 মাতাল। (বাবাজীকে অবলোকন করিয়া) ওগো, এখানে কোথা যাত্রা হচ্চে গা?

 বাবাজী। তা বাবু, আমি কেমন করে বল্‌বো?

 মাতাল। সে কি গো? তুমি না সং সেজেচ?

 বাবাজী। রাধেকৃষ্ণ!

 মাতাল। তবে, শালা, তুই এখানে কচ্চিস্‌ কি? হাঃ শালা।

[প্রস্থান।

 বাবাজী। কি সর্ব্বনাশ! বেটা কি পাষণ্ড গা? রাধেকৃষ্ণ! এ গলিতে কি কোন ভদ্রলোক বসতি করে গা?—এ আবার কি? (অবলোকন করিয়া) আহাহা, স্ত্রীলোক দুটি যে দেখ্‌তে নিতান্ত কদাকার তা নয়। এঁরা কে?—হরেকৃষ্ণ, হরেকৃষ্ণ। (একদৃষ্টে অবলোকন)।

(দুইজন বারবিলাসিনীর পশ্চাতে দৃষ্টি করিতে করিতে প্রবেশ।)

 প্রথম। ওলো বামা, গুরো পোড়ারমুখের আক্কেল দেখ্‌লি? আমাদের সঙ্গে যাচ্চি বলে আবার কোথায় গেল?

 দ্বিতীয়। তবে বুঝি আস্ত্যে আস্ত্যে পদার বাড়ীতে ঢুকেচে। ভোর যেমন পোড়া কপাল, তাই ও হতোভাগাকে রেখেচিস। আমি হলে এতদিনে কুলোর বাতাস দিয়ে বিদায় কর্ত্তুম।

 প্রথম। দাঁড়া না, বাড়ী যাই আগে। আজ মুড়ো খেঙ্গরা দে বিষ ঝাড়্‌বো। আমি তেমন বান্দা নই, বাবা। এই বয়েসে কত শত বেটার নাকের জলে, চক্ষের জলে করে ছেড়েচি। চল্‌না, আগে মদনমোহন দেখে আসি; এসে ওর শ্রাদ্ধ করবো এখন।

 দ্বিতীয়। তুই যদি তাই পারবি তা হলে আর ভাবনা কি—ও থাকি, ঐ মোল্লার মতন কাচা খোলা কে একটা দড়িয়ে রয়েছে, দেখ্‌?

 প্রথম। হ্যাঁ তো, হ্যাঁ তো। এই ষে আমাদের দিকে আসচে। ওলো বামা, ওটা মোল্লা নয় ভাই, রসের বৈরিগী ঠাকুর। ঐ খে কুঁড়োজালি হাতে আছে। (হাস্য করিয়া) আহাহা, মিনষের রকম দেখ্‌ না—যেন তুলসীবনের বাঘ।

 বাবাজী। (নিকটে আসিয়া) ওগো, তোমরা বলতে পার, এখানে জ্ঞানতরঙ্গিনী সভা কোথা?

 দ্বিতীয়। তরঙ্গিণী আবার কে? (থাকি ধারণ করা হাস্য)। বাবাজী, তরঙ্গিণী তোমার বষ্টুমীর নাম বুঝি?

 প্রথম। আহা, বাবাজী, তোমার কি বষ্ট্‌মী হারয়েচে? তা পথে পথে কেঁদে বেড়ালে কি হবে? যা হবার তা হয়েচে, কি করবে ভাই? এখন আমাদের সঙ্গে আসবে তো বল?—কেমন বামা, ভেক নিতে পারবি?

