এখন যাঁদের দেখছি/শ্রীশৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
ঊনত্রিশ
শ্রীশৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
“ভারতী”র আসরে তখনো নেবেনি সন্ধ্যাদীপ। বৈকাল থেকে নিত্য বসে আমাদের বৈঠক। আমাদের দেহ বাস করত মাটির পৃথিবীতে, কিন্তু আমাদের মন বিচরণ করত চারুকলার রম্য ভুবনে।
কর্নওয়ালিশ স্ট্রীটের একটি মনিহারীর দোকানে দাঁড়িয়ে এটাওটা-সেটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছি, এমন সময়ে পাশে এসে দাঁড়ালেন একটি যুবক। রংটি কালো হ’লেও মুখশ্রী চিত্তাকর্ষক। আমার দিকে অল্পক্ষণ তাকিয়ে থেকে তিনি শুধোলেন, “আপনিই তো হেমেন্দুবাবু?”
আমি বললুম, “হ্যাঁ”।
যুবক বললেন, “আমার নাম শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়।”
অচেনা নাম নয়। মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর রচিত কয়লাকুঠী সংক্রান্ত গল্পগলি তখন প্রশস্তি লাভ করেছে পাঠকসমাজে। কয়লার খনি এবং সেখানকার হাজার হাজার কুলিকে আমরাও অনেকেই দেখেছি। কিন্তু সে দেখা চোখের দেখা, মনের দেখা নয়। কুলির কাজ করে যে সব নর-নারী, তাদের দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট সুখদুঃখ আশা ও আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে আমরা কেহই পরিচিত হ’তে পারিনি—পরিচিত হবার জন্যে আগ্রহ প্রকাশও করিনি। প্রবীণ লেখকরা উচ্চতর শ্রেণীর নরনারীদের নিয়ে রোমান্স রচনায় নিযুক্ত হয়ে থেকেছেন এবং নবীন লেখকরা মানুষের প্রথম রিপুটির উপরে বিসদৃশ ও অশোভন ঝোঁক দিয়ে পাঠক আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দরদী প্রাণ ও শিল্পীর দৃষ্টি নিয়ে শৈলজানন্দ প্রবেশ করেছেন কয়লাকুঠীতে ও কুলিদের পল্লীতে। বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন সেখানকার জীবনযাত্রা, সেখানকার মেঘ ও রৌদ্র, অশ্রু ও হাসির ছন্দ। এমন কি কয়লাকুঠীর চলতি ভাষা পর্যন্ত কণ্ঠস্থ ক’রে ফেলতে ত্রুটি করেননি। হাতের ক্যামেরায় তুলে নেওয়া যায় কুলিদের জনবহুল বস্তীর হুবহু ফোটো। কিন্তু সেই সঙ্গে কুলিদের চিত্তবৃত্তি দেখাতে পারে কেবল মনের ক্যামেরাই। শৈলজানন্দও ব্যবহার করেছেন শেষোক্ত ক্যামেরা। তাঁর সুনির্বাচিত শব্দচিত্রে কুলিজীবনের যে সব বিচিত্র ও অপূর্ব দৃশ্য আমরা দেখেছি, আজ পর্যন্ত তা দেখাতে পারেননি আর কোন বাঙালী লেখক। বাইরের ফোটো, ভিতরের ফোটো। বাস্তবতার মধ্যে রোমান্স। কালো কয়লার গুঁড়োর ভিতরে আলো-করা হীরার টুকরো। শৈলজানন্দ কুলিবস্তির নিরতিশয় দারিদ্র্যের মধ্যেও আবিষ্কার করেছেন অভাবিত সাহিত্যসম্পদ।