 দ্বিতীয়। কেন পারব না? পাঁচসিকে পেলিই পারি। কি বল, বাবাজী।

 প্রথম। বাবাজী আর বলবেন কি? চল্‌ আমরা বাবাজীকে হরিবোল দিয়ে নিয়ে যাই। বল হরি, হরিবোল।

 বাবাজী। (স্বগত) কি বিপদ্‌! রাধেকৃষ্ণ। (প্রকাশে) না বাছা, তোমরা যাও, আমার ঘাট্‌ হয়েছে।

 দ্বিতীয়। হ্যেঁ, আমরা যাব বই কি? তোমার তো সেই তরঙ্গিণী বই আর মন উঠবে না? তা, আমরা যাই, আর তুমি এইখানে দাঁড়্‌য়ে দাঁড়য়ে কাঁদ। (বাবাজীর মুখের নিকট হস্ত নাড়িয়া) “সাধের বষ্টুমী প্রাণ হারয়েছে আমার”।

[দুইজন বারবিলাসিনীর প্রস্থান।

 বাবাজী। আঃ, কি উৎপাৎ! এত যন্ত্রণাও জাজ কপালে ছিল!—কোথাই বা সভা আর কোথাই বা কি? লাভের মধ্যে কেবল আমারি যন্ত্রণ সার। (পরিক্রমণ করিয়া) যদি আবার ফিরে যাই তা হলে কর্ত্তাটী রাগ করবেন আমি যে ঘোর দায়ে পড়লেম্‌! এখন করি কি? (চিন্তাভাবে অবস্থিতি, পরে সম্মুখে অবলোকর করিয়া) হ্যেঁ, ভাল হয়েচে, এই একটা মুস্কিলআসান আস্‌চে, ওর পিছনের আলোয় আলোয় এই বেলা প্রস্থান করি—না— ওমা, এজে সারজন সাহেব, রোঁদ ফিরতে বেরয়েচে দেখচি, এখানে চুপ করে দাঁড়য়ে থাকলে কি জানি যদি চোর বল্যে ধরে? কিন্তু এখন যাই কোথা? (চিন্তা) তাই ভাল, এই আড়ালে দাঁড়াই—ওমা, এই যে এসে পড়লো। (বেগে পলায়ন)।

(সারজন ও চৌকীদারের আলোক লইয়া প্রবেশ।)

 সার। হাল্লো! চওকীডার! এক আডমী ওঢার ডৌড়কে গিয়া নেই?

 চৌকী। নেই ছাব, হামতো কুচ নেহি দেখা।

 সার। আলবট্‌ গিয়া, হাম্‌ ডেকা। টোম্ জলডী ডওড়কে যাও, উষ্টরফ ডেকো, যাও—যাও—জলডী যাও, ইউ সুওর।

 চৌকী। (বেগে অন্যদিকে গমন করিতে করিতে) কোন হেয় রে, খাড়া রও।

 সার। ড্যাম ইওর আইজ—ইঢার, ইউ ফুল।

 চৌকী। হাঁ ছাব, ইধর্‌। (বেগে প্রস্থান)।

 সার। (ক্রোধে) আ! ইফ আই ক্যেন ক্যেচ হিম—

 নেপথ্যে। (উচ্চৈঃস্বরে) পাকড়ো। পাকড়ো—উহুহুহুহু—

 নেপথ্যে। আমি যাচ্চি বাবা, আর মারিস নে বাবা, দোহাই বাবা, তোর পায়ে পড়ি বাবা।

 নেপথ্যে। শালা চোট্টা, তোমারা ওয়াস্তে দৌউড়কে হামারা জন গীয়া।

 নেপথ্যে। উহুঁহুঁহুঁহুঁ—বাবা, আমি চোর নই বাবা, আমি ভেকধারী বৈষ্ণব, বাবা।

(বারাজীকে লইয়া চৌকীদারের প্রবেশ।)

 সার। আ ইউ, টোম্‌ চোট্টা হেয়।

 বাবাজী। (সত্রাসে) না সাহেব বাবা, আমি কিছু জানি নে, আমি—গ্যে, গ্যে, গ্যে—

 সার। হ্যেং ইওর গ্যে, গ্যে, গ্যে,—চুপরাও, ইউ ব্লডী নিগর্‌, ডেকলাও টোমারা ব্যেগ মে কিয়া হেয়। (বলপূর্ব্ববক মালা গ্রহণ করিয়া আপনার গলায় পরিধান) হা, হা, হা, হা! বাপ রে বাপ,—হাম বড়া হিণ্ডু হুয়া-রাঢ়ে কিস্‌ ডে। হা, হা, হা!