শৈলজানন্দ নিজেই তাঁর আত্মপরিচয়। তখন আমি বললুম, “আপনার গল্প আমি পড়েছি। আমার খুব ভালো লাগে।”
শৈলজানন্দের সঙ্গে সেই হ’ল আমার প্রথম পরিচয়।
কয়লাখনির কুলিজীবন নিয়ে তিনি “মাসিক বসুমতী” তে প্রথম যে গল্প লিখেছিলেন, তখন তাঁর বয়স হবে কত? বাইশ কি তেইশের বেশী নয়। কিন্তু সেই বয়সেই লেখনীধারণ ক’রে তিনি দেখাতে পারতেন যথেষ্ট মুনশীয়ানা। অচিন্ত্য, প্রেমেন ও বুদ্ধদেব প্রভৃতির নাম তখনও অপরিচিত। শৈলজানন্দ তাঁদের চেয়ে বয়সেও বড় এবং নামও কিনেছেন তাঁদের আগে।
“কল্লোল” পত্রিকায় আত্মপ্রকাশ ক’রে তিনি খ্যাতি লাভ করেননি বটে, কিন্তু কিছুকালের জন্যে তিনিও “কল্লোলে”র দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ছিল অতিশয় অর্থের অপ্রতুলতা এবং সে অনটন মেটাবার সাধ্য ছিল না “কল্লোলে”র। কাজেই অবশেষে দলছাড়া হয়ে তিনি “কালিকলমের” সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেন এবং ঠিক ঐ কারণেই তাঁর পদানুসরণ করেন প্রেমেন্দ্রও।
তাঁর কয়লাকুঠীর গল্পগুলি পাঠ ক’রে আমরা পরস্পরের মধ্যে বলাবলি করতুম, এই একজন শক্তিশালী নূতন লেখক দেখা দিয়েছেন, যাঁর মধ্যে আছে প্রভূত সম্ভাবনার ইঙ্গিত। বাস্তবিক পাশ্চাত্য দেশের বহু লেখকই অনুরূপ শক্তিপ্রকাশ ক’রে একসঙ্গে পেয়েছেন লক্ষ্মী ও সরস্বতীর আশীর্বাদ। ডবলিউ ডবলিউ জেকব কেবল সমুদ্রের নাবিকদের গল্প লিখেই রোজগার করেছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। তিনি পরলোকে যান ১৯৪৩ খৃষ্টাব্দে ঊনআশী বৎসর বয়সে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিশ্চিন্ত জীবনযাপন ক’রে গিয়েছেন একমাত্র সাহিত্যের দৌলতেই। ওখানে আরো কেউ কেউ খ্যাতিমান ও ধনবান হয়েছেন ইহুদীদের কিংবা নিগ্রোদের জীবনীচিত্র দেখিয়ে।
শৈলজানন্দও বাংলা কথাসাহিত্যে খুলেছিলেন একটি সম্পূর্ণ নূতন বিভাগ। তাঁর কয়লাকুঠীর গল্পগুলি প'ড়ে লোকে তাঁকে বাহবা দিয়েছিল খুব, কিন্তু টাকা দেয়নি বেশী। প্রথম বয়স থেকেই অর্থকৃচ্ছ্রতায় তিনি দারুণ কষ্টভোগ করেছেন। ব্রাহ্মণের ঘরের শিক্ষিত যুবক, বাস করতে হয়েছে বস্তিতে। ভাত-কাপড়ের জন্যে খুলতে হয়েছে পানের দোকান। লেখনীধারণ ক’রে নাম কিনলেন, অবস্থারও উন্নতি হ’ল অল্পবিস্তর, কিন্তু সে উন্নতিও উল্লেখযোগ্য নয়। যৎকিঞ্চিৎ ঘরে এলেও ডাইনে আনতে বাঁয়ে কুলোয় না।
এই তো আমাদের সাহিত্যিকদের অবস্থা। এইজন্যেই বাংলার কবিকে আক্ষেপ ক’রে বলতে হয়েছেঃ
“হায় মা ভারতি, চিরদিন তোর
কেন এ কুখ্যাতি ভবে?