 বাবাজী। (সত্রাসে) দোহাই সাহেব মহাশয়, আমি গরিব বৈষ্ণব, আমি কিছু জানি নে, দোহাই বাবা, আমাকে ছেড়ে দেও।—(গমনোদ্যত)।

 চৌকী। খাড়া রও, শালা।

 বাবাজী। দোহাই কোম্পানির—দোহাই কোম্পানির।

 সার। হোল্‌ড ইউর টং, ইউ ব্ল্যাক্‌রূট্‌। ইয়েহ্‌ ব্যেগমে আওর কিয়া হেয় ডেকে গা। (ঝুলি বলপূর্ব্বক গ্রহণ এবং চারি টাকা ভূতলে পতন)।

 সার। দেট্‌স্ রাইট্‌! ইউ সুটি ডেভল্‌। কেঙ্কা চোরি কিয়া? (চৌকীদারের প্রতি) ওস্কো ঠানে মে লে চলো।

 বাবাজী। দোহাই সাহেবের, আমি চুরি করি নি, আমাকে ছেড়ে দেও—দোহাই ধর্ম্মঅবতার, আমি ও টাকা চাই নে।

 সার। সে নেই হোগা, টোম্‌ ঠানেমে চলো—কিয়া? টোম্‌ যাগে নেই? আল্‌বট যানে হোগা।

 চৌকী। চল্‌বে, থানে মে চল্‌।

 বাবাজী। দোহাই কোম্পানির—আমি টাকা কড়ি কিছুই চাই নে; তুমি বরঞ্চ টাকা নিয়ে যা ইচ্ছে হয় কর বাবা, কিন্তু আমাকে ছেড়ে দেও, বাবা।

 সার। (হাস্য মুখে) কিয়া? টোম্‌ নেই মাংটা! আপন জেবে টাকা রাখিয়া চৌকীদারের প্রতি) ওয়েল্‌ দেন্‌, হাম্‌ ডেক্‌টা ওস্কা কুচ্‌ কসুর নেই, ওস্কো ছোড় ডেও।

 বাবাজী। (সোল্লাসে) জয় মহাপ্রভু।

 চৌকী। (বাবাজীর প্রতি জনান্তিকে) তোম্‌ হামকো তো কুচ্‌ দিয়া নেহি—আচ্ছা যাও, চলা যাও।

 বাবাজী। না দাদা, আমি একবার জ্ঞানতরঙ্গিণী সভায় যাব।

 চৌকী। হাঁ হাঁ, ঐ বাড়ীমে—ও বড়া মজাকি জাগ্‌গা হেয়।

 সার। ডেকো চোকীডার, রোপেয়াকা বাট্‌—(ওষ্ঠে অঙ্গুলি প্রদান)।

 চোকী। যো হুকুম, খাবিন্‌।

 সার। মম্! ইজ দি ওয়ার্ড, মাই বয়। আবি চলো।

[সারজন ও চৌকীদারের প্রস্থান।

 বাবাজী। রাধেকষ্ণ! আঃ বাঁচলেম্‌, আজ্‌ কি কুলগ্নেই বাড়ী থেকে বের্‌য়েছিলেম। ভাগ্যে টাকা কটা সঙ্গে ছিল, আর সারজন্‌ বেটারও হাতপাতা রোগ আছে, তাই রক্ষে—নইলে আজ্‌কে কি হাজতেই থাক্‌তে হতো, না কি হতো, কিছু বলা যায়না।

(হোটেল্‌ বাক্‌স লইয়া দুই জন মুটীয়ার প্রবেশ।)

 এ আবার কি? রাধেকৃষ্ণ—কি দুর্গন্ধ! এ বেটারা এখানে কি আন্‌ছে? (অন্তে অবস্থিতি।)

 প্রথম। ইঃ, আজ্‌ যে কত চিজ্‌ পেটিয়েচে তার হিসাব নাই, মোর গর্‌দান্‌টা যেন বেঁকে যাচ্চে।

 দ্বিতীয়। দেখ্‌ মামু, এই হেঁদু বেটারাই দুনিয়াদারির মজা করে ন্যেলে। বেটারগো কি আরামের দীন, ভাই।