যে জন সেবিবে ও পদযুগল,
সেই সে দরিদ্র হবে।”
য়ুরোপের কবির মুখে এমন আক্ষেপ মানায় না। সেখানে সাহিত্য সাধনার সঙ্গে নিশ্চিত দারিদ্র্যের সম্পর্ক নেই।
“কল্লোল” বন্ধ হ’ল, সম্পাদক দীনেশরঞ্জন ছুটলেন সিনেমা জগতে অর্থের সন্ধানে। তাঁর আগেই স্বর্গত “কল্লোলে”র অন্যতম সম্পাদক গোকুল নাগ এদিকে পথপ্রদর্শন করেছিলেন। তিনি আরো কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে Photoplay Syndicate of India নামে একটি চিত্র-সম্প্রদায় গঠন ক’রে Soul of a Slave নামে একখানি চমৎকার ছবি তুলেছিলেন এবং সেই ছবিতেই পর্দার গায়ে প্রথম দেখা দেন শ্রীঅহীন্দ্র চৌধুরী। গোকুলবাবু (তিনি ডক্টর শ্রীকালিদাস নাগের ভ্রাতা) অকালেই পরলোকগমন করেন, তাই চিত্রজগতে আর কোন উল্লেখযোগ্য দান রেখে যেতে পারেননি। কিন্তু বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথমে যোগ দেন চলচ্চিত্রশালায়। তারপর একে একে অনেক লেখকই ঐদিকে ছুটেছেন মধুলুব্ধ মধুকরের মত। শ্রীপ্রেমাঙ্কুর আতর্থী, দীনেশরঞ্জন দাস, “প্রবাসী” ও “মডার্ন রিভিউ”য়ের বর্তমান সম্পাদক শ্রীকেদারনাথ চট্টোপাধ্যায়, শ্রীপ্রেমেন্দ্র মিত্র, শ্রীশৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, “নাচঘরে”র সহকারী সম্পাদক শ্রীপশুপতি চট্টোপাধ্যায়, শ্রীবিধায়ক ভট্টাচার্য ও শ্রীপ্রণব রায় প্রভৃতি। শ্রীদেবকী বসু ও প্রথম জীবনে ছিলেন মফস্বলের এক পত্রিকার সহকারী সম্পাদক। আমিও একসময়ে আকৃষ্ট হয়েছিলুম সিনেমার দিকে। বৎসর দুই হাতেনাতে কাজও করেছি নানা বিভাগে। পরিচালকরূপে পত্রিকায় একবার আমার নামও বিজ্ঞাপিত হয়েছিল। কিন্তু সিনেমা আমাকে পুরোপরি আবিষ্ট করতে পারেনি কোনদিনই। যথাসময়েই বুঝে নিয়েছিলুম একসঙ্গে সিনেমা ও সাহিত্যের জোড়া ঘোড়া চালাবার সাধ্য আমার হবে না। তাই পালিয়ে এসেছি আবার সাহিত্যজগতে। প্রেমাঙ্কুর, শৈলজানন্দ ও প্রেমেন্দ্র প্রভৃতি তা পারেননি, তাই সাহিত্যসভা থেকে তাঁদের বিদায় গ্রহণ করতে হয়েছে। অবশ্য প্রেমাঙ্কুর আবার নতুন ক’রে কলম ধরেছেন বটে। কিন্তু সিনেমার সঙ্গে এখন আর তাঁর কোন সম্পর্কও নেই।
কেবল সাহিত্যিক নন, অভিনেতা ছাড়া অন্যান্য শ্রেণীর অধিকাংশ শিল্পীও সিনেমা নিয়ে মাতলে নিজের ধর্মরক্ষা করতে পারে না। চিত্রশিল্পিরূপে শ্রীচারুচন্দ্র রায়ের তারকা হচ্ছিল ক্রমেই ঊর্ধ্বগামী। সিনেমা জগতে গিয়েও তিনি শিল্পকর্ম ছাড়েননি বটে, কিন্তু একক শিল্পিরূপে তিনি করতেন যে সব রূপসৃষ্টি, প্রকাশ করতেন নিজের যে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, রপরসিকদের কি তা থেকে বঞ্চিত হ’তে হয়নি? সিনেমায় এখন তিনি কি করছেন না-করছেন বাইরে তার খবর আসে না। এবং তাঁর নিজের হাতে আঁকা কোন ছবিও আর কারুর চোখে পড়ে না। লোকে তাঁকে এর মধ্যেই ভুলে যেতে বসেছে। আর তাঁর চেয়ে বয়োকনিষ্ঠ শিল্পী দেবীপ্রসাদ নিজের সাধনায় অবহিত থেকে তাঁকে ছাড়িয়ে কত দূরে এগিয়ে যেতে পেরেছেন?