 প্রথম। মর বেকুফ্‌ ও হারাম্‌খোর বেটারগো কি আর দীন আছে? ওরা না মানে আল্লা, না মানে দ্যেবতা।

 দ্বিতীয়। লেকীন্‌ ক্যেবল এই গৰুখেগো বেটারগো দৌলতেই মোগর পোচঘর এত ফেঁপে ওট্‌তেচে; সাম হলেই বেটারা বাদুড়ের মাফিক ঝাঁকে ঝাঁকে আসে পড়ে; আর কত যে খায়, কত যে পিয়ে যায়, তা কে বল্‌তি পারে।

 প্রথম। ও কাদের মেঁয়া, মোদের কি সরিারাত এহানে দেঁড়য়ে থাক্তি হবে? দরয়ানজীকে ডাক না। ও দরওয়ানজী। এ মাড়ুয়াবাদি শালা গেল কোহানে?—ও দরওয়ানজী; দরওয়ানজী।

 নেপথ্যে। কোন হেয় রে।

 প্রথম। মোরা পোচঘরের মুটে গো।

 নেপথ্যে। আও, ভিতর চলে আও।

[মুটিয়া গণের প্রস্থান।

 বাবাজী। (অগ্রসর হইয়া স্বগত) কি আশ্চর্য্য! এসব কিসের বাক্‌স? উঃ, থু, থু, রাধেকৃষ্ণ! আমি তো এ জ্ঞানতরঙ্গিণী সভার বিষয় কিছুই বুঝ্‌তে পাচ্চি না।

 নেপথ্যে। বেল ফুল।

 নেপথ্যে। চাই বরোফ্‌।

(মালি এবং বরোফ্‌ওয়ালার প্রবেশ)।

 মালী। বেলফুল,—ও দরওয়ানজী, বাবুরো এসেচে।

 নেপথ্যে। না, আবি আয়া নেহি, থোড়া বাদ আও।

 বরফ। চাই বরফ—কি গো দরওয়ানজী।

 নেপথ্যে। তোম্বি থোড়া বাদ আও।

[মালি এবং বরফওয়ালার প্রস্থান।

 বাবাজী। (স্বগত) কি সর্ব্বনাশ, আমি তো এর কিছুই বুঝতে পাচ্চি না।

 নেপথ্যে দূরে। বেল ফুল—চাই বরোফ।

(যন্ত্রীগণ সহিত নিতম্বিনী আর পয়োধরীর প্রবেশ)।

 নিত। কাল্‌ যে ভাই কালীবাবু আমাকে ব্র্যেণ্ডি খাইয়েছিল—উঃ, আমার মাথাটা যেন এখনো ঘুচ্চে। আজ যে ভাই আমি কেমন করে নাচ্‌বো তাই ভাব্‌চি।

 পয়ো। আমার ওখানেও সদানন্দ বাবু কাল ভারি ধুম লাগিয়েছিল। আজ্‌ কাল্‌ সদানন্দ ভাই খুব্‌ তোয়ের হয়ে উঠেছে। এমন ইয়ার মানুষ আর দুটী পাওয়া ভার।

 যন্ত্রী। চল, ভিতরে যাওয়া যাউক্‌। ও দরওয়ানজী।

 নেপথ্যে। কোন্‌ হ্যায়?

 পয়ো। বলি আগে দুয়র খোলো, তার পরে কোন্‌ হ্যায় দেখ্‌তে পাবে এখন।

 নেপথ্যে। ওঃ, আপলোক হ্যায়, আইয়ে।

[যন্ত্রীগণ ইত্যাদির প্রস্থান।

 বাবাজী। (অগ্রসর হইয়া স্বগত) একি চমৎকার ব্যাপার? এরা তে কশ্‌বী দেখ্‌তে পাচ্চি। কি সর্ব্বনাশ; আমি এতক্ষণে বুঝতে পাচ্চি কাণ্ডটা কি! নবকুমারটা দেখ্‌চি একবারে বয়ে গেছে। কর্ত্তা মহাশয় এসব কথা শুন্‌লে কি আর রক্ষে থাক্‌বে?

(নববাবু এবং কালীবাবুর প্রবেশ)।

 নব। হা, হা, হা—শ্রীমতী ভগবতীর গীত! তোমার ভাই কি চমৎকার মেমরি। হা, হা, হা।

 কালী। আরে ও সব লক্ষীছাড়া বই কি আমি কখন খুলি না পড়ি, যে মনে থাক্‌বে।

 নব। (বাবাজীকে অবলোকন করিয়া) একি, এজে বাবাজী হে। কেমন্‌ ভাই কালী, আমি বলেছিলাম কি না যে কর্ত্তা একজন না একজনকে অবশ্যই আমার পেছনে পেছনে পাঠাবেন; যা হৌক, একে যে আমরা দেখ্‌তে পেলেম এই আমাদের পরমভাগ্য বলতে হবে।

 কালী। বল তো ও বৈষ্ণব শালাকে ধরে এনে একটু ফাউল কট্‌লেট্‌ কি মটন চপ খাইয়ে দি—শালার জন্মটা সার্থক হউক।

 নব। চুপকর হে, চুপকর। এ ভাই ঠাট্টার কথা নয়। (অগ্রসর হইয়া) কি গো, বাবাজী যে? তা আপ্‌নি এখানে কি মনে করে?

 বাবা। না, এমন কিছু না, তবে কি না একটা কর্ম্ম বশতঃ এই দিগ দিয়ে যাচ্‌ছিলেম, তাই ভাবলেম যে নববাবুদের সভা ভবনটি একবার দেখে যাই।

 নব। বটে বটে; চলুন, তবে ভিতরে চলুন।

 কালী। (জনান্তিকে নবকুমারের প্রতি) আরে করিস্‌ কি, পাগল? এটাকে এর ভিতরে নেগেলে কি হবে? আমরা তো আর হরিবাসর কত্যে যাচ্চি নে।

 নব। (জনান্তিকে কালীর প্রতি) আঃ, চুপ করনা। (প্রকাশে বাবাজীর প্রতি) বাবাজী, একবার ভিতরে পদার্পণ কল্যে ভাল হয় না।

 বাবা। না বাবু, আমার অন্যত্তরে কর্ম্ম আছে, তোমরা যাও।

[প্রস্থান।

 কালী। বল তো শালাকে ধাঁ করে ধরে এনে না হয় ঘা দুই লাগিয়ে দি!

 নব। দরওয়ান।

(দৌবারিকের প্রবেশ)।

 দৌবা। মহারাজ।

 নব। ও লোগ সব আয়া?

 দৌবা। জী, মহারাজ।

 নব। আচ্ছা, তোম যাও।

 দৌবা। জো হুকুম, মহারাজ।

[প্রস্থান।

 নব! আজ ভাই দেখচি এই বাবাজী বেটা একটা ভারি হেঙ্গাম করে বস্‌বে এখন। বোধ করি ও ঐ মাগীদের ভিতরে ঢুক্‌তে দেখেছে।

 কালী। পুঃ, তুমি তো ভারি কাউয়ার্ড হে! তোমার যে কিছু মরাল করেজ নেই। ও বেটাকে আবার ভয়?—চল।

 নব। না হে না, তুমি ভাই এ সব বোঝ না। চল দেখি গে বেটার হাতে কিছু ও কর্ম্ম করে দিয়া যদি মুখ্‌ বন্দ কত্ত্যে পারি।

 কালী। নন্‌সেন্‌স! তার চেয়ে শালাকে গোটকত কিক্‌ দিয়ে একেবারে বৈকুণ্ঠে পাঠাও না কেন। ড্যাম্‌ দি ব্রুট্‌! ও শালাকে এ পৃথিবীতে কে চায়? ওর কি আর কোন মিসন্‌ আছে?

 নব। দূর পাগল, এ সব ছেলেমানুষের কর্ম্ম নয়। চল, আমরা দুজনেই ওর কাছে যাই।

[উভয়ের প্রস্থান।

ইতি প্রথমাঙ্ক।