অনন্যসাধারণ গায়ক কৃষ্ণচন্দ্র এবং তাঁর এককালীন শিষ্য শ্রীশচীন্দ্র দেববর্মণকে দেখুন। বৈঠকী গানের আসরে কৃষ্ণচন্দ্রের ব্যক্তিত্বের উচ্চতা বেড়ে উঠছিল ক্রমশই। কিন্তু তাঁর সে উচ্চগতি আজ হয়েছে রুদ্ধ, কারণ তিনি এখন সিনেমার প্রেমে মশগুল। তবু তো তিনি বেশ কিছু কাল ধ’রে দরাজ হাতে দান ক’রে গিয়েছেন নব নব আনন্দ। কিন্তু শচীন্দ্রদেব উদীয়মান অবস্থাতেই প্রধান ক’রে তোলেন টাকার ধান্ধা। তারপর থেকে তিনি একান্তভাবেই চিত্রজগৎবিহারী হয়ে স্বদেশী গানের আসর ছেড়ে ছুটোছটি ক’রে বেড়াচ্ছেন বোম্বাই সহরের এ স্টুডিও থেকে ও স্টুডিওয়। ব্যাঙ্কের খাতায় অঙ্ক বাড়ছে নিশ্চয়ই, কিন্তু বোবা হয়ে গেছে তাঁর ব্যক্তিগত মুখর আর্ট!
চলচ্চিত্র যে শিল্পীদের ব্যক্তিগত শক্তির পরিপন্থী, রবীন্দ্রনাথেরও ছিল এই ধারণা। শ্রীশান্তিদেব ঘোষ হচ্ছেন রবীন্দ্রসঙ্গীতে বিশেষজ্ঞ এবং আজন্ম শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের ছাত্র। সিনেমাওয়ালারা তাঁকেও দলে টানবার জন্যে চেষ্টা করেছিল। তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পত্র লিখে রবীন্দ্রনাথের মতামত জানতে চান। তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে যে উষ্ণ উত্তর দেন, তা পাঠ করে শান্তিদেব সিনেমাওয়ালাদের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান ক’রে আত্মসম্মান অক্ষুন্ন রাখেন।
জীবিকা নির্বাহের জন্যে অর্থের প্রয়োজনীয়তা কে অস্বীকার করে? কিন্তু অর্থাগম হ’লেই শিল্পসৃষ্টির কথা ভুললে শিল্পীর জন্যে দুঃখ হয়। বিগত যুগের অধিকাংশ বাঙালী সাহিত্যিকই লেখবার সময়ে টাকার কথা মনেও আনতেন না এবং ভারতবর্ষে বাংলা সাহিত্যের অতুলনীয় সমৃদ্ধির জন্যে পনেরো আনা গৌরব তাঁদেরই প্রাপ্য। এখনকার শ্রীঅচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তকে দেখুন। যখন তাঁর জেব ছিল রিক্ত, তখনও তাঁর কলমের বিরাম ছিল না। এখন পদস্থ সরকারি চাকুরে হয়ে অর্থের জন্যে নেই তাঁর কোনই দুর্ভাবনা, কিন্তু আজও তাঁর লেখনী অত্যন্ত অশ্রান্ত। এইখানেই পাওয়া যায় সাহিত্যিক মনোবৃত্তির পরিচয়। সুবর্ণপিঞ্জরে বন্দী করলেও বনের পাখীকে ভুলানো যায় না অরণ্যের সঙ্গীত। আসুক সুখ, আসুক দুঃখ, সত্যিকার শিল্পীকে করতে হবেই শিল্পসৃষ্টি। প্রেমেন্দ্র ও শৈলজানন্দকে আমি সত্যিকার সাহিত্যিক ব’লেই শ্রদ্ধা করি। তাই তাঁদেরও মধ্যে দেখতে চাই সাহিত্যিক মনোবৃত্তি।
আমি তখন কালী ফিল্মের একখানি গীতিনাট্য-চিত্রের (বিদ্যাসুন্দর) জন্যে গান রচনার এবং নৃত্য পরিকল্পনা ও পরিচালনার ভার পেয়েছি। স্টুডিওতে যেতে হয় প্রত্যহ। সেই সময়ে একদিন কালী ফিল্মের মালিক বন্ধুবর শ্রীপ্রিয়নাথ গঙ্গোপাধ্যায় আমার হাতে একখানা কেতাব দিয়ে বললেন, “হেমেনদা, বইখানা প’ড়ে দেখবেন তো, ছবিতে জমবে কি না?”
বইখানির নাম “পাতালপুরী”। লেখক শৈলজানন্দ। এও কয়লাকুঠীর কাহিনী। এ শ্রেণীর লেখায় শৈলজানন্দের জোড়া নেই। সুতরাং গল্পটি যে ভালো লাগল সে কথা বলা বাহুল্য। কেবল সাধারণ গল্প হিসাবে নয়, চিত্রকাহিনী হিসাবেও তার উপযোগিতা ছিল যথেষ্ট। প্রিয়বাবুকে সেই কথাই বললুম।
প্রিয়বাবু যথেষ্ট শ্রম, যত্ন ও আয়োজন ক’রে ছবিখানি তুলেছিলেন। কয়লাখনির ভিতরকার দৃশ্য যথাযথভাবে দেখাবার জন্যে তাঁর অর্থব্যয়ও বড় কম হয়নি। নজরুল ইসলাম নিয়েছিলেন গান রচনার ও সুর সংযোজনার ভার। শৈলজানন্দ নিজেও দেখা দিয়েছিলেন একটি ছোট ভূমিকায়।
ছবিখানি ভালো হ’লেও আশানরূপ অর্থকর হয়নি। কিন্তু শৈলজানন্দ সেই যে চিত্রজগতের অন্দরমহলে ঢুকে পড়লেন, আজ পর্যন্ত আর বেরিয়ে আসেন নি। সে বোধ হয় আঠারো-উনিশ বৎসর আগেকার কথা।
আগে তিনি মাঝে মাঝে আমার বাড়ীতে এসে দেখা দিতেন। আমি বরাবরই শিল্পীদের সাহচর্য ভালোবাসি। তাঁকে পেলে খুশী হতুম।
একদিন দেখিয়েছিলুম তাঁকে নৈশজীবন। কলকাতায় নয়, চন্দননগরে। সেখানে গঙ্গার ধারে ছিল স্যাভয় হোটেল। সেখানে বাঙালীরা বড় একটা উঁকিঝুঁকি মারত না বা মারতে সাহস করত না। সেখানে হেসে-গেয়ে-নেচে আসর রাখত সাহেবমেমরাই। হোটেলের স্বত্বাধিকারিণী রুসীয় মহিলা ম্যাডাম লোলা ছিলেন আমার বন্ধু। তাঁর আমন্ত্রণে আমার সাহিত্যিক ও শিল্পী সুহৃদদের নিয়ে প্রায়ই সেখানে গিয়ে উপস্থিত হতুম। একদিন সন্ধ্যার পর সেখানে নিয়ে গেলুম শৈলজানন্দকেও এবং ফিরে এলুম পরদিন সূর্যোদয়ের পর।